You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.06.24 | মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্ত্রিক পাকিস্তানকে সাম্প্রতিক অস্ত্র সরবরাহের রীপোর্টের অপর আলোচনা | রাজ্যসভার কার্যবিবরনি - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সূত্র তারিখ
১৯৯। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্ত্রিক পাকিস্তানকে সাম্প্রতিক অস্ত্র সরবরাহের রীপোর্টের অপর আলোচনা রাজ্যসভার কার্যবিবরনি ২৪ জুন ১৯৭১

জরুরী জনগুরুত্বসম্পন্ন একটি বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দেবার আহবান

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্ত্রিক পাকিস্তানকে সাম্প্রতিক অস্ত্র সরবরাহের রীপোর্টের অপর আলোচনা

শ্রী চিত্ত বসু (পশ্চিম বঙ্গ): জনাব চেয়ারম্যান স্যার আমি পাকিস্তানে সাম্প্রতিক মার্কিন অস্ত্র চালানের রিপোর্টের ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করছি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রী (সর্দার শরণ সিং): জনাব চেয়ারম্যান স্যার, সরকার সম্প্রতি পাকিস্তানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সামরিক সরঞ্জামের চালান সম্পর্কে এই হাউজের সবার উদ্বেগের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞ্যাপন করছে। ২২ জুন দ্যা নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্র থেকে সামরিক সরঞ্জামাদি সহ ‘সুন্দরবন ও পদ্মা’ নামে পাকিস্তানের পতাকা বাহী দুইটি কার্গো যথাক্রমে ৮ মে ও ২১ জুন রওনা দেবার খবরটি সম্ভবত সত্য। বিষয়টি ২৩ জুন রাষ্ট্রদূত ওয়াশিংটনে আন্ডার সেক্রেটারি সঙ্গে সন্ধ্যায় বিষয়টি নিয়ে দেখা করেন। এছাড়াও ২৩ জুন বিষয়টি নয়া দিল্লির মার্কিন দূতাবাসে নিয়ে যাওয়া হয়। ইউ এস সরকারের দেয়া তথ্য মতে ২৫ মার্চ পর্যন্ত পাকিস্তানে কোন বিদেশী সামরিক দ্রব্য বিক্রয় করা হয়নি বা নতুন কোন অস্ত্র অনুমোদন দেয়া হয়নি, এবং কোন রপ্তানি লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি। আমেরিকান সরকার পরে আবার বিবৃতি দেয় যে নিউ ইয়র্ক টাইমস যে সংবাদ দিয়েছে তাতে ভুল আছে। তারা যানায় জাহাজে ৮ টা বিমান ছিল। কিন্তু সংবাদে আসে যে সেখানে কোন বিমান ছিলোনা। অ্যামেরিকান সরকার জানায় যে হয়ত ২৫ মার্চের আগের অনুমোদিত কিছু মিলিটারি সরঞ্জাম সম্ভবত ডকে রাখা ছিল। যারা রওনা দেবার জন্য অপেক্ষমাণ ছিল। হয়ত সেই দুই জাহাজকে নিউ ইয়র্ক টাইমস সংবাদদাতারা উল্লেখ করেছেন। তারা আরও জানান যে বাণিজ্যিকভাবে কেনা কিছু দ্রব্য যেগুলোতে এক্সপোর্ট লাইসেন্স লাগে হয়ত সেগুলো ছিল – এগুলো ২৫ মার্চের আগে অনুমোদিত। কিছু আইটেমের ক্ষেত্রে এক্সপোর্ট লাইসেন্স লাগেনা। হতে পারে যে এরকম কিছু দ্রব্য জাহাজে ছিল। তারা জানায় যে সম্ভবত জাহাজে ২৫ মার্চের আগের অর্ডারগুলোই যাচ্ছিল।

