You dont have javascript enabled! Please enable it! ধর্ম ঘরে সুবেদার তৈয়বের কৃতিত্ব | বাংলা একাডেমীর দলিলপত্র - সংগ্রামের নোটবুক

॥ধর্ম ঘরে সুবেদার তৈয়বের কৃতিত্ব॥

আমার সাবসেক্টেরের মধ্যে ধর্মঘরে এসে অধিক পরিমাণ পাকিস্তানী সৈন্য জমায়েত হয়। ধর্মঘর ছিল সাবেক ইস্ট পাকিস্তান রাইফেল বাহিনীর বিওপি অর্থাৎ বর্ডার অবজারভেশণ পোস্টস। পাকিস্তানী সৈন্যরা সেখানে আসার পর থেকে আমি সেখানে কোন দিন অপারেশন করিনি। তারপর ঐ শত্রু ঘাঁটির উপর মনোযোগ দিলাম। আমি নিজে প্রায় ৫০ জন সৈন্য নিয়ে দু্’ দু’ বার ঐ এলাকায় অতর্কিত আক্রমণ করার জন্য ফাঁদ পেতেছিলাম, কিন্তু শত্রুরা তার কাছে ভেড়েনি। তাই দূর থেকে কিছু করা যায় কিনা তার ফন্দীফিকির আঁটলাম।

ঐ এলাকায় কয়েকবার মর্টারের সাহায্যে আমরা গোলাবর্ষন করি।আমাদের সাথে ছিল সুবেদার তৈয়ব। মর্টারের গোলাবর্ষণে সুবেদার তৈয়ব একজন দক্ষ ওস্তাদ। যতবারই তিনি শত্রু ঘাঁটিতে মর্টারের সাহায্যে গোলাবর্ষণ করেছেন ততবার শত্রুর কিছু না কিছু ক্ষতি হয়েছে। একবার আমাদের কয়েকটি মর্টারের গোলা ধর্মঘর দীঘিতে পড়ায় দীঘির বহু মাছ মরে গিয়েছিল। সারা ধর্মঘরের লোক কয়েকদিন ধরে সেই মাছ খেয়েছিলেন।

অন্য আর একদিন আমরা দুই দিক থেকে ৪ টি মর্টার দিয়ে শত্রু সৈন্যের ধর্মঘর পজিশনের উপর গোলাবর্ষন করি। সেদিন মেজর মতিনের কোম্পানী থেকে ২টি মর্টার ধার করে এনেছিলাম। আমরা প্রায় ৬০টি মর্টারের গোলা ব্যবহার করেছিলাম। আমাদের গোলাবর্ষণ ছিল অত্যন্ত নির্ভুল। কয়েকদিন পরে আমরা জানতে পারলাম যে আমাদের গোলা সঠিক জায়গায় পড়ায় পাঞ্জাবীরা ঐ জায়গা ছেড়ে অন্য গ্রামে যেতে বাধ্য হয়েছিল।

মতিন সাহেবের কোম্পানীতে নায়েক আজিজ নামে একজন যবুক ছিল। মর্টারের গোলাবর্ষণে সে বেশ সাফল্য অর্জন করেছিল। তার মর্টার ফায়ার সম্বন্ধে কোম্পানীতে বেশ সুনাম ছিল।

এই এলাকাতেও রাজাকারের সংখ্যা ছিল খুব বেশী। ঐ রাজাকারদের চোখে ধুলো দেওয়া খুব সহজ ব্যাপার ছিল না। তারা কেন যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সমর্থন করতো না তা বুঝতে পারিনি। সম্ভবত ঐ এলাকার মত রাজাকার বাংলাদেশের কোথাও ছিল না। তারা পাঞ্জাবী সৈন্যদের পথ দেখিয়ে ভারতের সীমানার কাছে এসে আমাদের আন্দোলনের বিরুদ্ধে পাঞ্জাবীদের সহোযোগিতা করতে শুরু করলো। তাদের এই ক্রিয়াকলাপে আমরা গভীর ভাবে ব্যথিত হতাম।

যাহোক, বিজয়নগর এলাকাতেও আমরা কয়েকটি গোপন আতর্কিত হামলা চালাই। কিন্তু তাতেও আমরা খুব একটা সুবিধা করতে পারিনি। মাত্র একদিন এ্যামবুশ করে কয়েকজন পাঞ্জাবীকে যমদ্বারে পাঠিয়ে দিই।