শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
২০৬। পশ্চিমা সিমান্তে পাকিস্তানের শত্রুভাবাপন্ন এবং উস্কানিমূলক আচরনে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির উপর আলোচনা | রাজ্যসভার কার্যবিবরণী | ১৮ নভেম্বর ১৯৭১ |
একটি জরুরী এবং জনগুরুত্বসম্পন্ন বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ
পশ্চিমা সিমান্তে পাকিস্তানের শত্রুভাবাপন্ন এবং উস্কানিমূলক আচরনে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির উদ্ভব
শ্রী এ ডি মানি(মধ্যপ্রদে)ঃ স্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতি যা পাকিস্তানি বাহিনির শত্রুভাবাপন্ন এবং উস্কানিমূলক আচরনে ত্রিপুরা, মেঘালয়, আসাম এবং পশ্চিম বাংলায় তৈরি হয়েছে এবং রিপোর্ট মোতাবেক গত ১৫, নভেম্বর ১৯৭১ রাতে তাদের আগরতলা শহরে মরটার শেল চারজিং বিষয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাচ্ছি।
স্টেট মিনিস্টার(প্রতিরক্ষা) এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়( শ্রী বিদ্যাচরন শুক্লা)ঃ জনাব, পাকিস্তানি আর্টিলারি গত ১৫/১৬ নভেম্বর মধ্যরাতে আগরতলা শহরের দিকে ১০ রাউন্ড শেল চার্জ করে। শেলগুলো সচিবালয় ও হাসপাতালের কাছাকাছি এলাকায় পতিত হয়। এতে তিনজন সিভিলিয়ান আহত এবং একজন নিহত হন। এর উত্তরে আমাদের সেনাবাহিনীও তাদের দিকে গুলি ছুড়ে এবং এর পর তারা থেমে যায়।
পশ্চিমা সীমান্তে পাকিস্তান যে শত্রুভাবাপন্ন এবং উস্কানিমুলক আচরন করছে, সে সম্পর্কে ভারত সরকার অবগত আছে। তারা কোন ধরনের উস্কানি ছাড়াই ত্রিপুরা, মেঘালয়, আসাম ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যসমুহে শেলিং করেছে এবং আমাদের সাধারন মানুষ ও রিফিউজিদের জানমালের ক্ষতি করেছে। পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয় ও আসামে তারা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা স্যাবোটাজ করার জন্য লোকও প্রেরন করেছিল যেন আমাদের জনগনের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারে। আমরা তা রোধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করেছি। আমরা আমাদের এলাকায় সীমান্তের ওপার থেকে পাকিস্তানি অস্ত্রধারীদের আগমন বন্ধ করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহন করেছি, একি সাথে সীমান্তের ওপার থেকে আমাদের উপর আক্রমন করা বন্দুকগুলিকেও থামিয়ে দেয়ার জন্যও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। আমরা আমাদের জনগণ, যোগাযোগ ব্যবস্থাকে রক্ষা করা এবং তাদের স্যাবোটাজ রুখে দিতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি।
সম্মানিত সদস্যদের নিশ্চয়ই মনে আছে, গত ১৫ নভেম্বেরে আমি এই হাউসে যে বক্তব্য রেখেছিলাম, সেখানে আমাদের পশ্চিমা সীমান্তে এই উদ্ভাবিত পরিস্থিতির কথা আমি উল্লেখ করেছিলাম। আমাদের বাহিনী সিমান্তে পুরোপুরি সজাগ অবস্থায় আছে, এবং তারা যেকোন ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে প্রস্তুত।
শ্রী এ ডি মানিঃ জনাব, আমার মনে হয়, আরো দুইটি সুযোগ আছে প্রশ্ন করার। কিন্তু দ্বিতীয় সুযোগটির প্রয়োজন নেই।
চেয়ারম্যানঃ না না, শুধুমাত্র একটি প্রশ্ন করুন।
শ্রী এ ডি মানিঃ আমি তিনটি পয়েন্টে কথা বলতে চাই। পরিস্থিতি খুবি খারাপ। মন্ত্রিমশাই জানেন যে, ত্রিপুরার কামালপুর শহরে ক্রমাগত ১১ দিন শেলিং করা হয়েছে, একদিন নয়। একজন সিভিলিয়ান মারা গেছেন, এবং ৫টি ভারতীয় বিমান গুলি করে ভুপাতিত করেছে পাকিস্তানী বাহিনী। আমরা কোন দেশে হামলা চালাতে চাইনা। আমি কি মন্ত্রিমশাইর কাছে জানতে পারি যে কেন আমরা হামলা চালিয়ে এর শোধ নিচ্ছিনা এবং শত্রুকে ধংস করছিনা? এটি আমাদের প্রতিরক্ষার সাথে সম্পর্কিত একটি বিষয়।
আমার দ্বিতীয় পয়েন্টটি হচ্ছে, আসামের চিফ মিনিস্টার দিল্লীতে আসলেন, এবং আসার পর তিনি সরকারকে রক্ষীবাহিনীর সংখ্যা বাড়াতে অনুরোধ করলেন। আমি জানতে চাই, অন্তর্বর্তী প্রতিরক্ষা আইনের আওতায় পাকিস্তান থেকে ভারতে অনুপ্রবেশকারী কতজনকে আসাম থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যারা রেললাইন বিচ্যুত করার জন্য এসেছিলেন?
