You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.08 | বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন | বিশ্বব্যাংক এর দক্ষিণ এশীয় দপ্তর - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন বিশ্বব্যাংক এর দক্ষিণ এশীয় দপ্তর ৮ জুলাই, ১৯৭১

পূর্ব পাকিস্তানে দরিদ্রতম দেশসমূহকে সামান্য সুদে টাকা ধার দিবার আন্তর্জাতিক ব্যাঙ্ক মিশনের প্রতিবেদন
(দক্ষিণ এশিয়া বিভাগ, বিশ্ব ব্যাংক দ্বারা প্রস্তুতিত, জুলাই ৮,১৯৭১)

(ঝ) বিশ্ব ব্যাংক মিশনের সদস্যদের জুন মাসের প্রথম দিকে পূর্ব পাকিস্তানে বারো দিন ব্যাপী সফরকালে সংগৃহীত তথ্যের উপর ভিত্তি করে এই প্রতিবেদনটি করা হয়েছে। ( বন্ধনীর মধ্যে থাকার দৈরঘ):
আই.পি.এম. কারগিল, পরিচালক, দক্ষিণ এশিয়া বিভাগ, আইবিআরডি (জুন ৬-১০), জন ডব্লিউ. গান্টার, ভারপ্রাপ্ত পরিচালক, মধ্যপ্রাচ্য ডিপার্টমেন্ট, আইএমএফ (জুন ৬-১০), ম্যানফ্রেড জি. ব্লবেল, প্রধান অর্থনীতিবিদ দক্ষিণ এশিয়া বিভাগ, আইবিআরডি (জুন ৬-১০), উইলিয়াম এইচ. এডওয়ার্ড, কৃষি বিশেষজ্ঞ, ইসলামাবাদ অফিস, আইবিআরডি ( মে ৩০-জুন ১১) ডগলাস এইচ. কেয়ারি , অর্থনীতিবিদ, ঢাকা অফিস, আইবিআরডি (মে ৩০- জুন ১১), শিগেনমিটসু কুরিয়ামা, সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি, ঢাকা অফিস, ইবিআরডি (মে ৩১- জুন ১০) ।

জে. হ্যান্স পিচলার, অর্থনীতিবিদ, ইসলামাবাদ অফিস, আইবিআরডি (মে ৩০- জুন ৩০), জন ও. রোজ, অর্থনীতিবিদ। আইএমএফ(মে ৩১ – জুন ১০), মাইকেল এইচ. উইহেন, চিফ, পাকিস্তান বিভাগ, আইবিআরডি (মে ৩১- জুন ১০)।
(খ) ঢাকায় সফরকালে আমরা প্রায়শই ভ্রমণরত এবং পূর্ব পাকিস্তানের উনিশটি জেলার বারোটিতে কোন কোনটিতে একবারের বেশিবার সফরকৃত ঢাকার এক থেকে তিন দলের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করেছি।মৌসুমি আবহাওয়ার কারণে সাইক্লোন এলাকায় (নোয়াখালী ও পটুয়াখালী) একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যতিক্রম অভীষ্ট সফর বাতিল করা হয়েছে- তালিকার শুধুমাত্র পরিদর্শনের জন্য সুলভ সময়ের স্থানগুলো ভ্রমণ করা হয়েছে। সরকার আমদের পরিবহন ব্যবস্থা এমনকি গভর্নরের বিমানসহ বিভিন্ন প্রদেশ সফর এবং প্রতিটি জেলা ভ্রমণের অনুরোধ রক্ষা করতে সর্বচ্চ সহায়তা করেছেন ।

(গ) যদিও পরিস্থিতি স্বাভাবিক নেই, এই প্রতিবেদনের জন্য তথ্যের যথাযথতা এবং দৃঢ়তা প্রাপ্তির জন্য ভ্রমণ, নিরীক্ষণ, জিজ্ঞাসা, উত্তর যাচাই এবং মূল্যায়ন করার ধরণটাও স্বাভাবিক নেই। অধিকাংশ ব্যাংক মিশনের মুখোমুখি হওয়ার থেকে এটি অবশ্যই আরও কঠিন কাজ এবং এটি বলতে হবে যে কঠিন আইনের অনুপস্থিতিতে সেই পরিস্থিতিতে সাধারণ প্রভাবের জন্য আমাদের কে প্রায়শই কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে হচ্ছিলো। জনশ্রুতি আছে যে, প্রযুক্তিগতভাবে কিছু তথ্য ( উদাহারনস্বরূপ সেনাবাহিনীদের করম বিষয়ক এবং বিদ্রোহী কার্যকলাপ)অফিসিয়াল বিবৃতি বা বিবরণ যা আমদের কাছে সহজলভ্য তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি: যাই হোক , পূর্ব পাকিস্তানের এই পরিস্থিতির একটি চক্রাকার বিবরণ সুসম্পন্ন করার জন্য কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন, এবং আমরা শুধুমাত্র সেইসব তথ্য অন্তর্ভুক্ত করেছি যা আমরা দেখেছি এবং চিনহিত অবস্থানে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রদর্শিত এবং পরিলক্ষিত।
(৪)সামগ্রিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে বলা যায় যে, যে পরিস্থিতিতে এই মিশনটি এসেছে তাতে একে মোটেও উত্সাহিত করা হয় নি। সর্বোপরি, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রদেশেরদ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ব্যাপারটি কষ্টসাধ্য হয়ে পরে। সার্বিক পরিস্থিতি বিচারে দেখা যায় যে, প্রদেশের সমগ্রিক পরিকাঠামো অত্যন্ত গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।বিশেষ করে পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থারক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি।অর্থনীতিকে আবার পুনরুদ্ধার করার সমস্যাগুলোর জটিলতা সম্পর্কে কর্তৃপক্ষেরকিছুটা ধারনা ছিল। অবশ্যবাধা পাওয়ার ভয়ে তারা কোনকার্যকর ব্যবস্থা অথবা সমস্যাটি সমাধান করার জন্য কোন কার্যক্রমও পরিচালনা করেনি।এই কার্যক্রমে একে অপরের পুনর্বহালের ব্যাপারটি অর্থনৈতিক সমস্যাটিকে আরও ভয়ঙ্কররুপে বাড়িয়ে তোলে।
(৫) প্রায় সমগ্র প্রদেশ ভ্রমণ করার পর মিশনটি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, প্রদেশের অবস্থা অত্যন্ত আশংকাজনক। তাছাড়া প্রধান প্রধান এলাকাগুলো ভ্রমণের সময় একে অপরের পুনর্বহালের ফলে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হত্তয়াপ্রায় অসম্ভব হয়ে পরে। এ থেকে এটি অনুমান করা যায় যে, এদের মধ্যে একজনের অধিক উন্নতিতে “স্নোবল” প্রভাব থাকতে পারে। সুতরাংমিশন যেভাবে চিন্তা করেছে, রেলওয়ের পক্ষে তার চেয়ে ভালোভাবে কাজ করা সম্ভব ছিল। যদি উপকূলীয় নৌবহরের বহনক্ষমতা পুনরায়যথেষ্ট বৃদ্ধি করা হয়, তবে দেশের অর্থনীতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল অনেক বেশি। কিন্তু, এর ফলে তাদের কতিপয় মানসিক সীমাবদ্ধ্যতা তৈরী হয়। একইভাবে, যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের ধবংসপ্রায় অর্থনীতির দুরাবস্থা সম্পর্কে সকলেই অবগত ছিল। সুতরাং, এই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রথমত তাদের শারীরিক সমস্যাকে বাধা বলে মনে হলেও একসাথে কাজ করার মনোবল এবং সঠিক নেতৃত্ব দ্বারা সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারত। সুতরাং যদি কোনভাবে সকলের মন থেকে ভয়, অবিশ্বাস ও অনিশ্চয়তার ব্যাপারগুলো সরানো যেত এবং প্রশাসনকে সম্পূর্ণভাবে কাজ করার ক্ষমতা দেয়া হত, তাহলে তাদের শারীরিক সমস্যাগুলো আরও কম সমস্যা হিসেবে বলে মনে হত। তা সত্ত্বেও,মিশণের সফরের সময় সেখানে কোন শক্ত প্রমাণ ছিল না যে, উক্ত ঘটনাটি ঘটতে যাচ্ছে। অত:পর মিশন নিজেই বুঝতে পারলো যে, তারা দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য কিছু করতে ব্যর্থ হচ্ছে।

বর্তমান অবস্থা

১। বর্তমান এই অর্থনৈতিক দুরাবস্থার জন্য মিশন চারটি সমস্যাকে দায়ী বলে মনে করে। প্রথমটি হল শহর এবং গ্রামের মধ্যকার সম্পত্তি বণ্টনের অসামঞ্জস্যতা। এলাকাগুলোকে ছোট ছোট অংশে বিভক্ত করে সেগুলো বিদ্রোহীদেরকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা কেবলমাত্র শহরের প্রধান প্রধান এলাকাগুলোতে তাদের সামরিক কার্যকলাপচালিয়েছিল। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, যুদ্ধের প্রথম দিকেবিদ্রোহীদের দ্বারাপরিবহন ও যোগাযোগ ব্যাবস্থায় অপূরণীয় ক্ষতি।তৃতীয় কারণ হচ্ছে জাহাজ এবং অন্যান্য যানবাহণের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি। চতুর্থ কারণ হচ্ছে, প্রদেশের পরিবেশ পুনরায় শান্তিপূর্ণ হওয়া নিয়ে জনসাধারণের মধ্যকার ভয় ও অনিশ্চয়তা।
২। বড় বড় শহরগুলোকে ভেঙ্গে ছোট ছোট মার্কেট এবং শ্রমিক আবাসনের ব্যাবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল অনেক বেশি।প্রধান প্রধান সড়ক ও রেলপথের উপর অননুমোদিত ঘরবাড়ি ও দোকানপাট বেশিরভাগ শহরকে ধ্বংস করেছিল। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছিল গ্রামগুলোর। বিশেষ করে গ্রামের বাজার গুলোর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল মারাত্মক।বিভিন্ন জেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল বিভিন্নরকম। তবে বেশিরভাগ গ্রামগুলোকেই সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল।
৩। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছিল পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যাবস্থার। দশটি প্রধান সড়ক এবং তেরটি প্রধান রেলওয়ে সেতু ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল। এছাড়াও প্রদেশের বেশিরভাগছোটছোট ব্রিজ এবং কালভার্ট নষ্ট করে ফেলা হয়েছিল। এমনকি কিছু কিছু রেলওয়ে সেতু এবং রাস্তা সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছিল। উপরন্তু, যুদ্ধের সময় সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল রেলগাড়ির ইঞ্জিন, ফেরী এবং জাহাজ। টেলিযোগাযোগ ব্যাবস্থা কিছুটা ঠিক থাকলেও রেলওয়ে ব্যাবস্থা প্রায় নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো।
৪। সেসময় অসংখ্য জাহাজ এবং যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত কিংবা ধ্বংস করা হয়েছিল।এসব ক্ষয়ক্ষতি অর্থনীতিতে অত্যন্ত বিরূপ প্রভাব ফেলে। উদ্ধার পাওয়াজাহাজ এবং যানবাহন বিদ্রোহীদের দ্বারা সীমান্ত পার করে দেশে নিয়ে আসা হয়েছিল। তার মধ্যে যেসকল ব্যাক্তিমালিকানাধীন যানবাহনের মালিকগণ পালিয়ে গিয়েছিল তার বেশিরভাগ পরিত্যাক্ত হয়েছিল। সবেচেয়ে বেশি ট্রাক এবং ল্যান্ড-রোভার্সসম্ভবত সেনাবাহিনী দখল করে নিয়েছিল। যেসকল এলাকাতে ভারী যুদ্ধ হয়েছে, বিশেষ করে ঢাকার উত্তর ও পশ্চিম দিক এবং চট্টগ্রামের বেশিরভাগ যানবাহন সেনাবাহিনীর অনুরোধেবাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সেখানে, ঠিকাদারদের নতুন গাড়িগুলোকে অন্যান্য প্রদেশ এবং বন্দর থেকে নিয়ে নেয়া হয়। জিপ এবং এলসিটিগুলোকে ঘূর্ণিঝড় কবলিত এলাকায় ত্রাণ কাজে ব্যাবহার করার জন্যনিয়ে নেয়া হয়েছিল। বর্তমানে আর্মি জীপ ও ট্রাকগুলোকে উত্তরচট্টগ্রামের এলাকাগুলোতে সড়ক ও রেলপথে নামানোর জন্যে অপেক্ষা করে রাখা হয়েছিলো। অবশ্য রিকুইজিশন করা যানবাহন এখনও তাদের মালিকের কাছে ফেরত দেয়া হয়নি।
৫। সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল মানুষ উদ্যোক্তা হতে ভয় পাচ্ছিলো। এর ফলে ব্যাবসা বাণিজ্যের ব্যাপক ক্ষতি সহ দেশের অর্থনীতিতে ভাটা পরে গিয়েছিল। এটা স্পষ্ট যে, প্রদেশের কিছু কিছু এলাকার অর্থনৈতিক উন্নতি হলেও তখনও লোকদের মধ্য থেকে যুদ্ধের প্রাথমিক ভয় কেটে যায়নি। বরং এমনটা মনে হচ্ছিলো যে সেনাবাহিনীগ্রামাঞ্চল এবং প্রধান প্রধান মহাসড়কগুলোর মধ্যে তাদের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করছিলো। যদিও সেসময় সেনাবাহিনীর উপস্থিতিই জনগণের মধ্যে ভয় সৃষ্টি করার জন্য যথেষ্ট ছিল। যাহোক, সেসময় সেনাবাহিনী জনগণের উপর ক্রমাগত অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছিলো। বিশেষ করে পরিচিত বা সন্দেহভাজনআওয়ামী লীগের সদস্য, ছাত্র এবং হিন্দুদের মধ্যে এই অত্যাচারের ভয় ছিল বেশি। কিন্তু তারা একই সময় বিদ্রোহী কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। এটা কেবলমাত্র তাদের নিজেদের ঐক্য নষ্ট করছিল না, বরং সৈন্যদের মধ্যেও প্রতিশোধস্পৃহা জাগিয়ে তুলছিলো। সংক্ষেপে বলা যায় যে, দেশের তৎকালীন অবস্থা ছিল অত্যন্ত উত্তেজনাকর এবং সামগ্রিকভাবে প্রদেশের স্বাভাবিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু করাটা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছিল।
খ. ফলাফল

