মুক্তিফৌজের গেরিলা তৎপরতা বৃদ্ধি, আখাউড়ায় জোর লড়াই
আগরতলা, ৬ মে- বাংলাদেশের সর্বত্র মুক্তিফৌজের তৎপরতা দারুণ বেড়ে গিয়েছে। মুক্তিফৌজের অতর্কিত আক্রমণে পাক-বাহিনী নাজেহাল। বহু পাক-সেনা নিহত হয়েছে। বহু জায়গায় পাক-সেনা পিছু হটেছে। বৃহস্পতিবারও আখাউড়ায় দুই পক্ষে প্রচণ্ড লড়াই চলেছে। মুক্তিফৌজ এখানে পাক-বাহিনীকে বেকায়দায় ফেলতে পেরেছে। আখাউড়ার কাছেই গঙ্গাসাগর ও উজানিশর সম্পূর্ণভাবে মুক্তিফৌজের নিয়ন্ত্রণে। মুক্তিফৌজের একজন কমাণ্ডার জানিয়েছেন, আখাউড়ার যুদ্ধে ১২০ জন পাকসেনা খতম হয়েছে। পাক-সেনাবাহিনী আখাউড়া ও কুমিল্লার মধ্যে সরাসরি সড়ক পথে সংযোগ স্থাপনে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। পশ্চিম রণাঙ্গনে মুক্তিফৌজের হাতে প্রাণ হারিয়েছে ৩৩ জন পাক সেনা। মুক্তিফৌজ এখানে দুটি গুরুত্বপূর্ণ রেল সড়ক সেতু উড়িয়ে দিয়েছে। দিনাজপুর ও রংপুরেও পাক-বাহিনীর উপর মুক্তিফৌজ গেরিলাবাহিনী বার বার আক্রমণ চালায়।
বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম রণাঙ্গনে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে উভয় পক্ষে প্রচণ্ড লড়াই হয়। গেরিলা আক্রমণে পাক-বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি বেশী হিয়। লালমনিরহাটে ২৯জন পাক-সেনা নিহত হয়। দিনাজপুর জেলায় ঘোড়াগাড়ি ও প্রেমতলাতে মুক্তিফৌজের হাতে চারজন পাক সেনা খতম হয়েছে।
বরিশালেও মুক্তিফৌজের সাফল্য অব্যাহত। এখানে দ্বারকাপুরে পাক-সেনা বোঝাই একটি নৌকা মুক্তিফৌজ ডুবিয়ে দিয়েছে। ফলে বহু পাক-সেনার সলিলসমাধি ঘটেছে। ময়মনসিংহের উত্তর-পূর্বে আলমপুরে পাক-সেনা ও মুক্তিফৌজের মধ্যে তীব্র লড়াই হয়েছে।
মুক্তিফৌজের আক্রমণে নাজেহাল পাক-সেনাদল শ্রীহট্ট জেলার হবিগঞ্জের পশ্চিমে ২টি গ্রামে আগুন লাগিয়ে দেয়।
গত দুদিন ধরে প্রাণপণ চেষ্টা করার পর আজ পাক-বাহিনী চট্টগ্রামের দক্ষিণে কক্সবাজার দখল করে নেয়। কক্সবাজারে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে।
গেরিলা তৎপরতা বন্ধ করার উদ্দেশ্যে পাক-সেনা কতৃপক্ষ পশ্চিমাঞ্চলের চিলাতহ শহরে কারফিউ জারি করেছে।
দেবগ্রামে মুক্তিফৌজ ও পাক-সেনাবাহিনীর মধ্যে প্রচণ্ড লড়াই হয়। এখানে প্রায় ১০০ জন পাক সেনা নিহত হয়েছে। ধরমানি চা বাগান এলাকা থেকে প্রায় ৮০০ জনের এক পাক-সেনাদলকে মুক্তিফৌজ তীব্র আক্রমণ চালিয়ে হটিয়ে দিয়েছে। এখানে প্রায় ২০০ জন পাক-সেনা মারা গিয়েছে।
-আনন্দবাজার পত্রিকা, ৭ মে, ১৯৭১