You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.20 | বাংলাদেশের ঘটনায় শোকাভিভূত ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কতিপয় অধ্যাপকের পত্র | সিনেটের কার্যবিবরণী - সংগ্রামের নোটবুক

শিরোনামঃ বাংলাদেশের ঘটনায় শোকাভিভূত ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কতিপয় অধ্যাপকের পত্র
সূত্রঃ সিনেটের কার্যবিবরণী
তারিখঃ ২০ জুলাই, ১৯৭১

কংগ্রেস সম্পর্কিত সিনেট কার্যবিবরণী
পাকিস্তানের শোকগাঁথা
২০ জুলাই, ১৯৭১ স ১১৬১১
জনাব কার্স্টন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি, পাকিস্তানের অবস্থা দিনকে দিন গুরুতর হচ্ছে। লাখ লাখ মানুষ আজ গৃহহারা, হাভাতে কারণ তারা পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে উদ্ভূত যুদ্ধের শিকার।
পাকিস্তানে কর্মরত এবং বসবাসরত আমেরিকান আমাকে জানিয়েছেন যে চলমান পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য আমাদের করণীয় হল আমাদের পাঠানো ত্রাণসামগ্রী সুষ্ঠুভাবে এবং সমানভাবে যাদের সত্যিকার অর্থে প্রয়োজন তাঁদের কাছে পৌঁছানো নিশ্চিত করা। সেই মর্মে, ওহাইও এর সিনেটর (জনাব স্যাক্সবি) এবং আইডাহোর সিনেটর (জনাব চার্চ) এর পেশ করা ১৫৯ নং সংশোধনীতে আমি সহ অনুমোদন দিয়েছি।
পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে সকলের সম্মতির লিখিত নথি নিয়ে লস এঞ্জেলেস টাইমের সম্পাদকের নিকট একটি পত্র পাঠানোর অনুরোধ করছি। পত্রটি লিখেছেন লস এঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এশিয়ান স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষকমণ্ডলীর একটি দল। পত্রটি আমাদের পূর্ণ মনোযোগ পাওয়ার যোগ্য।