৬. এর মধ্যে যে জিনিস ঢাকায় বা গ্রামাঞ্চলে সফর করে মনে হয় সেখানে খুব কম লোকই আছে। ঢাকায় অবস্থা ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়, প্রমাণিত হয় যেখানে দিনে স্বাভাবিক জনসংখ্যায় আমাদের সমষ্টিগত ছাপ ৫০ শতাংশের বেশি ; চট্টগ্রাম, যেখানে শুধুমাত্র একতৃতীয়াংশ জনসংখ্যা আবির্ভূত হবে এবং এটি মনে হয় যে যানবাহনে পাকিস্তানী পতাকা তাদের ‘আনুগত্য’ প্রদর্শনের জন্য প্রয়োজন। কুষ্টিয়া যেখানে জনসংখ্যা সাভাবিকের থেকে ১০ শতাংশের বেশি নয়; ভোলা, যেখানে কার্যত মোট জনসংখ্যার স্থান হবে বলে মনে হয়। একটি অশুভ উন্নয়ন হচ্ছে যে, পটুয়াখালী এবং অন্যান্য উপকুলীয় অঞ্চল জেখাঙ্কার খাদ্য পরিস্থিতি ইতিমধ্যে সমালোচনামুলক, সেখানকার জনসংখ্যা নির্ভরযোগ্যভাবে দ্বিগুণ হয়েছে বলে জানা যায়, এবং এতে কোন সন্দেহ নেই যে আগামী মাসে এমনকি স্বাভাবিক অতিপ্রজতায় খাদ্যশস্য সরবরাহ করা যেতে পারে।

৭. এই এক ছাপ দিনে দিনে অরজন হয়। সবকিছুর পরেও পরিস্থিতি এখনো অস্বাভাবিক। অধিকাংশ এলাকায় কারফিউ আছে। সিলেটে সন্ধ্যা ৭.৩০ টা থেকে ভোর ৫.০০ টা; চট্টগ্রামে রাত ১০.০০ টা থেকে ভোর ৬.০০ টা; ঢাকায় ১১ই জুন কারফিউ তুলে নেয়া হয়। কারফিউ ঘণ্টা যাই হোক, মধ্য বিকেলেই রাস্তা পরিশকার এবং অন্ধকারে পরিত্যাক্ত করা হয়।

৮. পূর্ব পাকিস্তান জীবিকা অর্থনীতির অবস্থা যেখানে হাজার সাধারণ আয়ের মানুষ (বর্ধিত পরিবার, গ্রাম, ইউনিয়ন ইত্যাদি) অল্প অর্থনীতি থেকে আরও অথবা কম স্বয়ংসম্পূর্ণ তা ঢিলেঢালাভাবে একটি বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ক যা সম্পূর্ণরূপে ভাঙ্গা হয়েছে তার একটি কঠিন ভূখণ্ডে সংযুক্ত করা হয়, এবং অর্থনীতি শুধু সাময়িকভাবে বন্ধ হয়নি মৌলিকভাবে স্থানচ্যুত হয়েছে। প্রায় তিন মাস ধরে সেখানে পাটে, চায়ে, অথবা অন্যান্য রপ্তানি ফারম থেকে ফ্যাক্টরিতে অথবা খুব অল্প পরিমাণে বিদেশে রপ্তানিতে কার্যত কোন আন্দোলন ছিলনা। এবং ঢাকা এলাকা ো কার্যত কেউ কেন্দ্রীয় সংগ্রহ থেকে মধ্য প্রদেশে ঘাটতি এলাকার মধ্যে ফেরত। সাধারণত, আন্তঃপ্রাদেশিক, আন্তঃপন্থী ওবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায় এবং এখন পর্যন্ত সবে আবার কাজ করতে শুরু করেছে। ক্ষুদ্র অর্থনীতির একটি সাধারণ হ্রাস স্তরে সর্বস্বান্ত হয়েছে তবে, বিশেষভাবে কৃষিতে- চাল উৎপাদনে বাধাগুলো আসে সেইসাথে তিন মাসের জন্য অসৎ খাদ্য শম আন্দোলনের মানে এই যে, এক্ত খুঁতেল পরিবহণ, বাণিজ্য এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা যে সব স্বাভাবিক সময়ের মধ্যে স্থির ছিলনা সেখানে অতিরিক্ত খাদ্য আমদানি ো বণ্টন প্রয়োজনীয়তা আরোপ করা উচিত নয়। একই সময়ে গত কয়েক মাসের জন্য স্বাভাবিক পরিমানের থেকে বেশি পরিমাণ পাট, চা ইত্যাদি সরানোর প্রয়াশের পদ্ধতির দাবি স্থাপন করা হয়।

৯. যদিও মে মাসের শুরুর দিকে “সংগঠিত প্রতিরোধ” এর শেষ উচ্চহার দ্বারা ছাঁটাই করা হয়, এবং কেন্দ্রীয় প্রদেশের জনসংখ্যা আইন প্রশাসনের অধীনে দৃঢ় আছে তদবধি যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হতে থাকে। টেলিযোগাযোগ ও মেইল সেবা আংশিকভাবে অধিকাংশ এলাকায় পুনরুদ্ধার করা হয়েছে, কিন্তু মানুষের শহর এলাকায় ভ্রমণ এবং পণ্য সরবরাহ ছাড়া সেখানে কিছুই চলাচল করছে না। ঢাকা জন্য আমাদের অনুমান যে সম্ভবত অর্ধেক রিকশা এবং এক-তৃতীয়াংশ ক্ষুদ্র ট্যাক্সি, গাড়ি ও বাস রাস্তায় ফিরে এসেছে; যখন ১৫ শতাংশ ট্রলি এবং ট্রাক পন্য নিয়ে ফিরে যাচ্ছে। সর্বত্র অন্য পরিসংখ্যান কম, কিন্তু ঘটনাটি বিশেষ করে জনসংখ্যা কেন্দ্র মধ্যে চিহ্নিত করা হয়। কোথাও জানবাহন ট্রাফিক স্বাভাবিক মাত্রা ৫ থেকে ১০ শতাংশ স্বাভাবিক। দেশে নৌকা উধাও হয়ে গিয়েছে।
১০. বাণিজ্য ব্যহত ঠিক যেমন সম্পূর্ণ এবং মৌলিক এবনহ সেখানে এখনো পুনরুদ্ধআরের কোন চিহ্ন নেই। দ্বন্দ্বের সময়কালে অনেক গ্রাম্য বাজার ধ্বংস হয়ে গেল এবং জনসংখ্যায় অর্থনৈতিকভাবে যেসব গুরুত্বপূর্ণ দল যেমন- ব্যাপারী, মধ্যদেশের পাট ব্যাবসায়ী আছেন তারা কার্যত উধাও হয়ে গেলেন। যেহেতু সেখানে লুটপাট দ্বন্দ্ব হচ্ছে এবং ব্যাবসায়ীরা কাজে ফিরে যেতে অনিচ্ছুক। এই পরিস্থিতিতে একজন পাট ক্রেতা, পাট ব্যবসা চালানর জন্য ক্তহিন চেষ্টা করেছিলেন, ের খরচ ৫০০০০০(১০ থেকে ৫০ টাকার নোট ) বহন করার বাধ্যকতা অনুভব করেছেন। খুব সম্প্রতি মধ্য প্রদেশ তেকে পাট বিক্রির জন্য পাট ব্যবসায়ী খোঁজা হবে।

১১. ব্যাংকিং সম্পর্কে পরিসংখ্যান পাওয়া কঠিন ছিল। তবে মার্চে সারগর্ভ তোলা সেখানে পরিচিত ছিল এবং মার্চের শুরু থেকে এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত কিছু লুটপাট এবং কর্মীদের ক্ষতি হচ্ছিল। তদবধি , শহর এবং ের পার্শ্ববর্তী এলাকায় অর্ধেকের বেশি ব্যাংকের শাখা খোলা হয়েছে কিন্তু আমানত ব্যবস্থার বাৎসরিক পুনরুদ্ধার করা হয়নি এবং সক্রিয়তাও খুব কম।

১২.সর্বক্ষেত্রে ভাঙ্গন এবং তার অধ্যবসায় তীব্রতার কারণে শারীরিক কারনের থেকে মানসিক কারণ অনেক বেশি আছে। চট্টগ্রামে খুব অল্প ব্যতিক্রম পাটের গুদাম দগ্ধ হয়েছে,সিলেটে এক চা কারখানা, চট্টগ্রামে এক চায়ের পেটি কারখানা, টঙ্গি তে কাগজকল বড় কারখানার প্রাকৃতিক উদ্ভিদের সামান্য ক্ষতি হয়েছে। আসলে ২৫ মার্চে অসাব্ধানি যে ক্ষতি হয়েছেঃ প্রথম সপ্তাহে তীব্র ভোল্টেজ ওঠানামায় অনেক বৈদ্যুতিক মোটর পুরে গেছে, কর্ণফুলী পেপার মলের রেয়ন গাছ অনেকদিনের ছাড়তে থাকা এসিডে খারাপভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছীবং কিছু গাছ হ্রাসকরণ অথবা ত্রুটিপূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণ বহন করছে। বিশেষত নরসিংদী ো উত্তরপশ্চিম বাংলার উল্লেখযোগ্য ছোটও শিল্প প্রতিষ্ঠানের ধ্বংস এবং ক্ষয়ক্ষতি হয় যেমন- সয়া মিল, ইটের ভাটা এবং তন্তু কিন্তু কোন বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি। যে কোন ক্ষেত্রে প্রধান প্রভাবিত শিল্প এবং ব্যবস্থাপনা ও শ্রম, আর্থিক সমস্যা, পন্য পরিবহণ, সরবরাহের ও বিক্রির অক্ষমতা বেশি প্রভাব ফেলে।

