You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.30 | সাম্প্রতিক বিদেশ সফরের উপর আলোচনাকালে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি | দি ইয়ার্স অফ এন্ডেভার - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২০৮। সাম্প্রতিক বিদেশ সফরের উপর আলোচনাকালে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি দি ইয়ার্স অফ এন্ডেভার ৩০ নভেম্বর ১৯৭১

সম্মিলিত উদ্যোগ

আমি আমার বক্তব্য নিয়ে কথা বলছিনা, যদিও সেটাই এখন মুল বিবেচ্য বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে, কেননা, আমি যখন বাইরে ছিলাম, তখন আমি দেখেছি যে যখন সম্মানিত সদস্যগন কথা বলেন, তারা এই বিশয়গুলো নিয়েই কথা বলেন, যা নিয়ে আমিও চিন্তা-ভাবনা করছি। আমার ভ্রমন বিষয়ে যা বলার ছিল, তা ইতিমধ্যে আমি আমার জবানবন্দীতে বলেছি, এবং আমার মনে হয়েছে এ বিষয়ে আর নতুন করে প্রশ্ন করার অবকাশ নেই। এখন বাড়িতে বসে আমি দেখতে পাচ্ছি, যে এবিষয়ে ধারনায় সকলেরই একটা মৌলিক একাত্মতা আছে এবং একটি সাধারন সমর্থন ও রয়েছে। আমার মনে হয়, এ বিষয়ে যেসকল সম্মানিত সদস্যগন বক্তব্য রেখেছেন্, তাদেরকে আমার ধন্যবাদ দাওয়া প্রয়োজন। আমি আমার পুরনো বন্ধু শ্রী বদুভাই চিনয় এবং শ্রী প্রনব কুমার মুখারজীকে ধন্যবাদ দিতে চাই, যারা এবিষয়ে এই মুহূর্তে কথা বলেছেন এবং পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে উপলব্ধি করছেন। প্রফেসর রুথনাসোয়ামী ও এ বিষয়ে কথা বলেছেন, কিন্তু তিনি তার সতন্ত্র ধ্যানধারণা থেকেই কথা বলছেন।

ডঃ ভাই মহাভির কিছু সমালোচনা করেছে, যা একদমি অনাকাঙ্ক্ষিত ছিলনা। আমি খুব সম্ভবত প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে বিরক্ত করছি, এবং এখনও পর্যন্ত তার সাথে আমার কোন কথা না হলেও, যখনি তার নাম আসে, ডঃ মহাভিরের মতন আরো কিছু সম্মানিত সদস্যগন একইসাথে আমার কথাও অবিধারিতভাবে বলে থাকেন। ডঃ মহাভির আমার একটি ব্যাক্তিগত ইমেজ তৈরি করা নিয়ে কথা বলেছেন। এখন, কেউ যখন বিদেশে যায়, বিশেষত যখন কোন প্রধানমন্ত্রী বিদেশে যান, সে গনমানুষের প্রতিনিধি হয়ে যায়। তাকে কোন সম্মান প্রদর্শন করা হলে, তা ভারতকেই সম্মান প্রদর্শন করা হয়, এবং সাধারণত অন্য একটি দেশ কোন মানুষকে সম্মান প্রদরশনের মাধ্যমেই দেশকে সম্মান প্রদর্শন করে থাকেন, তা সে মানুশটি কোন সাধারন নাগরিক বা বিজ্ঞানী, যেই হোক না কেন। কাজেই আমার মনে হয়না যে যদি আমাকে কোন সম্মান প্রদর্শন করা হয়ে থাকে, বা আমি কোন ব্যাক্তিগত ইমেজ তৈরি করে থাকে, তা দেশের কোন মানুষ আলাদাভাবে নেয়ার কোন সুযোগ আছে, বরং তা অবশ্যই দেশকে সম্মান প্রদর্শন করার জন্যই এবং আমি আগেও তাই বলেছি। সুতরাং সেদিক থেকে দেখলে, আমাকে সম্মান প্রদর্শন করা মানে সরাসরি দেশকেই সম্মান প্রদর্শন করা।