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
লস এঞ্জেলেস, ক্যালিফোর্নিয়া, মে ১৭, ১৯৭১
সম্পাদক,
লস এঞ্জেলেস টাইমস
জনাব, আমরা নিম্নে স্বাক্ষরিত বিদ্বানরা হলাম ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, লস এঞ্জেলেসের এশিয়ান স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষকমণ্ডলী। আমরা ২৫ মার্চ, ১৯৭১ হতে বাঙ্গালী জনগণের উপর পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর চালিয়ে যাওয়া হিংস্র ও অমানবিক অত্যাচারের সংবাদ পড়ে এবং নিজেরা পেয়ে আমাদের বেদনা এবং শোক প্রকাশ করতে আপনাকে লিখছি। প্রতিটি বিশ্বাসযোগ্য খবর থেকেই এটা জানা যায় যে, জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সেনাদল তাঁদের আগ্নেয়াস্ত্র এর সকল শক্তি ‘প্রতিরোধ’ এর দুর্গ গড়ে তুলতে ব্যবহার করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্ত্রহীন শিবিরে। কমপক্ষে পাঁচ জন বিভাগীয় প্রধান কে হত্যা করা হয়েছে। তাঁদের সাথে মারা গেছেন আরও অসংখ্য গবেষণা সহযোগী, ছাত্র, কর্মচারী এবং তাঁদের পরিবার।
যদি এবং যতক্ষন না পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী রেড ক্রস বা জাতিসংঘ বা এমন আরো যা নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের বর্তমান বিধ্বস্ত পূর্ব পাকিস্তানে (যাকে সিংহভাগ বাংলাভাষী অধিবাসী এখন “বাংলার দেশ”, বাংলাদেশ বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে) প্রবেশের অনুমতি দেয়, ততদিন পর্যন্ত এই দক্ষিণ এশীয় হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত হিসাব মেলা অসম্ভব। তা সত্বেও, ইতোমধ্যে আমরা যা জেনেছি, তা হতে এটা বুঝা যায় যে বাঙ্গালীদের মৃত, আহত এবং আতঙ্কিতদের সংখ্যা যতই হোক না কেন, সামরিক গুলিবর্ষণে হত্যার এক নতুন রেকর্ড পশ্চিম পাকিস্তানী বাহিনী বিগত ছয় সপ্তাহে স্থাপন করেছে।
.
১৯৫৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের দেশ পাকিস্তানে ট্যাঙ্ক, বিমান, কামানসহ দুই বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের সামরিক ‘সাহায্য’ সরবরাহ করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার উত্তর সীমান্ত সম্ভাব্য কম্যুনিস্ট আগ্রাসন থেকে ‘ঠেকিয়ে’ রাখার জন্য পাকিস্তান সিয়াটো (দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় মৈত্রী সংগঠন) তে যোগ দেয়ার পর থেকে এই সামরিক ‘সাহায্য’ দেয়া হয়। যদিও গত মাসের হত্যাকাণ্ডের আগে পাকিস্তান সেসব মার্কিন সামরিক সামগ্রী ব্যবহার করেছে কেবল ১৯৬৫ সালে কাশ্মীর নিয়ে ইন্দো-পাক যুদ্ধে। এই যুদ্ধের পর আমাদের সরকার পাকিস্তানে পাঠানো সামরিক চালানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কিন্তু ১৯৭০ সালের অক্টোবরে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। এবং আমরা আরো ৩০০ সাঁজোয়া সৈন্যবাহী বাহন, ৪ টি সমুদ্র পরিভ্রমণকারী বিমান, ৬ টি এফ – ১০৪ যুদ্ধবিমান এবং ৭ টি বি – ৫৭ বোমারু বিমান পশ্চিম পাকিস্তানে পাঠানোর আশ্বাস দিয়েছি।
আমরা সরকারের নিকট যারপরনাই তীব্র আবেদন জানাই, যাতে সরকার পাকিস্তানের পাঠানো অস্ত্রের চালানের উপর যে পুনরায় সীমিত আকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সেটা পুরোপুরিভাবে করে অনির্দিষ্টকালের জন্য চালু রাখে। আমরা আরও অনুরোধ জানাচ্ছি যে, যেকোনো রকম অর্থনৈতিক সাহায্য বন্ধ রাখা উচিৎ যা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জেনারেল খানের প্রশাসনকে অর্থ জোগাবে এবং যা দিয়ে তারা হয়তো অন্য কোথাও থেকে সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় করতে পারবে। আপাতত যতদিন না কোন নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক সংস্থা মার্কিন জনগণকে আশ্বস্ত করতে পারছে যে বাঙ্গালী জনগণ হত্যা বন্ধ হয়েছে এবং যেসব পাকিস্তানী বাহিনী ঢাকাসহ বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে তাদেরকে অত্র এলাকা থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে ততদিন এই নিষেধাজ্ঞা চালু রাখা উচিৎ।
আমাদের আশঙ্কা যে আমাদের প্রতিবাদে পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক নেতাদের মত পরিবর্তন হবে তার আশা খুবই ক্ষীণ। কিন্তু এটা বিশ্বাস করুন যে আমরা যেমন পন্থা প্রস্তাব করছি তা বাস্তবায়ন করা হলে বাঙ্গালীদের গণহত্যার ব্যাপারে আমেরিকার সর্বাত্মক সহযোগিতার ব্যাপারে কোন সন্দেহ থাকবে না।
বিনীত
স্ট্যানলি এ ওয়েলপার্ট, অধ্যাপক, ভারতীয় ইতিহাস;
ডঃ আর সার দেসাই, অধ্যাপক, দক্ষিণপূর্ব এশিয় ইতিহাস;
জে রিচার্ড সিসন, অধ্যাপক, ভারতীয় রাজনীতি;
রুপার্ট এমারসন, বহিরাগত অধ্যাপক, এশিয় রাজনীতি;
হান্স এইচ বায়েরওয়াল্ড, অধ্যাপক, জাপানি রাজনীতি;
ফ্রেড জি নশেলফার, অধ্যাপক, জাপানি ইতিহাস;
জে লেরয় ড্যাভিডসন, অধ্যাপক, ভারতীয় কলা;
ড্যাভিড এম ফারকুহার, অধ্যাপক, চায়নিজ ইতিহাস;
রবার্ট এ উইলসন, অধ্যাপক, জাপানি ইতিহাস।