শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
বাংলাদেশ প্রশ্নে দিল্লী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রস্তাব এবং বিভিন দেশের প্রতিনিধিবৃন্দের ভাষণ | বাংলাদেশ ডকুমেন্টস এবং আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রতিবেদন উদ্ধৃতিঃ ওয়ার্ল্ড মীট অন বাংলাদেশ | ১৮ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ |
নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনের গৃহীত প্রস্তাব
১৮ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া মানব সভ্যতার ইতিহাসের এক ভয়াবহ বিপর্যয় হিসেবে চিহ্নিত সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে আলোচনা এবং এর সন্তোষজনক সমাধানের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শের জন্য বিগত ১৮-২০ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ সকল মহাদেশ থেকে এবং বিশ্বের ২৪ টি দেশ থেকে একশত পঞ্চাশ জনের অধিক প্রতিনিধিগণ নয়াদিল্লীতে বাংলাদেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে মিলিত হয়েছিলেন।
২. পশ্চিম পাকিস্তানের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের সংগ্রামের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের অকুণ্ঠ সমর্থন রয়েছে। এই সম্মেলন বাংলাদেশের জনগণ বিশেষ করে ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সাধারণ নির্বাচনে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত রায়ে জয়ী আওয়ামী লীগ, বুদ্ধিজীবী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত নির্দয় সামরিক অভিযানের নির্মম ধ্বংসযজ্ঞ, গণহত্যার ঘটনায় গভীরভাবে মর্মাহত। যার ফলশ্রুতিতে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটেছে ও আট মিলিয়নেরও বেশী মানুষ দেশত্যাগ করে উদ্বাস্তু হিসেবে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে এবং যা এখনো অব্যাহত রয়েছে এবং ফলশ্রুতিতে তা ভারতের উপরও ব্যপক অর্থনৈতিক ও সামাজিক বোঝা রূপে প্রতীয়মান।
৩. এই সম্মেলন ভারতীয় সরকার ও জনগণ কর্তৃক বাংলাদেশী উদ্বাস্তুদের দেওয়া ত্রাণসামগ্রী প্রদানের প্রশংসনীয় কর্মকাণ্ড ও এই গভীর মানবিক কাজে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তার প্রতি অকুণ্ঠ প্রশংসা জ্ঞাপন করে।
৪. এই সম্মেলন ঘোষণা করে যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত বাংলাদেশের জনগণের এই রাজনৈতিক সংগ্রামকে স্বাধীনতার জন্য জাতীয় সংগ্রাম হিসেবে বিবেচনা করা।
৫. এই সম্মেলন বিশেষভাবে পাকিস্তানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উত্থাপন করে যা অদ্যাবধি অব্যহত রয়েছে এবং জাতিসংঘের সদস্যগণের প্রতি আর্জি জানায় যে, তারা যাতে জাতিসংঘের সবগুলো অঙ্গ সংগঠনের সম্মুখে এই সমস্যাকে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং সমগ্র বিশ্বের জন্য হুমকি রূপে তুলে ধরে।
৬. এই সম্মেলনে এটা স্বীকৃত যে, বাংলাদেশের জনগণ ও শেখ মুজিবুর রহমানের রাষ্ট্রপতিত্বে গঠিত বাংলাদেশ সরকারের নিকট গ্রহণযোগ্য একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করা জরুরী প্রয়োজন। এই সম্মেলন আরও স্বীকার করে যে, উদ্বাস্তুদের নিরাপদে ও আত্মবিশ্বাসের সাথে তাঁদের মাতৃভূমিতে ফিরে আসা এরূপ একটি বন্দোবস্তের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল এবং তা চলমান সংকট নিরসনের অপরিহার্য পূর্বশর্ত।
৭. বিশ্বের সরকারগণের নিকট এই সম্মেলনের পরামর্শ থাকবে যে, যেহেতু সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্য প্রয়োজনীয় সমুদয় বৈশিষ্ট্য সমুহ যেমন ভৌগলিক, ঐতিহাসিক, জাতিগত ও ভাষাগত বৈশিষ্ট্য বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান, তাই বিশ্বের সরকারগণের উচিত বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেয়া।
৮. এটা সম্মেলন স্বীকৃত যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের নৈতিক সমর্থন রয়েছে। এই নৈতিক সমর্থনকে কার্যকর ক্রিয়ায় রূপান্তর করতে, এই সম্মেলন বিশ্বের সরকারগণের নিকট আবেদন জানায় যে, তারা যেন অনতিবিলম্বে পাকিস্তান সরকারকে যাবতীয় অস্ত্র, গোলাবারুদ, খুচরা যন্ত্রাংশ এবং সকল প্রকার সামরিক সুবিধা সরবরাহ করা বন্ধ করে দেন। সেইসাথে এই সম্মেলন বিশ্বের সরকারগণ, আন্তর্জাতিক ফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠান ও দাতা সংস্থাগুলোর নিকট আরও আবেদন জানায় যে, অনতিবিলম্বে তারা যেন পাকিস্তান সরকারকে যাবতীয় অর্থনৈতিক সাহায্যসমূহ দেয়া বন্ধ করে দেন।
৯. এই সম্মেলন বিশ্বের সরকারগণ ও জনগণের নিকট আরও আবেদন জানায় যে, তারা যেন বাংলাদেশ সরকারকে জরুরী ও কার্যকর সহায়তা প্রদান করেন; যা ক্ষেত্রবিশেষে সামরিক সাহায্য; অন্যান্য ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক ও অন্যান্য ধরণের অহিংস কর্ম সম্পাদনে সহায়তা হতে পারে।
১০. জাতিসংঘ ও সকল আন্তর্জাতিক সংস্থা সমূহের নিকট এই সম্মেলন আবেদন জানায় যে, তারা যেন, বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে এটা সুনিশ্চিত করে যে, যাদের কষ্ট লাঘবের উদ্দেশ্যে এই সহায়তার বন্দোবস্ত করা হয়েছে, তা যেন তাঁদের নিকট পৌছায়।
১১. এই সম্মেলন আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটিকে অনুরোধ জানায় যে, তারা যেন অবিলম্বে ১৯৪৯ সালের চতুর্থ জেনেভা কনভেনশনের তৃতীয় অনুচ্ছেদের অধীনে বাংলাদেশে ত্রাণসামগ্রী বিতরণের সরাসরি দায়িত্ব গ্রহণের উদ্যোগ নেয় যা বর্তমান পরিস্থিতিতে একমাত্র করনীয়। বাংলাদেশ সরকারের অংশগ্রহণ উক্ত কনভেনশনের শর্তাবলীর সাথে অপরিহার্য ও সঙ্গতিপূর্ণ। কোন অবস্থাতেই এই কাজের দায়িত্ব পাকিস্তানের সামরিক আইন কর্তৃপক্ষের নিকট ন্যস্ত করা উচিত হবে না।
১২. যেহেতু বাংলাদেশের শিশুদের জীবন ও স্বাস্থ্য এর সাথে জড়িত এবং যেক্ষেত্রে জাতীয় স্বাধীনতা ও বেঁচে থাকার মাঝে যেকোন একটিকে বেছে নেয়ার কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে, সেক্ষেত্রে সকল সরকারগণ, আন্তঃ সরকারি সংস্থাসমূহ এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিকট সম্ভাব্য সকল উপায়ে বাংলাদেশ ও বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই শিশুদের জীবন রক্ষায় সকল প্রতিবন্ধকতা যতদূর সম্ভব পরিহার করে এগিয়ে আসার জন্য এই সম্মেলন আবেদন জানায়। সেক্ষেত্রে এই সম্মেলন বাংলাদেশের অভ্যন্তরের শিশুদের জন্য আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণাধীন সম্ভাব্য জরুরী আশ্রয়স্থল সৃষ্টির পরামর্শ দেয়।
১৩. বাংলাদেশের বন্ধুদের নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক কমিটি গঠনের মাধ্যমে জনগণ, সরকার ও বেসরকারি সংস্থাসমূহের নিকট প্রামাণিক উৎস ভিত্তিক তথ্য প্রচার এবং অন্যান্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে জনসমর্থন গড়ে তুলতে এই সম্মেলন পরামর্শ দেয়।
জাতি কমিটিসমূহের বিবৃতি
উদরাতুল্লাহ হাদাদ
আফঘানিস্তান
বাংলাদেশের সমস্যা সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণের আমন্ত্রণের জন্য আমার সংগঠন আফগান সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটের পক্ষ থেকে আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। বাংলাদেশের জনগণের সংগ্রামের প্রতি আমাদের সংগঠন ও আফঘানিস্তানের অনেক জনসাধারণ খুবই সহানুভূতিশীল।
আমাদের সংগঠন আফগান সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট জাতীয় সংস্কৃতি, জাতীয় অর্থনীতি, জাতীয় ঐতিহ্য এবং জাতীয় ইতিহাস এবং এশিয়ার হৃদয়ে অবস্থিত আফঘানিস্তানের মহান ঐতিহাসিক মহিমার প্রতি পশতুনের সংঘবদ্ধ অনুভূতির উপর নির্ভরশীল। আফঘানিস্তানকে আফঘানদের জন্য রাখার এই একটিমাত্র উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদের বিরুদ্ধে এর সংগ্রাম অব্যহত রয়েছে।
আমরা বিশ্বাস করি যে, জাতীয় গণতন্ত্র ও জাতীয় অর্থনীতি অর্জনের পর, আমরা শোষণ ও পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে সত্যিকারের গতিশীল জাতীয় আফঘান সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম অব্যহত রাখব।
আমাদের উদ্দেশ্য কেবল বিদেশী সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে নয় বরং আভ্যন্তরীণ শোষণের বিরুদ্ধেও লড়াই করা।
আমরা বিশ্বাস করি যে, মহান ও ঐতিহাসিক আফঘানিস্তানের প্রতি ইঞ্চির জন্য আমরা রক্ত ঝরাব এবং আমরা একটি জাতীয় রাষ্ট্র ও জাতীয় বিপ্লবের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করব।
আমাদের মহান জাতি ১০০ বছরেরও অধিককাল যাবত ব্রিটিশ ও অন্যান্য অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত। আমাদের জাতীয় নেতা প্রয়াত আমানুল্লাহ ৫০ বছর পূর্বে ১৯২১ সালে যখন ব্রিটিশদের থেকে কাবুলের স্বাধীনতার চুক্তিস্বাক্ষর করেন তখন ব্রিটিশ মিশন বলেছিলেন, “ সাধারনভাবে আমরা সকল জাতির স্বাধীনতার পক্ষে এবং কোন জাতির স্বাধীনতা হারানোর ব্যপারে আমরা সবসময় উদ্বেগ প্রকাশ করি।”
যেহেতু আমদের সংগঠনের লক্ষ্য ও নীতি এবং আফঘানিস্তানের অনুভূতি সর্বত্র স্বাধীনতা ও জনগণের স্ব-নিয়ন্ত্রণের পক্ষে সেহেতু, স্বাভাবিকভাবে আমরা বাংলাদেশের জনগণের সংগ্রামকে সমর্থন করি এবং এই নীতি অব্যহত থাকবে কারন আফঘানিস্তানের ঐতিহ্যগত দৃষ্টিভঙ্গি হল সাম্রাজ্যবাদ ও শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই করা।
অপরদিকে, পশতুনিস্তান ও বাংলাদেশের সমস্যার মধ্যে দৃশ্যগত একটি মিল রয়েছে। তেমন কোন পার্থক্য ছাড়াই, পশতুনিস্তানও বাংলাদেশের মত, পাঞ্জাবের কতিপয় পরিবার কর্তৃক শোষণ ও চাপের স্বীকার। আজ বাংলাদেশের জনগণ কষ্টভোগ করছে কারন সেখানে নৃশংসতা বিদ্যমান। একইভাবে অতীতে, পশতুন ও বালুচও কষ্টভোগ করেছে তাদের স্ব-নিয়ন্ত্রণের ন্যয্য সংগ্রামের কারনে যদিও ২০ মিলিয়ন সশস্ত্র পশতুনের উপর বিদেশী ইচ্ছা চাপিয়ে দেয়া খুব সহজ নয়।
আমরাও বাংলাদেশ প্রসঙ্গে মনযোগী কারন এটি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা, এটি একটি মুসলমানদের সমস্যা, এটি একটি মানবাধিকার সমস্যা তেমনি এই এলাকার শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সংশ্লিষ্ট একটি সমস্যা।
_সেপ্টেম্বর আইবি. ১৯৭১ এর পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে বিবৃত বক্তৃতা।
.