আমার তৃতীয় পয়েন্ট হচ্ছে, আমি জানতে চাই, পাকিস্তানী বাহিনী ২৪ পরগনার প্রবেশপথ আলিপুর পর্যন্ত চলে এসেছে। এখন তারা কলকাতার অত্যন্ত সন্নিকটে। গত মাসেই মুম্বাই সমুদ্রসীমায় পাকিস্তানী একটি সাবমেরিন গিয়েছিল, এবং সেটিকে আমাদের রণতরী ‘দ্যা কাভেরি’ তাড়া করে। আমার কাছে আসা ইনফরমেশন বলে, কলকাতা বন্দরের আশেপাশেও পাকিস্তানী সাবমেরিন বা তাদের বন্ধুভাবাপন্ন রাষ্ট্রসমূহের সাবমেরিন ঘোরাঘুরি করছে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এই পরিস্থিতিতেও কেন আমাদের সরকার প্রতিরক্ষামুলক ব্যবস্থা নিতে ইতস্তত করছে? এ পরিস্থিতিতে যুদ্ধ খুবি ন্যায়সঙ্গত।
শ্রী বিদ্যাচরন শুক্লাঃ জনাব, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে আমরা সব্ধরনের প্রতিরক্ষামুলক ব্যবস্থা গ্রহন করেছি। আমি আমার এই বক্তব্য এবং অন্যান্য বক্তব্যেও পরিষ্কার করেছি যে যখনি আমরা কোন আক্রমণাত্মক আচরন দেখেছি, হোক তা শেলিং বা অন্যকিছু, আমরা তারচেয়েও কঠোর আক্রমন করে তা রুখে দিতে পেরেছি এবং অনুপ্রবেশারিদের পিছু হটিয়েছি, এবং এভাবেই যেখানে যেখানে দরকার পরেছে, আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছি, এবং সফল হয়েছি। সুতরাং আমরা সম্পূর্ণ রক্ষণাত্মক অবস্থানে আছি, তা সঠিক না।
দ্বিতীয় প্রশ্নটি ছিল, রক্ষীবাহিনী এবং আসামের চিফ মিনিস্টারের অনুরোঢ সম্পর্কে। এ বিষয়ে তার সাথে আলোচনা করা হয়েছে, এবং রাজ্যসরকারের সাথে আলোচনা করে এবিষয়ে সন্তোষজনক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। স্যার, তৃতীয় প্রশ্নটি ছিল পাকিস্তানী সাবমেরিন বিষয়ে। এটা সত্যি কথা, এই সাবমেরিনগুলো আসলেই ঘোরাঘুরি করছিল, কিন্তু আমরা তা রুখে দেয়ার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি।
শ্রী গোদেই মুরাহারি(উত্তর প্রদেশ)ঃ জনাব, আমি মন্ত্রিসাহেবের কাছে জানতে চাই যে, আজ পাকিস্তান হাই কমিশনারের ৭৬ জন সদস্য একটি বিদেশি বিমানে করে করাচি চলে যাচ্ছেন, এ বিষয়টি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে কিনা? এটি এখন অত্যন্ত স্পষ্ট যে তাদের সরকার কোন একটি উদ্যোগ নিতে যাচ্ছেন। অন্যথায়, আমার মনে হয়না তারা তাদের হাই কমিশনের এত মানুষ সরিয়ে নিত। একি সাথে তারা শেলিং করছে, তাদের বিমানবাহিনী পাঠাচ্ছে, এবং পাকিস্তানী এজেন্ট ষড়যন্ত্রের উদ্দ্যেশ্যে সারা দেশে ছেয়ে গেছে। এক্ষেত্রে আমি জানতে চাই, সরকার কতদিন ওয়েট এন্ড সি পলিসি অবলম্বন করবে, কেননা এই পলিসির মুল্য অনেক বেশি হয়ে যাচ্ছে, এবং আমাদের জানমাল এবং অর্থে তা পরিশোধ করতে হচ্ছে। আমি জানতে চাই, সরকার কি মনে করছেনা। যে সরকারের এখনি এ বিষয়ে একটি উপযুক্ত উদ্যোগ নেয়া দরকার?
শ্রী বিদ্যা চরন শুক্লাঃ জনাব, আমাদের মতে আমাদের কোনভাবেই যুদ্ধ শুরু করা উচিত নয়, এবং আমরা আমাদের একতা ও শৃঙ্খলা প্রতিরক্ষার এবং সীমান্তে পাকিস্তানের এসকল উস্কানিমুলক আচরণকে বানচাল করে দেয়ার সকল ব্যবস্থা গ্রহন করেছি। সম্মানিত সদস্যগন নিশ্চয়ই জানেন যে যেভাবে আমরা প্রতিটি বাধা ও প্রতিবন্ধকতা এত সীমাবদ্ধতার মাঝেও মোকাবেলা করেছি তা অবশ্যই সন্তোষজনক। একি সাথে, পাকিস্তানী হাই কমিশনের লোকবল সরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে, আমার মন্ত্রনালয় এবিষয়ে কিছু করার কথা নয়, কিন্তু আমরা অবশ্যই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে মিলে সকল তথ্য হালনাগাদ অনুযায়ী রেখেছি।
শ্রী গোদেই মুরাহারিঃ তাদের ৭৬ জন আজ বিদেশি বিমানে করে চলে যাচ্ছেন।
শ্রী বিদ্যা চরন শুক্লাঃ আমরা জানি, আমরা এবিষয়টি নজরে রেখেছি।