ডঃ ভাই মহাভির আরো একটি বিষয়ে সমালোচনা করে বলেছেন, আমরা ভুল সময়ে পিছিয়ে এসেছি। আমার মনে হয় কিছু সম্মানিত সদস্য তার কথা যথেষ্ট মনোযোগ দিয়ে শুনেনি, যেমনটা তাদের শোনা উচিত ছিল, এবং তিনি সমালোচনা করলেন যে তাদের যখন ধৈর্য ধরা উচিত ছিল, তখন তাড়া অধৈর্য ছিলেন এবং সরকার ও তখন ধৈর্যশীল রুপধারন করলো যখন তার অধৈর্যশীল হওয়ার কথা ছিল। আমিও এবিষয়ে তার সাথে একমত যে কিছুক্ষেত্রে সম্মানিত সদস্যগন ধৈর্যশীল হতে পারতেন, কিন্তু আমার মনে হয় সরকার সবসময়ই নিয়ন্ত্রিত এবং ধৈর্যশীল হতে হবে, বিশেষত যখন কোন সরকার তার নিজের এবং তার জনগনের উপর পূর্ণ আস্থা জ্ঞাপন করতে পারে। আমার মনে হয় না সীমান্তের ওপারের বন্ধুরা তাদের ধৈর্যের অভাব, তাদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য, হুমকি এবং উস্কানি থেকে খুব বেশি কিছু অর্জন করতে পেরেছে এবং আমার মনে হয় তাদের এহেন আচরন আমাদের জন্য ভালোই করেছে; কেননা তারা আমাদেরকে আমাদের লক্ষ্য থেকে একচুল সরাতে পারেনি, আমরা ঠান্ডামাথায় তাই করেছি যা আমাদের দেশের জন্য মঙ্গলজনক।

অবশ্যই যেকেউই রেগে যাবে, তাদের কথার জন্য নয়, বরং বাংলাদেশে যা ঘটছে সেটার জন্য। একজন মানুষ রেগে যাবে, কেননা আমাদের কাছে মনে হয় এই অনাকাঙ্খিত ট্র্যাজেডির কোন প্রয়োজন ছিলনা। লক্ষ লক্ষ মানুষ এখানে জীবন দিয়েছে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। শুধুমাত্র যারা আমাদের শরণার্থী শিবিরে এসেছেন, তারা নন, যেসকল বিদেশি সাংবাদিক সেখানে কাজ করছেন, যারা ঢাকায় গিয়েছেন, তারাও বলছেন যে গোটা দেশই একটি শরণার্থী শিবিরে পরিনত হয়েছে। বিশালাকারে মানুষের দল শহর ছেড়ে গ্রামের দিকে পাড়ি দিচ্ছেন এবং কেউ জানেনা, কে কোন গ্রামের বাসিন্দা। যখন তাদের এক এলাকায় হয়রানি করা হয়, কিংবা তারা কোন শুন্য গ্রাম দেখতে পান, কিংবা শুন্য কোন গ্রামের একাংশ, তারা সেখানে বসতি স্থাপন করেন, কিংবা তারা জানতে পান যে তাদের আর সেখানে আশ্রয় হবেনা এবং তারা সরে যেতে বাধ্য হন। সুতরাং সেখানে বেশ একটা অস্থির অবস্থাই বিরাজ করছে, কিন্তু আমি বলব জনসঙ্ঘের কাজ করার একটা নিজস্ব তরিকা আছে এবং সকলেই এই তরিকাকে স্বাগতম জানিয়েছেন। আমার মনে হয় সকলেই দেখেছেন যে অতীতে এই তরিকা আমাদের জন্য কি সম্মান বা সাফল্য বয়ে এনেছে। আমরা একটু ভিন্ন পন্থায় কাজ করি এবং আমার মনে হয় আমি এই পন্থাতেই কাজ করে যাব কেননা এটি অধিক সম্মানজনক এবং আমাদের জন্য সুফল বয়ে আনে।