১৩. ব্যাবস্থাপক কর্মী এবং শ্রমিক যারা পালিয়ে গিয়েছিল তারা গ্রামে ফিরছে। তারা সম্ভবত সেনাবাহিনীদের উপস্থিতি ও কাজ অব্যাহত রেখেছিল এবং বিদ্রোহীদের হুমকি যা তারা সমর্থন করেনি তার দ্বারা ভীত থাকার কারণে কাজে ফরে আসে। যারা ভীত অবস্থায় ফিরে এসেছে এবং বিদ্রোহীদের পোস্টারে আরোপ করা হুমকি ঘোড়াশাল ও চট্টগ্রাম এবং অন্যত্র প্রচেষ্টা মারাত্মক পিছিয়ে পড়া সৃষ্টি করছে। অবাঙ্গালী এবং হিন্দের খুন কিছু বাণিজ্যিক ও প্রযুক্তিগত দৃষ্টান্ত রেখেছে, যার ফলে অনেকেই পাকিস্তান ত্যাগ করেছে এবং তাদের ফিরে আসার সম্ভাবনা কম।

১৪. এই পরিস্থিতিতে, প্রশাসনিক ব্যর্থতা সঠিকরূপে চালনা অধিগম্য। সর্বাধিক আমি এবং দ্বিতীয় কর্মকর্তা কাজে ফিরে এসেছে; এবং সম্ভবত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির অর্ধেক কর্মকর্তা গুরুতর অন্ত্রায় কারজকর প্রশাসন হতে অসম্ভাব্য বলে অনেক এলাকায় অনুপস্থিতিতি অব্যাহত রয়েছে। যাই হোক কিছু সংখ্যক কারণে, যারা উপরি সময়ের সেরা কাজ করছে তাদের অধিকাংশ ফিরে এসেছে। মিশন পূরণের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে কেউ তাদের দায়িত্বের নির্দিষ্ট এলাকার অবস্থা দেখতে প্রদেশে ব্যপকভাবে ভ্রমণ করেছেন।প্রাদেশিক সরকারের অধীনে কর্মকর্তাদের মধ্যে যোগাযোগ বিদ্যমান। জেলা ও থানা পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা তাদের অফিস ছেড়ে দিতে যথেষ্ট বন্দনীয় এবং মানুষ শহরে আসতে ভীত। একই সময়ে অনিবার্য বিষয়গুলোতে স্বাভাবিকভাবেই বেসামরিক প্রশাসনের সামরিক হস্তক্ষেপ এবং ক্রমাগত প্রভাবশালী সামরিক উপস্থিতি অনিবার্য।এছাড়াও পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদের নিয়োগ , উন্নয়ন কর্মসূচী কঠোর সংকোচন, এবং প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত , বিশেষ করে ওই সমস্ত ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত অর্থনীতির, স্বার্থ কমাতে তাদের সম্পৃক্ততা ছাড়া সেদিকেই ঝুঁকে পড়ছে।

১৫. প্রকৃতি এবং যুদ্ধ অবশ্যই প্রদেশের এক অংশ থেকে অন্য অংশে পরিবর্তিত হচ্ছিলো, এবং সেখানে বিদ্রোহ এবং অর্থনৈতিক নিষ্ক্রিয়তার মধ্যে পার্থক্য যুক্ত হচ্ছিলো। সীমান্ত সম্পূর্ণ দীর্ঘে বেশি অথবা কম খোলা ছিল এবং তাই সন্নিহিত বিশেষভাবে অসুরক্ষিত ছিল। বেশিরভাগ ক্ষতি প্রথমদিকে ঘটেছে এবং বেশিরভাগ বিদ্রোহ ঘটেছে রামগড় থেকে শ্রীমঙ্গলের চন্দ্রকলায় পূর্ব সীমান্ত বরাবর এবং অপ্রবেশধ্য ময়মনসিংহ এবং সিলেটের দুইপাশে। খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া, পদ্মা, বগুড়া, রংপুর ও দিনাজপুরে বিধ্বংস সহ সেনাবিহিনিদের সবথেকে গুরুতর লড়াই এবং শ্রেষ্ঠ ধ্বংস ঘটে যমুনা/পদ্মার পশ্চিম দিকে । এটি সর্বাধিক জনসংখ্যা খতির এলাকা এবং অধিকাংশ কৃষি প্রতিবন্ধকতা ও কার্যকলাপ এখানে। দৃশ্যত নোয়াখালীর দক্ষিণ এবং উপকূলীয় এলাকা, বাকেরগঞ্জ এবং পটুয়াখালী হচ্ছে অন্তত কম ক্ষতিগ্রস্থ। যদিও রাজধানী এবং প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে ঢাকায় যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে, তবুও এটি সম্ভবত নিকটতম ‘স্বাভাবিক’ রয়েছে; যাইহোক সকল জেলার একটি সাদৃশ্য হচ্ছে সবগুলই ১১ই জুন পূর্ব পাকিস্তান থেকে আমাদের দুর্ভিক্ষের সময়ে স্বাভাবিকতার থেকে খুব দূরে ।

গ.প্রধান অর্থনৈতিক খাতে প্রতিক্রিয়া
১৬. কৃষি- যদিও এই মিশনের খাতে কোন শারীরিক ক্ষতি হয় নি, এটি স্পষ্ট যে কৃষি খাত এই সংঘাতের ফলে ক্ষতি ভগ করেছে। অনেক কৃষক পালিয়ে গেছে এবং অন্যরা খুন হয়েছে; সব কৃষকের খামার অপারেশন বিলম্ব, অবহেলা এবং নিবেশাভাব আছে।

১৭. ধান, বোরো (যা গত বছর উতপাদনের ১৬% ছিল) গত বছর গড়ে প্রায় ১৫% ছিল। এখানে কিছু বিলম্বী বোরো ফসল শুরুর দিকের বৃষ্টি এবং ক্রিশকের অন্তর্ধানের জন্য এখনো জমিতেই রয়ে গেছে, এটি নির্দিষ্ট নয় যে সব চাষের শস্য সংগ্রহ করা হবে। আউশ স্বাভাবিক বছরগুলতে রোপণকৃত আগাছার থেকে দেরিতে রোপণ করা হয়েছিল যেখানে ক্রিসক্রা পালিয়ে গেছে এবং সেখানে সারের অভাবের কারণে অনেক হলুদ হয়েছে।
এডিসি এর কর্মচারীবৃন্দ এবং কৃষি বিভাগের মতে এবং আমাদের নিজস্ব পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, মোট খাতে রোপণের পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে ১৫% নীচে এবং মোট খাতের গড় ফলন ও কমে সর্বনিম্ন ১৫% এ এসেছে। এটি সর্বনিম্ন উৎপাদনকে ২৮% এ নামিয়ে দেয়।

১৮. আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে, অত্যাবশ্যক আমন শস্য যথেষ্ট প্রভাবিত হতে পারে। এই বিষয়টি এড়িয়ে গেলে বিলম্বের জন্য গুরুতর সমস্যা, বীজ এবং নিবেশ প্রদানের অভাব সমস্যার সৃষ্টি হবে। স্বাভাবিকভাবে সময়সূচীর পরেই আমন লাগানর সমগ্র প্রক্রিয়া গুরুত্বের সাথে আসতে পারে। সর্বচ্চ উৎপাদনের জন্য মধ্য জুলাই থেকে মধ্য আগস্ট কিন্তু মধ্য জুলাইয়ে রোপণ করা বাঞ্ছনীয়ভাবে সুপারিশ করা হয়। নার্সারিতে এক মাসের জন্য , অর্থাৎ চারা মধ্য জুনে নার্সারিতে যাওয়া উচিত তবে নার্সারি বেড অথবা জমিতে খুব সামান্য প্রস্তুতি বিভিন্ন প্রেদেশের ভ্রমণ পর্যবেক্ষণ করছিল। আরেকটি ব্যপার হচ্ছে, গোড়ারা দিকে ভারী বর্ষণের জন্য, খেতে আউশ দেরীতে রোপণ করা হয়েছে এবং পরবর্তী আউশ আগস্টের শেসের দিকে রোপণের সম্ভাবনা নেই। এই উপায়ে সর্বনিম্ন উপায়ে আউশ ধান আবাদ স্থগিত হতএ পারে এবং ফলন সংগতিপূর্ণভাবেই কমতে পারে। কোন কোন এলাকায় আমন আবাদ পুরপুরি পরিহার করা হতে পারে।

১৯. বিভিন্ন কারণে কৃষকের ঘর ও হাটবাজারে সেনা ‘অধিজাচন’ , উদ্বাস্তুদের ফ্লাইট যারা খাদ্যের জন্য তাদের সাথে বীজ স্টক নিয়েছে ইত্যাদি অনেক আমন বঈজ প্রদেশে জুড়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে। এবং প্রদত্ত প্রশাসন, পরিবহণ ও বিতরণ ব্যবস্থার ভাঙ্গন। যদিও প্রদেশে সাড় সহজলভ্য , বাড়ার সময় সংরক্ষিত সাড়ের পর্যাপ্ত ব্যবহার খুব বেশি হলে কিছুদিন চালিয়ে যাওয়া যায়। সমগ্র প্রক্রিয়া তাই সমালোচকদের পরিবহণ ও বিতরণ ব্যাবস্থার উপর নির্ভর করে, এটা খুব অস্বাভাবিকভাবে উঠে আসে যে সার সথিক জায়গায় সথিক সময়ে পাওয়া যাবে। সময়মত কীটনাশক প্রয়োগ, যা স্বাভাবিক সময়ের জন্য কঠিন তা কম ই আশা করা যেতে পারে।

২০. বিশেষ করে সাইক্লোন এলাকা এবং পশ্চিমসীমান্ত এলাকা এলাকার পরিস্থিতি গুরুতর । সাবেক এলাকায়, জমির জন্য খসড়া পশুদের সরবরাহ প্রস্তুতি, যেখানে মানুষ ইতিমধ্যে ক্ষুধার্ত এবং অবিলম্বে খাদ্য ো বীজের জন্য কার্যকর ত্রাণ অপারেশন স্থাপন করা দরকার। পরবর্তী এলাকায় কৃষকের অভাব এবং হয়রানি উভয় অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও যথেষ্ট চাষ হচ্ছে । কৃষি কার্যক্রম অবিলম্বে স্বাভাবিকভাবে সাধন করা হয়, এবং কৃষকদের সব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করা হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমন শস্যের উৎপাদনে বিরুপ প্রভাব ফেলা সম্ভব হবে। বর্তমান অবস্থা যাই হোক না কেন। এটি মিশনের বক্তব্য যে মোট খেতে আমনের পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে কম এবং খুব সম্ভবত ফলন ২০-৩০% কমে যেতে পারে । সব দিক বিবেচনা করে বলা যায় কৃষি উতপাদন সব দিক থেকে ৩০% কমে গেছে।

২১. একথাও ঠিক যে, বিশেষকরে এই মূল্যায়ন এমন যে, পরীক্ষামূলকভাবে আমন বৃহত্তম ফসল, যেখানে ফসল উন্নতি নির্ধারক আদালতের রায় এখনো সহজ এবং প্রম্পট নিরাময়কারি কর্ম এখনো কার্যকর। যাইহোক যদি এই মূল্যায়ন সঠিকভাবে সক্রিয় হয়, তাহলে প্রদেশে খাদ্য পাওয়ার পরিমাণ ১৯৭০/৭১ এবং ১৯৬৯/৭০ মিলিয়ন টন কম হবে। দুটি সিদ্ধান্তে অনুসরণ: প্রথম, এবং অবিলম্বে কর্মক্ষম তাৎপর্য, জুলাই-ডিসেম্বর 1971 সাল সময়ের আমদানি খাদ্যশস্য ১৯৭০/৭১ থেকে ৫৫০.০০০ মিলিয়ন টন থাকতে হবে। যদি দৈনিক সরবরাহ জনপ্রতি ১৫.৪ রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় এবং মোট সংগ্রহ যুক্তিসঙ্গত পর্যায়ে রাখা হয়। যেকোনো পরিমাণ অভ্যন্তরীণ বিতরণ প্রদেশের পরিবহণ ব্যবস্থা ো প্রশাসনিক ক্ষমতা দাবী করে। দ্বিতীয় সম্ভাবনা আমদানির অন্য ২ মিলিয়ন তন ১৯৭১/৭২ ের দিতিয়ারধেক প্রয়োজন হতে পারে, আমন শস্যের অগ্রগতি ধরে রাখার জন্য একটি অবিচ্ছিন্ন দেখাশোনা থাকবে।