শ্রীমতি পুরবি মুখোপাধ্যায় (পশ্চিম বঙ্গ)ঃ মাননীয় মন্ত্রী কি জানেন যে পাকিস্তানী বাহিনী গভির রাতে এসে মানুষজনের বাড়িঘর তল্লাসি এবং মেয়েদের সম্ভ্রমহানি করছে। অনেক কিছুই হচ্ছে সেখানে। এই নিয়মিত শেলিং এর ঘটনাকে সামনে রেখে, সরকারের কি মনে হয়না যে এইসব গুরুত্বপূর্ণ এলাকা থেকে অবিলম্বে সাধারন মানুষদের সরিয়ে নেয়া প্রয়োজন যেহেতু সেখানে নিয়মিত শেলিং হচ্ছে এবং প্রচুর ষরযন্ত্রমুলক কর্মকান্ড হচ্ছে।
শ্রী বিদ্যা চরন শুক্লাঃ জনাব, যে জনগোষ্ঠী এই মুহূর্তে সেখানে বসবাস করছেন, তারা অত্যন্ত সাহস এবং মরযাদার সাথে একটি অত্যন্ত কঠিন সময় কাটাচ্ছেন, এবং আমার মনে হয়না, এমুহূর্তে সেস্থল লোকজন সরিয়ে নেওয়াটি একটি ভালো পরিকল্পনা হবে। অত্যন্ত উচু নীতিজ্ঞানসম্পন্ন, নিয়মানুবর্তী, আজ্ঞাবহ জনগোষ্ঠী প্রতিরক্ষা বাহিনির জন্য অত্যন্ত মুল্যবান এবং সেকারনেই মাননীয় সদস্যের উপদেশটি কাজে লাগানো যাচ্ছেনা। কিন্তু, আমরা অবশ্যই যা কিছু প্রয়োজন তা করবো, এবং সাধারন মানুষের জানমালের সুরক্ষা নিশ্চিত করবো।
শ্রী কে সি পান্ডা (উরিশ্যা)ঃ আমাদের কাছে রিপোর্ট আছে, ভারত সিমান্ত এলাকায় ১২, ০০০ রাজাকার প্রবেশ করেছে। একি সাথে পশ্চিম অংশে শেরসা এর কাছের বেস ক্যাম্প এবং চণ্ডীগড়ে কিছু পাকিস্তানী চুল ও দাড়ি পড়ে সরদারের ছদ্মবেশে প্রবেশ করেছে, এমনকি তারা গ্রন্থসাহেব ও পাঠ করতে জানে।
সর্দার নারেন্দার এস আই (পাঞ্জাব) শুধু মাত্র সর্দারদের মতই নয় ( কথার মাঝখানে বলতে চাচ্ছেন)
শ্রী কে সি পান্ডাঃ দয়া করে, কথার বাকি অংশ শুনুন। ভারতের জাতীয় পত্রিকাগুলো একথাও বলছেন যে সর্দাররা সকল ষড়যন্ত্র লিপ্ত হচ্ছে। কিন্তু আমার জানামতে পাকিস্তানিরাই সরদারের ছদ্মবেশে এসকল কাজ করে যাচ্ছে। আমি জানতে চাই সরকার কি এসকল বিষয় খতিয়ে দেখছেন কি না, এবং যেসকল গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ষড়যন্ত্রের স্বীকার হতে পারে সেগুলো রক্ষা করতে আপনারা কি ব্যবস্থা গ্রহন করছেন?
শ্রী বিদ্যা চরন শুক্লাঃ পাকিস্তান যে এদেশে স্যাবোটাজ ঘটাতে চাইছে এবং সে উদ্দেশ্যে এখানে এজেন্ট পাঠাচ্ছে, সে বিষয়ে আমরা ওয়াকিবহাল এবং আমরা তাদের প্রতিহত করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমার মনে হয়না, সম্মানিত সদস্য আশা করেন যে আমরা সে বিষয়ে এখানে বিশদ বিবরন দিব। আমি শুধু এটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি যে আমরা বিপদ সম্পর্কে জানি এবং তা মোকাবেলা করার সকল প্রস্তুতি নাওয়া হয়ে গিয়েছে।
শ্রী চিত্ত বাসু (পশ্চিম বঙ্গ)ঃ স্যার, আমার মনে হয় পাকিস্তানের এই অবিরাম শেলিং কিছু কিছু এলাকার যেমনঃ পশ্চিম বঙ্গের নদিয়া এবং ২৪ পরগনা, ত্রিপুরা, মেঘালয় এবং আসামের ক্ষেত্রে একটি দৈনিক বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। এসব কিছু দেখে আমার মনে হচ্ছে, পাকিস্তান আর্মি পূর্বাঞ্চলে আসাম, ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গকে পুরো দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার প্রচেষ্টা চালাতে বদ্ধপরিকর, কেননা এ অঞ্চলগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যেমন একটি শরীরের কাছে স্কন্ধ। এ ধারনা থেকেই আমি জানতে চাই, এইসব এলাকায় পাকিস্তান যে আগ্রাসী এবং আক্রমণাত্মক কার্যক্রম চালাচ্ছে, তার জন্য এপরযন্ত আমাদের সরকার কি করেছে?
এরপর আমি জানতে চাইব যে পশ্চিম বঙ্গের ২৪ পরগনার একটি অংশ, বয়রায় যে গত কিছুদিন ধরে ক্রমাগত শেলিং হচ্ছে এবং প্রায় ১০, ০০০ মানুষ সে এলাকা ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন, সে বিষয়ে সরকার অবগত আছে কিনা, আর যদি অবগত থেকে থাকেন, তবে সেখানকার জনগণের আস্থার জন্য এখন পর্যন্ত কি কি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, কি কি ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে যার মাধ্যমে সে এলাকার লোক পাকিস্তানের এই আক্রমণকে সাহসের সাথে মোকাবেলা করবে?