এটি ছিল একটি বিষয়। আমার মনে হয়, প্রফেসর রুথনাসোয়ামী বলছিলেন যে ইন্দো-সোভিয়েত চুক্তিটি প্রধানমন্ত্রীর লাগেজে প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ে আছে। আমি জানিনা, কে প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ে আছে, তবে এটি আমাকে কোন প্রতিবন্ধকতায় ফেলেনি, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত। কোন বিদেশি কর্মকর্তা, বা রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার, যাদের সাথে আমার ইতিমধ্যে দেখা হয়েছে, এ বিষয়ে প্রশ্ন করেননি। সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের সম্মুখীন করা হয়েছে, কিন্তু কাউকেই এই বিষয়ে খুব বেশি চিন্তিত মনে হয়নি। আমার মনে হয় তারা পরিস্থিতি বুঝতে পেরেছেন, কেউ কেউ এওন কথা বলে থাকতে পারেন, কিন্তু আমার মনে হয়না ভারত তার পলিসিতে কোন পরিবর্তন করেছে বা করতে যাচ্ছে। আমার ধারনা অন্যান্যরা আমাদের উপর এত বেশি বিরক্ত একারনেই হয় কারন তারা জানে যে এই একটি সরকার আছে, যারা কোন অবস্থাতেই তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেনা।

শ্রী চ্যাটারজী আমার শরণার্থীদের জন্য বিদেশী অর্থসাহায্য চাওয়ার বিষয়ে জোর দেয়ার বিষয়ে কথা বলেছেন। এই বিষয়টিও আমি সবখানে বুঝিয়ে বলেছি। আমি কখনই বিদেশী অর্থসাহায্য চাইনি। আমি এবিষয়ে একটি সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছিলাম। আমি বলেছি যে আন্তর্জাতিক সংস্থারা এক্ষেত্রে খুবি নগন্য সাহায্য করেছেন, এবং এমন একটি সহজ প্রশ্নের উত্তর আমি অবশ্যই দিবো। কিন্তু আমি কখনই কোন বিদেশী অর্থসাহায্যের কথা বলিনি, বা কোন সরকারকে তা দিতেও বলিনি। আমরা তাদের বলেছি, তাদের জাতীয় স্বার্থ তাদেরকেই নির্ধারণ করতে হবে, আমরা তা নির্ধারণ করে দিতে পারবনা। কিন্তু আমরা অবশ্যই বলেছি যে এই উপমহাদেশে যা ঘটছে তার ফল শুধু এশিয়া নয়, সাড়া পৃথিবী ভোগ করবে। আমার মনে হয়, ভবিষ্যতে সকল দেশই এর ফল ভোগ করবে এবং এমুহূর্তে পরিস্থিতি অনুধাবন করা তাদের জন্য খুবি জরুরি, সেইসাথে আরো জরুরি হচ্ছে পরে এবিষয়ে মাথা না ঘামিয়ে এখনি এবিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া।