২২. পাটের সম্মানে ছবি জেলা থেকে জেলায় তারতম্যঃ তবে রিপোর্ট করা হয় মোট খেতের পরিমাণ ব্যপকভাবে কমে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। যুদ্ধ এবং আসন্ন অনিশ্চয়তার ভয়ের সময় অনেক আগাছা এবং তরলিকরন কাজ অবহেলা করা হয়েছে। সার প্রয়োগের ঘটনা নুন্যতম হয়েছে এবং চাষ নষ্ট হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে শুরুর দিকে ভারী বৃষ্টি ও অবহেলা আগাছা বৃদ্ধি এবং কিছু এলাকায় ( উল্লেখযোগ্য ময়মনসিংহ ) অস্বাভাবিকভাবে ভারী ব্রিস্তির কারণে জলাবদ্ধতা ও উৎপাদনের হার কমিয়ে দিয়েছে। আমাদের সামগ্রিক রায় এই যে, মোট খেতের পরিমাণ ২০% ের নিচে নেমে জাওায় ফলন ১০% কমে গেছে। লক্ষ্য চিত্রে ১৯৭০/৭১ যৌগিক হ্রাস ৬.৯ মিলিয়ন বেল, শস্য ২৮% হ্রাস ৫ লাখ বেল। যেহেতু স্বাভাবিক চাষের কোন নিশ্চয়তা নেই সেজন্য স্বাভাবিকভাবে সামনে অগ্রসর হওা এবং ফসলের জন্য পর্যাপ্ত শ্রম উপলব্ধ করা এবং এই চিত্র কাঁচা পাটের জন্য সর্বচ্চ হিসাবে গন্য করা হবে। এমন কি সব ফসল মিল থেকে সরানোড় জনয় খুঁতে পরিবহ্ন ব্যাবহার করার কোন অর্থ নেই।

২৩. বেশ কিছুদিন আগে চা-বাগানের অবস্থা আশ্চর্যজনক ভাবে ভালো হয়। সেখানে প্রিথম চা-বছরের এপ্রিল মে প্রথম দুই মাসে কার্যত কোন অবচয় হয়নি এবং প্রক্রিয়াজাত হয়নি অথবা কম পক্রিয়াজাত হয়েছে। তবে পার্শ্ববর্তী সীমান্ত সত্ত্বেও যে এলাকায় শক্তিশালী যুদ্ধ এবং হিন্দুদের উচ্চ শ্রমশক্তি, আমাদের সফরের সময় জনসংখ্যা বৃদ্ধি এলাকা হতে প্রায় দুই ত্রিতিয়াংশ শ্রমিক উপস্থিত ছিলেন। কেবলমাত্র অরদেক জমি, কারখানা এবং অফিস কর্মচারী জুনের প্রথম সপ্তাহে উপস্থিত ছিল, এখনো অনুপস্থিত তাদের একটি ব্রিহত সংখ্যা ফিরতে শুরু করেছে।

২৪. জুনের প্রথম দশ দিনে, নীলকরদের দুই প্রবাসী তৃণভূমি অদৃশ্য এবং নির্ভরযোগ্য ভাবে দ্বিতীয়দের হত্যা করা হয়েছে বলে জানা যায়। ফলস্বরূপ, এবং যুক্তরাজ্য হাইকমিশনের পরামর্শে সেই প্রবাসী নীলকরদের
যারা বাগানে কাজ করছিলেন এখন সিলেট ত্যাগ করেছেন।

২৫. যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যবস্থাপনা ছাড়া, এটা সবচেয়ে অসম্ভাব্য যে দক্ষতার উপর চা উৎপাদন চলতে পারে না । সম্ভবত এটি সব সময়ে ঘটতে পারে না। তাই অন্ততপক্ষে , জুলাইয়ের মাধ্যমে এপ্রিলে উৎপাদন বা বার্ষিক স্বাভাবিক উৎপাদন ৪০ শতাংশ যথেষ্ট বা সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট, প্রথমত, ব্যবস্থাপনা ও শমিকদের ফেরার জন্য পুরুদ্ধার প্রক্রিয়ার চাকুরীটিড় উপর নিরাপত্তা। এমনকি যদি এটি শীঘ্রই মোটামুটি সম্পন্ন করা যেতে পারে, দুর্দান্ত বাড়ন্ত সমস্যা পরাস্ত করতে যাবে। শ্রমশক্তি পুনরায় সংগঠিত করতে হবে এবং আগাছা কেটে সাফ করার বকেয়া কাজ যা বেশি পরিমাণে উপেক্ষা করা হয়েছে তা ২৫ মার্চের উৎপাদনের কাজের আগে সম্পন্ন করতে হবে। সম্ভবত সবচেয়ে আশার পরিণতি হচ্ছে যে বছরের অর্ধেক ফলন ফলান যেতে পারে যা মোট বিশ মিলিয়ন পাউন্দ ের কিছু, দিতে পারে উল্টোদিকে যা গত বছর ৬৯ মিলিয়ন পাউন্দ ছিল।কম আশার কথা, এটা সম্ভব রয়ে যায় যে পুরো বছরের যথেষ্ট উৎপাদন বিনষ্ট হবে এবং কেটে সাফ করার জন্য পরবর্তী বছর উৎপাদনশীলতার পাশাপাশি গাছপালা হ্রাস পাবে।

২৬. পরিবহণ- এটি সম্ভবত সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং ক্ষতিগ্রস্ত খাত। প্রধান স্থানচ্যুতি নিয়ে, ভূমিকাতে সাধারনভাবে বলতে গেলে, বিশ্লেষণ প্রকার আলোচনা করা হয়েছে।

২৭. চট্টগ্রাম ও চালনা দুটি প্রধান বন্দরে যুদ্ধে সুবিধা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ঃ যাইহোক, তারা মার্চে স্বাভাবিকভাবে মাত্র ৪০ শতাংশ এবং এপ্রিলে কার্যত নয়।সামরিক সেনার মাধ্যমে এপ্রিলে পোর্টগুলো নিয়ে যাওয়া হয় , মে মাসে অপারেশন ১০% সাভাবিকে নেমে আসে এবং বকেয়া কাজের একটি অংশ ও গুদামের বকেয়া ও পোর্ট এলাকা সাফ করা হয় যাতে পোর্ট এখন একটি অবস্থানে আছে যেখান থেকে দক্ষতার সাথে কয়াজ করা যায়। বর্তমানে পোর্ট স্বাভাবিক শ্রম সরবরাহের প্রায় ১৫% নিয়ে কাজ করছে। নৌ বাহিনী প্রশাসকরা দাবি করে যে শ্রমিক পাওয়া যায়, কিন্তু প্রয়োজন হয় না, এরসাথে তাদের উচ্চতর ব্যবস্থাপনা, তারা কম শ্রমশক্তি দিয়ে আরও দক্ষতার সঙ্গে কাজ এবং স্বাভাবিক চাপ সাম্লাতে পারেন। স্মভবত এই কতক সত্য , তবে এটি করা উচিত বলা যেতে পারে যে এই ‘নতুন ব্যাবস্থাপনার পোর্ট’ এখনো নিরীক্ষণের জন্য আনশিকভাবে নতুনত্বের সাথে পাথান হয়নি।

২৮. এই সন্ধিক্ষণে বলা যেতে পারে যে, জাহাজ দুই-ত্রিতিয়াংশ স্বাভাবিক ধারঙ্খমতা ধারণ করতে সক্ষম নয় তাই ,একটি বোতলের গলা পদ্ধতি গঠন করে অথবা তারা অভ্যন্তরীণ পরিবহন ব্যবস্থার যেমন সময় পর্যন্ত কিছু স্বাভাবিক ভলিউম সমীপবর্তী মিটমাট করতে সক্ষম হয়। চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে কয়েক্তি যোগ্যতা বলা হয়।
প্রথমত, খাদ্যশস্যের আমদানি সাথে, উভয় চালনা এবং চট্টগ্রাম-এর জন্য সকল অন্তর্মুখী জাহাজ চট্টগ্রামে হাল্কা করা আবশ্যক, এই জন্য, একই “কোস্টার” (বা উপকূলীয় স্টিমার) এবং “উপসাগর পারাপার” বার্জ অভ্যন্তরীণ প্রয়োজনীয় চলাচলে ব্যবহার করা হয়। দ্বিতীয়ত , এই কোস্টার ো বার্য ব্যবহার শুধুমাত্র চট্টগ্রামের সিলো পর্যবেক্ষণের তিনটি নিশ্চয়তার ব্যপারের উপর সীমাবদ্ধ। তৃতীয়ত, সম্ভবত প্রশিক্ষিত অপারেটর এবং মিস্ত্রির অভাবে বন্দর সাম্লানর যন্ত্রপাতি বর্তমানে মাত্র ৪০%। চতুর্থত, এবং সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ, অতিরিক্ত সংরক্ষনের জায়গা পাওয়া না যাওয়া এবং বন্দরে পন্যের প্রয়োজন না হওয়ার কারণে সিম্মিলিত অভ্যন্তরীণ পরিবহণ বন্ধের থেকে দ্রুততর হারে চট্টগ্রামে আমদানি করা যাবেনা।

২৯. অভ্যন্তরীণ রেল এবং সড়ক উভয় পরিবহণ বর্তমানে নগন্য অবস্থায় আছে, একটি অসম্ভব সিমিত বোঝা ভার ধারণ খমতাসম্পন্ন শক্তিশালী জল পরিবহণ হাল্কা পন্যের ডাই এবং মধ্যদেশে চলাচলের ফলস্বরূপ চত্তগ্রামে একটি বোতলগলা পদ্ধতি যোগ হতে পারে, চালনা জাহাজের পরিস্থিতি সম্ভবত অথবা ভবিষ্যতে পরিচালনীয় হবে। এখানে চট্টগ্রামের উল্টোদিকে আমদানি ো রপ্তানির মধ্যে ভারসাম্যহীনতা খুব বেশি নয়, যেমন পানির ঐতিহ্যগত ভূমিকা অভ্যন্তরীণ পরিবহন মোড তুলনামূলকভাবে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং সংযোগ রেল এবং রাস্তা কম ক্ষতি ভোগ করে এবং সম্ভবত ভবিষ্যতে কার্যকলাপ কম বিদ্রোহী প্রবন থাকবে ।
চট্টগ্রামে অবশ্য পরিস্থিতি অনেক কম সম্ভাবনাময়. এই প্রায় একচেটিয়াভাবে, একটি “আমদানি” পোর্ট হয়, স্বাভাবিক সময়ের চত্তগ্রাম-ঢাকা সড়ক ো রেল যোগাযোগ ঢাকার অন্যান্য জায়গায় পণ্যসম্ভারে দুই-ত্রিতিয়াংশ সরানো হয়েছে। যতক্ষণ না এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক পুনরুদ্ধার করা হয়েছে এবং
কিছু স্বাভাবিক ট্রাফিক সমীপবর্তী তাদের উপর চলন্ত হয়, বন্দরে স্বাভাবিক ধারণক্ষমতা সমীপবর্তী কাজ হবে না, এমনকি যদি উপকূলীয় বহর বৃদ্ধি করা হয় তা যথেষ্ট আপতকালীন উপায় হিসাবে হবে।

