দেশ দেশান্তর
কিসিঞ্জারের চীন সফর
মাত্র চার বছরের মধ্যে অষ্টম বারের মত চীন সফর করে গেলেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডঃ হেনরি কিসিঞ্জার। সফরের উদ্দেশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর থেকে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ফোর্ডের আসন্ন চীন সফরের কর্মসূচী চূড়ান্ত করাই এই সফরের উদ্দেশ্য৷
অন্য কোন দেশের ক্ষেত্রে হলে এ ঘটনা নিয়ে এত জল্পনা কল্পনা হতো না৷ কিন্তু চীন – মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই সল্প সময়ে আটবার একই মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রীর চীন সফর বিভিন্ন জল্পনা কল্পনার অবকাশ দিয়েছে।
১৯৭১ সালের ১৫ ই জুলাই হেনরি কিসিঞ্জার প্রথম চীন সফর সম্পর্কিত প্রেসিডেন্ট নিক্সনের ঘোষণা কুটনৈতিক মহলে এবং বিশ্ব রাজনীতিতে আলোচনার ঝড় তুলেছিল৷
কিসিন্জারের প্রথম সফরে উভয় পক্ষ কি ঐক্যমতে পৌছেছিলেন, তা পুরোপুরি জানা না গেলেও, অনুমান করা গিয়েছিল, চীন মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে পরিবর্তন সূচিত হতে যাচ্ছে। এবং সে পরিবর্তনের বাস্তব ফলশ্রুতি হচ্ছে ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রেসিডেন্ট নিক্সনের চীন সফর। নিক্সনের চীন সফর শেষেযে সংযুক্ত ইশতেহার প্রকাশিত হয়েছিল তার মূলে বিষয়বস্তু হচ্ছেঃ
– শক্তি অথবা ভীতি প্রদর্শন ছাড়াই আন্তর্জাতিক সমস্যার সমাধান করা উচিৎ।
– সকল দেশের স্বার্থেই প্রয়োজনচীন মার্কিন সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ
– উভয় দেশই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সাময়িক সংঘর্ষ এড়াতে আগ্রহী৷
– এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় কোন পক্ষেরই আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করা উচিৎ নয় এবং উভয় পক্ষই এ ধরণের প্রচেষ্টা বিরোধী।
সাংহাই ঘোষণার পর থেকে চীন মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। পরস্পরের রাজধানীতে কুটনৈতিক লিয়াজু অফিস স্থাপিত হয়েছে৷ বানিজ্যের লেনদেন বেড়েছে। বিভিন্ন প্রতিনিধি দল সফর বিনিময় হয়েছিল। চীন মার্কিন সম্পর্ক উন্নয়নের ফলে তাইওয়ানের উপর চীনের দাবীও স্বীকৃত হয়েছে৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রচেষ্টা তার অনুগত মিত্রদের খুব খুশী করতে পারেনি৷ প্রথমত জাপানের অজ্ঞাতে প্রথম বারের মত যখন প্রেসিডেন্ট কিসিঞ্জার চীন সফরে গেলেন, তখন সেটা জাপানের জন্য যথেষ্ট মনোকষ্টের কারণ হয়েছিল।
অবশ্য কিসিঞ্জারের পক্ষেও সে সময় সুযোগ ছিল না টোকিও বিমানবন্দরে অবতরণ করা, কেননা সে সফর আয়োজন করেছিল পাকিস্তান সরকার। এবং পাকিস্তানী বিমানে করেই পিকিং এ পৌছেছিলেন ডঃ কিসিঞ্জার।
সেই থেকে অবশ্যি প্রতিবারই চীন সফরের পূর্বাহ্ণে জাপান বিরতিকে রুটিন হিসেবে গ্রহণ করেছেন কিসিন্জার।