শ্রী চ্যাটারজী আরো কিছু বিষয়ে কথা বলেছেন, আমি জানিনা আমি তাকে ভুল বুঝেছি কিনা। তিনি কি একথা বলেছেন যে মুক্তিবাহিনী কিংবা যারা যুদ্ধ করছে, তারা পাকিস্তানের কাছ থেকে সমাধানের আশা করছে? আমার মনে হয়, শুধু মাত্র বাংলাদেশের জনগণই এবিষয়ে কথা বলার অধিকার রাখে যে তারা কি চায় এবং তারা জানে তারা কি চায়। আমার মনে হয় না, আমি তাদের হয়ে একথা বলতে পারি যে সমাধান কি। যতদুর আমার মনে হয়, আমি শুধুমাত্র আমার মতামত দিতে পারি। যেমন আমি মতামত দিয়েছি যে তাদের উচিত না স্বাধীনতার চেয়ে কম কোন সমাধানে একমত হওয়া। আমি তাদের খুব স্পষ্টভাবে বলেছি যে যদি তাদের কোন আলোচনা করতে হয়, তবে অবশ্যই তা বাংলাদেশের মানুষের নির্বাচিত গনপ্রতিনিধিদের সাথে হওয়া উচিত। আমি কোনভাবেই নতুন যেসব বিরোধিতার মুখেই ক্ষমতায় বসতে চাচ্ছেন, তাদের কথা বলিনি। সুতরাং, আমরা পুরো সময়ই মুল এবং মৌলিক বিষয়ে কথা বলে আসছি এবং মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাচ্ছি। পাকিস্তান পুরো সময়ই এবিষয়টিকে একটি ভারত-পাকিস্তান ইস্যু বলে আসছে, এবং এবিষয়টিকে আন্তর্জাতিক একটি বিতর্কে রুপ দিতে চাচ্ছে। আমাকে সবখানেই এবিষয়ের মুখোমুখি হতে হয়েছে। সবখানেই তারা বলছেন যে যদি আপনারা বা আপনার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা কোন প্রতিনিধি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সাথে কথা বলেন, তাহলে এবিষয়ের সমাধান হবে। আমি তাদের উত্তরে বলতে চাই যে তারা আমাদের দেশ নিয়ে কথা বলছেনা, এবং অন্য দেশের মানুষের ভাগ্যে কি ঘটবে সে বিষয়ে আমি কথা বলতে পারিনা, বা আমি তা নিয়ন্ত্রন করতে পারিনা। স্বাভাবিকভাবেই আমাকে বলতে হবে যে শেখ মুজিবর রহমান তাদের অবিসংবাদিত নেতা এবং তিনিই তাদের প্রতিনিধি হয়ে তাদের বিষয়ে কথা বলতে পারেন এবং আমি একি সাথে যোগ করতে বাধ্য হয়েছি যে গনমানুষের কথা বলতে হলে তাকে অবশ্যই মুক্তি পেতে হবে। তাকে অবশ্যই জানতে দিতে হবে যে বাংলাদেশে কি ঘটছে। কি ঘটছে বা কি ঘটে গেছে, তা জানার আগে তিনি কিছুই বলতে পারবেন না। সুতরাং পুরো বিষয়টা প্রতিরক্ষা কাউন্সিলে নিয়ে আসার এ উদ্যোগ আমার মনে হয় গোটা বিষয়টাকে একটা দ্বন্দ্বের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। কাজেই যারা এ উদ্যোগ নিচ্ছেন, তাদেরকে ভারতের জনগণ অবশ্যই সন্দেহের চোখে দেখবে।

কাশ্মির অবশ্যই ততখানিই ভারতের অংশ, যতখানি গুজরাট, মহারাষ্ট্র বা দেশের অন্য কোন অংশ, সুতরাং সেখানে কোন ধরনের কোন আক্রমনের জবাব ততখানিই নিষ্ঠার সাথে দেয়া হবে, যতখানি দেশের অন্য কোথাও আক্রমন হলে দেয়া হত। আমার আগে যেই সম্মানিত সদস্য বক্তব্য দিয়েছেন, তিনি সংক্ষেপে বলেছেন যে পূর্বের যুদ্ধের সময়, ১৯৬৪ বা ১৯৬৫তে কি ঘটেছে এবং কেন সেখানে পর্যাপ্ত সৈন্য মোতায়েন ছিলনা। গুজ্জার এর সাধারন মানুষ, কৃষকরা বা সাধারন খেটে খাওয়া মানুষ সেসময় আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তারাই আমাদেরকে প্রথম সংবাদ দেন যে মানুষ আসছে এবং আমাদের সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারনা ছরাচ্ছে। তারা আমাদেরকে সকল সংবাদই দিয়েছে। তাদের জন্যই আমরা নিয়ন্ত্রন করতে পেরেছি, এবং এই দখলদারিত্ব কে ঠেকিয়ে দিতে পেরেছি, যদিও আমি এটাকে দখল বলবনা, কেননা যারা দখল করতে এসেছিল তারা চুরি করে ঢুকেছিল। এখনও ভারতের বিপক্ষে রাগ কমেনি তাদের। যেমনটি আমি আমার আগের বক্তব্যে বলেছি যে ভারতকে এখন নতুন উপায়ে আক্রমন করা হচ্ছে। পাকিস্তানী আর্মি আমাদের ভূখণ্ডে একত্রিত হয়নি ঠিকই, কিন্তু যখন আরেক দেশের মানুষ এত বেশি পরিমানে আমাদের ভূখণ্ডে আশ্রয় নিচ্ছে, তখন আমি এটাকে বিকল্প ধরনের দখলদারিত্বই বলব। যদিও, তাদের বেশিরভাগ মানুষই ভুক্তভোগী শরণার্থী।