৩০. সব মিলিয়ে ১৩টি প্রধান রেলওয়ে সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদের অধিকাংশই
মেরামত হয়েছে বা জুনে শেষে হবে বলে আশা করা যায়। একটি উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম সেতু
সিলেটের কাছাকাছি ফেঞ্চুগঞ্জ যা ক হিসাবে এখনো অনারব্ধ। গার্ডার অবশ্যই রেলা দিয়ে সরানো হবে এবং রেলয়ে এখনো সমগ্র চট্টগ্রাম-সিলেট লাইন ধরে অকার্যকর। উপরন্তু অত্যাবশ্যক ফেনি নদি অবশেষে একটি প্রশবোধক রাখে; এবং এটি মেরামত করা বিদ্রোহীদের লক্ষ্য হয়ে যাবে। অনেক ছোট ছোট সেতু ো সাঁকো প্রতি বছর ধ্বসে যাচ্ছে। এগুলো গারদারের মাধ্যমে মেরামত করা হচ্ছে, তবে প্রদেশের রেললাইন গুলোো হারিয়ে যাচ্ছে।

৩১. এমনকি যেখানে লাইন অক্ষত সেই অংশে, অবমুক্ত স্বাভাবিক অনুপাতে মুখোমুখি ট্রেন অপারেশন বাঁধা থাকে, এই সাভাবকি গতি ো স্বাভাবিক ভার বহন। প্রথমত, যা মেরামত করা হয়েছে সেগুলো অস্থায়ী ব্যবস্থা মাত্র, এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ট্রেন শুধুমাত্র গতি হ্রাস করতে সক্ষম হবে এবং ভার এই ব্রীজ বাঁ সাঁকোর উপর চলাচল করবে। দ্বিতীয়ত সেখানে নিরাপত্তা সমস্যা রয়েছে। এটি প্রায় নিশ্চিত যে ছোট ছোট সেতু প্রস্ফুতিত হওা চলতে থাকবে, প্রদেশে যে রেল হারিয়ে যাওয়া অব্যাহত থাকবে এবং সীমান্ত অংশে অপারেশন পাস চলমান সম্ভব হবে। দিবাগত সময় পর্যন্ত অপারেশন সীমাবদ্ধ থাকবে, এই সিস্টেমের ধারণ ক্ষমতা স্বাভাবিকের থেকে অর্ধেক কমে যাবে। উপরন্তু রেলওয়ে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস – অর্ধেক মেরামতের কথা রিপোর্ট করা হয়- রেল পর্যবেক্ষণ করে যে ধারণক্ষমতা আবার গতি সীমাবদ্ধতার জন্য অর্ধেক কমে যায়।

৩২. মোটের উপর, আমাদের মূল্যায়ন এই যে, প্রতি ত্রাকের বয়সের এক-ত্রিরিয়াংশে কোন অপারেশন হয়নি। যখন অপারেশন বাকির উপর সাভাবকি ১৫ শতাংশের বেশি নয়। ের অর্থ এই যে, প্রতি সেরা খমতার ১০ শতাংশ সঞ্চালনকারী, এবং এই এবং এই ক্ষমতা ঠিক জায়গায় অগত্যা না বা স্থানান্তরিত পন্য ব্যবহৃত হচ্ছে না। সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, রেলুয়ে স্বাভাবিকভাবে চালু হবে না জতক্ষন পর্যন্ত অত্যাবশ্যকীয় চট্টগ্রাম-ঢাকা সড়ক সঞ্চালিত হয়নি এবং কিছু সারি ধরে স্বাভাবিক অপারেশন সমীপবর্তী করা হয়নি; বর্তমানে এই উদ্দেশ্য সিদ্ধি করা দৃষ্টিগোচর হয়নি।
.
৩৩। রাস্তাঘাটের ক্ষেত্রেও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে রেলওয়ের মতই। দশটি প্রধান সেতু এবং অসংখ্য ছোট ছোট সেতু ও কালভার্ট উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিলো এবং যেহেতু মূলত এগুলো কংক্রিটের তৈরী তাই এগুলো দ্রুত মেরামত করাও সম্ভব নয়। তার বদলে বিকল্প হিসাবে ঝুলন্ত সেতু, ভাসমান পোতাশ্রয় বা ফেরি চালু করতে হবে। এগুলো অবশ্য গতি কমিয়ে দেবে এবং কম ওজন বহন করতে হবে। এছাড়াও, অন্তত একটি ফেরি খোয়া গেছে এবং অনেকগুলোর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইতিমধ্যে এগুলো এখন আংশিকভাবে কাজ করছে, কিন্তু কয়েকটার ইঞ্জিন রুম ও স্টিয়ারিং – এর ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার কারনে এগুলো সারতে কয়েকমাস লেগে যাবে। এই কারণে সব জায়গায় নদী পারাপারে ফেরীর সংখ্যা কম থাকার সম্ভবনা প্রবল। যাই হোক সড়ক পরিবহনের মূল সমস্যা হচ্ছে এই অঞ্চলের অধিকাংশ ট্রাক বানিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্যে প্রত্যাহার করা হয়েছে। নির্দিষ্ট খাতে সামগ্রিক বাধা উপেক্ষা করে, আমাদের পর্যবেক্ষন হচ্ছে এই অঞ্চলে ট্রাক পরিবহনের হার কোন ভাবেই সাধারন সময়ের তুলনায় ৫%-১০% এর বেশি নয়।

৩৪। নৌ পরিবহন খাতই লড়াইয়ে সবচেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ২৪টি উপকূলীয় পরিবহনের মধ্যে, যার মাধ্যমে সারা বছর চট্টগ্রাম ও নৌবন্দরের যোগাযোগ রক্ষা করা হয়, একটি ডুবে গেছে মনে হচ্ছে। কিছু জাহাজ ছোটখাটো ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, যা হিসাব করলে দেখা যাবে মাত্র ১৬টি চলাচল করছে; যদিও কর্মকর্তারা বার বার দৃঢ়ভাবে বলছেন, স্বাভাবিক সময়ে চলাচল করা জাহাজের এক চতুর্থাংশ নষ্ট হয়েছে। প্রাথমিকভাবে দেশের ভেতরের মোটর চালিত নৌ পরিবহন সেনাবাহিনী দ্বারা পরিচালিত হচ্ছিলো; যাই হোক, অর্ধেকের মত জাহাজ এখন বানিজ্যিক ব্যবহারের জন্যে লভ্য। যুদ্ধের সময় দেশী নৌকা বস্তুত পূর্ব পাকিস্তানের নৌপথ থেকে নিলীন হয়ে গিয়েছিলো। সকলের কথা অনুযায়ী, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় প্রায় ৫০ শংতাশ অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন হয়তো বর্তমানে মালামাল বহনের কাজ করছে।

৩৫। পিআইএ ধ্বংস ও ক্ষয়ক্ষতির থেকে সম্পূর্ণরূপে বেঁচে গেছে; যাই হোক, এর চলাচল হাতে গোনা কয়েকটি বড় শহরে সীমাবদ্ধ। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, যশোর, সিলেট, ঈশ্বরদী, এবং কুমিল্লায় অভ্যন্তরীন সেবা নিয়মিত দেওয়া হলেও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে (সাধারন সময়ের ৩০ শতাংশ)। এই হ্রাসকৃত সেবার হার কোন বিমানের ক্ষতি হয়েছে বলে জানানো হয় নি, কিংবা যেমন শোনা যায় সাধারন সময়ের ৬০-৭০ শতাংশ কর্মচারী কাজে ফিরে এসেছে তার সাথে এটাকে মেলানও যায় না। এই হ্রাসকৃত সেবার ব্যাপারটা হয়তো অন্ধকার নামার পর বিমান চলাচল বন্ধ রাখার জন্যে, সীমিত সংখ্যক মেকানিক, এবং জরুরী প্রয়োজনের ক্ষেত্রে যদি লাগে তাই কিছুটা “ঢিল” দেওয়া হচ্ছে বলেই হচ্ছে। এমন কি এই হ্রাসকৃত সেবাও মাঝে মাঝে মিলিটারি অপারেশনে সাহায্যের জন্যে ফকার ও এসটিওএল (শর্ট টেকঅফ এন্ড ল্যান্ডিং) বিমান গুলো ব্যবহারের সময় ব্যাহত হয় – আমাদের থাকার সময়ই যেমন একবার হয়েছিলো। এবং নিরাপত্তাজনিত কারনে বানিজ্যিক ফ্লাইট গুলোতে মালামাল পরিবহনের অনুমতি নেই।
৩৬। ১০ই জুন পর্যন্ত আমাদের হিসাব অনুযায়ী আঞ্চলিক পন্যবহনকারী সামর্থ্য বর্তমানে সাধারন সময়ের তুলনায় এক চতুর্থাংশ। এবং যেহেতু এই সামর্থ্য চাহিদার সাথে মিলছে না এবং পরিপূর্নভাবে সেবা দেওয়া হচ্ছে না এটা কার্যত কোন কাজেই আসছে না। অধিকন্তু, যদিও সময় মত বা এর কাছাকাছি ব্রীজ গুলো মেরামত করা সম্ভব হয় মালামাল পরিবহন ক্ষমতা জুলাইয়ের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ বাড়বে এবং বিদেশী সাহায্য পেলেও বছর শেষে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না। এমন হতাশাব্যাঞ্জক মতামতের কারন হচ্ছে, যদিও সড়ক ও রেল পথ তুলনামুলক সহজ প্রযুক্তিগত ব্যাপার, এবং ইতিমধ্যে এর কাজও চলছে – কোন সংহত কর্যকরী পদ্ধতির কাঠামো, যা এটাকে পুরিপূর্ন রূপ দিবে, ছাড়া লভ্য শক্তি পুরোপুরি ব্যবহার করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়াবে, এবং এমন কোন কার্যক্রমের অস্তিত্ব নেই। এখন পর্যন্ত যা মেরামত এবং বিকল্প পথের কাজ করা হয়েছে তা অস্থায়ী এবং তা নুন্যতম বর্ষার আগে শেষ করা সম্ভব না, এবং কিছু এলাকায় নিরাপত্তা অবস্থার উন্নতি না হলে হবে না; এবং বিদ্রোহী কার্যক্রম বিভিন্ন এলাকায় পথেঘাটে ছোটখাটো বিঘ্ন অব্যাহত রয়েছে। আরো গুরুতর হচ্ছে, যানচলাচলের অনুপস্থিতি এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারনে যোগাযোগ ব্যবস্থায় কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সীমাবদ্ধ হয়ে পরবে। এমন কি সেনাবাহিনী যদি সিদ্ধান্ত নেয় তারা সকল যান ও নৌ যান পুরোপুরি বানিজ্যিক ব্যবহারের জন্যে ফিরিয়ে দিবে – যা এখনো হয়নি – তারপরেও ধ্বংস হয়ে যাওয়া বা গুরুতর ক্ষতি হওয়া, সীমান্তের ওই পারে নিয়ে যাওয়া যান অথবা সেনাবাহিনীর রক্ষনাবেক্ষন ছাড়া মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের কারনে অকার্যকর হয়ে পরায় আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে নাঃ না যেসব বাহন কার্যক্ষম আছে তাদের মালিকদের খুজে বের করে সেবা চালু রাখা সম্ভব হবে। পরিশেষে, জল যাতায়াত ব্যবস্থা বাড়াতে হলে, যা স্থলের কমে যাওয়া চলাচল ক্ষমতাকে পূরন করতে লাগবে, সর্বাঙ্গীণ পরিকল্পনা লাগবে এবং কিছু অত্যাবশ্যক ব্যাপারে কালক্ষেপন না হয় এমন পদ্ধতি লাগবে।
৩৭।(iii) বাণিজ্য – বানিজ্যিক খাতের ব্যাপারে আমাদের অবস্থানকালে খুব কম প্রমানই সংগ্রহ করা গেছেঃ যাই হোক, পন্যদ্রব্যের সাথে সংশ্লিষ্ট খাত এবং তার যাতায়াত ব্যবস্থা ছাড়াও, অর্থনৈতিক এবং কেনাবেচার খাতও গুরুতর ভাবে, গঠনগত, বিশেষ করে মনস্তাত্বিক ক্ষতির শিকার হয়েছে যা অর্থনৈতিক গতি পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে গুরুতর সমস্যা করছে। এই পতন স্থানীয় পাইকারী ও খুচরা বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিলক্ষিত হয় উদাহরণঃ আভ্যন্তরীণ, আন্তর্বিভাগীয় এবং বৈদেশিক বাণিজ্য সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন; এবং ব্যাংকিং সিস্টেম ও অর্থনৈতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে সাধারনভাবে পরিলক্ষিত।
৩৮। মালপত্র সমেত বাজার, দোকান ও গ্রাম্য বাজার যে পরিমান ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে তা নথিভুক্ত করা হয়েছেঃ এর ফলে এবং অন্য কিছু কারন মিলিয়ে অনেক ছোট ব্যবসায়ী পালিয়ে গেছে। এই অবিরত অভ্যন্তরীণ ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের কারনে ব্যবসা নষ্ট হচ্ছে, যার প্রমান পাওয়া যায় শহরগুলোতে যেখানে বেশিরভাগ খুচরা দোকান ও বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এখনো বন্ধ রয়েছে। মিশনের সদস্যদের সরেজমিনে দেখা অধিকাংশ জায়গাতেই এই সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অর্ধেকের কম ব্যবসার জন্যে খোলা ছিলো, এবং যারাও খোলা ছিলো তারাও যে খুব একটা ব্যবসা করছিলো তা মনে হচ্ছিলো না।
৩৯। যুদ্ধের অন্যতম একটি নিদারূন মনস্তাত্বিক প্রভাব হচ্ছে সাধারন আস্থা হারিয়ে যাওয়া যা বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক উভয় সম্পর্কতেই প্রভাব ফেলে। অনেক ব্যবসায়ীই উধাও হয়ে গেছে, অন্তত কিছু সময়ের জন্য; কিন্তু যারা আছে তাদের জন্যেও বাণিজ্যিক সংযোগ, আমদানীকারক ও তৈরীকারক; পরিবেশক ও খুচরা ব্যবসায়ীদের মধ্যে ধারে বিক্রয়ের সুবিধা ব্যহত হচ্ছে; এমন অবস্থায় অসম্পন্ন লেনদেনগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, পাওনাদাররা নতুন সুযোগসুবিধা দিতে চাচ্ছে না বা পারছে না। যার প্রতিফলন ঘটছে আন্তর্বিভাগীয় এবং বৈদেশিক বাণিজ্যিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে। পরিবহন সমস্যা ছাড়াও, বাকির হিসাবের অনিশ্চয়তা পশ্চিম অংশের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করছে (বিশেষ করে পশ্চিম পাকিস্তানী রপ্তানীকারকদের), কিছু বৈদেশিক রপ্তানীকারক বর্তমানে পূর্ব পাকিস্তানে মাল পাঠাতে টাকা পরিশোধের বিশেষ জমানত চাইছে।
৪০। বাণিজ্যিক সম্পর্কের কতটা ক্ষতি হয়েছে তা এখনো পরীক্ষা করে দেখা হয়নি যেহেতু এখন পর্যন্ত মালামাল পরিবহনের প্রধান অন্তরায় হওয়ায় যাতায়াত ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে এবং চাহিদাও খুব কম। কিন্তু পাট চাষী, মধ্যবর্তী বাজার, ঘরোয়া পাটজাত বস্তু প্রস্তুতকারক এবং পাট লেনদেনকারীদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক নিকট ভবিষ্যতে পরীক্ষায় পরবে, তারা যদি নিজেদের প্রমাণ করতে না পারে এর প্রভাব হবে গুরুতর।