আমরা কখনই ভুলব না, যে তিন বছর পূর্বে, বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদীরা পশতুনিস্তানের মধ্যভাগের শহর পেশওয়ারের বক্তৃতায় বলেছিলেন যে, “বাংলাদেশের জনগণ বিপ্লবী পশতুন ভূমিকে তাঁদের সংগ্রামের কারণে দ্বিতীয় মক্কারূপে (মুসলিমদের পবিত্র শহর) গণ্য করে এবং পশতুনবাসীদের প্রতিরোধের চেতনা দ্বারা আমরা সবসময় অনুপ্রাণিত হই।”
উনিশ শতকে যখন থেকে ব্রিটিশরা সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে পশতুনিস্তানকে এর পিতৃভূমি থেকে পৃথক করেছিল তখন থেকে বাংলার জনগণ যেমন পাকিস্তানের মধ্যে সংখ্যালঘু হিসেবে সংগ্রামরত তেমনি পশতুনের জনতার সংগ্রামও অব্যহত রয়েছে। পুনরায় পিতৃভূমিতে যোগদান করে বৃহত্তর পশতুন রাজ্য গঠনের মাধ্যমে এশিয়া অঞ্চলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভূমিকা পালনের জন্য তাঁরা সবসময় স্বপ্ন দেখে।
বলাবাহুল্য যে, ১৬ই এপ্রিল, ১৯৭১ সালে প্রয়াত ইপ্পির ফকিরের (মির্জা আলী খান) বাসভূমি ওয়াজিরিস্তানে মুক্ত উপজাতীয় এলাকার পঞ্চাশ হাজার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সভায় বৃহত্তর আফঘানিস্তানকে সমর্থনের লক্ষ্যে পশতুনিস্তানের সুনির্দিষ্ট স্বাধীনতার প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছিল।
যেহেতু ভৌগলিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক প্রয়োজনীয়তার কোনটিই পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে মিলে না তাই বাংলার জনগণের পক্ষে সহজেই শান্তিপূর্ণ উপায়ে গণতন্ত্র ও আত্মনিয়ন্ত্রণ অর্জন করা সম্ভবপর ছিল; কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাঁরা তা বিগত ডিসেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে অর্জন করতে পারেনি এবং তাঁরা সেনাবাহিনীর পাশবিক দমন পীড়নের সম্মুখীন হয়েছেন, যা আফঘানিস্তানের জনগণের নিকট গভীর উদ্বেগের কারন ও নিন্দনীয়।
আফঘান জাতির অনুভূতির প্রতিনিধিত্বকারী আমাদের সংবাদপত্র আফঘান মিল্লাত ও অন্যান্য সংবাদপত্র বাংলাদেশের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ অর্জনের সংগ্রামকে সমর্থন করে। আমাদের জনগণ কাবুল ও জালালাবাদের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ প্রদর্শনের মাধ্যমে বাংলাদেশের পক্ষে তাঁদের উষ্ণ সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন।
পরিশেষে পাকিস্তানের সামরিক সরকারের নিকট আমাদের পরামর্শ থাকবে পূর্ব পাকিস্তানের এই বিয়োগান্ত নাটক সমাপ্ত করার এবং বাংলাদেশের জনগণের পাশাপাশি পশতুন ও বেলুচের জনগণের অধিকারকেও স্বীকৃতি প্রদান করার।
বাংলাদেশের জনগণকে আমরা আশ্বাস দিচ্ছি যে, সমগ্র বিশ্বের অনুভূতি তাঁদের সাথে আছে এবং আমরা আশ্বস্ত করছি যে, বিজয় তাঁদের হাতের নাগালে এবং আমরা এটাও বিশ্বাস করি যে, তাঁদের ভাইবোনেরা যারা দমনের কারনে ভারতে পালিয়ে গেছেন তাঁরা মাতৃভূমিতে ফিরে আসবেন।
বি.পি. কৈরালা
নেপাল
বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া একটি গভীর বিয়োগান্ত নাটকের ছায়ায় আমরা আজকের এই সভায় মিলিত হয়েছি। পঁচাত্তর মিলিয়ন নিরস্ত্র বা সামান্য অস্ত্রসজ্জিত বাঙ্গালীকে নৃশংস সামরিক যন্ত্র দ্বারা গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে এবং হানাদার বাহিনী দ্বারা সর্বপ্রকার ভাবে অপমানিত ও নিগৃহীত করা হচ্ছে। প্রায় আট মিলিয়ন বাঙ্গালীকে তাঁদের ঘরবাড়ি থেকে বিতাড়িত করে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য করা হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি গভীর বিয়োগান্তক ঘটনা।
তবে পাকিস্তানের শক্তিমান সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের এই সংগ্রামের একটি বীরত্বপূর্ণ দিক রয়েছে। এটি এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি যা এখন আমাদেরকেও সম্পৃক্ত করা উচিত। আমরা কিভাবে তাঁদের সাহায্য করতে যাচ্ছি? এই দুর্যোগে রেজুলেশন পাসের মাধ্যমে আমাদের উদ্বেগ প্রদর্শন পর্যাপ্ত নয়। আমাদের আরও অধিক কিছু করা প্রয়োজন। যদি এটা নিছক আট মিলিয়ন মানুষের ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় সংক্রান্ত বিষয় হত তবে হয়তো আমরা এই বিষয়ে সম্পৃক্ত হতাম না এবং বলে দিতাম যে, এটা ভারতের একান্তই নিজস্ব সিদ্ধান্ত ও বাস্তবায়নের বিষয়। যদি এটা পূর্ব বাংলার নিছক কিছু সাংবিধানিক অর্জনের লড়াই হত, তবে তা আমাদের সম্পৃক্ত করত না। এটা বাংলাদেশের জনগণের নীতি সমুন্নত রাখার লড়াই, মানুষের মর্যাদা সমুন্নত রাখার লড়াই, গণতান্ত্রিক জীবনধারা সমুন্নত রাখার লড়াই। এগুলো আমাদের জন্যও লড়াই এর উপযুক্ত বিষয়।
এজন্যই আমরা নেপালে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বাংলাদেশের ঘটনার তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলাম। সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি যাই হোক না কেন, সামগ্রিকভাবে নেপালের জনগণ প্রাণবন্তভাবে বাংলাদেশকে সমর্থন করেছেন। কিন্ত, এরকম হল কেন? কারন, যদি বাংলাদেশের জনগণ এই যুদ্ধে পরাজিত হয় এবং যদি আলো নির্বাপিত হয়, নেপালে আমাদের আলোও নির্বাপিত হবে। এমনকি ভারতেও যেখানে গণতন্ত্র বিদ্যমান, আমি আমার ভারতীয় বন্ধুদের সতর্ক করতে চাই যে, যদি বাংলাদেশের আলো নির্বাপিত হয় তবে তাদেরও কিছু আলো নিভে যাবে। গণতন্ত্রের উজ্জ্বলতা ও ভারতীয় জনগণের জীবনধারাও প্রভাবিত হবে। এই দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে আমাদেরকে এই সমস্যা মোকাবেলা করতে হবে। এটি নিছক ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী উদ্বাস্তুদের বিষয় নয়।
প্রভাবশালী রাষ্ট্রের অনুরোধ বা কূটনৈতিক চাপ কিংবা পরামর্শ স্বৈরশাসকরা আমলে নেবেন এটা আশা করা একটি বিভ্রম ছাড়া আর কিছু নয়। যদি বলতেই হয় আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি যে স্বৈরশাসকরা অস্ত্র ছাড়া আর কোন চাপের মুখেই নতি স্বীকার করবে না। তারা কেবল অস্ত্রের ভাষাই জানে। বাস্তবিক অর্থে এই সভা বাংলাদেশের জনগণের জন্য কি করে তা দেখতে আমি গভীরভাবে উৎসাহী।
মাননীয় চেয়ারম্যানের বক্তব্য আমি সম্পূর্ণরূপে অনুমোদন করি। তিনি যেরূপভাবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন আমার মনে হয় না এর চেয়ে ভালভাবে তা তুলে ধরা সম্ভব। এই সভায় কি কি সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে তা দেখতে আমি উদগ্রীব। যদি আমরা বাংলাদেশের জনগণকে সাহায্য করতে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করি, তবেই প্রকৃতপক্ষে তাঁদের জন্য কিছু করা হবে। আমি আবারো বলতে চাই যে, যদি বাংলাদেশ হেরে যায়, তবে গণতান্ত্রিক জীবনধারা অর্জনের জন্য জনতার লড়াই অন্যত্র হারিয়ে যাবে। আমরা নেপালবাসিরা জানি যে, যদি বাংলাদেশের জনগণ জয়ী হন, তবে ইতিমধ্যেই আমাদের সংগ্রামের অর্ধাংশ অর্জিত হয়ে যাবে।
নাড নিলসেন
ডেনমার্ক
সমগ্র স্ক্যান্ডিনেভিয়ার পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখার এই সুযোগ নিঃসন্দেহে আমার জন্য অত্যন্ত সম্মানজনক। এটি একটি বড় দায়িত্ব। ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অফ ওয়ার্ল্ড ফেডারেলিস্ট কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে আমি একটু ভিন্নমাত্রায় কথা বলবো। বিশ্ব সংগঠন বাংলাদেশের সঙ্কটে খুবই উদ্বিগ্ন ছিল। কেবল জাতিসংঘই একমাত্র জায়গা যেখানে এ বিষয়টি উপস্থাপন করা হলে তা বিশ্ব সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করবে। ধারা ২১ দিয়ে জাতীয় সার্বভৌমত্ব বোঝায়। এটি এমন একটি অধিকার যা জাতিসংঘের সংরক্ষণ করা উচিত। নিজের ভেতরের স্বাধীনতার মাধ্যমে প্রতিটি জাতি, প্রতিটি সংস্কৃতির প্রস্ফুটিত হওয়া উচিত।
বর্তমান জাতিসংঘ নিয়ে আমরা কি করতে পারি? বর্তমান আন্তর্জাতিক সমাজ কি? চুক্তিসমূহের সর্বোচ্চ বাস্তবায়ন ও আমাদের প্রভাব বিস্তারে জাতিসংঘকে আমরা একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে পারি এবং আমি এটাই চাই যে তা ঘটুক। এখন কি আমরা তা করতে পেরেছি? পৃথিবীর মহান সংগঠন গুলোর মাঝে আমরাও রয়েছি, ২২ টি প্রতিষ্ঠান, এগুলোর মধ্যে আমার নিজের প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই বিষয়টি জাতিসংঘের নিকট উপস্থাপন করেছে। মাত্র এক সপ্তাহ পূর্বে বিষয়টি এই সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে মানবাধিকার কমিশনের নিকট উপস্থাপিত হয়েছে। কিছু দেশের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় সত্তেও বিষয়টি এজেন্ডাতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। এটি সেখানে রয়েছে।
