শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
সিনেটর কেনেডী কর্তৃক আমেরিকার পাকিস্তান নীতির সমালোচনা | সিনেটের কার্যবিবরণী | ২২শে জুন, ১৯৭১ |
এস৯৬৪০ কংগ্রেস-সম্পর্কিত বিবরণী সিনেট ২২শে জুন,১৯৭১
পাকিস্তানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতি
জনাব কেনেডী,মাননীয় রাষ্ট্রপতি,আমেরিকার জনগণ ও কংগ্রেস আবার-ও ভুলে পথে চালিত হয়েছে-এবার পাকিস্তানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতির প্রশ্নে।
যেহেতু এপ্রিলে একদম গোড়ার দিকে,আমাকে বার বার-ব্যক্তিগত আলোচনা এবং সরকারী পত্রাবলিতে নিশ্চিত করা হয়েছে-যে আমাদের সরকার পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ করছিলো না।আমি জানি অন্যান্য সিনেটরদের-ও একই নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে।উদাহরণস্বরূপ,২০শে এপ্রিল আমাকে একটি চিঠিতে রাষ্ট্রবিভাগ বলেছেঃ
১৯৬৫ সালে যেহেতু আমরা পাকিস্তানে মানচিত্র সহায়তায় একটা সামগ্রিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছি,আমরা পাকিস্তানে সামরিক উপকরণের কোনো মারাত্মক মারণাস্ত্র সরবরাহ করিনি।গত অক্টোবরে আমরা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ মারণাস্ত্র পাকিস্তানের নিকট বিক্রয় করার একবার একটি ব্যতিক্রম ঘোষণা করেছিলাম।এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কিছুই প্রদান করা হয়নি বা এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে কিছুই শোনা যাচ্ছে না।গত ৬ সপ্তাহে এই বিষয়ে কোনো প্রায়োগিক আলোচনা সংগঠিত হয়নি।বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য রাখা হয়েছে।
উপরন্তু,আমাদের নগদ ও ধারে পাকিস্তানের নিকট অ-প্রাণঘাতি সামরিক মারণাস্ত্রের সাথে সাথে কিছু খুচরা যন্ত্রাংশ ও গুলি বিক্রয়ের একটি পরিমিত কর্মসূচি আছে।প্রতিরক্ষা বিভাগ থেকে আমাদের জানানো হয়েছে যে ২৫-২৬শে মার্চে যখন থেকে পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধের প্রাদুর্ভাব আরম্ভ হয়েছে এই সামগ্রীগুলোর কোনোটাই পাকিস্তান সরকার বা তার সংস্থার কাছে বিতরণ করা হয়নি।এবং বর্তমানে এমন কোনো বিলির পরিকল্পনা নেই।
মাননীয় রাষ্ট্রপতি,এখন আমরা সংবাদ লিপি থেকে জানতে পেরেছি,গত রাতে পদ্মা নামে একটি পাকিস্তানী জাহাজ,বৈদেশিক সামরিক বিক্রয় চুক্তির অধীনে পাকিস্তানের নিকট বিক্রীত মার্কিন সামরিক সামগ্রী নিয়ে নিউইয়র্ক থেকে করাচীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে।স্পষ্টতই,এটাই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে বিবৃত নীতির উলঙ্ঘন না,এবং কিছু সূত্রমতে,এটাই শেষ না।
এটা দ্বিমুখীতা,অযোগ্যতা বা দুটোই হোক না কেনো,পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রের চালান পাঠানোতে নীতির উলঙ্ঘন হয়।এবং আরো খারাপ,এটা সামরিক ক্রিয়াকলাপে আরো ইন্ধন জোগাবে,যা ইতিমধ্যে ৬০ লক্ষেরও বেশি শরনার্থী ও অগুনিত সাধারণ জনগণের মৃত্যুর কারণ।গত শুক্রবার,পূর্ববাংলার জনগণের উপর মার্কিনদের কর্তৃক ব্যাপক হারে সরবরাহকৃত পাকিস্তানী সৈন্যের কর্মকান্ডে আমাদের সরকারের নীরবতা এবং আপাত উদাসীনতায় আমি আবারো আতংক প্রকাশ করেছিলাম।আজকে আমরা বুঝেছি যে এটা কেবল নীরবতা ও উদাসীনতা না,বরং কুকর্মে সহায়তার ধাপ,যা অযৌক্তিক।
কিন্তু মাননীয় রাষ্ট্রপতি,সবচেয়ে দুঃখজনক সত্য হল,আমাদের মহান রাষ্ট্র মানবিক সাহায্যের ব্যবস্থা করার থেকে সামরিক সরঞ্জামাদি পাঠানোতে অনেক বেশি উদগ্রীব। গত রাতে পাকিস্তানের জন্য সামরিক সামগ্রী দিয়ে বোঝাই করা একটি জাহাজ ছেড়েছ যখন পূর্ব পাকিস্তান ও ভারত,উভয় দেশে জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন-যা দীর্ঘসূত্রিতা ও আমলাতন্ত্রের স্রোতে আটকে আছে।
কখন আমাদের মধ্যে একই মাত্রার অগ্রাধিকার,গুরুত্ববোধ জাগবে,যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্য সহায়তা পাঠানোতে যা স্পষ্টতই তৈরি হয়েছে বন্দুকের সংযুক্তির কারণে?
এবং,আরো গুরুত্বপূর্ন,কখন আমরা অগ্রাধিকার দেয়া শুরু করব মিলিতভাবে কূটনৈতিক উদ্যোগ নিয়ে এমন ব্যাপক মানব সংকট যে দ্বন্দ্বের ফলস্বরূপ তৈরি হয়েছে সেই শক্তিকে সামলানোর?
মাননীয় রাষ্ট্রপতি,যদি কংগ্রেস আর কার্যনির্বাহী শাখার কথায় বিশ্বাস রাখতে না পারে,যদি তাদের প্রতিজ্ঞা ও নিশ্চয়তা তাদের নিজেদের কর্মকান্ড দ্বারা লঙ্ঘিত হয় তাহলে আমরা অনিচ্ছাপূর্বক এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে কংগ্রেসের সেসব প্রতিজ্ঞা ও নিশ্চয়তা আইনমোতাবেক লিখিত দেয়া উচিত,যা সহজে লঙ্ঘন করা যাবে না।