রাজ্যের আন্ডার সেক্রেটারি আমাদের উদ্বেগের প্রশংসা করেন এবং ক্ষোভের সাথে বলেন যে এই পূর্ব অনুমোদনপ্রাপ্ত দ্রব্যগুলো আমাদের নজরে আসেনি। তিনি আরও বলেন পুরো ব্যাপারটা এখনো জানা নাই – যে শিপমেন্টের আগে এক্সপোর্ট লাইসেন্স কোন কোন দ্রব্যের জন্য ইস্যু করা ছিল। তিনি আরও যুক্ত করেন যে বিষয়টি নিয়ে এখনো চূড়ান্ত তথ্য দেয়া যাচ্ছেনা কারণ এটা এখনো তদন্তাধিন আছে।

আমরা মার্কিন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছি যে এই মুহুর্তে বাংলাদেশে যে হত্যাযজ্ঞ চলছে তাতে পাকিস্তানকে কোন রকম অস্ত্র সহায়তা দিলে তা শুধু বাংলাদেশের সামরিক শাসককে উৎসাহিত করা নয় বরং সমস্ত উপমহাদেশের শান্তির জন্য হুমকি হিসেবে দাঁড়াবে। আমরা বলেছি যে এটা শুধু একটি টেকনিকাল বিষয় নয় – বরং এর সাথে সামাজিক অর্থণৈতিক, রাজনৈতিক ও নিরাপত্তার বিষয় জড়িত। তাই আমরা ইউ এস গভমেন্ট কে অনরোধ করেছি যে দুইটি জাহাজ রওনা দিয়েছে সেগুলো ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে। পুরনো অথোরাজেশনের ভিত্তিতে মিলিটারি সরঞ্জাম পাঠানো যেতেই পারে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিষয়টি জোরালো গুরুত্বের সাথে দেখছে এবং আমরা তাদের রেসপন্সের অপেক্ষায় আছি।

আমরা আশা করি যে অ্যামেরিকা গণতন্ত্র ও স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে তারা এরকম একটি সন্ত্রাস নীতি অবলম্বন করবে না। এতে করে বাংলাদেশে সঙ্ঘটিত সন্ত্রাস আরও উৎসাহ পাবে। যতক্ষণ পাকিস্তান শাসক তাদের গণহত্যা না থামাবে ততক্ষণ পর্যন্ত এখানে শান্তিপূর্ন পরিবেশ সৃষ্টি হবেনা এবং শরনার্থিদের প্রবেশ থামবে না আর যারা এসেছে তাদের ফিরে যাবার অবস্থাও তৈরি হবেনা।

শ্রী চিতা বসু: সর্বপ্রথমে আমি কি এটা মাননীয় মন্ত্রীর কাছ থেকে জানতে পারি? তিনি শুধু বলেছেন ২২ জুন মিলিটারি অস্ত্রের চালান পাকিস্তানে এসেছে – এবং অ্যামেরিকা ভারতকে আশ্বস্ত করেছে। আমি জানতে চাই অ্যামেরিকা কি বলে ভারতকে আশ্বস্ত করেছে?

আমার দ্বিতীয় পয়েন্ট হচ্ছে এরকম – ধরুন মন্ত্রী আমারিকার ব্যাখ্যায় সন্তস্ট হয়ে গেলেন। কিন্তু আমার মনে হয় আমাদের সরকারের তাদের বিবৃতিতে বিভ্রান্ত হলে চলবে না। স্যার, তিনি তাঁর বিবৃতিতে একমত হয়েছেন যে এই গুরুতর অবস্থায় পাকিস্তানে অস্ত্র সরবরাহের ফলে স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের নিরীহ মানুষের উপর যে গণহত্যা চলছে তা আরও তীব্রতর হবে। এটা পাকিস্তানে যুদ্ধের অবস্থা সৃষ্টি করবে এবং এতে আমাদের নিরাপত্তা সঙ্কটাপন্ন হবে। এই অবস্থায় সরকার কোন ভাবে অ্যামেরিকার অস্ত্র সরবরাহ মেনে নিতে পারেনা – আমারিকা যা করছে তা বন্ধুসুলভ নয় এবং ভারতের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এই অবস্থায় ভারত সরকার কি সাহস করে বলবে যে ভারতের জনগণ অ্যামেরিকার অবন্ধুসুলভ কাজ মেনে নিতে পারছেনা এবং ভারত সরকার এটা ঠেকানোর জন্য যা খুশী করবে। আমি জানতে চাই তিনি কি এমন কিছু বলবেন কিনা?

