জীবনচিত্র নামঃ স্বপন কুমার বসু
Swapan Kumar Basu
পিতার নামঃ মুকুন্দ নাথ বসু (স্বর্গীয়)
পিতার পেশাঃ জমিদারি
মাতার নামঃ পুষ্পলতা বসু (স্বর্গীয়)
ভাইবোনের সংখ্যাঃ পাঁচ বোন, দুই ভাই।
নিজক্ৰম-চতুৰ্থ
ধর্মঃ হিন্দু
স্থায়ী ঠিকানাঃ গ্রাম-উত্তর চাঁদসী, ইউনিয়ন-৩ নং চাঁদসী,
উপজেলা-গৌরনদী, জেলা-বরিশাল
শহীদ মেডিকেল ছাত্র স্বপন কুমার বসু
নিহত হওয়ার সময় ঠিকানাঃ ঐ
জন্মঃ ৮ জুন, ১৯৫২
শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ
মাট্রিকঃ যশোর বোর্ডে সম্মিলিত মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান। ১৯৬৮, চাঁদসী ঈশ্বরচন্দ্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বরিশাল
আইএসসিঃ ১৯৭০, গৌরনদী কলেজ, বরিশাল
এমবিবিএসঃ প্ৰথম বৰ্ষ ১৯৭১, ঢাকা মেডিকেল কলেজ
হত্যাকারীর পরিচয়ঃ
পাকিস্তান সেনাবাহিনী
নিহত হওয়ার তারিখঃ ১৪ মে, ১৯৭১, রবিবার
মরদেহঃ
প্রাপ্তি স্থানঃ গ্রাম-রাংতা, ইউনিয়ন-রাজিহার, উপজেলা-আগৈলঝাড়া, জেলা-বরিশাল। (গণকবর)
প্রাপ্তি তারিখঃ ১৪ মে, ১৯৭১, রবিবার
সন্ধানদানকারীর পরিচয়ঃ গ্রামবাসী
শ্মশানঘাটঃ পৈতৃকভিটা
স্মৃতিফলক/স্মৃতিসৌধঃ নেই
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হিসেবে সাহায্য/দান/পুরস্কারঃ পাননি
বৈবাহিক অবস্থাঃ অবিবাহিত
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ নিকটাত্মীয়ঃ
শেফালী রাণী বসু (বোন) (দশম শ্রেণীতে অধ্যয়নরতা)
যুথিকা রাণী বসু (নবম শ্রেণীতে অধ্যয়নরতা)
স্বপন কুমার বসু ও তার দুই বোনকে প্রায় ৭০০ বাঙালিসহ হত্যা করা হয়।
তথ্য প্রদানকারী
তপন কুমার বসু
শহীদ মেডিকেল ছাত্রের ভাই
গ্রাম-উত্তর চাঁদসী, ইউনিয়ন-৩নং চাঁদসী
উপজেলা-গৌরনদী, জেলা-বরিশাল
৪১০ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ অন্যান্য মেডিকেল ছাত্র
আবুল আমজাদ
স্বাধিকার আদায়ের আরেক সংগ্রামী নায়ক ছিলেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের (নতুন) আবুল আমজাদ। অত্যন্ত মিষ্টিভাষী, মিশুক ছিলেন। ডাক নাম ‘পেয়ারা’ নামে বন্ধুদের নিকট তিনি প্রিয় ছিলেন। ছাত্র হিসেবে ছিলেন খুবই মেধাবী।
রাজশাহীস্থ আন্তর্জাতিক হেরিকেন মিউজিক পার্টির অন্যতম সদস্য ছিলেন। তিনি ভালো গিটার বাজাতেন। পেয়ারার বাবা কুষ্টিয়ার মেহেরপুর কলেজের ভূতপূর্ব অধ্যাপক ছিলেন। এরপর তিনি কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট স্কুলের সহকারী অধ্যক্ষ ছিলেন। ইয়াহিয়া আমলের দুর্যোগপূর্ণ দিনগুলোতে তিনি পেয়ারা ও পেয়ারার ছোট ভাইকে নিয়ে আশঙ্কায় কাল যাপন করছিলেন। কিন্তু একদিন নরপশুরা এসে বাসা থেকে পেয়ারা ও তাঁর বাবাকে ধরে নিয়ে গেল। আর ফিরে এলো না।
নাটকীয়ভাবে বেঁচে গেল তার ছোট ভাই। আর তাই পেয়ারার দেশের বাড়িতে মা, ভাইবোনদের সব ভার এসে পড়লো ঐ ছোট ভাইটির ঘাড়ে। শহীদের নামে শহীদ আবুল আমজাদ ছাত্ৰাবাস নামকরণ করা হয়েছে।
আ ব ম সিরাজুল হক
আ ব ম সিরাজুল হক ১৯৬৭ সালে ঢাকা কলেজ থেকে আইএসসি পাস করে ১৯৬৭-৬৮ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। ছাত্ররাজনীতিতে হাতেখড়ি ঢাকা
কলেজে। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের তৎকালীন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন অগ্রগামীর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি হাসপাতালে
৪১১ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ
শহীদ অন্যান্য মেডিকেল ছাত্র
সার্বক্ষণিকভাবে অবস্থান করতেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ও অন্যান্য সাহায্য করতেন। রাতে তিনি বকশীবাজারস্থ মেডিকেল হোস্টেলে না গিয়ে হাসপাতালের কনভালোসেন্ট/ক্যান্সার ওয়ার্ডে ঘুমাতেন। এই ক্যান্সার ওয়ার্ড থেকেই ১১ ডিসেম্বর রাতে রাজাকার-আলবদর বাহিনী তাঁকে ধরে নিয়ে যায় এবং নির্মমভাবে হত্যা করে।
কাজী নুরুন্নবী