৪১। বাকিতে লেনদেনের মূলে ব্যাংকের মনোভাব খুব গুরুত্বপূর্ন। ব্যাংকিং প্রক্রিয়া মার্চের প্রথম সপ্তাহে এবং ২৫ মার্চের পর গুরুতর ভাবে বিঘ্নিত হয়েছে; যদিও এখন মূল শহরাঞ্চলে এখন কার্যক্রম চলছে, গ্রামের শাখা গুলো আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে কর্মচারীদের অনুপস্থিতি, স্থাপনা এবং নথির ক্ষয়ক্ষতি এবং যোগাযোগের অভাব এখন ব্যাংকের উপর নির্ভর করে ২০ – ৫০% এর বেশি শাখা এখনো সক্রিয় না। যেখানে ব্যাংকগুলো আশা করেছিলো তারা হয়তো তাদের সেবা এবং সুযোগ সুবিধা সমীচীন সময়ের মধ্যেই আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারবে, নতুন ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতিক পুঁজি দিয়ে উদ্বুদ্ধ করা সহ সামগ্রিক ব্যাবসায়িক কাঠামো আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া কোন সন্দেহ ছাড়াই বলা যায় আরো অনেক বেশি সময় নেবে।

৪২। বিক্রয়যোগ্য সম্পদের অভাবে পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতি পুনরদ্ধারের সম্ভবনা গুরুতরভাবে ব্যাহত হবে। পূর্ব পাকিস্তানের ব্যাংকিং পরিসংখ্যান আলাদাভাবে নেইঃ যাই হোক, প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব জমা দিতে অস্বীকার জানানো হয়েছে এবং তা পুরোপুরি পুনরোদ্ধার করা সম্ভব হয় নি। পাকিস্তানী ব্যাংকের অবস্থা অবদমিত হয়েছে এবং করাচী ভিত্তিক ব্যাংকগুলো ইঙ্গিত দিয়েছে, আপাতত পূর্ব পাকিস্তানে তাদের কার্যক্রম আঞ্চলিক জমার উপর চলবে, যা সবসময়ই অপ্রতুল ছিলো। উপরন্তু, বর্তমান অবস্থায় ব্যাংক কতটা ধার দিতে প্রস্তুত তাও পরিস্কার না। সাম্প্রতিক “মুদ্রারহিতকরণ” অনিশ্চয়তার আরো একটি উপাদান এনে এবং চলমান মুদ্রা হঠাৎ করেই কমিয়ে ” অবশ্যই এই সকল সমস্যাকে এনে কার্যত বাড়িয়েছে। ১০০ ও ৫০০ টাকার সকল নোট বৈধমুদ্রা হিসাবে স্থগিত করা হয়েছিলো এবং তিনদিনের মধ্যে জমা দিতে হচ্ছিলো। পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তান এবং বিদেশের অবৈধ সম্পদের উপরে কি রকম প্রভাব ফেলেছিলো সেটা হিসাব করার কোন ভিত্তি নেই। স্টেট ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী মুদ্রারহিতকরণ মুদ্রা সমস্যায় অর্ধেকেরও বেশি, কিংবা ৮,২০০ মিলিয়ন টাকার মধ্যে ৪,৩০০ মিলিয়ন টাকায় প্রভাব ফেলছে। বৈদেশিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হতে, হয়তো একচতুর্থাংশ কিংবা ১০০০ মিলিয়ন টাকাও জমা পরে নি, এই বড় অংশ শুধু মাত্র প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে থাকা টাকা নয় বরং ভারতে অনেক ফ্লাইটের সংখ্যার মাধ্যমে, পুরো পূর্ব পাকিস্তানের অস্থির অবস্থাকে ফুটিয়ে তোলে। সরকার পুনরোদ্ধারযোগ্য টাকার পরিমান ১,০০০ থেকে বাড়িয়ে ১০,০০০ করে দিয়েছেঃ বেশি টাকা জমাদানকারীদের জন্যে জমাদানের উপর ভিত্তি করে কর; যা গড়ে ৪০ শতাংশের মত হয়, অথবা তাদের জমাকৃত টাকা সাম্ভাব্য কর হিসাবের জন্যে দেওয়ার স্বাধীনতা আছে;

৪৩। (iv) শিল্প – ম্যানুফ্যাকচারিং সাধারন ভাবেই খুব বাজে অবস্থায় আছে। মার্চের প্রথম দিনেই অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গিয়েছে এবং বাকিগুলো খুব সীমিত কাজ করেছে। এপ্রিল এবং মে মাসের প্রথম দিকে বাস্তবিকভাবেই কোন উৎপাদন হয়নি। এরপরে থেকে বেশ কিছু কারখানা আবার কাজ শুরু করলেও উৎপাদনের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক পার্থক্য বিবেচনাযোগ্য। ঢাকা শিল্পাঞ্চলের বাইরে চট্টগ্রাম ও টঙ্গী শিল্পাঞ্চলে ধীরে ধীরে কাজ শুরু হচ্ছে। চট্টগ্রামে ২৫% এর কম কারখানা খোলা কিন্তু আসলেই কাজ করছে এমন সংখ্যা এর থেকে অনেক কম; টঙ্গীতে ১২০০০ কর্মীর মধ্যে মাত্র ২০০০ কর্মী কাজে ফিরেছে। ঢাকার নারায়নগঞ্জ এলাকা এবং খুলনার অধিকাংশ কারখানা খোলা। যশোন, বগুড়া এবং কুমিল্লায় হয়ত অর্ধেকের মত খোলা। যে সব কারখানা উৎপাদন পুনরায় শুরু করেছে বেশির ভাগই, সুস্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে, খুব কম দক্ষতা ও ফলাফল দেখাতে পারছে, হয়তো তাদের আগের তুলনায় ১০-২০% সর্বোচ্চ। হাতেগোনা কয়েকটি কারখানা তাদের আগের উৎপাদনের তুলনায় ৫০% এর বেশি কাজ করছে; এই সব প্রতিষ্ঠান, যার অনেকগুলো প্রবাসী মালিকাধীন এবং বেশির ভাগই তুলনামুলক অনেক বড় পুঁজি বিনিয়োগকৃত, তাদের উৎপাদিত পন্য বিক্রি করতে পারছে না এবং হয়তো অপ্রতুল চাহিদা এবং রাখার জায়গার অভাবে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে যদি অর্থনীতির এই অচল অবস্থা বেশিদিন চলে।

৪৪। আগেই যেমনটা বলা হয়েছে, কায়িক ক্ষতি তুলনামূলকভাবে কম এবং মূল সমস্যা হচ্ছে শিল্পখাতের শ্রমিক, ব্যবস্থাপনা, অর্থায়ন, যোগাযোগ এবং চাহিদা ইত্যাদির সম্মুখীন হওয়া। পরিদর্শন করা বেশির ভাগ কারখানাই অর্ধেকেরও কম শ্রমশক্তি কাজে ফিরে এসেছিলো। অনেক ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ছিল ১০-১৫ শতাংশ। এই কম উপস্থিতি আরো বাজে হয়েছে ফিরে আসাদের মধ্যে প্রশিক্ষিত শ্রমিকের সংখ্যা খুব কম। কারখানাগুলোতে গত কয়েক সপ্তাহে আন্দোলন হয়েছে, যদিও তা ধীর এবং বিক্ষিপ্ত ছিলো। হিন্দু কর্মচারীরা বেশিরভাগ সময়ই দক্ষ কর্মচারীদের বড় অংশ জুড়ে থাকে তারা ফিরবে বলে মনে হয় না, এবং অন্যরাও শ্রমিকদের কলোনী ধ্বংস, কর্মজীবিদের বাসে সেনাবাহিনীর লাগাতার তল্লাসী এবং অনেক শিল্পাঞ্চলের কাছাকাছি বহুল সেনাবাহিনীর উপস্থিতি ইত্যাদি কারনে আস্তে আস্তে ফিরবে। একই সাথে, সাম্প্রতিক সময়ে বেশিরভাগ কারখানার আশে পাশে বিদ্রোহীদের হুমকিমূলক পোস্টার ও কর্মচারীদের একই ধরনের বার্তা সম্বলিত চিঠি কিছু এলাকায় (উদাহরণ, ঘোড়াশাল এবং চট্টগ্রাম) শ্রমিকদের আসা এবং যারা আছে তাদের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে।

৪৫। অনেক কারখানায় অবাঙ্গালীরা ব্যবস্থাপনা ও তদারকি কর্মীদের বড় অংশ জুড়ে আছে। আন্দোলনের সময় অনেকেই হত্যা করা হয়েছে এবং আরো অনেকে পালিয়ে গেছে এবং খুবই ধীর গতিতে কাজে ফিরছে। যাদের হত্যা করা হয়েছে এবং যারা ফিরবে না তাদের বদলি লোক পাওয়াটা খুবই কঠিন কাজ।

