সিরাজুল আলম খানের পদত্যাগ | সাপ্তাহিক বিচিত্রা | ২৪ জুন ১৯৮৩
অবশেষে ব্যর্থ হলেন জাসদ নেতারা দলের কোন্দল ঢেকে রাখতে। আপাততঃ যে ধামাচাপা দেয়ার ফর্মূলা হয়েছিল তা’ আর টিকল না। সিরাজুল আলম খান তার দলের সকল পদ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে ইস্তফা দিয়ে পুনরায় কোন্দল প্রকাশ্যে এনেছেন। অন্য দিকে দলের সভাপতি মেজর (অবঃ) এম এ জলিল আপোষ ফর্মূলার চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ এনে নেই কোন্দলকে আরো জটিল করে তুলেছেন।
৯ থেকে ১২ জুন জাতীয় কমিটির সভায় অনুপস্থিত থেকে জাসদের প্রতিষ্ঠাতা – তাত্ত্বিক সিরাজুল আলম খান পদত্যাগ পত্র দাখিল করেন। কিন্তু সে পদত্যাগ পত্র আর পেশ করা হয় নি জাতীয় কমিটির সভায়। কারণ ‘গৃহযুদ্ধে’ আপাত যবনিকার অধ্যায় রচিত হয় তার বাড়িতে ‘শিষ্য’ দের মাঝে সন্ধির মাধ্যমে।
স্থির হয়েছিল মেজর (অবঃ) জলিল খেকে শুরু করে সিরাজুল আলম খান, আ স ম আবদুর রবসহ সাতজন নেতার বিরুদ্ধে পারস্পরিক অভিযোগ আনা হবে না প্রকাশ্যে। তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি অভিযোগ গুলো তদন্ত করবেন।
কিন্তু দলের নেতা কর্মীতের কাছে ‘দাদা’ নাসে পরিচিত শশ্রুমন্ডিত লম্বা চুলধারী সিরাজুল আলম খান তার নিজের অবস্থান সংহত করার জন্য পদত্যাগ পত্র ডাকযোগে পাঠিয়ে দেন জাসদ সাধারণ সম্পাদক আ স ম আবদুর রবের কাছে ১৭ জুন।
দলের কার্যনির্বাহী জাতীয় কমিটি ও অঙ্গ সংগঠনের পদ থেকে পদত্যাগের কারণ, তার নিজের ভাষায় দল ও অঙ্গ সংগঠনকে ‘সুসংহত’ ও নিজেকে সকল বিতর্কের উর্ধ্বে রাখার জন্যে এবং বিপ্লবী পার্টি গড়ে তোলার জন্যে। এরপর তিনি পড়াশুনার কাজে নিজোে ব্যস্ত রাখবেন।
জাসদ মহল থেকে জানা গেছে সিরাজুল আলম খান দলের মূল নেতৃত্ব ফিরে পেতে চান। ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময় খেকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগে নিজের অনুসারীদের সাংগঠনিক কাঠামো বজায় রেখে ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর জাসদ গঠনের পর থেকে তিনি ১৯৮০ সাল পর্যন্ত একচ্ছত্র নেতৃত্ব বজায় রেখেছেন।
প্রথম ধাক্কা আসে ১৯৮০ সালের সেপ্টেম্বরে খালেকুজ্জামান ভূইয়া, আ ফ ম মাহবুবুল হক এ আসাফউদ্দৌলাদের নেতৃত্বে বাসদ গঠনের পর। এরপর বিরোধ ঘনীভূত হয় নীতিনির্ধারণে কৃষক লীগ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, এ বি এম শাহজাহান, কাজী আরিফ প্রমুখদের মধ্যে সংঘাতের মধ্যে দিয়ে। তাদের ‘চরমপন্থী ‘ মনোভাব তার মনঃপুত নয়। তেমনি সনাতন রাজনীতির ধারক আবদুর রবের লাইনও তার না পছন্দ। আবার সভাপতি মেজর (অবঃ) জলিলের ‘অবিপ্লবী’ লাইনও তার দিকে নয়। ফলে দাদা আবার দলকে শুদ্ধ করতে চাইছেন। বিপ্লবী পার্টি হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আত্মনিয়োগ করতে চাইছেন। কিন্তু দশ বছরের ব্যবধানে জাসদ কি আগের মত রয়েছে?
এককালীন ‘শিষ্যরা’ তার বিরুদ্ধে সুবিধাবাদী রাজনীতি থেকে শুরু করে ‘দূর্নীতি’ র অভিযোগ করেছে। সেক্ষেত্রে বিশেষ করে মেজর (অবঃ) জলিল অভিযোগ করেছেন তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রত্যাহার ও আনার নিন্দা জ্ঞাপন ও জাসদ নেতাতের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্ত করার প্রস্তাবাবলী সংবাদপত্রে প্রকাশ করায় যে সমস্যা হয়েছে তাতে আবার সংকট সৃষ্টি হবে। কারণ জলিল সমর্থনকারীরা মনে করেন সিরাজুল আলম খানের ইঙ্গিতে তার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটি ও জাতীয় কমিটিকে বিভিন্ন ‘নোংরা’ অভিযোগ আনা হয়েছিল। আবার তিনি পাল্টা হুমকী দেবার পর সমঝোতা হয়। এ দিকে জলিল বলেছেন, তিনি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবেন ও জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন কারীদের সঙ্গে রাজনীতি করবেন না। এ বক্তব্যে ধারণা করা হচ্ছে দলের সংকট এবার আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে৷ সেখানে নিজের হারিয়ে যাওয়া কর্তৃত্ব ফিরে পাবেন কি সিরাজুল আলম খান?
[pdf-embedder url=”https://songramernotebook.com/wp-content/uploads/securepdfs/2021/04/সিরাজুল-আলম-খান.pdf” title=”সিরাজুল আলম খান”]