তার বক্তব্যে তিনি আরও বলেছেন যে একথা সত্য যে অ্যামেরিকা পাকিস্তানে অস্ত্র সাপ্লাই দিচ্ছে – কিন্তু দয়া করে তিনি কি বলবেন এযাবৎ কত অস্ত্র দেয়া হয়েছে? এমনকি ২৫ মার্চের পরেও – যখন অলরেডি সাপ্লাই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ আমার কাছে কিছু তথ্য আছে —
জনাব চেয়ারম্যানঃ আপনি কয়েকটি প্রশ্ন করেছেন।

শ্রী চিত্তরঞ্জন বসু: … যে পাকিস্তান অ্যামেরিকার কাছ থেকে অস্ত্র অ মেরামত যন্ত্রাংশ কিনছে – মার্চ পর্যন্ত যা শিপিং করা হয়েছে তা বাদেও রিপোর্টে জানা যায় যে আমেরিকান এয়ারফোর্স পাকিস্তানের কাছে প্রায় ৪৮ মিলিয়ন সমমানের দ্রব্য কিনেছে এবং নেভিও আর্মস সাপ্লাই দিয়েছে। তিনি কি দয়া করে জানাবেন ২৫ মার্চ যখন আর্মি বাংলাদেশের ক্র্যাক ডাউন শুরু করেছে তার আগেই অ্যামেরিকা পাকিস্তানকে কত অস্ত্র দিয়েছে?

সরদার শরণ সিং: স্যার, আমি বলতে চাই যে এই হাউস সন্দিহান যে ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের পরের নিষেধাজ্ঞা থেকে শুরু করে অ্যামেরিকা পাকিস্তানকে কত অস্ত্র সরবরাহ করেছে এবং এর কোন ব্যাতিক্রম হয় নি। কিন্তু বাংলাদেশে মিলিটারি একশনের পর অ্যামেরিকা বলেছে যে তারা পাকিস্তানে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করেছে। কিন্তু যখন তা করা হল তা ঐ নিশ্চয়তাকে ভঙ্গ করল। তার মানে তারা যে অস্ত্র সরঞ্জাম পাঠাল তা আগে দেয়া নিশ্চয়তার বিপক্ষে যায়।

দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাবে আমি বলছি আমরা তাদের উত্তরে সন্তস্ট না। আমি শুধুমাত্র তারা যা বলেছে সেটাই এই হাউজে উত্থাপন করেছি।
এবং আমরা এটাও বলে যাচ্ছিনা যে সরকার তাদের বিবৃতিতে সন্তস্ট। আমরা বরং দৃঢ়ভাবে জানাতে চাই যে তারা যে বিবৃতি দিয়েছে সেটা রক্ষা করার দায়িত্ব তাদের।

এখন আমি ধরে নিলাম যে বিবৃতি পুরোপুরি সত্য। পুরোপুরি শব্দটা এই কারণে ব্যাবহার করলাম যে নিউ ইয়র্ক টাইমসে যে খবর ছাপা হয়েছে সে ব্যাপারে আমেরিকান কর্তৃপক্ষ এখন বলছে যে জাহাজে কোন প্লেন ছিলোনা। অর্থাৎ যার কথাই সত্য হোক না কেন ওইসব মিলিটারি সরঞ্জাম পাওয়া যাচ্ছেনা। অতএব আমি পুরোপুরি শব্দটা এই কারণে ব্যাবহার করেছি যে যদিও মিলিটারি সরঞ্জাম জাহাজে পাকিস্তানের উদ্যেশ্যে পাঠানো হয়েছে তথাপি প্রেস রিপোর্ট আর সরকারী মুখপাত্রে বিবৃতিতে পার্থক্য রয়েই গেল।

শ্রী চিত্তরঞ্জন বসু: স্যার, আসল প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেলনা যে এতে আমাদের সরকার মার্কিন সরকারের প্রতি প্রতিকূল নাকি বন্ধুসুলভ অবস্থান নিল। আমাদের সরকার একথা তাদের বলবে কিনা যে আমরা এধরনের কাজের সাথে একমত নই এবং আমরা আমাদের মত করে যে কোন ব্যাবস্থা নিতে পারি। এই প্রশ্নের উত্তর কিন্তু তিনি দিলেন না।