দ্বিতীয়ত, গত মাসে ওয়ার্ল্ড ফেডারেলিস্টগণ তাদের কাউন্সিল সভায় একটি আপিল আবেদন পেশ করেন যেখানে নয় মিলিয়ন উদ্বাস্তুদের বোঝা বহনে অংশ নিয়ে ভারতের সাহায্যে এগিয়ে আসার জন্য তারা বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। অতি সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক নয় মিলিয়ন উদ্বাস্তুর খাদ্য ও আশ্রয়ের বিপুল পরিধি ও বোঝা প্রদর্শন করে একটি অর্থনৈতিক প্রতিবেদন জারি করেছে। পাকিস্তানের উপর চাপসৃষ্টির জন্য এবং সেখানে অস্ত্র ও সামরিক সরবরাহ বন্ধ করতে আমরা বিশ্বের সরকারদের কাছে আহ্বান জানিয়েছি। পরিশেষে আমরা জাতিসংঘের সংস্থাসমূহকে আহ্বান করেছি গৃহহীন ব্যক্তিদের যারা ভারতে এসেছে এবং যারা পূর্ব বাংলায় রয়েছে তাদের ত্রাণ সহায়তা প্রদান করার জন্য।
পূর্ব পাকিস্তানের এই সংকটের সমাধান ঐ অঞ্চলের ভবিষ্যৎ ধর্ম ও রাজনৈতিক অবস্থা বিষয়ে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের স্বাধীন পছন্দের উপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত। আমার নিজের সংগঠন সহ আরও কিছু সংগঠনের জাতিসংঘে পরামর্শ প্রদানের ক্ষমতা রয়েছে। সেখানে ফেডারেলিস্টদের মত প্রকাশের অধিকার রয়েছে। আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে, আমাদের চাপ প্রয়োগ অব্যহত থাকবে। আমাদের ফেডারেশনের সংসদীয় দল রয়েছে এবং আমরা জাতিসংঘে আমাদের প্রতিনিধিদের নির্দেশনা দিয়েছি যে তারা দেখবে যে তাদের রাষ্ট্রদূতগণ সেখানে উপস্থিত রয়েছে এবং তারা একত্রে বসে বাংলাদেশের জনগণের মুক্তির, দমন পীড়ন থেকে মুক্তির অধিকারের স্বপক্ষে ইতিবাচক সমর্থনের জন্য একটি পরিবেশ তৈরি করে। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি মনস্তাত্ত্বিক পটভূমি তৈরি করতে পারে। এটা করা কি সম্ভব হবে? আমি জানি না। আগামি সাধারণ নির্বাচনে জাতিসংঘের ভবিষ্যৎ বিষয়ক আলোচনা থাকবে। আমরা সেজন্য অপেক্ষা করব।
হোমার. এ. জ্যাক
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
বিগত ছয় দিন ঢাকা, করাচী ও কোলকাতা সীমান্তে থাকায় আমি সম্ভবত এই কক্ষে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের সংগে সন্দেহজনক মতপার্থক্য পোষণ করি। তা করতে গিয়ে আমি প্রায় ১০,০০০ মাইল পথ ভ্রমণ করেছি এবং আমার দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশে আমি বেশী সময় নেব না। আমি কেবল একটি মাত্র ঘটনা সংযুক্ত করতে চাই। গত রাত্রে ঢাকার হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টাল, যা আপনাদের কেউ কেউ জানেন যে মার্চের ২৫ তারিখে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ছিল, সেখানে অবস্থান করার সময়, দরজায় করাঘাত হয়েছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হন, যিনি আমাকে কোলকাতার একজন ভদ্রমহিলাকে উদ্দেশ্য করে লিখিত ইংরেজিতে টাইপ করা একটি বার্তা প্রদান করেন। তারা জানত যে আমি যাচ্ছি এবং সেখানে লেখা ছিল, অতীব দুঃখের সাথে আপনাকে জানাচ্ছি যে, চট্টগ্রামে পুলিশ আপনার ছেলেকে গুলি করেছে, ঠাণ্ডা মাথায় কেটে ফেলেছে, না ২৫শে মার্চে নয় বরং সেপ্টেম্বরের ২ তারিখে। সেখানে পরিশেষে লেখা ছিল, অনুগ্রহ করে আমাদের অনুশোচনা গ্রহণ করুন এবং তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তানের নিকট আমাদের অনুশোচনা পৌঁছে দিন। এটা বেনামি বন্ধুদের দ্বারা স্বাক্ষরিত ছিল। দুই দিন পূর্বে যখন আমি ভারতীয় অংশে যাই তখন উক্ত চিঠি ঐ মায়ের কাছে পৌঁছে দিতে পেরে আমি আনন্দিত। শুধু একটি ভয়ংকর বর্বরতা, শুধুমাত্র অতীতেই নয় বরং তা অব্যহত রয়েছে। কয়েকদিন পূর্বে করাচি ভ্রমনের সময় সেখানকার সম্প্রদায়ের বুদ্ধিজীবীদের সাথে দেখা করার সময় তাঁদের মাঝে যে অব্যহত নিঃস্পৃহতা উপলদ্ধি করেছি, আশা করি তা আপনাদের জানানোর মত সময় থাকবে। শুধুমাত্র যশোর কোলকাতা সীমান্তের একটি অংশে গতকাল ৬০০,০০০ উদ্বাস্তুদের যে দুর্ভোগ দেখেছি আশা করি তা আপনাদের জানানোর মত সময় থাকবে। মনে হয়েছে যে, কেবল রাজনৈতিক দমন পীড়নের কারণে উদ্বাস্তুই যথেষ্ট নয়, বরং সেখানে সম্প্রতি ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। এক সপ্তাহ পূর্বে, ঢাকায় যখন আমাকে নোয়াখালীতে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিস্তারিত বিবরণ জানানো হয়, তখন ঐ অঞ্চলে গান্ধীজীর জীবন সায়াহ্নে বলা কথা গুলো আমার মনে পরে। আমি ভাবতে চাই হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের কথা যা নিয়ে গান্ধীজী কাজ করতেন এবং যার জন্য তিনি মারা গিয়েছিলেন। মানবতার এই স্বপ্ন মরে নি, এবং গান্ধীজী ও শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তব্যের সেই চেতনাতেই এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বৃহৎ প্রত্যাশা নিয়ে এবং মহান মানবতার স্বার্থে আমরা সকলে একত্রিত হয়েছি।
সুয়োশি নারা
জাপান
মাননীয় চেয়ারম্যান, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ,
এই মহান দেশে এটি আমার দ্বিতীয় সফর। এবারের সফরে আমার সুনির্দিষ্ট দুটি উদ্দেশ্য রয়েছে; এই সম্মেলনে অংশ নিয়ে চলমান পরিস্থিতির সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করা অবশ্যই তার মধ্যে একটি। পূর্ব বাংলা অঞ্চলের উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধান ও শান্তিপূর্ণ অবস্থা পুনঃ স্থাপনে অন্যান্য দেশের মানুষের মতামত শোনা উপকারী অন্যথায় তা শুধুমাত্র ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নয় বরং বৃহৎ ক্ষমতাগুলোর সমর্থনপুষ্ট এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলেও দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে দেবে।
আমার সফরের অপর উদ্দেশ্য হল শরণার্থী শিবির গুলো ঘুরে দেখা ও পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত শরণার্থীদের সামগ্রিক ভাবে দেখার জন্য সীমান্ত পরিদর্শন করা এবং এই সমস্যা সম্পর্কে শরণার্থীগণ, বাংলা মিশন ও ভারতীয় জনগণের বক্তব্য শোনা। আমার এবারের সংক্ষিপ্ত ভারত সফরে আমি যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি তা আমাকে এবং জাপান-বাংলা মৈত্রী সংঘকে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের সাহায্যে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণে পর্যাপ্ত তথ্য দেবে। জাপানে আমি বাংলাদেশের জনগণের ব্যপারে অনেক করুণ গল্প শুনেছি। যেকোন ব্যক্তি বা জাতির পক্ষে নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে কেবল ভিন্নমতাবলম্বী হওয়ার কারণে বা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে মানবাধিকারের দাবী জানানোর অপরাধে সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সর্বাধিক কাপুরুষোচিত ও অসভ্য আচরণ। তবে, সেইসাথে আমি আশা করি ও বিশ্বাস করি যে, এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের প্রতি বিশ্ববাসীর ঘৃণার উদ্রেক করা নয়। এটা পশ্চিম পাকিস্তানের নেতাদের মনে করিয়ে দেয়ার জন্য যে, মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা প্রয়োজন এবং বাংলাদেশের দুর্দশাগ্রস্ত জনগণের সাহায্যার্থে বাস্তব সম্মত পদক্ষেপ নিতে বিশ্ব জনমত তৈরি করা যাতে অতি শীঘ্র এশিয়ায় যেখানে অব্যহত ভাবে বঞ্চনা ও দ্বন্দ্ব বিদ্যমান সেখানে সত্যিকার অর্থে উন্নয়ন ও চিরস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়। এটা খুবই বৈশিষ্টপূর্ণ যে, গান্ধী শান্তি ফাউন্ডেশনের সৌজন্যে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আমি এখানে এসে প্রথমেই রাজঘাট দর্শন করেছি ও মহান গান্ধীজীর প্রতি আমার শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি।
বাংলাদেশের স্বীকৃতির বিষয়টি অবশ্যই মানবাধিকার ও মর্যাদার দৃষ্টিকোন থেকেও বিবেচনা করা উচিত। আমি মনে করি আমি ইতিমধ্যেই এই সম্মেলনের প্রতি জাপানের মনোযোগ আকর্ষণে সফল হয়েছি কারন টোকিওর পাকিস্তান দূতাবাস জাপান সরকারকে আমার এখানে যোগদানের ব্যপারে প্রতিবাদ জানিয়েছে।
ক্লোভিস মাকসুদ
ইউ. এ. আর.