৪৬। যাতায়াত ও বাণিজ্যের ভঙ্গুর অবস্থার কারনে কাচামাল এবং জোগান এমনকি তৈরী পন্য চলচালে স্থবিরাবস্থার কারনে অধিকাংশ শিল্প এবং কারখানায় প্রভাব পরছে।

৪৭। বিশেষ করে পাট শিল্পের জন্যে মিলগুলোতে কাচা পাটের সরবরাহ বন্ধ থাকাটা তেমন মারাতম কোন ক্ষতির কারন হচ্ছে না, যেহেতু এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সাধারনত ফসল হয় না এবং মৌসুমি মন্দাভাব মিলিয়েই কাচা পাট সরবরাহ কম থাকে। তাছাড়াও, বেশির ভাগ কারখানারই, কিছু বিশেষ ক্ষেত্র বাদে, তিন থেকে চার মাস সাধারন কার্যক্রম চালানোর মত পর্যাপ্ত মজুত আছে। এছাড়াও কর্তৃপক্ষের চেষ্টা এবং সাহায্যের মধ্যমে (বিশেষ করে যদি পাট শিপ্লের ক্ষেত্রে বিশেষ জোর দেওয়া হয়) যেই অল্প উৎপাদন এখন হচ্ছে তার জন্য পর্যাপ্ত পরিবহন ব্যবস্থা করা হয়তো সম্ভব হবে। যদিও বর্তমানে পাটশিল্পের ক্ষেত্রে পরিবহন ব্যবস্থা কোন প্রতিবন্ধকতা বলে মনে হচ্ছে না। তবে, মধ্যবর্তী বাজার থেকে সর্বশেষ ফলিত পাটের অবশিষ্টাংশ, রপ্তানীর যোগ্য কাচা পাট এবং পাটজাত দ্রব্য বন্দরে পৌছানোর জন্যে এটি প্রতিবন্ধকতা হিসাবে কাজ করছে। আসছে মৌসুমের (জুলাই/আগস্টে শুরু হবে) পুর্বাভাস খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয় এবং যানবহনের অপ্রতুলতা পাটশিল্পের জন্যে মারাত্মক সমস্যা তৈরী করবে।

৪৮। চা শিপ্লের জন্যে বাহন ইতিমধ্যেই একটি মারাত্মক সমস্যার রূপ নিয়েছে। চা পাতা সংগ্রহ আবার শুরু হয়েছে। কারখানাগুলো চালাতে এবং আভ্যন্তরীণ চলাচলের জন্যে জ্বালানী লাগবে। জ্বালানী সরবরাহ এখন স্বল্প এবং পুনঃসরবরাহ একটি মারাত্মক সমস্যা। সিলেট স্থলপথে বাস্তিবিকভাবেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পরেছে। একমাত্র সড়ক পথ ও রেলওয়ে উভয়ই প্রচন্ড ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং বিভিন্ন গোলযোগ চলতেই থাকবে মনে হচ্ছে। যার ফলে জ্বালানী সরবরাহ এবং প্রক্রিয়াজাত চায়ের চালান হুমকির সম্মুখীন। আরো একটি সমস্যা হচ্ছে প্রতি চারটিতে একটি কারখানা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় এবং ব্যাবস্থাপকরা পালিয়ে যাওয়াতে বর্তমানে চায়ের পেটি তৈরীর ক্ষমতা অর্ধেক হয়ে গেছে।
৪৯। বেশ কিছু বড় কারখানা সীমিতভাবে উৎপাদনের পরেও অতিসত্বর সরানর কোন সম্ভবনা ছাড়াই তৈরী মালের বিপুল মজুত হয়ে গেছে। ছাতক সিমেন্ট এবং ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানা তাদের সংরক্ষানাগার ব্যবহার করে ফেলেছে এবং জলদিই হয়তো উৎপাদন আরো কমিয়ে দিতে বাধ্য হবে। আটটি ইপিআইডিসি চিনি কারখানা বিপুল পরিমান মজুদ রয়েছে এবং তারা সেগুলো চাহিদা ও স্বল্পতা থাকার পরেও সরাতে পারছে না। বিক্রয় ছাড়া ইপিআইডিসি চাষীদের আখের দাম পুরোপুরি দিতে পারছে না এবং জলদিই একদমই দিতে পারবে না। জুনের ৭ তারিখ পর্যন্ত চট্টগ্রামের স্টিল মিলের নিতান্ত অপ্রতুল শ্রমিকরা সামর্থ্যের ২০ শতাংশ কাজ করছিলো, এবং লোহার মজুত বেড়েই চলছিলো যেখানে চট্টগ্রাম থেকে পাঠানো লোহার অভাবে খুলনার রিরোলিং কারখানাগুলো বন্ধ ছিলো। পাকিস্তান টোবাকো চট্টগ্রামে বেশ ভালো ব্যবসা করছে যেখানে যশোরের সিগারেট কারখানাগুলো মারাত্মক কাগজের অভাবে ভুগছে। এমন আরো অনেক শিল্পের উদাহরণ দেওয়া যাবে যা এই ব্যাহত যাতায়াত ব্যবস্থার কারনে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

৫০। অনেক কারখানাই হয়তো অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক লাভের কথা চিন্তা না করেই আবার খুলতে “উদ্বুদ্ধ” হয়েছে কিন্তু যুদ্ধের আরো দুইটি অতিরিক্ত প্রভাব আছে যা এখনো সম্মুখীন হতে না হলেও নিকট ভবিষ্যতে সম্মুখীন হতে হবে। এগুলো হলো নষ্ট হয়ে যাওয়া স্বল্প মেয়াদী ঋণ সুবিধা এবং নিশ্চিতভাবে, বর্তমানে হ্রাসপ্রাপ্ত উৎপাদন, কমে যাওয়া বিক্রয় ইত্যাদি সত্বেও যে সব কারখানা চালু আছে তাদের মারাত্মক ক্ষতি হবে শুধু তাই নয় অনেক বড় নেতিবাচক আয়ব্যায়ের হিসাব হবে। যার ফলে তারা বেতন, কর এবং ধার পরিশোধ দিতে অপারগ হবে।

৫১। (v) অন্যান্য খাত- মূল উপযোগিতামূলক সেবাগুলো সন্তোষজনকভাবেই চলছে মনে হচ্ছে; যাই হোক, এইখাতে বিপুল পরিমানে তৈরীর কোন চাহিদা নেই এবং এমন লম্বা সময় ধরে চলছেও না যার কারনে নষ্ট হয়ে যাবে এবং ঠিক করাতে পালিয়া যাওয়া কর্মী বা ব্যাহত যোগাযোগ ব্যবস্থা সমস্যা তৈরী করবে। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সরবরাহ অনেক সময় সমস্যা করলেও এখন গ্যাস সরবরাহ ঠিক আছে বলেই মনে হচ্ছে। এবং কিছু ক্ষেত্রেও ব্যাতিরেকে বিদ্যুতের বর্তমান চাহিদা (ছয় মাস আগের চাহিদার তুলনার ৪০ শতাংশ) সরবরাহ হচ্ছে। অন্তত ঢাকা এবং চট্টগ্রামে পানি সরবারহ পর্যাপ্তভাবেই কাজ করছে।