সরদার শরণ সিংঃ যেহেতু আমাদের ক্ষমতা আছে নিজেদের পছন্দমত কাজ করার তাহলে একথা কেন আমরা অযথা অ্যামেরিকা বা অন্য কোন সরকারকে জানাতে যাব? এই জটিলতা সৃষ্টির কি দরকার? কেন আমরা অন্য দেশকে জানাতে যাব যে আমরা আমাদের পছন্দ মত যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারি? এটা তো আমাদের নিজেদের ব্যাপার যে আমরা আমরা কি করতে চাইব বা চাইব না। কাজেই এধরনের কথায় আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের সম্পর্কে বিরূপ একটা মতভেদ সৃষ্টি হবে – আর তাছাড়া অ্যামেরিকা আমাদের অসন্তোষটির ব্যাপারটি নিশ্চই বুঝতে পেরেছে।

শ্রী এন জি গোরে (মহারাষ্ট্র): “স্যার, এখানে দুটি জিনিস বেরিয়ে আসল। একটি হল আমাদের অ্যামেরিকার পত্রিকার লোকজনকে ধন্যবাদ দেয়া উচিৎ কেননা তারা ধারাবাহিকভাবে তাদের নিজেদের সরকারের কার্যকলাপগুলো আমাদের প্রকাশ করছেন। স্যার সর্বশেষ খবর হল যে তারা প্রকাশ করেছে যে জাহাজগুলো করাচী যাচ্ছে। আমি জানতে চাইব আমাদের সরকারের এমন কোন সোর্স আছে কিনা যা দিয়ে আমরা জানতে পারব এধরনের কয়টি জাহাজ রওনা করেছে এবং পাকিস্তানে কি ধরণের অস্ত্র পাঠানো হচ্ছে। স্যার এই মাত্র মাননীয় মন্ত্রী জানালেন যে অ্যামেরিকার কর্তৃপক্ষ এধরনের কোন জাহাজের অস্তিত্ব পাচ্ছেন না। কিন্তু নিউ ইয়র্কের সংবাদদাতা জানিয়েছেন যে তা আছে। অতএব আমাদের এমন কোন সোর্স আছে কিনা যে আসলে বলতে পারবে যে আমেরিকান কর্তৃপক্ষ ঠিক বলছে নাকি পত্রিকার সংবাদদাতাই সঠিক। প্লেনগুলোকে যন্ত্রাংশ হিসেবে দেখানো যেতে পারে। কারণ যন্ত্রাংশগুলো করাচী আসার পরে আবার একত্রীকরণ (রিএসেম্বল) করে প্লেন তৈরি করে নেয়া যায়। এটাও সম্ভব।

আরেকটি জিনিস হল তারা তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছে – ইত্যাদি – ইত্যাদি। স্যার, মাননীয় মন্ত্রীর সফরের পরে একটি আশা ও সন্তোষটির অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু আমেরিকান সরকারের পদক্ষেপে এই আশার বেলুন চুপসে গেল।

আমরা বুঝতে পারলাম, অ্যামেরিকা আমাদের একদিকে আশ্বস্ত করছে অন্যদিকে আমাদের করছে প্রতারিত। অতএব স্যার, তারা যাই পাঠাক না কেন আমরা ‘অসন্তস্ট’ – শুধু এটুকু বলা যথেষ্ট না।

শ্রী অর্জুন অরোরা (উত্তরপ্রদেশ): আমেরিকা ভারতকে দিচ্ছে আশ্বস্ততার বানী আর পাকিস্তানকে দিচ্ছে অস্ত্র।

চেয়ারম্যান: প্লিজ, আমি আপনাকে কল করব।
শ্রী এন জি গোরে: সরকারের বলার সাহস আছে কিনা যে এসব অস্ত্র ….