কাজী নুরুন্নবী। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ অঙ্গনের অত্যন্ত চেনা একটি মুখ। একজন সংগ্ৰামী ছাত্রনেতা। ছাত্রদের অধিকার আদায়ের অগ্রনায়ক। ভয় কী জিনিস তিনি জানতেন না। প্রথম বর্ষ থেকে পঞ্চম বর্ষ পর্যন্ত তিনি অধিকার আদায়ের বিপ্লবী যোদ্ধা। কাজী নুরুন্নবীর বাড়ি রাজশাহী জেলার নওগাঁ মহকুমার কাজী পাড়ায়। জল্লাদ ইয়াহিয়ার পাকবাহিনী অধিকৃত আমলে তিনি (কাজী) সম্পূর্ণভাবে অসহযোগিতা করেন। এমনি সময়ে পঞ্চম বর্ষেও পরীক্ষা শুরু হলো। তিনি পরীক্ষা দানে বিরত রইলেন। শোনা যায় সেই মুহূর্তে তিনি গোপনে রাজশাহীতে কিছু অনুসন্ধান চালান। অনুসন্ধানকালে পাকবাহিনীর একজন দালাল রাস্তায় তাঁকে দেখা মাত্র ক্যান্টনমেন্টে গার্ড দিয়ে নিয়ে যায়। তারপর আর তাঁর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। পাকিস্তানি পতাকা পোড়ানোর অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আনা হয়। সম্প্রতি শহীদের মহীয়ষী মা, মেডিকেল কলেজ প্রধান ছাত্রাবাসের ‘শহীদ কাজী নুরুন্নবী ছাত্রাবাস’ নামকরণ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।
(দৈনিক পূর্বদেশ, ১১ জুন ১৯৭২ থেকে সঙ্কলিত)
১৯৭০ সালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি শেষ বর্ষের ছাত্র কাজী নুরন। সালে রাজশাহীতে ইপিআরদের সাথে স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগ দেন। পরবর্তীকালে প্রশিক্ষণ আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে একদল মুক্তিযোদ্ধার লিডার হিসেবে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। ১ অক্টোবর ‘৭১ কাজী নুরুন্নবী তার বাহিনী নিয়ে প্রথমে রাজশাহী শহরে পরে খোকন নাম এক সহযোদ্ধাকে নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে যান। ফিরে আসবার সময় ফায়ার ব্রিগেড কাছে তারই অবাঙ্গালি অধ্যাপক ডা. করিম সেক্কর তাকে আটক করে পাকিস্তানি আর্মি, তুলে দেয়। খোকন পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও কাজী নুরুন্নবী (বাবলু) আর ফিরে আসেনি।
(দৈনিক সংবাদ বিশেষ সংগ্ৰাহক সংখ্যা-৩, যেসব হত্যার বিচার হয়নি; পরিকল্পনায়ঃ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। প্রকাশকালঃ সোমবার ১৪ ডিসেম্বর ১৯৯৮; পূ. ২৫ থেকে সঙ্কলিত)
৪১২ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ
শহীদ অন্যান্য মেডিকেল ছাত্র
নিপা লাহিড়ী
যশস্বী শিক্ষাবিদ ড. শিবপ্রসন্ন লাহিড়ী ও অধ্যাপিকা রমা লাহিড়ীর অত্যন্ত মেধাবী কন্যা শহীদ নিপা লাহিড়ী রাজশাহীর কুমারপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৫ সালে রাজশাহী বিবি একাডেমী থেকে এসএসসি ও ১৯৬৯ সালে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। কলেজ জীবনে তিনি কিছুদিন রংপুর কারমাইকেল কলেজের ছাত্রী ছিলেন। ১৯৬৯-৭০ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েই বাম রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন এবং সে সময় বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য ভারতে যাওয়ার পথে ঢাকার অদূরে ফতুল্লার কালিগঞ্জে তিনি নির্মমভাবে নিহত হন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের শহীদ ডা. আবদুল আলীম চৌধুরী হলের ২১নং রুমে থাকতেন।
ম. হাসান শহীদ
ম. হাসান শহীদ ১৯৭০ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। কলেজ জীবনেই বাম রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মাদারীপুর চলে যান। সেখানে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন।
ম. হুমায়ুন ফরিদি
ম. হুমায়ুন ফরিদি ১৯৬৮ সালে ম্যাট্রিক ও ১৯৭০ সালে এইচএসসি পাস করেন। ১৯৭০-৭১ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। ছাত্রজীবনে খুব কবিতা লিখতেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে কুমিল্লার দাউদকান্দিতে পাকবাহিনীর সঙ্গে এক সম্মুখ সমরে শহীদ হন।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ ৪১৩
Reference: মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ – বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