মাননীয় চেয়ারম্যান ও বন্ধুগণ,
আমার মনে হয়, এই সম্মেলন যা গান্ধী শান্তি ফাউন্ডেশন আহ্বান করেছে তা সময়াতীত হয়েছে। প্রায় ৮ মিলিয়ন পূর্ব বাঙ্গালীর অতিথিপরায়ণ ভারতে আশ্রয় গ্রহণের বিয়োগান্ত ঘটনা অবশ্যই মানব মাত্রা বহির্ভূত এবং ফলশ্রুতিতে তা মানবতাকে নাড়া দিয়েছে। পূর্ব বাঙ্গালীদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের নিষ্ঠুরতা সংক্রান্ত ঘটনাবলী প্রকাশ পেয়েছে। আমাদের মধ্যে যারাই এই বিয়োগান্ত ঘটনার কথা শুনেছেন বা এর অংশ বিশেষ দেখেছেন তারা প্রত্যেকেই পূর্ব বাঙ্গালীদের দুর্ভোগের সাথে নিজেদেরও সম্পৃক্ত করবেন। এটা আমাদের একান্তকর্তব্য যে, আমরা পূর্ব বাংলার জনগণের শান্তি ও তাঁদের অবস্থার উন্নতিবিধান ত্বরান্বিত করি।
যদিও নিজেদের মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে চিহ্নিত করছি তবুও আমরা কেবল প্রাথমিক দায়িত্ব পালনের ডাক পালনের পরিকল্পনা করছি। এধরণের পরিস্থিতিতে কেবল প্রাথমিক দায়িত্ব পালন যথেষ্ট নয়। ফিলিস্তিনি শরণার্থীরাও বাংলাদেশের জনগণের মত ইসরাইল ও জর্ডানীদের হাতে নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। দীর্ঘদিন যাবত পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা ইচ্ছাকৃতভাবে অস্বীকার করা হয়েছে। তারা তাঁদের অধিকার এবং দেশের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে পূর্ণ অংশগ্রহণের আকাঙ্খা থেকে বঞ্চিত। এরকম একটি পরিস্থিতি অবশ্যই সংশোধন হওয়া উচিত। আমাদের এ বিষয়ে জোর দিতে হবে যে, পূর্ব বাংলা রাষ্ট্র ভারত-পাকিস্তানের বিরোধের কোন অংশ নয় এবং হতে পারে না এবং হওয়া উচিত নয়। যদি ঐক্য বজায় রাখতে হয়, তবে অবশ্যই তা ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে করা বাঞ্ছনীয়। সেক্ষেত্রে আমরা বাংলাদেশের মুক্তির আকাঙ্খাকে পরিপূর্ণ ভাবে প্রশংসা করি।
তেমনিভাবে আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত যে, এশিয়ার ৭৫ মিলিয়ন মানুষ মানবিক মর্যাদা থেকে বঞ্চিত। এটি কোন আভ্যন্তরীণ ব্যপার নয়। এটি সামগ্রিক ভাবে বিশ্ববাসীর মানব বিবেকের একটি ব্যপার। এটা সত্য যে, সেখানে একটি সংগ্রাম হয়েছে এবং বাঙ্গালী জনগণ অবশ্যই সমতা অর্জনের পাশাপাশি মুক্তিলাভ করবে। সুতরাং শেখ মুজিবুর রহমানকে অবশ্যই মুক্তি দেয়া উচিত। এটি কোন রাজনৈতিক কারন নয় বরং মানবিক কারন। মার্চে যখন পাকিস্তানের উভয় অংশেই মুক্তভাবে নির্বাচন হয়েছিল তখন অনেকেই এই অগ্রগতিকে পাকিস্তানের জন্য একটি শুদ্ধি প্রক্রিয়া হিসেবে ধরে নিয়েছিলেন। এটি ছিল একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। সিংহল, ভারত ও পাকিস্তানে ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হচ্ছিল। যেহেতু বাঙ্গালীরা দীর্ঘদিন যাবত বৈষম্যের স্বীকার, পাকিস্তানের এই উন্নয়নকে আমরা স্বাগত জানিয়েছিলাম। নির্বাচনের পর একটি নতুন পাকিস্তান জন্ম নিয়েছিল। আমার মনে হয়, বাঙ্গালীদের মর্যাদা ও সমতার বিষয়টি তাঁদের সংগ্রামের মূল কারণ হিসেবে রয়ে গেছে। শুধুমাত্র সকল ক্ষেত্রে মানুষের সমতার অধিকার রক্ষার এই প্রেক্ষাপটে আমরা লড়াই করি। বন্ধুরা, এই বিষয়ে আরও জানতে আমরা এখানে এসেছি এবং শুরুতে যেমন বলেছিলাম আমরা বুঝতে চাই। হয়তো আমাদের জানা যতটুকু সম্পূর্ণ হওয়া উচিত ছিল ততটুকু নয়। পূর্ব বাংলার সাড়ে ৮ মিলিয়ন জনগণ যাদের গৃহ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিল তাঁদের মর্যাদা ফিরিয়ে আনা আমাদের সর্বাপেক্ষা ইতিবাচক অবদান হওয়া উচিত।
রেভ. ফাদার. ইসমাইল ইউয়িলস
আর্জেন্টিনা
* পর্যবেক্ষক হিসেবে সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
.
ল্যাটিন আমেরিকা এবং আর্জেন্টিনার হয়ে কথা বলতে পেরে আমি সম্মানিত বোধ করছি।আমি রাষ্ট্রপতি গিরির কথাই পুনরায় বলব যে এটি একটি বিশাল মানবীয় সমস্যা।এটি শুধুমাত্র বাংলাদেশেরই সমস্যা নয় বরং সমগ্র মনুষ্যজাতির সমস্যা কারন মনুষ্যজাতির সমস্যা মানে সর্ব জাতির সমস্যা ।এই সমস্যা কিভাবে সমাধান করা সম্ভব?এই ব্যাপারে অধিবেশনের মাথা ঘামানো উচিত।বাংলাদেশের জন্য জাতিসংঘ বিশ্বের বিবেক অবশ্যই জাগ্রত করতে হবে।গান্ধীজির ভগবত গীতা সম্পর্কিত মন্তব্যটি উল্লেখযোগ্য ।তিনি বলেছিলেন আমাদের সত্যকে অনুসরন করতে হবে,বাস্তবতা কে অনুসরন করতে হবে।কিন্তু সেটা মানব মর্যাদা রক্ষার লড়াই থেকে আমাদেরকে বিরত রাখার জন্য নয়।সেহেতু আমি মনে করি আমরা আন্তর্জাতিক নীতিবোধ জাগ্রত করে বাংলাদেশের মানুষদের সাহায্য করতে পারি এবং তখনই আমরা নিশ্চিত হতে পারব যে সত্য রক্ষা হবে।মিসেস গান্ধীর ভাষ্যমতে,বিশ্ব অভিমত এতটাই কার্যকরী যে এটি সবচেয়ে শক্তিশালী প্রভাব ফেলতে পারে।অর্থাৎ এই সম্মেলন থেকে আমরা বিশ্ব অভিমত চালনা করতে পারি।
সিনেরাত গুনাওয়ার্ডেনা
সিলন
জনাব সভাপতি এবং সহ প্রতিনিধি:
আমাকে আপনার প্রতিবেশি দেশ সিলনের জনগনের চিন্তাধারা প্রকাশ করার সুযোগ দেওয়ার জন্য আমি সম্মেলনের সংগঠকদের কাছের কৃতজ্ঞ।বাংলাদেশের জনগনের মানবিক অধিকারের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং এই কমিটিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধি,বানিজ্য সংস্থা এবং ধর্মীয় ব্যক্তিবর্গ রয়েছে।আমি এই কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি এবং এই বেসরকারী সম্মেলনের দায়িত্ব আমার উপর অর্পিত হয়েছে।
আমি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেব,সেটি হল বিশ্ব জনতার সঠিক পথে পরিচালিত অভিমতের উপর বিশ্বের মানুষের স্বাধীনতা নির্ভর করে।এদেশে আগত ৮০ লক্ষ শরনার্থীর বিষয়টি পাকিস্তানের একটি অভ্যন্তরীণ উদ্বেগ হয়ে উঠুক এটাই এদেশে সমর্থনযোগ্য।এটা বলতে হবে না যে এটি আলজেরিয়া,ইন্দোনেশিয়া বা অন্য কিছুর অভ্যন্তরীণ বিষয়ের মত।আমি এটি প্রত্যাখান করছি।জাতিসংঘে আত্ম-নিরূপণের অধিকার সন্নিবেশিত হয়েছে।
এটি একটি পবিত্র নীতি।আমি বিশেষ করে ক্ষুধার প্রশ্ন উল্লেখ করছি।এটি অভ্যন্তরীন বিষয় ছিল না।তাই বাংলাদেশ একটি অভ্যন্তরীন প্রশ্ন এই অবস্থা মানতে আমি অস্বীকার করব।জাতিসংঘের বিষয়সূচীতে এটি অন্তর্ভূক্ত করা যুক্তিযুক্ত।বাংলাদেশ তার আত্ম-নিরূপণের অধিকার কোন সন্দেহাতীত বিনয় ছাড়াই ব্যবহার করেছে।
এটি একটি মানবিক প্রশ্ন।এই কারনে ১০ লক্ষ মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে এবং ৮৬ লক্ষ মানুষকে তাদের মাতৃভূমি থেকে পালিয়ে যেতে হয়েছে।অবশ্যই এটি একটি বিরাট দুঃখজনক ঘটনা।এখানে আরো বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন আছে যা এত অল্প সময়ের মধ্যে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।এটা বলার জন্য যথেষ্ট যে এই প্রশ্নটি যাতে জাতিসংঘের সামনে আনা হয় সেটি দেখতে হবে।বাস্তবে আমি কোন কারন দেখি না কেন ভারত সরকারের মনোভাব নির্বিশেষে জাতিসংঘে এই বিষয়টি সঠিকভাবে তুলে ধরা হল কিনা এবং এই জাতিকে সাহায্য করার জন্য যে সকল সমর্থন ও সহযোগীতা প্রস্তুত করা হয়েছে তা প্রদান করা হয়েছে কিনা সেটা দেখার জন্য একটি পর্যবেক্ষক দল থাকবে না।এটি একটি মারাত্মক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।আমাদের আরো দাবি করতে হবে যেন প্রত্যেক সৈন্যকে পূর্ববঙ্গ থেকে প্রত্যাহার করা হয়।তাদের নেতা শেখ মুজীবুর রহমানকে অনতিবলম্বে মুক্তি দেওয়া উচিত ।যত দিন সামরিক দখলদারিত্ব শেষ না হবে কোন শান্তি আসবে না।এই সমস্যায় কোন সামরিক সমাধান সম্ভব নয়।এমনকি রাজনৈতিক সমাধানের ক্ষেত্রেও আমি ভীত যে এই দিনে এটি যথেষ্ট দেরি হয়ে গেছে।বাংলাদেশের স্বাধীনতার কোন কমতি থাকা উচিত নয় এবং আমি এই বিষয়কে সমর্থন করার জন্য সকল বিভাগের প্রতি জোরালো আবেদন করছি যাতে এই বিজয় নৈতিকতার,ঔচিত্যের এবং সভ্যাতার বিজয় হয়।
সিগরিড হ্যানিসদাল
অথবা
জনাব রাষ্ট্রপতি,ভদ্রমহিলা এবং ভদ্রমহোদয়গণ:
এখানে থাকা সুবিধার এবং বাংলাদেশের তীব্র সমস্যার সমাধানে অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে।আমি এর সভাপতি।সারা বিশ্বের সকল দেশের জনগনের মত আমাদের দেশের জনগন খবরের কাগজ,রেডিও ও টেলিভিশন থেকে প্রতিনিয়ত শোনা এই অবিশ্বাস্য দুঃখদায়ক ঘটনা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তিত।আইএনজিও কমিটির সভাপতি হিসেবে আমি মনে করি আমাদের বর্তমান কাজ হতে পারে জনমত তৈরি করার জন্য বেসরকারী সংস্থার মাধ্যমে কঠোর পরিশ্রম করা এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্তদাতাদের প্রভাবিত করার জন্য দলগুলোর প্রতি প্রবল দাবি জানানো।এবং সর্বশেষ কিন্তু ন্যূনতম নয়,আমি বিশ্বের নারীদের চ্যালেঞ্জ করছি: চলুন আর হাতাশাগ্রস্থ না থাকি।চলুন অগ্রগামী হই এবং আমাদের গ্রহের উপর সর্বকালের ক্রমবর্ধমান আক্রমনের বিরুদ্ধে চেঁচিয়ে “না” বলি।আমাদের দেশে সবচেয়ে গৌরবান্বিত উদাহরন আছে যা একজন নারীর ক্ষমতা এবং ইচ্ছাশক্তির দ্বারা সম্পন্ন করা সম্ভব।আপনাদের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পথনির্দেশক তারকা হতে দিন।
জন ডানহ্যাম
অস্ট্রেলিয়া
জনাব সভাপতি,ভদ্রমহিলা এবং ভদ্রমহোদয়গণ:
আমি মন্তব্য করব আংশিভাবে খুব সংক্ষিপ্ত কারন বাংলাদেশের সমস্যার আকার অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়ার অবদান সর্বদা গুরুত্বপূর্ণ নয় এবং আংশিকভাবে কারন অস্ট্রেলিয়ার সম্ভাবনা।আমাকে এই বিষয়ে জোর দিতে হবে।অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে আমরা এই সম্মেলন থেকে ঠিকভাবে জানতে চাই এই সমস্যায় যারা আগ্রহী তাদের সাথে সঠিকভাবে সমন্বয় করতে হলে কি পদক্ষেপ নিতে হবে এবং কোন পথে এগোতে হবে। অস্ট্রেলিয়ানরা দুর্ভাগ্যবশত উটপাখির মত আচরন দেখিয়েছে যা সভাপতি তার উদবোধনী সম্ভাষনে উল্লেখ করেছে।আমাদের সরকার অন্যান্য সরকারের মত দৃঢ়তাসহকারে বলেছে যে এটি পাকিস্তানের একটি অভ্যন্তরীণ বিষয়।এটি উদবাস্তুদের ত্রাণসামগ্রীতে কিছু অবদান রেখেছে।প্রধানমন্ত্রী সংসদে একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন যে শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির দাবিতে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য কিছু ধারণা ও বিষয় জানিয়ে তিনি ইয়াহিয়া খানকে কয়েকটি চিঠি পাঠিয়েছেন।অনানুষ্ঠানিক পর্যায়ে আরো পরিষ্কার চিত্র পাওয়া যায় এবং বাংলাদেশকে সমর্থন জানিয়ে নিয়মানুগ প্রচারণা রয়েছে।অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাদেশকে সমর্থন করার জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তারা প্রাথমিকভাবে অস্ট্রেলিয়ার জনগনের সুবিধার জন্য অস্ট্রেলিয়াকে এই সমস্যার অতীব মানবীয় বিষয়ের চেয়ে রাজনৈতিকভাবে আরো সম্পৃক্ত করতে তথ্য প্রকাশ করার কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের শর্তাধীন সরকারের সাথে অস্ট্রেলিয়ার আরো বেশি তথ্য ও যোগাযোগ দরকার।সংবাদপত্রগুলো সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে কারন ভারতে অস্ট্রেলিয়ার কোন স্থায়ী সংবাদপত্র প্রতিনিধি নেই।এই কমিটিগুলো ভারতে সংবাদপত্র প্রতিনিধি পাঠানোর চিন্তা করছে এবং বাংলাদেশকে সমর্থন জানিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় তে সংবাদপ্রচারের ব্যাবস্থা নিচ্ছে।আমি এই বিস্তারিত প্রতিবেদনটি একটি আবেদনের কথা উল্লেখ করে বন্ধ করব যা ৪০০ জনেরও বেশি শিক্ষাবিদ এবং অন্যান্য পেশাদার ব্যক্তি ও রাজনীতিবিদ দ্বারা স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
ফ্রেড ভান্স
বৃটেন
জনাব সভাপতি,ভদ্রমহিলা এবং ভদ্রমহোদয়গণ:
ইহা সত্য যে আমি ইউনাইটেড কিংডমের পার্লামেন্ট এর একজন সদস্য,একজন সমাজতান্ত্রিক সদস্য কিন্তু জোর দিয়ে বলব যে এখানে আমি পার্লামেন্টের একজন হয়ে আসিনি।আমি আনন্দিত যে এটি একটি অ-দাপ্তরিক সম্মেলন।আমি এখানে আমার গ্রেট বৃটেনের খুব ছোট একটি অংশ ওয়েলস এর নিজস্ব ক্ষুদ্র ভূমিকায় বাংলাদেশ সংস্থার একটি উপস্থানা হিসেবে এসেছি।ইহা সবার পরিচিত থাকা উচিত বিশেষ করে সারা পৃথিবীতে,আপনাদের দেশে এবং উন্নয়নশীল বিশ্বের অন্যান্য দেশেও ইতোমধ্যে পরিচিত বলে আমার মনে হয় কারন ওয়েলস আতিথেয়তার জন্য সুপরিচিত।অন্যান্য বিভিন্ন কারনের জন্যও ইহা সুপরিচিত।এখানে স্বাজাতিকতা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত।এটি একটি দেশ যাকে আমার বৈশিম্যহীন দেশ বলতেই হবে।এখানে বসবাসকৃত জনগনও তাদের ঔপনিবেশিক ইতিহাসের ব্যাপারে সচেতন।ইহা একটি দেশ যা সারা পৃথিবীজুড়ে এর বিশিষ্ট সংস্কৃতির জন্য সুপরিচিত। ইহা এর সংগীতের জন্যও পরিচিত।
আমরা ওয়েলস এ একটি বাংলাদেশ সংস্থা খুলেছি যেখানে ওয়েলস এর সকল রাজনৈতিক দল ওন্তর্ভুক্ত এবং প্রসংগক্রমে ওয়েলস এ একটি জাতীয়তাবাদী দল আছে। এই দলের লক্ষ্য হচ্ছে ইংল্যান্ড থেকে বিচ্ছেদ হওয়া। আমি একজন সমাজবিদ এবং আমার কাছে মানুষের স্বাধীনতা ও সমতা অবিভাজ্য যেহেতু বিশ্বশান্তি অবিভাজ্য। আজ বাংলাদেশে চরম ট্রাজেডি চলছে।আমি মাঝে মাঝে এর মনোবিজ্ঞান বোঝার চেষ্টা করেছি।সেখানকার ট্রাজেডির মাপকাঠি এতই বিশাল যে জনগন চিন্তা করার সাহস পায় না।আমি পূর্ব বাংলা ওরফে পূর্ব পাকিস্তানের কিছু দৃশ্য দেখেছি।মাঝে মাঝে তাদের আবেগ এতটাই জরাজীর্ণ যে খুবই সামান্য প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।আমাদেরকে সত্যের মুখোমুখি হতে হবে।সারা বিশ্বের জনগনের বিবেক জাগ্রত করতে হবে এবং আমার নিজের দেশে এটি বাস্তাবায়নের জন্য সুদৃঢ় প্রচেষ্টা অবশ্যই চালানো হবে।এই অবস্থা থেকে আমি শুধু আমার নিজের দেশের জন্য বলতে পারব।যেহেতু আপনারা জানেন,বৃটিশরা সর্বদাই সংকীর্ণচিত্ত,শুধুমাত্র ভৌগলিক দিক থেকেই নয় বরং সম্ভত অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে ভূগোল এবং বিশ্বের অন্যান্য বিষয়ের ব্যাপারে।এই সংকীর্ণচিত্তের কারনে আমাদের দেশের সাধারন জনগনের মধ্যে যে ধারণা দ্বারা তারা কাজ করতে উৎসাহী হয় তা ছড়িয়ে দেয়া বেশ কঠিন।কিন্তু যা ঘটছে –মানে বংলাদেশের চরম দূর্ভোগ ,তাতে দ্ব্যর্থহীনভাবে বৃটিশ সরকারের নিন্দা জানাই।আমাদের সংসদীয় প্রতিনিধি দল আছে যা আমার সহকর্মী আর্থার বটমলি দ্বারা পরিচালিত।সম্প্রতি আমার অন্য একজন সহকর্মী পিটার শোর এর সাথে আপনাদের দেখা হয়েছে। আমরা হাউজ অফ কমন্স এ একটি সমাধানপত্র পাঠিয়েছি যেমনটি আজ সকালে আপনারা জাতীয় বিচারের স্বার্থে শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির দাবিতে এবং একটি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বীকৃতির জন্য পাঠিয়েছেন।
এই সব কিছুই সাধারন পদক্ষেপ এবং আমার নিজের দল হাউজ অফ কমন্স এ এর চেয়ে বেশি কিছু ছাপাতে পারেনি।এই ধরনের ঘোষণা তৈরিতে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে।এই ধনের মারাত্মক সমস্যার সমাধান শুধুমাত্র বাংলাদেশের মানুষের সহযোগীতা দ্বারাই সম্ভব।আপনারা জানেন দুদিন আগে মিঃ বটমলি কমনওয়েলথ পার্লামেন্ট এসোসিয়েশনের মিটিং এ জোরালোভাবে বলেন যে তিনি তাদের ইয়াহিয়া খানকে জাগ্রত করেছেন যিনি এখন বলছেন যে সিপিএ একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে।
.
