পাক হানাদারদের উপর মুক্তিফৌজের পাল্টা আক্রমণ
কলকাতা, ১১ জুন- মুক্তিফৌজের গেরিলা তৎপরতায় চট্রগ্রাম শহর এবং পার্শবর্তী এলাকায় পাক সেনারা প্রতিদিনই নাজেহাল হচ্ছে। আজ সন্ধ্যায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রচারিত সংবাদে বলা হয়েছে যে সম্প্রতি গেরিলা বাহিনী চট্রগ্রাম শহরের নিউ মার্কেট, খাতুনগঞ্জ, চট্রেশবরী রোড, চকবাজার, লালদিঘীর মাঠ প্রভৃতি স্থানে গ্রেনেড ও হাতবোমা সহ আক্রমণ চালায়। চকবাজারে ২ জন পাক হানাদার নিহত হয়েছে।
সংবাদে বলা হয়েছে, চট্রগ্রাম এখন পরিত্যক্ত নগরী। দোকানপাট বন্ধ। শতকরা মাত্র ১৫ জন লোক দৈনন্দিন কাজে যোগ দেওয়ার জন্য পথে বেরুচ্ছেন। বেলা ৩ টার পর রাস্তায় কাউকে খুব কম দেখা যায়। বন্দর এলাকায় মাত্র ৫০ জন লোক কাজ করছে। চট্রগ্রামের হাজী এলাকায় দ্বিতীয় ক্যান্টনমেন্ট স্থাপন করা হয়েছে। বাগানবাজার ও আঁধারমানিক অঞ্চলে ২ টি পৃথক আক্রমণে গেরিলারা ৪০ জন পাক সৈন্যকে খতম করেছে। শ্যামপুরে ৮ জন দৌলতপুর-চাঁদিরহাটে ৪০ জন কুমিল্লার হরণপুর, হৃদয়পুরে ১৩ জন এবং যশোহর রণাঙ্গনে ১৫ জন পাক হানাদার গেরিলাদের হাতে নিহত হয়েছে। রামগড় থেকে গড়েরহাটের পথে ৩ জন পাক সামরিক অফিসার নিহত হয়েছে।
গেরিলা বাহিনী মুসলিম লীগের দালালসহ পাক দালালদেরও বিভিন্ন স্থানে খতম করে চলছেন। জাকিগঞ্জে ৪ জন দালাল নিহত এবং ১ জন গ্রেফতার হয়েছে। মুক্তিসেনারা জাকিগঞ্জের পুলিশ স্টেশন দখল করেছেন এবং জাকিগঞ্জে পূর্ণ কর্তৃত্ত স্থাপন করেছেন। কালিগঞ্জের মুসলিম লীগ চেয়ারম্যান অলি মণ্ডলকে মুক্তিসেনারা খতম করে দিয়েছেন। ছাগলগঞ্জ বাজারে ১ দালালকে বন্দী করা হয়েছে এবং যুবতীকে উদ্ধার করা হয়েছে। সিলেট সেক্টরে মুক্তিফৌজের হাতে একটি রেলসেতু ধ্বংস হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে।
আগরতলা থেকে ইউ-এন আই জানাচ্ছেনঃ সম্প্রতি একদল সাংবাদিক বাংলাদেশের দক্ষিন রণাঙ্গনে সফরে গিয়েছিলেন। মুক্তিফৌজের জনৈক মেজর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে, মুক্তিফৌজে বর্তমান পাক হানাদারদের উপর পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছে এবং সর্বত্র পাকসেনাদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।
উক্ত মেজর সাংবাদিকদের আরো জানিয়েছেন যে দক্ষিন রণাঙ্গনে পাঠান ও বালুচ সেনারা নিরস্ত্র বাংলাদেশ নাগরিকদের উপর গুলি করতে অস্বীকার করায় তাঁদের অন্যত্র বদলী করা হচ্ছে। সম্প্রতি প্রায় ৪০০ জন বালুচ সেনাকে জাহাজে পশ্চিম পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
পাঞ্জাবী ও পাঠান সেনাদের মধ্যে স্নজ্ঞহরষঃ গত ৪ জুন কুমিল্লা সেক্টরে পাক সেনাবাহিনীর পাঞ্জাবী ও পাঠানদের মধ্যে এক সংঘর্ষে ৩৫ জন নিহত হয়েছে।
-কালান্তর, ১২ জুন, ১৯৭১