শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
এন্টারপ্রাইজ বঙ্গোপসাগরে কেন? সিনেটর ইগলটন-এর বক্তৃতা | সিনেটের কার্যবিবরণী | ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
এস ২১৬৯৪ ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৭১
কংগ্রেশনাল রেকর্ড- সিনেট
ইন্দো-পাক যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ?
জনাব ইগলটন। প্রেসিডেন্ট মহোদয়, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যারিয়ার জাহাজ এন্টারপ্রাইজ বঙ্গোপসাগরে কেন? কেন আমেরিকার বাহিনী এশিয়ার নয়া যুদ্ধক্ষেত্রে ছুটে যাওয়ার খবর আসলো?
প্রকৃত সত্য হল দ্য এন্টারপ্রাইজ যে বঙ্গোপসাগরে আছে তা তর্কাতীত। সিবিএস এর মার্ভিন কালব আজ সকালে এমনি জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসনের মন্তব্য এখনো “মন্তব্য নেই” এবং পরিস্থিতির আলোকে একে হ্যাঁ সূচক ধরে নেওয়া যায়।
সচিব লেইর্ড, সোমবার সকালে তার বিবৃতিতে বলেন যে তিনি জাহাজের গমনাগমন নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চান না। তবে পরোক্ষ ইঙ্গিতে বলেন, “ কয়েকটি বহর অপসারণ কাজে অংশ নেবার পরিকল্পনা করছে।” প্রথম পঠনে কারো মনে হতে পারে এর অর্থ হচ্ছে আমেরিকানদের অপসারণ কাজ এবং প্রেসিডেন্ট মহোদয়ের উদ্ধারকর্মে অধিকারে কারো কোনো প্রশ্ন নেই।
যাহোক, ঢাকায় যেসব আমেরিকানগণ রয়ে গেছে তারা স্বেচ্ছাতেই আছেন বলে প্রতীয়মান হয়। আজ সকালের নিউ ইয়র্ক টাইমস এ প্রতিবেদন মোতাবেক –
ঢাকায় থেকে যেতে চাওয়া বিদেশীদের মধ্যে ৪৭ জন আমেরিকান রয়েছেন যারা পূর্বপাকিস্তানের দখলকৃত রাজধানী থেকে আকাশ পথে অপসারণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেননি।
হয়তো পূর্বপাকিস্তানের অন্যান্য জায়গায় আরো আমেরিকান রয়েছেন যাদের উদ্ধার করা প্রয়োজন।
কিন্তু অন্যান্য আমেরিকান নাগরিকদের উদ্ধারের জন্য সচিব মহোদয়ের কাছে কোনো সূত্র আছে কি? সৈন্য বাহিনী নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে ধাবমান এন্টারপ্রাইজ কি, কথার কথা, পশ্চিম পাকিস্তানী বাহিনীর উদ্ধারেই যাচ্ছে?
শুনতে প্রথমে এ এক অনুগ্রহ প্রদর্শনের মত শোনাবে যদিও এই একই সৈন্যবাহিনী যখন কসাইয়ের মত বাঙ্গালী নিধন করছিল তখন প্রশাসনের অনুগ্রহ কোথায় ছিল এমন প্রশ্ন উঠতে পারে। কিন্তু বাস্তবে, পাকিস্তানী সৈন্য উদ্ধার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করা ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামার শামিল হতে পারে কারণ পরবর্তী মীমাংসার ঘুটি হিসেবে ভারত চাইবে কত বেশী সৈন্য বন্দী করা যায়।
পাকিস্তানী সৈন্যদের উদ্ধারে পেন্টাগনের মনোভাব যাই থাকুক না কেন, প্রেসিডেন্ট মহোদয়, আমি বলতে চাই যে এন্টারপ্রাইজের উপস্থিতি সন্দেহাতীতভাবে পূর্বপাকিস্তানে নিয়োজিত বাহিনীর জন্য স্বস্তিস্বরূপ এমনটা পাকিস্তানী উপর মহল চিন্তা এবং আশা করবে- যার মানে দাঁড়ায়, নিয়োজিত বাহিনীর উপর নির্দেশ আসবে যুদ্ধ চালিয়ে যাবার অর্থাৎ সেখানে নিশ্চিতভাবে অপ্রয়োজনীয় আরো হত্যাকান্ড চলবে। তাহলে, এই পরিস্থিতি থেকে সম্পূর্ণ সরে থেকে পাকিস্তানী বন্দিগণের হেফাজতের জন্য রেডক্রসকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে ভারতকে চাপ দেওয়াই কি অধিকতর মানবিক হবে না?