যুক্তরাষ্ট্রে প্রশাসনের সফল প্রভাবশালী আন নীতি নির্ধারক আমেরিকান কংগ্রেস থেকে নির্বাচিত হতো। তুলনামুলকভাবে কম পরিচিত সরকারী নিয়ন্ত্রক সংস্থার বেশ বড় একটা দল ছিল যারা হয় ব্যক্তিগতভাবে নয়ত কাজের মাধ্যমে নিজেদের প্রকাশ ঘটিয়েছিল যেখানে তারা বিগত কংগ্রেস সেশনে পাকিস্তান কে সকল প্রকার ভবিষ্যৎ সহযোগিতা থেকে বিতারিত করেছিল। আমি বলতে পারি যা ছিল এযাবতকালে যে কোন তাৎপর্যপূর্ণ কাজের মধ্যে অত্যন্ত বাস্তব সম্মত।
কংগ্রেসের নতুন অধিবেশন চলছে এবং পাকিস্তান কে সর্বোপরি সকল প্রকার আর্থিক সহযোগিতা প্রত্যাখ্যানে সংকল্পবদ্ধ হয়ে কাজ করে যেতে সম্মত হয়েছি। কতটুকু সফল হতে পারি দেখার বিষয়। আগে থেকেই অনুমান করা কঠিন।
তা সত্ত্বেও আপনারা হয়ত শুনে থাকবেন আমেরিকার সাধারণ মানুষ প্রবলভাবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। আপনারা যদি ব্যতিক্রম কিছু শুনে থাকেন আমি বলছি তা সঠিক নয়। বুদ্ধিজীবি, ছাত্র, তরুন আর অন্যান্যরা প্রশ্নাতীতভাবে জানে বাংলাদেশে কি ঘটছে। যদি এটা জনসাধারনের মতামত না হয় তবে এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন কাহিনী।
পরিশেষে কিছু সতর্কবাণী। আপনাদের বুঝতে হবে ভিয়েতনাম যুদ্ধ নিয়ে আমেরিকার সাধারণ জনগনের মধ্যে তিক্ত আর নেতিবাচক অভিজ্ঞতা রয়েছে। তারা আশা করতেই পারে যা ঘটছে তা অচিরেই সমাপ্তির মুখ দেখবে। আমরা বলতে পারি না তারা নিজেদের সাথে আরও একবার প্রতারণা করবে কিনা। তারা নিশ্চিতভাবে এর শেষ চাই। তারা দেখতে চাই ভিয়েতনাম থেকে আমেরিকার সেনাবাহিনীর সম্পূর্ণ অপসারণের মাধ্যমে এর সমাপ্তি ঘটুক। যতক্ষন এর সাথে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা রয়েছে ততক্ষণ এর প্রভাব বিদ্যমান এবং আমি মনে করি আপনারা তা বুঝতে সক্ষম। বিগত দশকে নয় বরং বিগত শতকে এক ভিয়েতনামেই যথেষ্ট অন্যান্য আন্তর্জাতিক পরিসরে সম্ভাব্য সম্পৃক্ততা উদ্বেগ আর প্রতিক্রিয়া বাড়িয়ে দিতে। বাংলাদেশে যা ঘটছে আর ভিয়েতনামে আমেরিকার অভিজ্ঞতা এ দুইয়ের মধ্যে তুলনা চলেনা তা আমরা জানি। ইহা সত্য। কিন্তু সিংহভাগ মানুষ এসব নিয়ে ভাবতে পারেনা এবং যদি তা ভুলভাবে অগ্রসর হয় আর মনে করতে থাকে তারা কোন সামরিক অভিযানের দিকে প্রতারিতভাবে অগ্রসর হচ্ছে তবে তারা কঠোরভাবে এর প্রতিক্রিয়া জানাবে। আমি আশা করি এটা সবাই বুঝবে।
এছাড়া আমি আবারো বলতে চাই – এটা আমার শেষ কথা – কোন ভুল নয়, রাওয়ালপিন্ডির শাসনব্যাবস্থায় আমেরিকার জনগনের কোন সহানুভূতি নেই, মোটেই নেই। সেনানায়ক আর নেতাদের দ্বারা চলতে থাকা গনহত্যায় পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভ্যাব্য যে কোন সহানুভূতি হারিয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত সাধারণ জনগন সচেতন কেউ এটা সমর্থন করেনা। যদি প্রশাসন এই নীতি চালিয়ে যায় এতদিন ধরে যা চলে আসছে তবে তা সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে যার কৌশলগত কোন গুরুত্ব রয়েছে। চায়নার ক্ষেত্রে প্রশাসন একটি নতুন পন্থা চালু করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু দেখুন, জনমতে যে বিভক্তি তা ঠিকমত সংহত অথবা সংগঠিত করা হয়নি এবং রাজনৈতিক বিষয়ে প্রশাসন যে ছায়ামূর্তি তা আমাদের কেউ কেউ ঠিকেই বুঝতে পারে। বাংলাদেশের জন্য যারা কাজ করে যাচ্ছে যদি তারা সফল হয়, আশা করি হবে, সেক্ষেত্রে ধারনা করা যায়, জনমত আবার নিয়ন্ত্রক হবে। এটাই হবে ভবিষ্যৎ ইস্যু যা হবে পরবর্তী বছরের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রচারণা। আমি ফলাফল অনুমান করতে পারছি না। আমি এটুকু বলতে পারি যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমবর্ধমান মানুষ এসব সমস্যা বুঝতে পারে এবং ফলাফল অনুকূলে আনতে তারা তাদের সর্বোচ্চ করে যাবে। ব্যক্তিগতভাবে আমি বিশ্বাস করি একদিন আমেরিকার কৌশল বদলে যাবে যা হওয়া উচিত ছিল একদম শুরুতে। পশ্চিম পাকিস্তানের অপরাধীর শাসনের দিন আর বেশিদিন চলবে না।
মোহাম্মদ রোয়েম*
ইন্দোনেশিয়া
জনাব সভাপতি এবং বিশিষ্ট প্রতিনিধিঃ
আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে এখানে এসেছি। আমি সেই ব্যক্তি কে জানি যিনি সমিতির প্রধান এবং যার আমন্ত্রন আমি অস্বীকার করতে পারি না। আমি যা বলতে যাচ্ছি তা একান্তই আমার ব্যক্তিগত মতামত। আমি আশা করছি এই সম্মেলন যে গুরুতর সমস্যার মুখোমুখি তার সমাধানে এটা অবদান রাখবে। পূর্ব পাকিস্তানের স্বীকৃতি অনেক ইন্দোনেশিয়ানের কাছে ব্যাপক আগ্রহের বিষয়। কিন্তু আমি আকৃষ্ট হয়েছি যখন আপনি জাকার্তা যান আর পূর্ব পাকিস্তান প্রশ্নে বৈদেশিক সম্পর্ক সমিতিতে বক্তৃতা দেন এবং অধিবেশনে আপনি যা বলেন তা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আপনি বলেছিলেন পাকিস্তানের বন্ধু ইন্ডিয়ার বন্ধু। আর ইন্দোনেশিয়া পাকিস্তান, ভারত উভয়ের বন্ধু, আমাদের মনে ছিল অবিভক্ত পাকিস্তান।
যদি কেউ সমস্যা সমাধানের আশা করে তবে তাকে সমাধানের পথ খোঁজার অংশিদার হতে হয়। কাজেই আমরা মনেপ্রানে সমর্থন দিয়েছি যাতে এই সম্মেলন কোন সমাধান বয়ে নিয়ে আসে। কোন এক সময় জাকার্তায় দুই বন্ধুর মধ্যে আলাপ চলছিল – একজন ইন্দোনেশিয়ান, অন্যজন পশ্চিম পাকিস্তানের। ইন্দোনেশিয়ান বন্ধু বলল শেখ মুজিবর রহমান কে গ্রেপ্তার সবচাইতে বিপদজনক ব্যপার। পাকিস্তানের বন্ধু সম্মতি জানাল।
জনাব সভাপতি, আমি মনে করি না বাংলাদেশ পাকিস্তানের কোন অভ্যন্তরীণ সমস্যা। যদি তাই হত তবে ইন্দোনেশিয়ার অস্তিত্ব থাকতো না।
আমি আজ আপনাদের একটা গল্প বলতে চাই যা আজ ইতিহাস এবং মাঝে মাঝে বলা হয়ে থাকে যা জাতিসংঘের অল্প কিছু সফলতার মধ্যে একটা। এটা ইন্দোনেশিয়ার সমস্যায় জাতিসংঘের সফল হস্তক্ষেপের গল্প। জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ হতে পারত ভাল দপ্তর নিশ্চিত করা, ক্ষমতা নিষ্পত্তির মধ্যস্থতার প্রয়োজন ছিল না। ভাল দপ্তর সাথে করে অধিক ক্ষমতা নিয়ে আসে আর পৃথিবীর জনমতের সমর্থন ও পায়। আমি মনে করি এটা একটা পন্থা জা আমরা অনুসরণ করতে পারব। ইন্দোনেশিয়া প্রজাতন্ত্র আর ওলন্দাজ এর মধ্যে বিরোধ চলছিল। হয়ত সেই দ্বন্ধ পূর্ব পাকিস্তানের শোকাবহ ব্যপারের চাইতে কিছু অর্থে ব্যতিক্রম। কিন্তু সুদীর্ঘ পরিসরে ব্যপারটা একই। যদি কোন দেশের অবস্থা বিশ্ব শান্তির জন্য হুমকি হহয়ে দাঁড়ায়, তা আর অভ্যন্তরীণ সমস্যা থাকতে পারে না। এটা পরিষ্কার যে পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা বিশ্ব শান্তির জন্য হুমকিস্বরূপ। এটা আরও ভয়াবহ হতে পারে। জাতিসংঘ আর নিরাপত্তা পরিষদের হস্তক্ষেপ না করার কোন কারণ থাকতে পারে না। ইন্দোনেশিয়ার ক্ষেত্রে ওলন্দাজ দাবি করেছিল এটা ওলন্দাজ সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ ব্যপার কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদ তাতে একমত ছিল না এবং একটি সমিতি নিযুক্ত করেছিল যার অস্তিত্ব ইন্দোনেশিয়ায় অপরিহার্য ছিল। তাই আমি এই ধারণা এই সম্মেলনে পেশ করতে চাই। আমি মনে করি এক্ষেত্রে শুধু ইন্ডিয়া একমাত্র দেশ নয় বরং আরও অনেক সহানুভূতিশীল দেশ আছে যেসব দেশ এই সমস্যা জাতিসংঘের সামনে নিয়ে আস্তে ইচ্ছুক।
*পরিদর্শক হিসেবে সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
.