শ্রী বিদ্যা চরন শুক্লাঃ জনাব, এটি অবশ্যই সত্য যে, পাকিস্তান বেশ কিছুদিন ধরে পশ্চিমা অংশে নিয়মিত শেলিং করে যাচ্ছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে সেখানকার লোকজনের মনোবল ভেঙ্গে পরেছে এবং তাদের মনোবল ফিরিয়ে আনতে অনেক প্রচেষ্টার প্রয়োজন রয়েছে। তাদের মনোবল যথেষ্ট পরিমানেই রয়েছে এবং এই শেলিং এর বিরুদ্ধে আমরা যে উদ্যোগ নিয়েছি, তা যথেষ্টই ফলপ্রসু হয়েছে। অবস্থা সম্পর্কে আমরা ভালভাবেই অবগত আছি, এবং যেখানে যা করা প্রয়োজন আমরা তাই করছি। আমার মনে হয়না এবিষয়ে বিশদ বিবরন দাওয়া উচিত হবে।
(মিঃ ডেপুটি চেয়ারম্যান, আসন গ্রহন করছেন)
শ্রী ভুপেশ গুপ্ত (পশ্চিম বঙ্গ)ঃ আমার মনে হয়, মাননীয় মন্ত্রী তার বক্তব্যে সকল বিষয়ের উত্তর দিতে পেরেছেন। এরকম সময়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনেক লোক নেপোলিয়ন হবার স্বপ্ন দেখেন, এবং আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে মন্ত্রনালয় সেরকম কোন চেষ্টা করছেনা। আমাদের কোন যুদ্ধ শুরু করার বা কাউকে যুদ্ধে আহবান করার কোন ইচ্ছা নেই। এটি একদমি পাকিস্তানের বিবেচনা যে তারা কি করবে। আমাদের দায়িত্ব আমাদের দেশকে রক্ষা করা, এবং আমরা তাই করবো।
শ্রী রাজ নারাইন (উত্তর প্রদেশ)ঃ ষড়যন্ত্র?
শ্রী ভুপেশ গুপ্তঃ আপনি ষড়যন্ত্রের কথা বলতে পারেন, কিন্তু আপনি কি পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধে যেতে চান?
ডঃ ভাই মহাবিরঃ আপনার, কি বাংলাদেশের লোকদের নিয়ে কোন চিন্তা নেই?
শ্রী ভুপেশ গুপ্তঃ অবশ্যই আমাদের চিন্তা আছে, কিন্তু যারা ভারতের সাথে পাকিস্তানের যুদ্ধ নিয়ে খুব উৎসাহী, তাদের জানা উচিত যে এতে বাংলাদেশের মানুষের বা তাদের সংগ্রামের কোন লাভ হবে না। তারা শুধুই বাংলাদেশের এই সংগ্রামকে বানচাল করতে চাইছে। আমাদেরকে সকল অবস্থায় বাংলাদেশের এই সংগ্রামের সমর্থন করে যাওয়া উচিত এবং তার স্বীকৃতি প্রদান করা উচিত, সকল সহযোগিতা প্রদান করা উচিত। এটি তাদের অধিকারের মধ্যে পড়ে এবং কাল যদি পাকিস্তান আমাদের আক্রমন করে, তবে আমাদেরো উচিত আমাদের সাধ্যের মধ্যে যা হয়, সেটা করে আমাদের অধিকার আদায় করে নেয়া। এখানেই এ বিষয়টা শেষ করা উচিত। এখন, স্যার, আমি মেঘালয় এবং আসাম সীমান্তে গিয়েছি এবং আমাকে বলতেই হবে, সে এলাকার জনগণ এবং সেনাবাহিনীর মনোবল যথেষ্ট বেশিই আছে, সাধারন মানুষের মনোবল বেশি থাকাই বেশি জরুরি ছিল। আমি প্রায় সীমান্তের কাছাকাছি গিয়েছিলাম। আমি বলবো না যে সীমান্তের ওপারে গিয়েছিলাম কিনা, কিংবা মিঃ জগজীবন রাম ও এবিষয়ে বেশি কিছু বলতে চাইবেন না। আমি সেখানে দেখছি যে আমাদের ফসলের মাঠগুলোতে চাষবাস হচ্ছে এবং আমাদের সাধারন কৃষকরা সেখানে চাষবাস করছে। এথেকে দুটি বিষয় স্পষ্ট হয়, এক হচ্ছে আমাদের লোকদের মনোবল কতটা ভাল অবস্থায় আছে, আর দ্বিতীয় হচ্ছে আমাদের সেনাবাহিনী তাদের কতটুকু সহযোগিতা প্রদান করে যাচ্ছে। আমার মনে হয় এটা খুবি ভাল বিষয়। আমাদের সাধারন সম্পাদক পশ্চিমা সীমান্তে গিয়েছিলেন এবং ১৫ দিন সেখানে ছিলেন। তিনিও আমার মতই একি মতামত দিয়েছেন এবং বলেছেন যে সেখানের সেনাবাহিনী এবং লোকজনের মনোবল অটূট রয়েছে। এটিও অত্যন্ত দারুন বিষয়। একি সাথে, মাননীয় মন্ত্রী নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে বিদেশি ট্যুরিস্ট এবং হিপিতে পুর সীমান্ত ছেয়ে গেছে, এবোঞ টাড়া নিশ্চিন্তে সেখানে ঘুড়াঘুড়ি করছে, বিশে করে ফিরোজপুর জেলার হুসেইনিওয়ালা সীমান্ত এলাকায়। গত সপ্তাহ থেকেই পাকিস্তান থেকে ভারতে বিদেশিদের ও পন্য আনা নেওয়া অনেক বেশি বেড়ে গেছে। যেমন, এর আগে দিনে তিন চারটির বেশি ভ্যান যাওয়া আসা করতোনা, এখন দৈনিক ৫০টি ভ্যান যাতায়াত করছে। ভ্যান ছাড়া প্রবেশকারীদের সংখ্যাও অনেক বেড়ে গেছে। এইসকল প্রবেশকারীরা পাকিস্তানী মিলিটারি পাঠানো এস্পিওনাজ এজেন্ট হতে পারে যাদের দিয়ে ধংসাত্মক ঘটনা ঘটানো সম্ভব। এদের বেশিরভাগি আমেরিকান জনগণ এবং তারা সংখ্যায় উল্লেখযোগ্য। আমি সরকারকে বলবো, অবিলম্বে এধরনের প্রবেশ বন্ধ করা প্রয়োজন। যারা এসেছেন, তাদেরকে হুসেইনিওয়ালা বর্ডার থেকে পুলিশ প্রহরায় দিল্লীতে ন্যে এসে ভালভাবে অনুসন্ধান করা প্রয়োজন। এধরনের প্রবেশ অনুমোদন করা যাবেনা আর। আমার বিশ্বাস কেন্দ্রীয় সরকার এধরনের কোন নির্দেশ সেখানে পাঠায়নি, যার ফলে তারাও কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এবিষয়ে সরকারের মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন। দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, আমি দেখছি যে সিমান্ত এলাকার কৃষকেরা কিছু আর্থিক সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, এবং তারা জাতীয় প্রতিরক্ষার কথা ভেবে তা মেনেও নিচ্ছেন। মিঃ জগজিবন রাম ভালভাবেই তা জানেন, যা তিনি সেখানে করে এসেছেন। আমি অবশ্যই স্বীকার করবো যে আমাদের জনগনের মনোবল অনেক বেশি রয়েছে, কিন্তু তারা আর্থিক সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, যেহেতু তারা ফসল উৎপাদন করতে পারছে না। যেসকল মানুষরা আপনাদের প্রস্তুতি নেয়ার সুবিধা দিতে গিয়ে নিজেদের আর্থিক ক্ষতি স্বীকার করেছেন তাদের ক্ষতিপূরণ কিভাবে দেয়া হবে। পাঞ্জাবে মানুষ স্বেচ্ছায় ক্ষতি মেনে নিয়েছে, কিন্তু তাদের অভিযোগ বা প্রয়োজন সরকার দেখছেনা। একি বিহসয় চলছে, ত্রিপুরা এবং অন্যান্য সীমান্ত এলাকাতেও, যেখানে যেখানে শেলিং চলছে। আমি যখন সেখানে ছিলাম, শেলিং চলছিল। আমি অপেক্ষা করছিলাম যেন কোন শেল আমার উপরে পড়ে। মিঃ রাজ নারাইন ও তাই চাইবেন।
মিঃ রাজ নারাইনঃ না
শ্রী ভুপেশ গুপ্তঃ আমি একটা শেলে শেষ হয়ে যাব। কিন্তু মিঃ রাজ নারাইনের শুধু শেলে হবে না, বোমা লাগবে। সুতরাং আমার মনে হয়না, উনি সেখানে গেলে পাকিস্তানী বোমারুদেরও আহবান জানানো হবে। আমার জন্য ছোট একটি বন্দুক হলেই হবে, কিন্তু মিঃ রাজ নারাইন এর জন্য হেভি আরটিলারির প্রয়োজন হবে। সুতরাং আপনি সীমান্তে যাবেন না।
মিঃ ডেপুটি চেয়ারম্যানঃ দয়া করে শেষ করুন।
শ্রী ভুপেশ গুপ্তঃ আমাদের মনে হয়, আমাদের সরকার কোনধরনের আগ্রাসী মনোভাব দেখানোর প্রয়োজন নেই, কিন্তু যখনি কোন ধরনের আক্রমন, শেলিং চালানো হবে, তখনি তার উপযুক্ত জবাব দিবে। আমাদের কেউ আক্রমন করলে, আমরাও সঠিক লক্ষ্যে আঘাত হানবো। সময়ক্ষেপণ করা উচিত হবে না। যদি পাকিস্তান আমাদের উপর আঘাত হানে, তবে আমরা আগ্রাসী মনোভাব দেখাবোনা, কিন্তু আমাদের জনগণকে সাহস দেয়ার জন্য আমরা সাথে সাথে তার জবাব দিব। এর বেশি কিছু না। আমাদের নিজেদের বল দেখানোর জন্যই আমাদের সিমান্ত রক্ষা করতে হবে। যদিও এখন পর্যন্ত সকম ব্যবস্থাই অত্যন্ত ভালভাবে নেয়া হয়েছে। যখনি আঘাত হানবেন, তা যেন লক্ষ্য ভেদ করে, এছারা আমার আর কিছু বলার নেই।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী (শ্রী জগজীবন রাম)ঃ আমি মাননীয় সদস্যকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি যে তিনি আমাদের সাধারন জনতা ও সেনাবাহিনী, হোক সেটা পশ্চিমা অথবা পূর্বাঞ্চলের সীমান্তের, তাদের মনোবল কতটা দৃঢ়, তার একটি সঠিক চিত্র বর্ণনা করেছেন, এবং আমি মনে করি, তাদেরকে এলাকা ত্যাগ করতে বলার যে উপদেশ এসেছে, তা তাদের এই সাহস এবং মনোবলের প্রতি ন্যায়সুচক নয়।
শ্রী ভুপেশ গুপ্তঃ আমি তা করতে বলিনি।
শ্রী জগজীবন রামঃ না, আপনি তা করতে বলেননি। আপনি আমাদের জনতার মনোবল সঠিক ভাবে অনুভব করেছেন এবং এখানে তা তুলে ধরেছেন, তার জন্যই আমি আপনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। কিন্তু একিসাথে আমি বলেছি, যে হাউসের কোন সদস্য বা বাইরের কারো এমন সাজেশন দেয়া ঠিক হবে না। করলে সেটা হবে আমাদের জনতার মনোবলের প্রতি অবিচার। আপনি সীমান্তে গিয়েছিলেন, আমিও গিয়েছিলাম এবং আমি দেখেছি যে ঠিক সীমান্তের উপরে চাষাবাদের কাজ চলছে। আমাকে অবশ্যই আমার জনতাকে অভিনন্দন জানাতে হবে, তারা যে সাহস ও সহিষ্ণুতা দেখিয়েছে, তার জন্য আমাদের উচিত তাদের ধন্যবাদ জানানো।