চেয়ারম্যানরা: দয়া করে, আমাদের হাউসের সময় অপচয় করবেন না।
শ্রী অর্জুন অরোরা: এটাই হাউসের সময়।
শ্রী এন জি গোরে: …….. পাকিস্তান থেকে যা কিছুই বাংলাদেশের দিকে রওনা করবে আমাদের দায়িত্ব হল সেটাকে বন্ধ করা। আপনি কি দয়া করে বঙ্গোপসাগরে এবং দূরসমুদ্রে একটু দেখাশোনা করবেন যাতে করে এগুলো পৌঁছাতে না পারে? আপনি কি অ্যামেরিকাকে দেখাতে পারবেন যে ইয়াহিয়া সরকারের অস্ত্র আমরা পৌঁছাতে দেইনি?

শ্রী এস ডি মিশ্র (উত্তরপ্রদেশ): তাদের যদি সেই সাহস থাকত তাহলে অনেক আগেই তারা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিত। সেই ক্ষমতা তাদের নাই।
সরদার শরণ সিং: আপনি জানতে চেয়েছিলেন যে আমাদের এধরনের কোন আলাদা সোর্স আছে কিনা যারা খোঁজ নিতে পারবে যে আমেরিকান সরকারী বিবৃতি সঠিক নাকি পত্রিকার নিউজ – এর উত্তরে বলব আমাদের তেমন কোন সোর্স নাই কারণ …

শ্রী ভূপেশ গুপ্ত (পশ্চিম বঙ্গ): সেখানে আপনার দূতাবাস আছে। তারা মনে হয় কিছুই জানেনা। তাহলে আপনি কেন এসব এমব্যাসির পেছনে টাকা নষ্ট করছেন?

শ্রী উ পি চট্টোপাধ্যায় (পশ্চিম বঙ্গ): তারা শুধু জানে কীভাবে নাচতে হয়।
সরদার শরণ সিং: সসেটা আলাদা ব্যাপার। যেহেতু আলাদা কোন স্বাধীন সোর্স নাই – আমি বলতে পারিনা যে আছে। যে কোন রাষ্ট্রের জন্যই এই তথ্য বেড় করা মুশকিল যে ওইসব জাহাজে কি আছে। এটা আসলে সম্ভব না।

এখন, স্যার, অন্য প্রশ্ন সম্পর্কে, আমি তাঁর পরামর্শের সাথে একমত ….
শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: আপনার রাষ্ট্রদূত ওখানে কি করছে?
সরদার শরণ সিং: তারা স্বাধীনভাবে এই খবর বেড় করার জন্য কী করতে পারে বলে আপনার মনে হয়? এটা রাষ্ট্রদূতের কাজ নয়।

শ্রী একটি পি চট্টোপাধ্যায়: তারা শুধুমাত্র ককটেল এবং নাচে তাদের সময় ব্যয় করে।
শ্রী অর্জুন অরোরাঃ তিনি ভারত সরকারকে রুপীর মূল্যহ্রাস করতে উপদেশ দিচ্ছেন।
সরদার শরণ সিংঃ কোন গুপ্তচরবৃত্তি করা তাদের কাজ নয়।

শ্রী রাজ নারায়নঃ মহোদয়, একটা প্রশ্ন আছে। আমি শান্তভাবে বসে আছি।
সরদার শরণ সিং: শুধুমাত্র অন্য পয়েন্টে …..
শ্রী রাজ নারায়ণঃ মহোদয়, আমি বৈধতার প্রশ্ন উত্থাপন করেছি, ব্যাবস্থার প্রশ্ন আছে।
সভাপতিঃ কী ব্যাবস্থার প্রশ্ন?
শ্রী রাজনারায়ণঃ প্রথমে তিনি বসুন। যতক্ষণ মন্ত্রী বসবেন না ততক্ষণ আমি বলব না।
সর্দার শরণ সিংঃ আমি কি তাকে বসতে বলতে পারি?