ডেন্টেল মেয়ার
ফ্রান্স
মাননীয় রাষ্ট্রপতি ও প্রতিনিধিবর্গ
দয়া করে আমাকে মাফ করবেন যদি আমি ফরাসী বলে ফেলি। আমাদের প্রথম অবশ্যই সাধারন মানুষকে জানাতে হবে ভারত ও পাকিস্তানের মাঝে কোন সংঘাত নেই। কোন দেশেরই পাকিস্তানকে আর কোন অস্ত্র দেয়া উচিত নয় যা কিনা সেখানে ভাতৃঘাতী গণহত্যা ঘটা হচ্ছে। আমাদের অবশ্যই শরনার্থীদের ত্রান সরবরাহ করতে হবে এবং এটা শুধুমাত্র ভারতীয় সীমানার ভেতরে নয় বাংলাদেশের ভেতরেও করতে হবে। আমরা যুদ্ধে না জড়াই কারণ যুদ্ধ ভাগ্যাহত শরনার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধি ব্যাতীত কোন সমাধান নিয়ে আসবে না।
শিশুদের ন্যায় ছোট বালিকাদের দ্বারা অভ্যর্থনা পাওয়া অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। এ দ্বারা বোঝা যায় আমার মনে হয় আমাদের অবশ্যই মানুষের উন্নয়নের দায়িত্ব নিতে হবে এবং রাজনৈতিক জীবন গঠনের দায়িতে বাঙ্গালি জনসাধারনের উপর ছেরে দিতে হবে। এই নির্মম নৃশংসতার বিরুদ্ধে আমাদের ঘৃণা অসন্তোষ পাকিস্তান সরকারের কাছে পৌঁছে দেয়া উচিত এবং শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি অথবা বেসামরিক বিচারের আহবান জানানো উচিত। আমাদের জানতে হবে তিনি জীবিত আছেন। পশ্চিমা গণতন্ত্রের দায়িত্ব সায়ত্বশাসনের ইস্যুতে বাঙ্গালিদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা নির্বাচনকে রক্ষা করা।
পেভলে জেভরেমোভিক
যুগোস্লাভিয়া
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ থকে আমরা কোনধরণের অতিরঞ্জন ছাড়াই বলতে পারি তারা মানব সভ্যতাকে কয়েক হাজার বছর পিছিয়ে দিয়েছে। এই শরনার্থীরা কেন তাদের দেশ ছেড়েছে। আমি মনে করি তারা একটি গণতান্ত্রিক সমাজে বাস করতে চেয়েছে যেখানে তারা তাদের দেশের সম্পদ ব্যবহার করে তাদের পশ্চাদপদতা থেকে মুক্তি পাবে। তার পরিবর্তে বাংলাদেশের মানুষ একটি বর্বর যুদ্ধের সম্মুখীন হচ্ছে। কেউ বিশ্বাস করবে না এই মাত্রায় গনহত্যা সম্ভব,লক্ষ লক্ষ নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। শরনার্থীদের অব্যাহত স্রোত আমার দেশে চরম উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে এবং আমি বিশ্বাস করি অন্য দেশের মানুষের মাঝে একই অবস্থার সৃষ্টি করেছে। এখানে দুইটি দিক রয়েছে এবং একটি সম্পূর্ন মানবিক। ভারতে শরনার্থীদের জন্য আমরা যা পারি ইতিমধ্যে তার চেয়ে বেশি করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সুনির্দিষ্টভাবে জাতিসংঘের কিছু দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়া উচিত। আমি মনে করি একত্রিত হয়ে আমরা কিছু করতে পারি কিন্তু এটা কখনোই স্থায়ী সমাধান হবে না,গৃহহীনদের বাড়িঘড় ফিরিয়ে দেবে না। আমাদের উচিত তাদের ফিরে যাওয়ার অবস্থা সৃষ্টি করা। আইনী তত্ব একপাশে সরিয়ে আমি রাজনৈতিক দৃষ্টিকোন থকে আলোচনা করতে চাই। বাংলাদেশের মানুষের আত্বনিয়ন্ত্রনের মৌলিক অধিকারকে অস্বীকার করা উচিত হবেনা এবং মানুষের মতামতকে কোনভাবেই সামরিক নিপীড়নের মাধ্যমে দমিয়ে রাখা যায়না। পাকিস্তান সরকারকে এটা অবশ্যই উপলব্ধি করতে হবে।
আমরা বলতে পারিনা কি ধরণের পরিবর্তন হবে। এটা অনেকগুলো অঅনুমেয় বিষয়ের উপর নির্ভর করে যে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে কি হবে। কিন্তু আগে হোক পরে হোক সেটা জনগনের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অধিকার এবং আমি মনে করি কোন বৈষম্য ছাড়া অবশ্যই সেটা ফিরিয়ে দেয়া উচিত। যুগোস্লাভিয়াতে ইতিমধ্যে আমরা শেখ মুজিবুর রহমানের বিচারের ব্যপারে বিবৃতি দিয়েছি। আমরা দর্শক হয়ে বসে থাকতে পারিনা এবং এই সম্মেলন থেকে আমাদের কিছু সম্মিলিত পদক্ষেপ বিবেচনা করা উচিত। অবশ্যই এই পদক্ষেপগুলো এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভিন্ন হবে।
রিশিকেশ সাহা
নেপাল
বাংলাদেশে থেকে ভারতগামী শরনার্থীদের সহায়তা করতে আমরা কাঠমান্ডুতে একটি কমিটি গঠন করেছি। আমি মনে করি ভৌগলিক ও প্রাকৃতিক দিক থেকে ভারতের পরে নেপাল অন্য যেকোন দেশের তুলনায় বাংলাদেশের তুলনায় নিকটবর্তী। আমি এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বলতে চাই পুর্ব বঙ্গের ঘটনা নেপালের মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। নেপালের পক্ষ থেকে আমরা পুর্ব বঙ্গ বা এই ব্যাপারে সমগ্র পাকিস্তানের অবিসংবাদিত নেতা রহমানের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছে কারণ আমরা মনে করি একমাত্র তার মুক্তিই পুর্ব বঙ্গের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে।
আমি মনে করি না, এটা জাতিসংঘ সনদের আওতাধীন কোন বিষয় নয়। এটা আমার দীর্ঘ দিনের অভিমত যে মানুষের স্বাভাবিক অধিকারের সাথে সম্পর্কিত প্রশ্নগুলোর প্রতি আমরা যদি যথাযথ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে গুরুত্ব না দিলে বিশ্বের অন্যান্য দেশ যেমন দক্ষিন আফ্রিকায় তার জনগনের একটি নির্দিষ্ট অংশের অধিকার অস্বীকারের ব্যাপারে আমরা কোন ত্রুটি খুজতে পারিনা। আমি নিশ্চিত এই সম্মেলন এই দৃষ্টিকোন থেকে সমস্যাকে দেখবে।
আমাদের কমিটি বেশকয়জন প্রতিনিধিকে এই সম্মেলনে পাঠিয়েছে এবং আমি আপনাকে আশ্বস্ত করতে চাই পুর্ব বঙ্গের সমস্যায় সহায়তা করতে আমরা আমাদের সম্ভাব্য সবকিছু করবো। অবশ্যই আমরা একটি অপ্রাতিষ্ঠানিক দল। আমরা সর্বোচ্চ জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্রগুলোর কাছে বাংলাদেশের নতুন সরকারের স্বীকৃতির ব্যাপারে আবেদন জানাতে পারি।
ভি. ডেভিড
মালয়েশিয়া
মাননীয় সভাপতি ও সহকর্মী প্রতিনিধিবর্গ
বাংলাদেশে বিষয়ক এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের জন্য মালয়েশিয়ার জনগনের পক্ষ থেকে উষ্ণ শুভকামনা নিয়ে এসেছি। বাংলাদেশের জনগনের সংগ্রামের প্রতি আমাদের সহমর্মিতা ও অনুভুতি প্রদর্শন করতে আমরা এখানে এসেছি। ১৯৭১ এর মার্চ থেকে বাংলাদেশে যে ভয়াবহ হনহত্যা চলছে তার প্রতি আমাদের উদ্বেগ জানাতে ও আপনাদের মতামতকে সুদৃঢ় করতে এখানে এসেছি। আমি নিশ্চিত এই সঙ্কটজনক মুহুর্তে আমার সাথে একমত পোষন করবে যে বাংলাদেশ বিষয়ক তথ্য মালয়েশিয়াতে কখনোই সহজলভ্য ছিলোনা। আমাদের সরকার এই ব্যাপারে একদমই নীরব। কিন্তু জনসাধারণ উদ্বিগ্ন। তারা বাংলাদেশে স্বাধীনতার উচ্ছ্বাস দেখতে চায়। সেখানে বিভিন্ন চিন্তাধারার মত চালু রয়েছে। কেউ বিশ্বাস করে এটা ভারত পাকিস্তানের মধ্যকার যুদ্ধ। আবার অন্যরা বিশ্বাস করে বাংলাদেশের জনগন স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে। যদি আমরা আত্ননিয়ন্ত্রনের অধিকারকে মর্যাসা দেই তবে কোন জাতি কোন মানুষ বাংলাদেশের মানুষের অধিকারের ব্যাপারে নীরব থাকতে পারেনা। দ্বিতীয়ত,যদি কেউ বাংলাদেশ বিষয়ে কথা বলতে চায় সেখানে একজন নেতা রয়েছেন, শেখ মজিবুর রহমান,তিনিই একমাত্র আইনসম্মত ও জনপ্রিয় ভোটে নির্বাচিত গনতান্ত্রিক নেতা। যদি এশিয়াতে শান্তি ও সমৃদ্ধি অক্ষুণ্ণ রাখতে হয় তবে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে এবং কোন শক্তির দ্বারা যদি আলোচনা করতে হয় তবে তা অবশ্যই তার সাথে করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে কাজ করছে তাতে মালয়েশিয়াতে আমরা বিচলিত ও বিরক্ত। যদি যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের অনেকেওই গত কয়েক মাসে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদশের মানুষের প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছে,নিক্সন প্রশাসন অত্যন্ত ধুর্ত ভুমিকা পালন করছে এবং এটা আত্ননিয়ন্ত্রন অধিকারের যেকোন আলোচনাকে নিঃসন্দেহে প্রভাবিত করছে। সুতরাং যতক্ষণ এটি উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্যপুর্ন হয় সেই পর্যন্ত সামনে এগিয়ে যেতে প্রস্তুত হওয়া দরকার। এখানে মূল বিষয় হচ্ছে মানবতা। মানুষের প্রতি এই নৃশংসতা,গণহত্যা ও ভয়াবহ পরিস্থিতির বিচার হওয়া প্রয়োজন আর আমরা মালয়েশিয়ার জনগন স্বাধীন মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার বাংলাদেশের মানুষের এই ন্যায়সম্মত ও যৌক্তিক আন্দোলনে তাদের পাশে থাকব।