আপনি ঠিকই বলেছেন যে গত কিছুদিন ধরে হুসেইনিওয়ালা এবং ফাজিল্কা পোস্টের মধ্য দিয়ে প্রচুর বিদেশীর আগমন ঘটেছে। সাধারণত, এমনকি গত বছরেও এ সময়ে প্রচুর বিদেশী এই দুই পোস্ট দিয়ে আমাদের দেশ এসেছিল। কিন্তু, এবছর লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে সংখ্যাটি মাত্রার চেয়ে সামান্য পরিমানে বেশি। আমরা এবিহসয়ে খেয়াল রাখছি এবং অনুসন্ধান করছি যে কেন এত বেশি সংখ্যক মানুষ পশ্চিমা দেশ থেকে আমাদের দেশ আসছে। এর একটা ব্যাক্যা হতে পারে যে এত বেশি সংখ্যক মানুষ ভারত এবং পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। আমি এদের মধ্যে অনেকের সাথে দেখা করেছি, এবং দেখেছি যে ইস্লামাবাদে গিয়েছে, আবার বাংলাদেশেও গিয়েছে এবং এখন ভারতে এসেছে। তারা বোঝার চেষ্টা করছে যে পাকিস্তান কি বাংলাদেশকে দখল রাখতে পারবে নাকি না। আমি এধরনের মানুষদের স্বাগত জানাই। তারা আসুক এবং দেখে যাক। তারা বাংলাদেশ ও সিমান্তে যা হচ্ছে সে বিষয়ে গবেষণা করতে পারে। কিন্তু, আমি যেমনটি আগেই বলেছি যে আমরা বিষয়টি নজরে রেখেছি এবং বূঝার চেষ্টা করছি যে আসলেই কি কারনে তারা আসছে, কেন হুসেইনিওয়ালা দিয়ে বিদেশিদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। আমরা আমাদের সীমান্তবর্তী এলাকায় বিদেশীদের যাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু নতুন নিয়ম ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছি। কিছু সাংবাদিক এবং কিছু টিভি চ্যানেলের লোকজন আমাদের অনুরোধ জানিয়েছেন যে তাদেরকে এই নিয়মনীতির মধ্যেই কিছু বাড়তি সুবিধা দাওয়া যায় কিনা, যেন তারা সীমান্ত এলাকায় ঘুরে আসতে পারে এবং সঠিক অবস্থান বুঝতে পারে। প্রচার বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং এবিষয়ে জড়িত সকল মন্ত্রনালয় কিছু নির্দিষ্ট ব্যবস্থা নিচ্ছেন এ বিষয়ে। আপনার সাজেশন অনুযায়ী আমরা বিদেশীদের উপর আরোপিত এসকল নিয়মগুলো পুনর্বিবেচনা করে দেখবো এবং একি সাথে তা যেন আমাদের সিমান্তের নিরাপত্তায় কোন বিঘ্ন না সৃষ্টি করে সেদিকেও খেয়াল রাখব।
মিঃ ডেপুটি চেয়ারম্যানঃ আমার মনে আমরা যথেষ্ট আলোচনা করে ফেলেছি।
শ্রী এ জি কুলকারনি (মহারাশ্ত্র)ঃ এদিকে আলোচনা হয়নাই।
মিঃ ডেপুটি চেয়ারম্যানঃ প্রতি পার্টি থেকে একজন করে, ঠিক আছে মি; পার্থসারথি।
শ্রী আর টি পারথসারথি (তামিল নাড়ু)ঃ পূর্বে এবং পশ্চিমে যা হচ্ছে তাতে আমরা কি পাকিস্তানের সাথে একটি অঘোষিত যুদ্ধাবস্থায় নেই, সীমান্তে মাদের সেনাবাহিনীকে নিরন্তর চাপে রাখাকি দেশের জন্য মঙ্গলজনক? কিভাবে আমরা তার অবসান ঘটাতে পারি, আদৌ কি এর অবসান হবে?
শ্রী বিদ্যা চরন শুক্লাঃ এটি একটি অদ্ভুত প্রশ্ন। সীমান্তে আমরা একটি বিপদজনক পরিস্থিতি মোকাবেলা করছি, এবং আমাদের বাহিনী আমাদের ভুখন্ড ও স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে সেখানেই অবস্থান করবে, যতক্ষন না এই পরিস্থিতির অবসান ঘটে।
শ্রী রাজনারায়নঃ মহোদয় আমাদের দেশের সীমা সরকার কি স্পষ্ট করে বলার ক্ষমতা রাখেন?
উপমন্ত্রী (সিদ্ধেশ্বরী প্রসাদ)ঃ তা আপনিই জানেন।
শ্রী পিতাম্বর দাসঃ দক্ষিনে সমুদ্র।
শ্রী রাজনারায়নঃ আমি তা জানি। এজন্য আমি চাই যে শ্রী জগজীবন বাবু আমার প্রশ্ন ভালভাবে চিন্তা করুন। আমি চাই ভারতবর্ষের সরকার ভারতবর্ষের সীমার বিবরন দিন। আগে যা পূর্ব বাংলা ও পূর্ব পাকিস্তান নামে পরিচিত ছিল, ১৫ই মার্চের পর যা স্বাধীন বাংলা হয়ে গেছে তার ভেতরে ভারতের উত্তর সীমান্তে পুরা ১২ মেইল এলাকা এখন মুক্তাঞ্চল বলা হচ্ছে। সেটি আমাদের সীমান্তের কোন পয়েন্ট যেখান থেকে পরিমাপ করা যাবে?