অবশ্যই তাদের মধ্যে যারা আসলে শরণার্থী নয়, তাদের আগমন আমার দেশের নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করে, এবং আমার দেশের স্থিতিশীলতাকে দুর্বল করে। সুতরাং সকল বিষয় বিবেচনা করে বলা যাত যে তারা আমাদের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছে এবং এটি এক নতুন ধরনের আক্রমন। আমরা নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রনে রেখেছি, কিন্তু আমরা একি সাথে কিছু পাকিস্তানী বন্দুককেও থামিয়ে দিয়েছি, আমরা তাদের ট্যাংকের সাথে লড়াই করেছি, তাদের জঙ্গি বিমানগুলোকে মাটিতে ধরাশায়ী করেছি। কিন্তু আমরা কোনভাবেই তাদেরকে কোন হুমকি দেইনি। কিন্তু আমরা কোনভাবেই আমাদের প্রতিবেশীদের উপর তাদের নির্বিচারে হত্যা মেনে নিতে পারিনা। আমি বলতে চাচ্ছি যে পৃথিবীর মানুষকে এটা খুব পরিষ্কারভাবে বুঝে নিতে হবে। এখানে কোন সমান ক্ষমতাসম্পন্ন দুই বাহিনী লড়াই করছেনা, লড়াই করছে মুক্তিবাহিনি এবং পশ্চিম পাকিস্তানী আর্মি। একটি সম্পূর্ণ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত বাহিনী লড়াই করছে এমন কিছু মানুষের সাথে যাদের হয়তো প্রশিক্ষণ দাওয়া হয়েছে পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস বা পূর্ব পাকিস্তান রেজিমেন্টের মাধ্যমে। এদের অনেককেই দ্রুত প্রশিক্ষন দিয়ে যুদ্ধে পাঠানো হয়েছে, যে প্রশিক্ষণ এই দুই প্যারা মিলিটারি ফোরসের নেতাগন বিভিন্ন ক্যাম্প এ দিয়ে থাকেন। কিন্ত কোনভাবেই তাদেরকে পশ্চিম পাকিস্তানী আর্মির সমকক্ষ বলা যাবেনা। এবং আমরা কোনভাবেই এবিষয়ে সমর্থন দিতে পারিনা যে শুধু মুক্তিবাহিনী নয়, বরং নিরস্ত্র সকল বাঙালি ও বাংলাদেশের মানুষকে হত্যা করা দরকার। যদিও, একথা সত্যি যে এধরনের ইছু ঘটলে, বা যা আংশিকভাবে হচ্ছে, তা কোনভাবেই আমাদের জন্য সুফল বয়ে আনবে না, বরং আমাদের জন্য একটা হুমকির কারন হয়েই দারাবে।

পাকিস্তানি বাহিনী আমাদের সীমান্তের দিকে অগ্রবর্তী হওয়ার পর পশ্চিম দিকে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া আমরা আর কোন পদক্ষেপ নেইনি। যদিও যেমনটি আমি বলেছি, আমাদের স্বাধীনতায় কোন ধরনের হুমকি আসলে, আমরা তার মোকাবেলা করবো, এবং অবশ্যই আমরা বর্তমানে যা ঘটছে, তাকে একটি হুমকি হিসেবেই ধরে নিচ্ছি, এবং অবশ্যই আমরা এই হুমকিকে আমাদের জাতীয় ভিত্তির বিপক্ষে ধরে নিচ্ছি।