বর্তমান সফরের শেষে এখন পর্যন্ত কোন ইশতেহার প্রকাশিত না হলেও, অনুমান করা যায়, আলোচনার বিষয়বস্তু প্রেসিডেন্ট ফোর্ডের চীন সফরের কর্মসূচী নিয়ে সীমাবদ্ধ ছিল না। এবারের সফরের পূর্বে ১২ ই অক্টোবর এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে ডঃ হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিলেন, ‘আলোচ্য বিষয় সূচী মধ্যে থাকবে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এবং আমরা দেখবো কোন কোন প্রশ্নে আমাদের ঐকমত্য কিংবা মতানৈক্য রয়েছে৷ ‘ তিনি আরো বলেছেন, সাংহাই ঘোষণা চীন মার্কিন সম্পর্ক উন্নয়নের ভিত্তি তৈরী করেছে এবং আমরা এখনো সে ইশতেহারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
এখন পর্যন্ত কিনিন্জারের চীন সফর সংক্রান্ত যে সংবাদ এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, উভয় দেশই বিশ্বে একজাতি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সোচ্চার।
কিসিন্জারের সম্মানে চীন উপ প্রধান মন্ত্রী তেংশিয়াও পিং যে ভোজসভার আয়োজন করেছিলেন, সেখানে ভাষণদান কালে উভয় মন্ত্রী এ ধরণের বক্তব্য রেখেছেন।
ডঃ কিসিঞ্জার বলেছেন, ১৯৭২ সালের সাংহাই ঘোষণার আলোকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক জাতি কর্তৃত্বের বিরোধিতা সত্ত্বেও চীন – মার্কিন সম্পর্কের প্রতি আমেরিকা অন্যান্য সম্পর্কের চেয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব আরোপ করে৷
অপরদিকে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রী চিয়াও কুয়ান হুয়া বলেছেন, বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে ‘অঙ্গরাজ্যে বিশৃঙ্খলা ‘। তিনি বলেন, আরেকটি বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা তীব্র হয়ে উঠছে। এবং এক জাতি কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা উচিৎ।
এক জাতি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে চীন মার্কিন ঐক্যমত সোভিয়েট ইউনিয়নকে কুটনৈতিক ভাবে বিশ্ব রাজনীতিতে বিব্রত করবে।
কিসিঞ্জারের বর্তমান সফরে সম্ভাব্য যেসব বিষয় আলোচিত হতে পারে তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, কোরিয়ার একত্রীকরণের প্রশ্নটি এবং ভারতীয় উপমহাদেশের ঘটনাবলী।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়ার মিত্রদের ত্যাগ করবে কিনা তা এখনই বলা না গেলেও ওটা অনুমান করা যাচ্ছে যে, কোরিয়ার একত্রীকরণের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট ফোর্ডের চীন সফরের সময় উত্তর কোরিয়ার দাবীকে স্বীকার করে নেবে।
আগামী মাসের শেষ সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ফোর্ড চীন সফরে যাবেন। এবং সে সফরের সম্ভাব্য ফলশ্রুতি হচ্ছে চীন মার্কিন সম্পর্কের আরো ব্যাপক স্বাভাবিকীকরণ এবং এশিয়ায় মার্কিন মিত্রদের নতুন ভাগ্য বিপর্যয়। যে বিপর্যয়ের সুত্রপাত ভিয়েতনাম এবং কম্বোডিয়ার জনগণের বিজয়ের মধ্যে দিয়ে ঘটেছে।
***
দক্ষিণ ভিয়েতনাম
মার্কিনীদের ফেলে যাওয়া সম্পদ