আরেকটি প্রশ্নঃ দ্য এন্টারপ্রাইজ জাহাজটি ভারতে রাশিয়ার প্রভাব হ্রাস করতে বঙ্গোপসাগরে “পতাকা প্রদর্শন” করতে গেছে? যদি কমান্ডার ইন চীফ এর তাই মনে থাকে তাহলে তিনি কতটুকু যেতে চান? ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হবেন? ঐ এলাকায় রাশিয়ান জাহাজগুলোকে আক্রমণ করবেন? তা যদি না হয় আমরা কি কাগুজে বাঘের মত দেখাচ্ছি না?
প্রেসিডেন্ট মহোদয়, আমি এখানে উল্লেখ করতে চাই ভারতে রাসিয়ার প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে গত গ্রীষ্মে ইন্দো-সোভিয়েত মিত্রতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হবার সূত্রে যখন আমাদের প্রশাসন পূর্বপাকিস্তান ইস্যুতে একেবারেই জড়িত হতে চাইছিল না। আশি লক্ষ থেকে এক কোটি শরণার্থী ভারতে পালিয়ে গেছে যা সেখানে সীমিত সম্পদের ওপর অসহনীয় চাপ সৃষ্টি করেছে। পশ্চিম পাকিস্তানে তাঁর বন্ধুদের ওপর প্রেসিডেন্ট মহোদয়ের কি যথেষ্ট প্রভাব ছিল না যে তাদের এই অন্তসারশুন্য দমনপীড়নের ব্যাপারে বোঝানো যেত? পাকিস্তানের কার্যক্রমে আমরা যদি চুপ না থেকে তীব্র ধিক্কার জানাতাম তবে কি এখনকার সংঘাত আগেভাগেই নিরস্ত হত না?
যখন ভারতের বন্ধু প্রয়োজন ছিল তখন রাশিয়া সেখানে গেছে এবং আমরা ছিলাম না। ভারতীয় উপমহাদেশে যখন ক্রমেই অবধারিত হচ্ছিল আমরা তা প্রতিরোধে কোনো উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা নেইনি।
প্রেসিডেন্ট মহোদয়, আমরা যা করছি তাতে মনে হচ্ছে এতে কমপক্ষে পূর্ব পাকিস্তানীদের দূর্দশাকাল দীর্ঘতর হবে এমনকি আমেরিকানদের এশিয়াতে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে।
আমরা পূর্বপাকিস্তানীদের কোন ধরণের উপকার করতে পারিনি, শান্তি রক্ষার্থে সময়মত ব্যবস্থা নিতে পারিনি কিন্তু একটি আঞ্চলিক যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বড় শক্তিগুলোকে মুখোমুখি করার ঝুঁকি নিতে একেবারেই দেরী করিনি।
আমি স্বীকার করছি, প্রান্তিক ভাবে হলেও এশিয়ায় আরেকটি যুদ্ধে আমরা জড়িত হব এমন কল্পনা করাও কষ্টকর। এটি প্রেসিডেন্ট মহোদয়ের গুয়াম মতবাদ এবং “শান্তির প্রজন্ম” প্রত্যাশার সাথে যায় না। প্রশাসন জড়িত হতে চায় তা আমি এখনো বিশ্বাস করতে চাই না। পাকিস্তানের সাথে মিত্রতা চুক্তির জন্য কোনো প্রচেষ্টা চালানো হয়নি এটি আমাকে আশ্বস্ত করে যদিও সেক্ষেত্রে কংগ্রেসের অনুমোদন লাগবে।
কিন্তু পাকিস্তান এবং ভারতের ক্ষেত্রে আমি আমাদের একটার পর একটা ভ্রান্ত নীতি দেখেছি তাই দূর্ঘটনাক্রমে জড়িত হয়ে পড়া এড়াতে পারার দক্ষতা আমাদের আছে কিনা তাই ভাবছি।
প্রেসিডেন্ট মহোদয় স্পষ্টতই দক্ষিণ এশিয়ায় সোভিয়েত ভুমিকাকে সর্বাধিক গুরুত্বের সাথে নিয়েছে – এতই গুরুত্বের সাথে যে একজন উচ্চপদের হোয়াইট হাউজ কর্মকর্তা প্রেসিডেন্ট মহোদয়ের দীর্ঘলালিত মস্কো সফর বাতিলের সম্ভাবনা নিয়ে কথা তুলেছেন। পাশাপাশি, উদ্দেশ্য যাই হোক, এন্টারপ্রাইজকে প্রেরণ সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
তাই আজ আমার উদ্দেশ্য হল কংগ্রেস সদস্য এবং আমেরিকান জনগণদের কিছু সতর্ক বার্তা দেওয়া যাতে পরে আমাদের বুঝতে না হয় “অনেক দেরী হয়ে গেছে”।