শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
জেনেভায় শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার প্রিন্স সাদরুদ্দীন আগা খানের সাংবাদিক সম্মেলন | জাতিসংঘ ডকুমেন্টস | ১৩ অক্টোবর, ১৯৭১ |
প্রিন্স সদরউদ্দিন আগা খানের প্রেস কনফারেন্স
ইউএনএইচসিআর জেনেভা
১৩ অক্টোবর, ১৯৭১
শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের হাইকমিশনার, প্রিন্স সদরউদ্দিন আগা খান, নয়াদিল্লীতে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের অপারেশনের প্রধান জনাব থমাস জ্যামসনের সাথে ১৩ অক্টোবর জেনেভার প্যালিস ডেস নেশনসে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। পূর্ব পাকিস্তানের উদ্বাস্তুদের সহায়তা করার জন্য তিনি তার অফিসটিকে জাতিসংঘের সহায়তা কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যাবহার করতে দেন।
ভারত সরকার তখন অন্যান্য দেশের সরকারপ্রধানদেরকে ভবিষ্যত চাহিদার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিচ্ছিলো। পূর্ব পাকিস্তানের ৮০ মিলিয়ন উদ্বাস্তুদের ৬ মাসের পর্যাপ্ত সাহায্যের জন্য প্রায় ৫৫৮ মিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন ছিলো।
ভারত সরকার কতৃক উদ্ভাস্তুদের জন্য শক্তি, সময় এবং পণ্য ব্যায় করার জন্য হাইকমিশনার চাপ দিয়েছিল। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন যে সরকার তৎকালীন সময়ে ত্রাণের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারবে। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, তৎকালীন সময়ে ত্রাণ সাহায্য ছিলো অনেক গুরুত্তপূর্ন এবং শরনার্থী শিবিরের সকলের উত্তেজনা কমানোর জন্য এটি দরকার ছিলো। তিনি এটিও দৃঢ়তার সাথে বলেন যে, কেবল ত্রাণ প্রদান করাই সকল সমস্যার সমাধান নয়। ভারত ও পাকিস্তান উভয় রাষ্ট্রের অবস্থানের উপর নির্ভর করে স্বেচ্ছায় পুনর্বাসনের ব্যাবস্থা করলে সমস্যাটির সমাধান হতে পারে। তিনি আরও বলেন, ইউএনএইচসিআরএই স্বেচ্ছাসেবী প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে সকল প্রকার সাহায্য করতে সর্বদা প্রস্তুত থাকবে।
তিনি পূর্ব পাকিস্তানে থাকা ইউএনএইচসিআর কর্মকর্তাদেরকে শরনার্থীদের প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে সকল প্রকার সাহায্য করার নির্দেশ দেন।
তারপর হাইকমিশনার অন্যান্য দেশগুলো শরনার্থীদের যেসকল উপায়ে সাহায্য করতে পারে, তা বর্ননা করেন। এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ যে, নগদ অর্থ সাহায্য পাওয়াতে ত্রাণ সামগ্রী ক্রয়ের ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। এর মধ্যে কিছু পণ্য ভারতেই পাওয়া যেতে পারে। উপরন্তু,ভারতীয় সরকার শরণার্থীদের সাহায্য করার জন্য যেসকল ত্রাণসামগ্রী প্রয়োজন, সেগুলো ইউনিসেফের সাহায্যে ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম এবং ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের মাধ্যমে সমগ্র পৃথিবী থেকে ক্রয় করা সম্ভব।
এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সঠিকভাবে চালনা করার জন্য জনসাধারণের মতামত সংগ্রহ করা এবং সকল স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন করার প্রয়োজন ছিল। রেড ক্রস সোসাইটি ইতিমধ্যেই প্রধান কার্যালয়ের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে গিয়েছিলো। এটি ইতিমধ্যে ভারতীয় রেড ক্রসকে লজিস্টিক সমর্থন প্রদান করেছিল।
মিস্টার জেমসন বলেন যে, ভারতে প্রতিষ্ঠিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো যাতে নিজেদেরকে ত্রাণ তৎপরতার সাথে যুক্ত করতে পারে সেজন্য ভারত সরকার কলকাতায় ভারতীয় রেড ক্রস এবং ভারত সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়মিত যৌথ সভার আয়োজন করেছিলো।
হাই কমিশনার ব্যাখ্যা করেন যে ভারত সরকার তাকে পরামর্শ দিয়েছিল, যেহেতু ভারত থেকেই পর্যাপ্ত পরিমান যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মী সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছে, সুতরাং বৈদেশিক সাহায্যকারীর কোন প্রয়োজন নেই। বরাবরের মতই ইউএনএইচসিআর তার প্রধান কার্যালয় থেকে ভারতের বেসরকারী খাত থেকে প্রাপ্ত দানগুলো দেয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল।
হাই কমিশনার এবং মিস্টার জেমসন উভয়েই জেনেভায় অবস্থিত কেন্দ্রীয় কার্যালয়টিকে জাতিসংঘের কর্মের সমন্বয়কারী হিসেবে এবং ভারতে, ভারত সরকার এবং জাতিসংঘের মধ্যকার সংযোগকারী হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। এই বিশেষ ব্যবস্থাটি খুব সুন্দর ও সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়েছিলো।
প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রশ্নগুলোর জবাবে তারা বলেন, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে থেকে প্রায় ১১৫ মিলিয়ন ডলার অর্থসাহায্য দেয়া হয়, এর মধ্যে ১১.৭ মিলিয়ন ডলার নগদ অর্থ ভারত সরকারের নিকট হস্তান্তরিত হয়েছে, ২৪.৫ মিলিয়ন ডলার বিতরণ করা হয়েছে এবং বাকিগুলো এখনো জমা আছে। সেগুলো এই বছর শেষ হওয়ার আগেই বিতরন করা হবে।
এছাড়া ভবিষ্যতের জন্য ৬.৫ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক এবং ২ মিলিয়ন শিশুর জন্য ১৫.৫ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের বস্ত্র ও কম্বল কেনার দিকে মনোযোগ দেয়া হয়েছিলো।
এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকমিশনার বলেন যে, নেদারল্যান্ডস কমিটি ফর এইড টু রিফিউজিস তাকে বলেছেন যে, ইতিমধ্যে কেবল পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও মেঘালয়ের উত্তর অংশের ৬০০,০০০ প্রাপ্তবয়স্কদের এবং ৩০০,০০০ শিশুর কাপড় কেনার জন্য ১,৯২৯,০০০ ডলার বরাদ্ধ করা হয়েছে। এই পোশাক ছাড়াও আরও ৪ মিলিয়ন মানুষের জন্য ৪৩ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের আশ্রয়ের ব্যাবস্থা করারও প্রয়োজন ছিল, যেমনটি যেমনটি “অপারেশন লাইফাইন” দেওয়া হতো এবং যেখানে আরও ৯২,৫০০ মেট্রিক টন প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্যের প্রয়োজন ছিল।