আমেরিকাকে ছেড়ে আসতে হয়েছে দক্ষিণ ভিয়েতনাম। সেই সঙ্গে ফেলে আসতে হয়েছে ধ্বংস যজ্ঞের স্বাক্ষর, বিস্তর ভ্রান্তি আর প্রচুর সামরিক অস্ত্রশস্ত্র। ভিয়েতনামের শিল্প এবং সার্ভিস সেক্টরে এ দেশটি ফেলে গেছে প্রচুর সম্পদ। লিবারেশন ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের নেতা হিয়া ভান টাম বলেছেন, আমাদের দেশে বয়ে আনা দুঃখ কষ্ট জন্য এখনো আমেরিকানদের দোষারোপ করি। তবুও আমাদের স্বীকার করতে হবে যে, তারা এক বিরাট অংকের সম্পদ ফেলে গেছে। ভান টাম হচ্ছেন একজন প্রখ্যাত বিপ্লবী। ৩০ শে এপ্রিলে সায়গনের পতনের তাকে সায়গনের শিল্প কারখানার দায়িত্ব নিতে হয়৷ আবার শ্রমিকদের সংগঠিত করে উৎপাদন অব্যাহত রাখার কঠিন দায়িত্বও তিনি পালন করেন।
টাম মন্তব্য করেছেন, আমেরিকানরা প্যারিসে আলোচনায় বসবার সময় ভেবেছিল তাদের সবচাইতে বিপর্যয় হলে জোর তিন পক্ষের কোয়ালিশন সরকার গঠিত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে মূল যুদ্ধটি হবার কথা ছিল অর্থনৈতিক রাজনৈতিক সীমান্তে। আমেরিকানদের আছে বেহিসেবী অর্থনৈতিক, আর্থিক এবং কারিগরী সুবিধা। তারা বুঝেছিল, মুক্ত এলাকায় সমাজতান্ত্রিক বিশ্ব যে সাহায্য দেবে তাকে তারা তাদের সাহায্যের বিপুলতায় ডুবিয়ে দিতে পারবে। ভিয়েতনামের দক্ষিণাংশের দেশের সংযুক্তির ইচ্ছা তারা তাদের ‘অর্থনৈতিক তেলেসমাতি ‘ দিয়ে ভুলিয়ে দিতে চেয়েছিল৷ অন্য দিকে প্যারিসের আলোচনাকারীরা টেবিলের আকার আকৃতি নিয়ে মাথা ঘামিয়ে হয়রান হতে থাকলেন। অন্য দিকে মার্কিন বিশেষজ্ঞরা ব্যস্ত ছিলেন দক্ষিণ ভিয়েতনামের জন্য যুদ্ধের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা তৈরীতে। তারা আমাদের অর্থনৈতিক ক্ষেত্র গুঁড়িয়ে দিতে চেয়েছিল৷
রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তারা চেয়েছিল জাতীয় পুঁজিবাদী শ্রেণীর জন্য অর্থনৈতিক ভিত্তি ভূমি। অর্থ শ্রেণীকে তারা শ্রমিক শ্রেণীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। এদের জন্য তারা প্রায় ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করে শিল্প কারখানা গড়ে তোলে। আর এ সব কিছুই এখন আমাদের হাতে।
এ সব শিল্প প্ল্যান্ট এর প্রায় সবগুলো আছে সায়গনে। টাম দাবী করেন, সায়গনের এক স্যাবোটাজ পরিকল্পনা পরে বাদ দেয়া হয়। টাম এ প্রসঙ্গে বলেন, ডিনাটেক্সকো সায়গনের বৃহত্তম বস্ত্র কারখানা। তিনি দাবী করেন, এই কারখানার চার পাশে ২০ টিরও বেশি মাইন পোঁতা ছিল৷ কিন্তু কারখানার শ্রমিকরাই এসব বিস্ফোরক মাটি খুঁড়ে তোলে এবং অকেজো করে দেয়। একমাত্র কারখানা – যার ক্ষতি সাধিত হয় সেটি ডাক বৈদ্যুতিক পাওয়ার প্ল্যান্ট। ১৯৭২ সালে এই প্ল্যান্টের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছিল। এর ৬০, ০০০ কিলোওয়াট জেনারেটর এর উপর তিনটি শেল নিক্ষেপ করা হয়। অবশ্য বিকল জেনারেটরটি মেরামত করতে সময় লেগেছিল এক সপ্তাহ।