জনাব সুরিয়ান
মালয়েশিয়া
আমরা ডেমোক্র্যাটিক এ্যাকশন পার্টি মালয়েশিয়া কিছুটা বিস্মিত যে আমাদের সরকারের নেতারা এখনো মনে করে যে বাংলাদেশের বিষয়াবলী পাকিস্তানের অভ্যন্তরীন সমস্যা।
বাংলাদেশ স্বাধীনতা ঘোষনা করার পর কোনভাবেই পাকিস্তানের অংশ নয়। বাংলাদেশ তার স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে সকল আন্তর্জাতিক নীতি ও শর্তাবলী পূরন করেছে। একটি স্বাধীন হিসেবে আত্নপ্রকাশ করতে যেসকল বৈশিষ্ট থাকা দরকার তার সবই রয়েছে।
সুনির্দিষ্ট সীমানার সাথে রয়েছে নেতৃত্বের প্রতি জনসাধারণের চরম আনুগত্য। তাদের নিজস্ব জাতীয় পতাকা এবং সকল শাখার বেসামরিক প্রশাসনের জাতীয় সরকার রয়েছে। তাদের রয়েছে জাতিগত ও ভাষাগত সমসত্বতা। সাম্প্রতিক নির্বাচনে আওয়ামীলীগের শেখ মুজিবুর রহমান গনপরিষদের ১৬৯ আসনের ১৬৭টিতে জয় লাভ করেছেন যা প্রায় ৯৯ শতাংশ ।
বাংলাদেশের জন্মের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়েছিল ১৯৭১ এর ১৭ এপ্রিল জাতির নতুন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের মাধ্যমে পুর্ব বঙ্গের মুজিবনগরে । ইতিহাস রচিত হয়েছিল ঠাকুরের “আমার সোনার বাংলা” গানের সাথে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উন্মোচনের মাধ্যমে। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করেছেন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল কতিপয় গোষ্ঠী ও সকলের জন্য যে প্রাদেশিক সরকারের আর কোন কাগুজে অস্তিত্ব নেই।
এই অনুষ্ঠানে সরকারী কর্মকর্তাদের সাথে জাতীয় পরিষদের সদস্যবৃন্দ,টেলিভিশনের চিত্রগ্রাহক ও বিদেশী প্রতিনিধি ও প্রায় ১০০০০ মুক্তিযোদ্ধা যোগ দিয়েছিলেন।
মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণার বিধান ২০(৩) এ বলা হয়েছে,’’ জনগণের ইচ্ছাই হবে সরকারের ক্ষমতার ভিত্তি,এই ইচ্ছার বহিপ্রকাশ হবে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে ও প্রকৃত নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং গোপন ভোট বা সুষম নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকারের ক্ষমতার ভিত্তি জনগণের ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখানো হয়নি। তার পরিবর্তে সেনাবাহিনী নামানো হয় জনতার আকাংখাকে দমন করতে,কিন্তু ইয়াহিয়া ও তার সহচরেরা যে বিষয়টি উপেক্ষা করেছেন তা হল আপনি হয়তবা কিছু মানুষকে হত্যা করবেন কিন্তু তাদের নিজের কথা বলার ও আত্ন-সম্মানের ইচ্ছাকে হত্যা করতে পারবেন না। ভিন্নমতাবলম্বীদের বিনাশ করে সমস্যার সমাধান হয়না। এমন প্রত্যেক শেখ মুজিবুর রহমানকে কারাবন্দী করলে আর নতুন ১০ জন তার জায়গা নেবে এবং একই কারণে লড়াই করবে।
সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষনার ২০(৩) এর প্রস্তাবনার উপ-অনুচ্ছেদ যা নারী-পুরুষের সমানাধিকারের কথা বলছে তা পুনরায় আশ্বস্ত করছে,’’ মৌলিক মানবাধিকার,মানুষের মর্যাদা ও ব্যাক্তি মানুষের মূল্যে বিশ্বাস।” মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা প্রস্তাবনায় আরও নিহিত আছে সদস্য রাষ্ট্রগুলো,’’মৌলিক স্বাধিনতা ও মানবাধিকার পালনের সার্বজনীন মর্যাদা প্রচারে’’ তাদের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকবে। অতএব, বাংলাদেশের এই ঘটনা কখনো তাদের অভ্যন্তরীন বিষয় হিসেবে ব্যাখ্যা করা যাবে না। বর্নবাদের চর্চা করা হচ্ছে আর মৌলিক মানবাধিকারকে অস্বীকার করা হচ্ছে। এটা আন্তর্জাতিক উদ্বেগের বিষয়। যদি জাতিসংঘ দক্ষিন আফ্রিকায় হস্তক্ষেপ করতে অধিকার প্রাপ্ত হয়,যদি আর সমর্থনযোগ্য না হয় তবে পুর্ব বঙ্গের ক্ষেত্রেও সমভাবে হস্তক্ষেপ করা যেতে পারে। এটা দুঃখের বিষয় যে জনাব ভুট্ট যিনি জাতিসংঘে রোডেশিয়া আর দক্ষিন আফ্রিকায় স্বাধীনতাকামী সংখ্যাগুরু আফ্রিকানদের নিপীড়নের বিরুদ্ধে তারস্বরে চিৎকার করে মাথায় তুলছেন,তিনি ইয়ান স্মিথ আর জন ভরস্টার এর ভিন্ন কোন পথ অনুসরণ করছেন না। এটা চালুন বলে সুচ তোমার পিছন কেনো ছেদা এধরণের বিষয়। এটা কি বলা যেতে পারে যে পশ্চিম পাকিস্তানী জান্তা পাকিস্তানের আওতার ভেতর থেকে নিয়মতান্ত্রিক বিনাশ ও বাংলাদেশের নিরীহ নিরস্ত্র মানুষের প্রতি সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করছে বলে বিশ্বের অন্যদেশগুলোর হস্তক্ষেপের কোন আইনী বাধ্যবাধকতা নেই ?
বাংলাদেশের উপর দিয়ে একে একে যে নিদারূন ও ভায়ানক অত্যাচার বয়ে চলেছে তাতে নিষ্ক্রিয় দর্শক হয়ে বসে থাকা কঠিন। ইয়াহিয়া খান প্রকৃতপক্ষে যা করছে তা হল গনহত্যা যেটা আন্তর্জাতিক আইনে ঘোষিত অপরাধ। ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘ সাধারন পরিষদের ঘোষণা বলছে গনহত্যা একটি অপরাধ ও দায়ী ব্যক্তিরা আন্তর্জাতিক আইনে শাস্তিযোগ্য। পাকিস্তানের যদি মানবাধিকার রক্ষার কোন আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা থাকে তবে এধরণের বিধি ভঙ্গ কোনভাবেই পাকিস্তানের অভ্যন্তরীন বিষয় হতে পারেনা।
পশ্চিম পাকিস্তানের কর্মকান্ড আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও শান্তির প্রতি হুমকি সৃষ্টি করছে। ৩৯ ধারার ৭ম অধ্যায় অনুযায়ী যেকোন প্রকার শান্তির বিচ্যুতি নির্ধারনের জন্য জাতিসংঘের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব রয়েছে এবং ৪১ ও ৪২ ধারা অনুযায়ী একই ধরণের দায়িত্ব রয়েছে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা পুনর্বহালে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের ক্ষেত্রে। পৃথিবীর এই অংশ এখন আরেকটি ভিয়েতনাম হয়ে গেছে এবং এটা আরো দুঃখের বিষয় যে পশ্চিম পাকিস্তান যে ভিয়েত্নামে হত্যাকান্ডের ব্যাপারে নিন্দা জানিয়ে উচ্চকিত হয়েছে কিন্তু এখন মেশিঙ্গান তাক করে চার দিনের মধ্যে ভিয়েতনামে চার বছরে নিহত মানুষের চেয়ে বেশি মানুষ হত্যা করেছে।
বাংলাদেশের এই ব্যাপক হত্যাকান্ড ভারতে শরর্নার্থী সমস্যা সৃষ্টি করে অনিবার্য বাড়তি খরচের চাপ তৈরি করেছে। ৮০ লক্ষের অধিক মানুষ ভারতে পালিয়ে গেছে। দরিদ্র একটি দেশে এই সংখ্যা প্রতিদিন ৪০ হাজার করে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এই শরনার্থী সমস্যা অন্যান্য দেশের ঐক্যমতের ভিত্তিতে মোকাবেলা করা উচিত। এতা আনন্দের যে স্ক্যান্ডীনেভিয়ান দেশগুলো শরনার্থীদের অর্থ সহায়তা দিয়েছে কিন্তু এটা পর্যাপ্ত নয়। পশ্চিম বঙ্গের বন্যা পস্থিতিকে আরো খারাপ করেছে।
আশা করা যায় আমাদের বৈঠক ফল্প্রসু হবে এবং নিরর্থক চর্চা হবে না। আমরা ফলাফল দেখতে চাই-বাস্তব ফলাফল।
আমাদের সুপারিশ