৫২। যাতায়াত ছাড়াও অন্যান্য যোগাযোগ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে এবং তা পুরোপুরি ঠিক করা যায় নি। প্রতিবেদন অনুযায়ী একটি জেলা এবং ৬০টির মধ্যে ৬টি মহকুমা ব্যতীত সব জায়গায় টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা পুনঃস্থাপন হয়েছে; তবে এই সেবার অবস্থা খুব নিম্নমানের, তবে তা এমন না যে খুব ভালো পরিস্থিতিতেও সেবা খুব ভালো থাকে এবং বিভিন্নি জেলা ও মহকুমায় সেবা সবসম্যই বিঘ্নিত থাকে। ডাক যোগাযোগব্যবস্থা পুরোপুরি বিঘ্নিত হয়েছিলো এবং এখন ধীরে ধীরে ঠিক হচ্ছে। বেশির ভাগ গ্রাম, বিশেষ করে সাইক্লোন আক্রান্ত এলাকার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা এখনো অনেক কঠিন।
.
৫৩. ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বছরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হারিয়েছে, হারিয়েছে অনেক ট্রাক এবং কিছু অন্যান্য সরঞ্জাম। এটার আর্থিক অবস্থা, যেটা কিনা সবসময় নিরাপত্তাহীন ছিলো, এখন সংকটপূর্ণ এবং বেশিরভাগ সংস্থাগুলো তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হতে অক্ষম। তারা এখন পুরোপুরি মনোবলহীন এবং ভীত, কিছু ব্যাতিক্রম বাদে সব সংস্থাগুলো কাজে যোগ দিতে ব্যার্থ হয়েছে; এমনকি এ অবস্থায় তারা ফিরে আসার চিন্তা করতেও অনিচ্ছুক।
৫৪. প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো অনেক জায়গাই খুলেছে কিন্তু ছাত্রছাত্রী উপস্থিতি খুবই কম। জুন মাসের শুরুর দিকে করা অনুরোধে, বেশিরভাগ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ এসেছেন, কিন্তু তারা ভীত ও মনোবলহীন এবং কেউই বলছে না যে ২-ই আগষ্ট থেকে চলা সূচি অনুযায়ী ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসে আসবে।
ডি. গণ রাজস্ব এবং বিনিয়োগ
৫৫. বর্তমান অবস্থা- প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও রাজনৈতিক অবস্থা একত্রে মিলিতো হয়েছে, যা কিনা সাম্প্রতিক সংঘাত তৈরি করেছে। যার ফলে গুরুতরভাবে এই অর্থবছরে সর্বত্র প্রাদেশিক সম্পদের অবস্থান এবং পাবলিক বিনিয়োগের গতি প্রভাবিত করেছে।
৫৬. প্রাদেশিক রাজস্ব থেকে মোট বাজেটের মাত্র ৫০% আসবে (৩৮০ মিলিয়ন হতে মাত্র ১৯০ মিলিয়ন রূপিতে নেমেছে), এবং এর থেকেও নিচে নেমে যেতে পারে। কর ব্যতীত অন্যান্য রসিদও যথেষ্ট পরিমাণ কমেছে। সবচেয়ে বেশি বিপত্তি ভূমি রাজস্বে নিবন্ধিত হয়েছে, সব থেকে বড় একক কর গ্রহন করা হয় মে মাসের মাঝামাঝি যাও কি না ২৩ মিলিয়ন রূপির বেশি ছিলো না এবং পুরো অর্থ বছরে মে মাসে বেশি কর গৃহীত হয় যা কি না প্রায় ৪০ বা ৫০ মিলিয়ন রূপি, যেখানে বাজেট ছিলো ১৫০ মিলিয়ন। এই সঙ্গতিহীন রেকর্ড, নির্বাচনের সময় ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার বিরুদ্ধে গড়ে উঠা আন্দলোনের প্রতিফলন। সে জন্য কর সংগ্রহের এই দূরাবস্থা ২৫ মার্চের অনেক আগেই দেখা যায়।
৫৭. মার্চের শুরু দিকে কর সংগ্রহ একরকম বন্ধ হয়ে যায়। মে মাসের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে তারা কর কমিয়ে দিয়ে প্রাদেশিক পর্যায়ে কর গ্রহন পুনোরায় শুরু করে। Apart from provincial taxes, this disruption of tax collectionsclosely linked with the general disruption of the overall administrative system-has further affected the generation of centrally collected taxes with direct repercussions on public resources at the national level. প্রাথমিক অনুমান ইঙ্গিত দেয় যে, এই বছর প্রাদেশিক কর সংগ্রহের পরিমান কম করে হলেও ৪০ শতাংশ কম ১৯৬৯/৭০ সালের তুলনায়। এতে এটাই প্রমাণিত হয় যে, কেন্দ্রীয় কর থেকে এই প্রদেশ কম পরিমাণ কর পেয়েছে।
৫৮. এই ঘটনার পরে, প্রদেশের জন্য বর্তমান উদ্বৃত্ত বাজেটে একটি বৃহদাকার ঘাটতি ধরা পড়েছে, প্রায় ২০০ মিলিয়ন রূপি। উপরন্তু, রেলপথ এবং অন্যান্য পাবলিক সত্ত্বা আর্থিক অবস্থা (যেমন EPWAPDA, EPIDC, EPADC, 1WTA, EPSIC, EPRTC, ইত্যাদি.) – নিরাপত্তাহীন এবং গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। সব মিলিয়ে ঘাটতি এখন প্রায় ৩০০ মিলিয়ন রূপি ধারণা করা হচ্ছে, যা কিনা এ প্রদেশকে সম্পদের উপর কঠোর অবস্থানের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
৫৯. এই পরিস্থিতিতে, সরকারি বিনিয়োগ কর্মসূচি ব্যাহত হবে কিছু কারণে যা কিনা বাহ্যিকভাবে কিংবা অন্যকোনভাবে, প্রকল্পকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে। ফলস্বরূপ, এই বছরের উন্নয়ন কর্মসূচি (বন্যা নিয়ন্ত্রণ সহ) এখন প্রায় এক-চতুর্থাংশ কমে দাঁড়িয়েছে, প্রায় ২৬০০ মিলিয়ন হয়েছে ৩৪০০ মিলিয়ন হতে (বাজেটের নিম্নগামীতা বিবেচনায় রেখে)।
স্বায়িত্বশাসিত সংস্থাগুলোর দ্বায়বদ্ধতার জন্য ৫৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার কাটিয়ে উঠার পর সরকারের নিজস্ব সম্পদের অভাবের কারনে অর্থায়ন করা হয় (অধিকাংশ ঋণ সেবায় কিন্তু অন্যান্য খাতেও), বিনিয়োগ বরাদ্দের মাধ্যমে, ফলে বাস্তব মূলধন কমে দাঁড়ায় ২০০ মিলিয়ন রূপির কাছাকাছি। তবুও এই অর্থবছরের জন্য এটি আশাবাদী হতে পারে।
৬০. আসন্ন বছরের সম্ভাবনাগুলো অনিশ্চয়তার চাদরে ঘেরা। বর্তমান পরিস্থিতি যে অর্থবছরের দ্রুত উন্নয়ন সম্পর্কে ভালো ইঙ্গিত বহন করে না, তা প্রায় নিশ্চিত। সাধারন পরিস্থির জন্যও এটি অসন্তোষজনক।
৬১. এ বছরের প্রকৃত অনুমোদিত বাজেটের চেয়ে সরকারের ১৯৭১/৭২ অর্থবছরের প্রাক বাজেটের আনুমানিক প্রাদেশিক রাজস্ব (কর ও অন্যান্য) উন্নয়নের ইঙ্গিত দেয়। প্রকৃত করের পরিমান কিছুটা কম ধরা হলেও অন্যান্য রাজস্ব খাত ১৯৭০/৭১ অর্থবছরকে ছাড়িয়ে যাবে আশা করা যায়। সব দিক বিবেচনা করে এমন অনুমান অবাস্তবই মনে হয়। এমন হলে ১৯৭১/৭২ অর্থবছরের মোট রাজস্বের পরিমান ১৯৭০/৭১ অর্থবছরের রাজস্বের চেয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি হবে। স্পষ্টত, সমগ্র প্রদেশ জুড়ে যা প্রায় অবিশ্ববাস্য অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের আভাস দেয়, অবশ্যই তা করের ভিত্তি, রাজস্ব প্রদানের সক্ষমতা অক্ষুণ্ণ রেখে এবং সমগ্র রাজস্ব ব্যবস্থার সক্ষমতার কথা চিন্তায় রেখে।
৬২. মিশন অদূর ভবিষ্যতে এরকম পরিস্থির বাস্তবতার কোন প্রমানই খুঁজে পেল না। উপোরন্ত অনুমানগুলোকে গ্রহন করা দুষ্কর। মোটামুটি একটি ধারণা থেকে প্রাদেশিক রাজস্বের পুনরুত্থানও যদি হয়, ১৯৭০/৭১ অর্থবছরের আয় দুই-তৃতীয়াংশ হলেও আমাদের বর্তমান বিচারে, আশাবাদীর দৃষ্টিকোণ থেকে দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের ক্ষেত্রে তা একটি প্রশংসনীয় প্রচেষ্টা হবে। এই প্রত্যাশা যদিও বেশি এবং কর উপশমের কোন সুযোগ রাখে না তবু পরিস্থির বিচারে দ্রুত অর্থনৈতিক আরোগ্য লাভের জন্য এটি প্রয়োজন।
৬৩. কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাক্কলন অনুযায়ী, ১৯৭১/৭১ অর্থবছরে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়িত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাভাবিক দায়ের সম্বনয়ের ফলে সরকারি কার্যক্রম পরিচারনার জন্য প্রাদেশিক রাজস্ব থেকে সংগৃহীত, কেন্দ্রীয়ভাবে আদায়কৃত কর এবং কেন্দ্রীয় কিছু ঋণ থেকে, ২১৬০ মিলিয়ন রূপি সম্পদ বরাদ্দ পাবে। একে ১৯৭০/৭১ অর্থবছরে অনুমিত ২২৬০ মিলিয়ন রূপির প্রকৃত সম্পদের সাথে তুলনা করা যায়। সরকারের প্রত্যাশানুযায়ী, এই ১২২০ মিলিয়ন রূপি, ১৯৭০/৭১ অর্থবছরে ১৩৪০ মিলিয়ন রূপির মতো, অ-উন্নয়ন খাতে প্রয়োজন হবে (১৯৭০/৭১ অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ৯২০ মিলিয়ন রূপি)। ফলে উন্নয়ন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলা এবং সাম্প্রতিক ঘটনাবলির কারনে ধ্বংশ হওয়া সম্পদগুলোর পুনর্বাসনের জন্য ১০৪০ মিলিয়ন রূপি অবশিষ্ট থাকবে। প্রদেশের ৫৭০ মিলিয়ন রূপি সহায়তা প্রয়োজন হতে পারে (১৯৭০/৭১ অর্থবছরে যা ছিলো ২৪০ মিলিয়ন রূপি) এমন অনুমানের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ব পাকিস্তানের ১৯৭১/৭২ অর্থবছরে উন্নয়নের জন্য ১৬১০ মিলিয়ন রূপি নির্ধারন করে (পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন সহ যা উল্লেখিত হয়েছে) যা এখন অনুমিত ১৯৭০/৭১ অর্থবছরের জন্য। এই অনুমানগুলো সম্পদের পরিমান ও তাদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে মন্তব্যের দাবিদার।

৬৪. সম্পদের হিসেব অনুযায়ী, রূপির প্রাপ্যতা অনুযায়ী মিশনটি লক্ষ্যমাত্রাকে ছুঁতে পারে নি। এটা ভাবা হয়েছিলো যে পশ্চিম পাকিস্তানের কাছে ১৫৫০ মিলিয়নের কাছাকাছি রূপি রয়েছে, সরকারে হিসেব মতে যা কিনা ২১৬০ মিলিয়ন রূপি এবং সত্যিকার অর্থে ১৯৭০/৭১ এ তাদের কাছে ২২৬০ মিলিয়ন রূপি ছিলো। মিশন এবং সরকারের অনুমানের মধ্যে প্রায় অর্ধেক পার্থক্য প্রাদেশিক রাজস্বের ক্ষেত্রে এবং উপরে অনুচ্ছেদ ৬১ ও ৬২ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত কার্যাবলীর ক্ষেত্রে। অন্য অর্ধেক কেন্দ্র থেকে স্থানান্তর, বিভিন্ন মাধ্যমে, সম্পর্কিত। ১৯৭০/৭১ সালের তুলনায় বিদ্যমান হারের ভিত্তিতে কেন্দ্রে কেন্দ্রীয় সরকার ১০ শতাংশ বেশি কর সংগ্রহ করে দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। কারন, এটি পশ্চিম পাকিস্তানে করযোগ্য অর্থনৈতিক কার্যকলাপ সম্প্রসারণ সম্পর্কিত সরকারের অনুমানের অনুপস্থিতি অনুধাবন করে না এবং সংশ্লিষ্ট আমদানির পরিমাণ উপলব্ধি করা যায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তান বিদেশের তুলনায় আরো বেশি পণ্যদ্রব্যের সহায়তা পাওয়ার উপর।
৬৫. এটা বলা কঠিন যে, পূর্ববঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণের প্রশাসন কীভাবে ১৯৭১/৭২ এর কার্যকারিতায় কার্যকরী কোনও সম্প্রসারণ হবার সম্ভাবনা রয়েছে কিনা। ১৯৭১/৭২ সালে সাধারণ কর্মকাণ্ডের দিকে সরকারী কার্যকলাপের চিন্তাভাবনা, প্রশাসনের পাশাপাশি, সাধারণ অর্থে উন্নয়নের দিকে পরিচালিত হওয়ার ক্ষেত্রে কতটা অর্থপূর্ণ তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে এবং স্বাভাবিক উন্নয়ন কর্মসূচির কাঠামোর মধ্যে এবং প্রাথমিকভাবে প্রকল্পগুলির অগ্রগতির সাথে সংশ্লিষ্টতার সাথে জড়িত, যেহেতু মিশন এর ভ্রমণের সময় পাওয়া আর্থিক প্রোগ্রামটি প্রস্তাবিত ছিল। তবুও, এই কথা বলা হয়েছে, এতে কোন প্রশ্ন নেই যে, পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করার কাজটি জনসাধারণের সম্পদসমূহের উপর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্নভাবে নির্ভর করবে। কিছু কিছুর মধ্যে বড় কোন প্রশাসনিক বিনিয়োগ দরকার হবে না, যেমন খাদ্যশস্য বিক্রি না করে বরং বিনামূল্যে বিতরণ কেননা প্রদেশে ক্রয় ক্ষমতা খুব কম হতে পারে। অন্যান্য, যেমন পাবলিক সেক্টর পুনর্বাসন এবং পুনর্নির্মাণের একটি ব্যাপক প্রোগ্রাম এবং একই উদ্দেশ্যে বেসরকারী খাতে আর্থিক এবং অন্যান্য সহায়তা প্রদান, পরিকল্পনা, সংগঠন এবং মৃত্যুদন্ডের প্রধান সমস্যা জাহির করা হবে। দুর্ভাগ্যবশত, ৩০০ মিলিয়ন টাকা ছাড়া, যেটা কিনা সম্ভবত জনসাধারণের পূনর্বাসনের, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের অত্যাবশ্যক কাজের জন্য সর্বাধিক সরকারি সহায়তা প্রদান প্রকল্প এখনো বিদ্যমান না, এমনকি প্রাথমিক ফর্মেও না।এমন একটি প্রোগ্রাম প্রস্তুতি অবশ্যই প্রথম অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। যাইহোক, এটি স্পষ্ট যে, পূর্ব পাকিস্তানের জন্য মিশন যে প্রত্যাশাগুলো দেখায় তা রুপীর সম্পদ পরিস্থিতিগুলির চাহিদা পূরণে সম্পূর্ণরূপে অপর্যাপ্ত এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে পূর্বের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করার উপায়গুলি তাতক্ষণিক বিবেচনা করা উচিত যাতে করে পর্যাপ্ত জনশক্তির অভাবে অর্থনৈতিক অবস্থা ফিরে পাওয়া ব্যাহত না হয়।
||
A. The Near Term Outlook
৬৬. এই সকল পরিসংখ্যান এমন এক পরিস্থির জন্য যা কিনা অস্বাভাবিক এবং যেখানে কোন প্রকার নিয়ামক নেই যা স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে কাজ করবে। এমন নিয়ামকগুলো কাজ করবে যদি দূর্বলতা ও সীমাবদ্ধতা গুলো কাটিয়ে উঠা যেতো এবং যদি সরকার অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের সাহায্যে সক্রিয়ভাবে একটি সমন্বিত অর্থনৈতিক প্রোগ্রাম চালু করে।