বিজয়ের স্বার্থে দক্ষিণ ভিয়েতনাম কে যে শিল্প কারখানাগুলো হারাতে হয়েছে সে সবের মধ্যে রয়েছে একদি পলিয়েস্টর তন্ত্ত কারখানা – সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের এ ধরণের আর সব কারখানার চাইতে একদি অনেক বেশি সোফিস্টিকেটেড ছিল বলে মনে করা হয়। আর একটি অসম্পূর্ণ অত্যাধুনিক খাবার তৈরীর কারখানা নষ্ট হয়েছে। দাবী করা হয়, এ কারখানাটির একদিক দিয়ে একটা জ্যান্ত শুকর ঢুকিয়ে দিলে অন্য দিক দিয়ে জ্যাম সসেজ আর সব খাবার তৈরী হয়ে বেরিয়ে আসতো।
আরো নষ্ট হয়েছে একটি ওষুধ তৈরীর কারখানা যা থেকে পুরোপুরি উৎপাদন শুরু হলে উভয় ভিয়েতনামের এক সিংহ ভাগের যোগান দেয়া সম্ভব হতো, প্রতি বৎসরে ২৫০ – ৩০০ মিলিয়ন মিটার উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন একটি বস্ত্র কারখানা, একটি মৎস হিমাগার, বেশ ক’টি কাগজ, সেলুলস এবং কেমিক্যাল কারখানা।
সায়গনের বিভিন্ন কারখানাগুলোকে আনুমানিক ৩০০, ০০ শ্রমিক কাজ করেন। এর মধ্যে ৬০, ০০০ শ্রমিক শুধু বস্ত্র কারখানায় খাটছেন। মার্কিন কাঁচামাল ব্যবহার হতো এমন কারখানাগুলোর জন্য নতুন নেতৃত্বে তুলা উৎপাদনের ক্ষেত খুঁজছেন। এর মধ্যেই সেপ্টেম্বরের সাত তারিখে সোভিয়েট তুলার চালান এসে পৌছে গেছে।
টাম আশা প্রকাশ করেন যে, একবার আমাদের সব কারখানা পূর্ণোদ্দমে কাজ শুরু করলে হো চি মিন সিটি (সায়গন) এক বৃহৎ শিল্পকেন্দ্রে পরিণত হবে। আমেরিকান প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত টেকনিশিয়ান এবং বিশেষজ্ঞ, যারা দেশে রয়ে গেছেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ আমেরিকায় চলে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু সায়গনের দ্রুত পতনের ফলে তা আর সম্ভব হয় নি। টাম বলেছেন, এদের আমাদের অত্যন্ত প্রয়োজন রয়েছে। তারা মার্কিন যন্ত্রপাতির এক বিরাট অংশের মতো। টাম অবশ্য বলেছেন, এদের অনেককে ট্রেনিং দেয়া হয়েছিল নিরাপত্তা এজেন্ট হিসেবে। আমরা এদের লোকদের নিয়ে কাজ করতে অভ্যস্ত। এদের মধ্যে আমরা শ্রেণী চেতনা, দেশীয় গৌরববোধ এবং ভবিষ্যতের আহ্বানের অনুভব জাগিয়ে তুলতে পারব। এদের এক সিংহ ভাগই এখন সত্যি সত্যি দেশকে গড়ে তুলতে সাহায্য করতে প্রস্তুত। অনেকেই আবার ইতিমধ্যে ভালো ট্রেড ইউনিয়ন ক্যাডারে পরিণত হয়েছে।
এপ্রিল ৩০ তারিখের সন্ধা থেকেই টাম সেদিন পর্যন্ত তাবেদারি এক সুযোগ্য সংস্থার মাধ্যমে সায়গন গিয়া দিন অঞ্চলের সব শিল্প কারখানা এবং যন্ত্রপাতির সম্পূর্ণ অধিকার নতুন কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দেন অত্যন্ত দ্রুত গতিতে। এ সময়ের মধ্যে শুধু যে তথ্য টি অজানা ছিল, তা হচ্ছে এসব কারখানার মালিক, ডিরেক্টর এবং ম্যানেজার দের অবস্থিতি৷ খুব শিঘ্রই অবশ্য জানা গেছে যে, এদের ৭০% এই দেশের বাইরে পালিয়ে গেছে। স্বাভাবিকভাবেই পয়লা মে তে ছিল ডাবল ছুটি (মে দিবসের এবং স্বাধীনতার)। মে র দুই তারিখের নগরীর সামরিক ব্যবস্থাপনা কমিটির নিযুক্ত ওভারসিয়ারদের নেতৃত্বে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেয়।
