শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
পূর্ব বাংলায় “ফ্যাসিস্ট সামরিক শাসকের” অধীনে কাজ করতে বিশ্বব্যাংক স্থপতির অবস্থান ঘোষনা। | বাংলাদেশ নিউজ লেটার | ২৫ অক্টোবর, ১৯৭১ |
বিশ্ব ব্যাংক পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর জন্য কাজ করতে রাজি নয়
Stanley Tiger man, 40, শিকাগো স্থপতি যিনি বিশ্বব্যাংক কর্তৃক পূর্ববাংলার একটি প্রকল্পে নিয়োগপ্রাপ্ত হন, ২৮ সেপ্টেম্বর ঘোষনা দেন যে, তিনি আর পাকিস্তানের “ফ্যাসিবাদী সামরিক শাসক” এর অধীনে কাজ করবেন না। এক সংবাদ সম্মেলনে দেয়া এ স্থপতির পূর্ণ বিবৃতি নিচে দেওয়া হয়:
আমি একজন স্থপতি। আমি কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি নই।
পাঁচ বছর আগে, ১৯৬৬ সালে, পাকিস্তানি সরকার বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় পূর্ব বাংলায় বরিশাল, বগুড়া, পাবনা, রংপুর এবং সিলেট, এ পাঁচ জায়গায় পাঁচটি পলিটেকনিক প্রতিষ্ঠানের নকশা করে দেবার জন্য আমাকে নিয়োগ করে। যথাযথভাবে নকশা মানদণ্ড স্থাপনের লক্ষ্যে (যা কিনা সে সময়ে ছিলো না) জলবায়ুগত, সমাজবিজ্ঞান, আবহবিদ্যা, ভূকম্পবিদ্যার উপর ভিত্তি করে আমার নকশা কে গড়ে তুলি। প্রাকৃতিক সম্পদ, নির্মাণ পদ্ধতি, বিল্ডিং কোড এবং মান, শ্রম এবং উপাদানের দাম, ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা নেই যাতে আমি দেশটি সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারি। এ পাঁচ বছরে আমি ষোলো বার ঢাকা ও দেশের অন্যান্য অংশগুলোতে ভ্রমন করি, যা কিনা দেশের মানুষের সাথে আমার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে।
মার্চ, ১৯৭১-এ পাঁচটি প্রকল্প নির্মাণাধীন ছিল। ২৫ মার্চ ও তার পরবর্তী ঘটনাগুলো আমার কাজের সাথে আমার সম্পৃক্তা নিয়ে সন্দেহ জাগায়। আমি আমার সন্দেহ বিশ্বব্যাংকে জানাই। যাই হোক, আমি কিছু প্রমাণ চাইছিলাম এ বিষয়ে যে আমি আমার কাজটা ঠিক ভাবে করতে পারব কি পারব না। যখন কিনা আমি এটার প্রয়োজনবোধ করলাম তখন ১৮ই সেপ্টেম্বর আমি ঢাকা যাই এবং তখনকার পরিস্থিতি ও পলিটেকনিকের উন্নয়ন করতে যে সমস্যা রয়েছে তা এক সপ্তাহ যাবত পর্যবেক্ষণ করি। সেই ঢাকা আমার পরিচিত ঢাকা-র মতো ছিলো না। সেখানে চরম পর্যায়েরর ভীতি কাজ করচ্ছিলো যা কিনা সবচেয়ে জাগতিক প্রযুক্তিগত সমস্যা নিয়ে আলোচনা করাকেও কঠিন করে তুলেছিলো। মার্শাল ল কর্তৃপক্ষ তোল্লাশি এবং চেক পয়েন্ট দ্বারা এবং সারাদেশে পুলিশ ও আর্মি দিয়ে এমন এক পরিবেশ তৈরি করেছিলো যেন এ এক “পুলিশি রাজ্য”।
পলিটেকনিক প্রকল্প আমার খুব পছন্দনীয় ছিলো। তবু, আমার কাছে এটা মনে হয়েছিলো যে, আমার পেশাগত সেবার সম্মানার্থে সরকারের কিছু পরিমাণ নৈতিকতা প্রদর্শন আবশ্যক ছিলো। শ্রমিকদের জোড় করে হুমকি দিয়ে কাজ করানো এবং তারা কাজ না করলে তাদের উপর প্রভাব পড়বে এবং সরকারের শত্রু হয়ে যাবে। এটাকে আমি “স্বাভাবিক” মনে করি না।
আজ আমি পাকিস্তানি সরকার ও বিশ্বব্যাংকে টেলিগ্রাম করেছি যে আমার চুক্তির অধীনে, আমি পরিসমাপ্তি দফা প্রয়োগ করচ্ছি। যা আমি ইচ্ছে করে করি নাই।
সে সকল মানুষ যারা খাটেন এবং ভবন নির্মাণে নিয়োজিত রয়েছে, তাদের দেখাশোনা এবং ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস ও তাদের শারীরিক অবস্থার কথা জিজ্ঞাসা করার অধিকার কি আমার নাই? প্রকৃতপক্ষে তাদের অনেকের জীবন এমন ঝুঁকিপূর্ণ।
সামরিক সরকারের এসব প্রভাবের সাথে কাজ করার কোন ইচ্ছে আমার নেই। এমনকি, আমি আর কোনদিন পূর্ব পাকিস্তান ভ্রমণে আসবো না। সবশেষে, আমি আবার আসবো এখানে যখন তা স্বাধীন হবে এবং আশা করি আমি বাংলাদেশের হয়ে কাজ করবো, কারণ আমি এদেশের মানুষ এবং তাদের এ দেশকে ভালোবেসে ফেলেছি। আমি একজন স্থপতি। আমিও একজন মানুষ।