শ্রী বিদ্যা চরন শুক্লাঃ ঐ ১২ মাইল ভুখন্ড বাংলাদেশের অংশ, বাংলাদেশ সরকারের আধিপত্যে মুক্তি বাহিনীর দখলে আছে। ঐ এলাকা তাদেরি। আমরা তাদের যতটা নৈতিক ও অন্যান্য সাহায্য করে যেতে পারি, তা করে যাচ্ছি।
শ্রী এন রামা রেড্ডি (মহিশুর)ঃ স্যার, আমার সম্প্রতি সীমান্তে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। একটি নির্দিষ্ট স্থানে আমি দেখলাম সেখানে হাটবার চলছে, দুইপারের মানুষই অত্যন্ত স্বাধীনভাবে যাওয়া আসা করছে, কেনাকাটা করছে এবং টাকা পয়সার লেনদেনও চলছে। টাকার লেনদেন এর সাথে সাথে সেখানে কিছু হিপ্পিও ছিল। আমি তাদেরকে বয়ড়াতে দেখেছি। আমি জানতে চাই, যদি এখনও এই অবস্থা চলতে থাকে, তাহলে অবশ্যই ওপার থেকে আমাদের দেশে যেকোন সংখ্যায় ষরযন্ত্রকারীরা প্রবেশ করতে সক্ষম। আমি একথা জানতে চাচ্ছি, কারন ভারতের সর্বত্রই নাশকতা চলছে। কাস্মিরে একটি পোস্ট অফিস জালিয়ে দেয়া হয়েছে। বম্বেতে একটি বোমা উদ্ধার করা হয়েছে এবং রেলওয়েগুলো বিনষ্ট করা হচ্ছে। আরো অনেক কিছুই হচ্ছে সারাদেশে। এধরনের উৎকণ্ঠা বারতে থাকলে তা আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। আমি জানতে চাই, এইসকল ষড়যন্ত্রকারীদের আগমন ঠেকাতে বর্ডার সম্পূর্ণভাবে সিল করা হয়েছে কিনা।
শ্রী বিদ্যা চরন শুক্লাঃ আমি ইতিমধ্যে এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। এবং আমি আবারো বলতে চাই যে আমরা সীমান্তে নজরদারি চালু রেখেছি এবং ষড়যন্ত্রকারীদের প্রবেশ ঠেকাতে সকল ব্যবস্থা নিয়েছি এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে সফল ও হয়েছি। আমরা যুদ্ধ চাইনা, কিন্তু আমরা অবশ্যই আমাদের রক্ষা করবো।
ডঃ ভাই মহাবীরঃ মহোদয়, মাননীয় মন্ত্রী সরকারের এই প্রত্যয় বারবার পুনরুচ্চার করছেন যে আমরা নিজেদের নিরাপত্তা বিধান করবো। এ উক্তির ব্যাখ্যায় আমার বন্ধু ভুপেশ গুপ্তও বরাবর বলেছেন, আমরা যুদ্ধ চাইনা, আমরা শুধু নিজদের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করবো।
শ্রী বিদ্যা চরন শুক্লাঃ আক্রমন করতে চাইনা, লড়াই করতে চাই অবশ্যই।
ডঃ ভাই মহাবীরঃ তার নিজের ভাষ্য ছিল, আমরা যুদ্ধ চাইনা, কিন্তু আমরা অবশ্যই নিজেদের রক্ষা করবো। অতঃপর বলছেন আক্রমণও করতে চাই। মহোদয় একদিকে যখন এগুলা বলা হচ্ছে, তখন প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর উক্তি, যদি যুদ্ধ বাধে তবে পাকিস্তানের ভুখন্ডেই হবে এবং যে পর্যন্ত আমরা অগ্রসর হব সেখান থেকে আমরা পশ্চাদাপসরন করবোনা, আমি মনে করি সারাদেশের জন্য এর চেয়ে প্রেরণাদায়ক কথা হতে পারেনা, এবং এজন্য তিনি প্রশংসিত হয়েছেন। কিন্তু, আরেকটি কথা যা বলা হচ্ছে যে আমরা নিজেদের প্রতিরক্ষা বিধান করবো এবং এর অর্থ করা হচ্ছে, আমরা আমাদের দেশ অতিক্রম করবো না, আমাদের সীমান্ত ছারিয়ে যাবনা, তারা যখন লড়তে আসবে, আমরা সেখানেই লড়ব, যখন তারা পলায়ন করবে তখন আমাদের সীমান্তের উপর দিয়ে তাদের নিরাপদে চলে যেতে দিব, এই যদি আমাদের নীতি হয়ে থাকে, তবে কিসের ভিত্তিতে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে যুদ্ধ করার কথা ভাবছি আমরা? ১৯৬৫ সালের যুদ্ধও তো অঘোষিত ছিল। তবে কি চিরদিনের জন্য আমাদের হাত বাধা, যতক্ষন ঘোষণা হবে না, ততদিন তারা আমাদের ভুখন্ডে নির্বিঘ্নে এসে পরবে, যখন চাইবে যুদ্ধ করবে, এবং যখন পালিয়ে যাবে স্বীয় ভূখণ্ডে তখন আমরা একপাও অগ্রসর হবোনা, এই যদি পরিস্থিতি হয়, তবে এধরনের সামরিক স্ট্র্যাটেজি অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ।
সুতরাং আমি চাই সরকার তার নীতি ব্যাখ্যা করুন, আমরা কি প্রতিরক্ষা বলতে শুধু এই বুঝাই যে, তারা যখন আমাদের ভূখণ্ডে চলে আসবে, কেবল তখনি আমরা হাতিয়ার তুলে নেব, তার আগে অস্ত্র ধরতে পারিনা? …
জেনারেল হরবিন্স সিংহ এর সেই প্রবন্ধ মন্ত্রী মহোদয়ের জানা থাকতে পারে যার মধ্যে তিনি লিখেছেন, ইনিশিয়েটিভ মিলিটারি স্ট্র্যাটেজির একটি মহান তত্ত্ব। আমরা এই ইনিশিয়েটিভ তাদের হাতেই তুলে দেই, এতে দেশের কল্যান হবে না।
শেষ কথা আমি জিজ্ঞেস করব, নিজের দেশে ধ্বংসাত্মক কাজ ও স্যাবোটাজ হচ্ছে। সরকার এ সম্পর্কে অবহিত কিনা, এসবের পিছনে থাকে পাকিস্তান হাইকমিশনের কর্মচারী বি অধিকারীর চিন্তা ও পরিকল্পনা। পাকিস্তান হাইকমিশনের অভ্যন্তরে যেসব ঘটনা ঘটে তা কয়েকবার এদেশের মানুষকে বিস্মিত ও আশ্চর্যান্বিত করেছে। হাইকমিশনের বাংলাদেশি কর্মচারীদের সেখানে পেটানো হয়। এধরনের অপকর্ম রোধে সরকার কোন প্রতিবিধান করছেন কিনা?