দক্ষিণ ভিয়েতনামের কারখানাগুলো রাষ্ট্রায়ত্ত হলেও রয়ে যাওয়া পুঁজিপতিদের জন্য নতুন সরকার স্টেট ওনার কর্পোরেশনের মাধ্যমে জাতির উন্নয়নের স্বার্থে কারখানা পরিচালনার জন্য যুক্তিসঙ্গত প্রস্তাব রেখেছেন। যেখানে জাতীয় স্বার্থ জড়িত (এর অর্থ উভয় ভিয়েতনামের স্বার্থ) নতুন প্রশাসন পুঁজি বিনিয়োগ। কাঁচামাল সরবরাহ নিশ্চিত করতে”স্টেট – প্রাইভেট ইন্টারপ্রাইজ পার্টনারশীপ” ভিত্তিতে সম্প্রসারণকে উৎসাহিত করতে প্রস্তুত।
উত্তর ভিয়েতনামের প্রধান মন্ত্রী ফাম ডান ডং সেপ্টেম্বরের ২ তারিখে হ্যানয়ের জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে বক্তৃতা করেন। উভয় ভিয়েতনামের অর্থনীতি প্রসঙ্গে তিনি জাতীয় পুঁজিপতিদের – যাদের এতদিন বিদেশী প্রতিযোগীরা দাবিয়ে রেখেছিল, প্রতি জাতির জন্য তাদের যোগ্যদেরকে নিয়োগ করবার জন্য আহ্বান জানান। সমগ্র দেশের জন্য পরিকল্পনার ভিত্তিতে ভিয়েতনাম নতুন এবং গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেবে বলেও তিনি তার বক্তৃতায় উল্লেখ করেন। দক্ষিণ ভিয়েতনামের জাতীয় অর্থনীতির ক্ষেত্রে যার মাধ্যমে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে, সেটি হচ্ছে উপকূলের তেল সম্পদ। ব্যাপারটি নিয়ে সায়গনে এখন তুমুল আলোচনা চলছে। এ ব্যাপারে অনুমান করা হচ্ছে যে, নতুন সরকারের সঙ্গে দুটি আমেরিকান তেল কোম্পানীর সংশ্রব রয়েছে। পেকটেনসেল এবং মোবিল হচ্ছে এ দুটি কোম্পানী৷ সায়গনের পতনের আগে এরাই উপকূলে তেল উত্তোলনে সক্রিয় ছিল। প্রায় ৫০ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে হ্যানয় সরকার দুবার ৯ টি আমেরিকান এবং ১ টি কানাডীয় কোম্পানীকে ক্ষমতা অনুমোদন করেন। (এপ্রিলের ৯ তারিখে ড্রিলিং স্থগিত করা হয় তেলের পোটেনশিয়াল এখনো অজানা রয়ে গেছে। তেল উৎপাদনে সংশ্লিষ্ট কোন কোম্পানীই প্রায় ব্যবসায়ী সিগনিফিসান্ট প্রডাকশনের সময়সূচী ঘোষণা করেনি।
ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্টের রাজনৈতিক কর্মসূচী পরে দক্ষিণ ভিয়েতনামের প্রাদেশিক বিপ্লবী সরকারের কর্মসূচীর সাথে সংশ্লিষ্ট হয়৷ এই কর্মসূচীতে গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদের জাতীয়করণ ব্যবস্থা আছে। এর মধ্যে নিশ্চয়ই তেল সম্পদও পড়বে। এই মুহূর্তে ওয়াশিংটন দুই ভিয়েতনামের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সব রকম বানিজ্যিক সম্পর্কের উপর নিষেধাজ্ঞা বহাল করেছে। ভবিষ্যতে ভিয়েতনামীরা যে প্রাকৃতিক সম্পদ উন্নয়নে আমেরিকান বিশেষজ্ঞ দের স্বাগত জানাবে, তা প্রায় নিশ্চিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামে ফেলে গেছে অফোস্টিকেটিভ কলকব্জা। দেশের নতুন প্রভূরা এর মূল্য অনুধাবন করেছেন এবং এ রকম আরো কিছুকে নিশ্চয়ই স্বাগত জানাবে।
[pdf-embedder url=”https://songramernotebook.com/wp-content/uploads/securepdfs/2021/04/1975.10.31-bichitra-copy.pdf” title=”1975.10.31 bichitra copy”]