You dont have javascript enabled! Please enable it! সাক্ষাৎকারঃ মেজর আবদুল হালিম | বাংলা একাডেমীর দলিলপত্র - সংগ্রামের নোটবুক

সাক্ষাৎকারঃ মেজর আবদুল হালিম
২২-১১-১৯৭৩

মুক্তিযুদ্ধকে অব্যাহত রাখার জন্য মে মাসের শেষদিকে ভারতীয় সীমান্তের বিভিন্নস্থানে শিবির স্থাপন করা হয়।আমাকে ৩রা জুন ১৯৭১ সালে দক্ষিণ পশ্চিম সেক্টরের কমান্ডার নিযুক্ত করেন। শিকারপুর সাব সেক্টর কমান্ডার নিযুক্ত হওয়ার পর আমাকে১ কোম্পানী ইপিআর, মুজাহিদ দেওয়া হয়। আমার সহ-অধিনায়ক হিসেবে কাজ করেন ইপিআর বাহিনীর সুবেদার মজিদ।

(১)শিকারপুর সীমান্ত দিয়ে প্রথম অপারেশন করা হয় বাংলাদেশের ভিতরে সাহেবনগর নামক স্থানে। সেখানে পাকবাহিনীও রাজাকাররা স্থানীয় মানুষের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগও পাশবিক অত্যাচার করছিল। এই সংবাদ পেয়ে গভীর রাতে ২ প্লাটুন নিয়ে তাদের উপর আক্রমণ করি। আমাদের আক্রমণে পাকবাহিনী রাজাকার সহ ২৬জন নিহত হয়। সেখান থেকে কিছু গোলাবারুদ নিয়ে রাত্রেই সীমান্ত অতিক্রম করে শিকারপুর চলে যাই।

(২)কাজীপুরে পাকবাহিনী কর্তৃক আমাদের ডিফেন্স আক্রমণঃ কাজীপুরে সুবেদার মজিদের নেতৃত্বে আমাদের যে এক প্লাটুন ইপিআর ছিল পাকবাহিনী চতুর্দিক থেকে তাদের ঘিরে ফেলে। এই সংবাদ পেয়ে আমরা আরও ২ প্লাটুন নিয়ে তাদেরকে সাহায্য করতে এগিয়ে যাই। সেখানে আমাদের পরবর্তী ২ প্লাটুন পাকবাহিনীর অবস্থানের উল্টা দিক থেকে তাদের উপর তীব্র আক্রমণ করে। পাকবাহিনীর সাথে এই যুদ্ধে রাজাকাররা বাহিনীও অংশগ্রহণ করে, কিন্তু আমাদের চতুর্দিক থেকে আক্রমণের মুখেও রাজাকার বাহিনীও পাকবাহিনী মর্টার থেকে অনবরত গোলা নিক্ষেপ করে। আমাদের সাথে পাকবাহিনীর সারারাত যুদ্ধ হয়। পাকবাহিনী কাজীপুর ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। বহু খানসেনা নিহত হয়। বহু অস্ত্রও গোলাবারুদ আমরা দখল করি তাছাড়া বাংলাদেশের ভিতরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পথে সেতুও কাঠের পুল নষ্ট করে দেইও রাজাকারদের পেট্রোলিং পার্টির উপর রেইড করি।

জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে আমাকে শিকারপুর সাবসেক্টর থেকে বনগাঁও সাবসেক্টর কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়। শিকারপুরের কমান্ডার নিযুক্ত হন কমান্ডার লেঃ জাহাঙ্গীর সাহেব।

বনগাঁও সেক্টরে আমার থাকাকালীন সময়ে প্রথম অপারেশন হয় রঘুনাথপুরে। পাকবাহিনীর পেট্রোলিং পার্টির উপর এমবুশ করে ২৫ জন খানসেনা হত্যা করা হয় ও তাদের তাদের হাতিয়ার নিয়ে আসা হয়। সেই সময়ে এই সংবাদ বাংলাদেশ রেডিও হতে প্রচার করা হয়।

১২ ই আগস্ট ধোপাখালী বিওপিতে পাকবাহিনীর ঘাঁটি আক্রমণ করা হয়। উক্ত আক্রমণে পাকবাহিনী বিওপিতে পালিয়ে যায়। আমরা সেখানে ডিফেন্স স্থাপন করি এবং শেষ পর্যন্ত পোটখালী বিওপি আমাদের দখলে থাকে।

৩১শে আগস্ট ধোপাখালী বিওপি থেকে কয়েক মাইল ভিতরে বাঘছড়া থানা হেড কোয়াটারে রাজাকার বাহিনীর ডিফেন্স আক্রমণ করি। কিন্ত রাজাকাররা আমাদের সংবাদ পূর্বে পেয়েই পালিয়ে যায়। আমরা তাদের মালপত্রও রেশনে অগ্নিসংযোগ করি। তাছাড়া ৪ টি সরকারী পাটগুদামেও অগ্নিসংযোগ করি। পথে একজন শান্তি কমিটির সদস্যের বাড়ী থেকে ৪টি বন্দুক সহ চারজন রাজাকারকে ধরে নিয়ে আসি।