পাকিস্তান হাইকমিশনের লোকদের কুটনৈতিক নিরাপত্তা দেয়া হয় যার ফলে আমরা তাদের অপকর্ম সমুহ বন্ধ করতে পারি না। আমি জানতে চাই, ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানস্থ আমাদের হাইকমিশনে তল্লাশি চলানো হয়েছিল আজকের সংবাদপত্রে প্রকাশিত এখবরের সত্যতা আছে কিনা। যদি থাকে তবে সরকার সে তথ্য কবে পেয়েছিলেন? এ তথ্য কি তখন পাওা গেছে যখন এ সম্পর্কে রহস্যোদঘাটন করা হয়েছে? আমি সরকারের কাছে এসব প্রশ্নের ব্যাখ্যা চাচ্ছি।
শ্রী বিদ্যা চরন শুক্লাঃ উপসভাপতি মশায়, মাননীয় সদস্যের প্রশ্নসমূহের জবাব সরকার কর্তৃক কয়েকবার সুস্পষ্টভাবে দেয়া হয়েছে। আমি এ পরিষদে সেগুলি আবার পুনরুক্তি করছি। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী মহাশয় এবং অন্যান্য সরকারি মুখপাত্র কয়েকবার পরিষ্কারভাবে একথা বলে দিয়েছেন যে আমরা আক্রমন করবো না কিন্তু যদি আমাদের উপর আক্রমন হয়, তবে আমরা শুধু প্রতিরক্ষা বিধান করব। এমনটি অসম্ভাবি ন্য বরং সীমান্তের ওপারে যেখানেই আমাদের জন্য যথোপযোগী হবে সেখানেই ভালভাবে যুদ্ধ করবো যাতে গোটা যুদ্ধ তাদের ভুখন্ডে সংগঠিত হয়, যেন আমাদের মাটিতে আর কোন প্রকার অনুপ্রবেশ না ঘটে।
ডঃ ভাই মহাবীরঃ এখন যা হচ্ছে তা কি আক্রমন নয়?
শ্রী বিদ্যা চরন শুক্লাঃ আমাদের নীতি আপনি ভাল্ভাবে উপলব্ধি করুন, আজকে কোন যুদ্ধের ঘোষণা দেয়া হয়নি। দ্বিতীয় কথা আপনি জিজ্ঞেস করেছেন যে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ কি পাকিস্তান হাইকমিশন কর্তৃক পরিচালিত হচ্ছে কিনা। এ ব্যাপারে আমাদের কাছে যেসকল তথ্য প্রমান আছে তার ভিত্তিতে আমরা ঐ প্রকার কোন ঘটনা ঘটতে দেইনি, এবং এধরনের ঘটনা থেকে দেশকে মুক্ত রাখার সবরকম তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি। এখানে আমি এসম্পরকে বিশদ কিছু বলতে চাইনা।
আপনার তৃতীয় প্রশ্ন, ১৯৬৫ সালে করাচিতে আমাদের হাইকমিশনে তল্লাশি হয়েছিল কিনা, এইটি বিদেশী মন্ত্রণালয়ের প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন, তাদের কাছেই এর যথার্থ উত্তর পাওয়া যাবে।
শ্রী মহাভির ত্যাগীঃ স্যার, সেনাবহর সাধারন মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেনা, তারা শুধু সাধারন মানুষের সহমর্মিতা আদায়ে একটা জরুরি অবস্থার পরিবেশ তৈরি করে রাখতে চায়। বর্তমানে পাকিস্তান এধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। আমার মনে হয়, বাংলাদেশ বা পশ্চিম পাকিস্তানের কোন সাধারন মানুষই ভারতের সাথে যুদ্ধ চায়না। দুই দেশের মধ্যে যে শত্রুতার সৃষ্টি হয়েছে, সে বিষয়ে সাধারতন জনগন যে একদমি সন্তুষ্ট ন্য, তা কি দুই দেশের সরকার জানে না? দুই দেশের মানুষী চায় আবার একত্র হতে। যদি কখনও মানুষ চায় যে ভারত এবং পাকিস্তান আবারো এক হয়ে যাক, তাহলে কি সরকার তাদের পক্ষ নিবে?
শ্রী বিদ্যা চরন শুক্লাঃ সম্মানিত সদস্যের প্রথম প্রশ্নের উত্তরে আমি বলব, আমার মনে হয় এর কিছু সারমর্ম আছে। কোন দেশের মানুষই যুদ্ধ চায়না, কারন কোথাও যুদ্ধ হলে সাধারন মানুষই সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়ে। দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে আমি বলব, মাননীয় সদস্য একটি অনুমাননির্ভর প্রশ্ন করেছেন এবং আমি মনে করিনা এর উত্তর দাওয়ার প্রয়োজন আছে।