আমাদেরকে আমাদের বাহিনীকে সরিয়ে নেয়ার উপদেশ দেয়া হয়েছে বলে আপনারা হয়ত শুনে থাকবেন। আমি অন্যান্য ফোরামে ইতিমধ্যে বুঝিয়ে বলেছি যে কেন আমরা আমাদের বাহিনী সরিয়ে নিতে পারছিনা, আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা, ক্যান্টনমেন্ট, সকলি সেখানে অবস্থিত এবং আমরা সেখানে অসরতক অবস্থানে থাকলে, তা পাকিস্তানের জন্য কাশ্মীর দখলের ক্ষেত্রে একটি বিরাট ফায়দার ব্যাপার হবে। আমরা সেই ঝুকিটি নিতে পারবো না। কিন্তু আমার মনে হয়, অনতিবিলম্বে যে বাহিনীর সরে যাওয়া উচিত তা হল বাংলাদেশ থেকে পশ্চিম পাকিস্তানী বাহিনীর সরে যাওয়া এবং তারা সেটি করলে আমরা অবশ্যই তাদের স্বাগত জানাব। তারা তাদের বাড়ি থেকে অনেক দূরে আছেন, তারাও কষ্ট করছেন এবং আমার মনে হয় পশ্চিম পাকিস্তানে তাদের পরিবার-পরিজনের কাছে তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া উচিত। আমার মনে হয়, এটিই হবে পশ্চিম পাকিস্তানী সরকারের একটি ইতিবাচক সাড়া যে তারা বাংলাদেশ বিষয়ে সমাধান চায়। এটি হবে শান্তি স্থাপনের অন্যতম একটি পদক্ষেপ। একি সাথে আমার এটাও মনে হয় যে পাকিস্তানি বাহিনির বাংলাদেশে মোতায়েন থাকাটা আমাদের দেশের নিরাপত্তার জন্যও একটি হুমকির বিষয়। আমার মনে হয়, আমি বেশিরভাগ বিষয়ের উত্তর দিয়েছি। বর্তমানে আপনারা জানেন যে মুক্তিবাহিনী অত্যন্ত বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করছে। এ যুদ্ধ অত্যন্ত কঠিন, কিন্তু তারা সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করছেন, এবং আমরা তাদেরকে পূর্ণ সমর্থন জানাই এবং অভিনন্দন জানাই। ভবিষ্যতে কি আছে তা কেউই বলতে পারবে না, কিন্তু আমি আগেও বলেছি যে বর্তমান পরিস্থিতি এত সহজে সমাধান হবেনা। যাই ঘটুকনা কেন, আগামী মাসে আমরা যেই পদক্ষেপই নেইনা কেন, তা আমাদের এবং বাংলাদেশের মানুষ উভয়ের জন্যই অনেক কঠিন হবে। আমাদেড় ধরে নিতে হবে যে কোন সমাধান নেই, কোন জাদুই পারে শরণার্থীদের এই কষ্ট লাঘব করতে বা তাদের বোঝা থেকে আমাদের মুক্তি দিতে। শুধুমাত্রই প্রার্থনা দ্বারা তা সম্ভব নয়। আমি আনন্দিত যে এই বিষয়ে আমরা একমত। শ্রী চ্যাটারজি তার পার্টিকে আলাদা করে ফেলা বিষয়ক কিছু একটা বলছিলেন। আমি তাকে নিশ্চয়তা দিতে চাই যে এধরনের কোন উদ্দেশ্য আমাদের নেই। কিন্তু পশ্চিম বাংলায় এধরনের কিছু ঘটনা ঘটেছে। আমি আনন্দিত যে বর্তমানে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে, এবং একবার যদি শান্তি স্থাপিত হয়, তবে কারো পক্ষেই অন্যের ক্ষতি করা সম্ভব হবে না। এখন এমন একটি সময় যখন সকল পার্টিকে একত্রিত হতে হবে কেননা, ভারতের মানুষের উপর যে দায় চাপানো হয়েছে, তা বিশাল। যে চ্যালেঞ্জ এবং প্রতিবন্ধকতা আমরা মোকাবেলা করছি, তা অত্যন্ত কঠিন। এটি মোকাবেলা করতে আমাদের সকল শক্তি, সম্পদ, ঐক্য এবং আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ঝাপিয়ে পরতে হবে। আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস আছে যে সকল পার্টিই এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সাড়া দিবে এবং আমাদের এবং বাংলাদেশের মানুষের জন্য বিদ্যমান এই ভয়াবহ দুঃস্বপ্নের সময় থেকে আমরা বের হয়ে আসতে পারব। আমরা নিজেরাও এথেকে বের হয়ে আসতে পারব, এবং তাদেরকেও নতুন জীবন দান করতে পারব।