শ্রী রাজ নারায়নঃ মহোদয়, দেখুন মন্ত্রী মহোদয় জবাব দিতে অর্ধেক বললেন, কেউ শুনলেন কি শুনলেন না, তিনি বললেন, অনুসন্ধান করে খবর দেয়া আমাদের বিদেশী দূতাবাসের কাজ নয়।
মহোদয়, তিনি বললেন, এটা আমাদের বিদেশী দূতাবাসের কাজ নয়। তাহলে বিদেশী দিতাবাসের কাজ কি?
জনাব চেয়ারম্যানঃ এটা পয়েন্ট অব অর্ডার নয়।
শ্রী রাজ নারায়নঃ এর চেয়ে বড় বৈধতার প্রশ্ন আর কিছু নেই। মন্ত্রী এরূপ বলতে পারেন না। তবে বিদেশী দূতাবাস কি জন্য? আপনি দয়া করে মন্ত্রীকে বলুন তিনি এই শব্দসমূহ প্রত্যাহার করুন। আমরা জানি বিদেশী দূতাবাসের কি কি কাজ করতে হয়। শুধু নিমন্ত্রণ করা, খাওয়া ও নৃত্য করা তাদের কাজ নয়।

শ্রী ভুপেশ গুপ্তঃ এটা গুরুত্তপূর্ন কারণ সেখানে আমাদের এমব্যাসির পেছনে অনেক অর্থ ব্যয় হয়। আমরা তাদের কাছ থেকে পত্র পাই যে সেখানে কি কি হচ্ছে।
শ্রী রাজ নারায়নঃ আমাদের কি শি শুনতে হবে যে এটি বিদেশী দূতাবাসের কাজ নয়? আমি জানি কোন মন্ত্রী কি কাজ করেন। ননসেন্স।

শ্রী এ জি কুল্কার্নি(মহারাষ্ট্র): পয়েন্ট অব অর্ডারে আমাদের একটি বৈধ পয়েন্ট অব অর্ডার আছে। আমাদের অবশ্যই শুনতে হবে। আপনি কিভাবে এটাকে এভাবে শেষ করলেন? বিরোধী দল যা চাচ্ছে তা অবৈধ নয়। মন্ত্রী বলেছেন যে বিদেশী দূতাবাস গোয়েন্দাগিরি করে না। তিনি বলেন, আমাদের স্বাধীন কোন সোর্স নাই। দেশের স্বার্থে দরকারি কোন একটি বিষয় খুঁজে বেড় করা কি একটি দূতাবাসের বৈধ দায়িত্ব নয়?

স্যার আপনি কিভাবে মন্ত্রীকে এধরনের একটি বিবৃতি দেবার পরে (তার কোন সোর্স নাই) চালিয়ে যেতে বলেন? এটা বিরোধী দলের ন্যায্য চাওয়া এবং আমি আরও মনে করি সরকারের উচিৎ আমাদের গোয়েন্দা বাহিনীর থেকে তথ্য বেড় করে বিবৃতি দেয়া। আপনি কীভাবে মন্ত্রীকে এমন একটি মন্তব্য করার পরে চালিয়ে যেতে বলছেন?

জনাব চেয়ারম্যান: মন্ত্রী মহোদয়, দয়া করে বসুন।
সরদার শরণ সিং: আমি মনে করি কিছু গড়বড় আছে যা আমি পরিষ্কার করতে চাই।
শ্রী আকবর আলি খান (অন্ধ্র প্রদেশ): স্যার, আমি বলতে চাই যদি কোন এমব্যাসিকে এটা করতেও বলা হয় আমার মনে হয় সেসব তথ্য এই হাউজে প্রকাশ করা ঠিক নয়।

কিছু সন্মানিত সদস্য: না, না।
(বাধা)
শ্রী জি কুলকার্নি: আমাদের সন্তস্ট করা সরকারের দায়িত্ব। আপনি কীভাবে এরকমটা বলেন? জাহাজ ভরে অস্ত্র আসছে আর আপনি বলছেন তার এই তথ্য দেয়া উচিৎ নয়?

(বাধা)
শ্রী সৈয়দ আহমদ: (মধ্য প্রদেশ): স্যার, আমি কি একটা কথা বলতে পারি?
শ্রী ভূপেশ গুপ্তঃ আমরা কোন রিপোর্ট পাচ্ছিনা কারণ জনাব এল কে ঝা, আমাদের রাষ্ট্রদূত, একজন প্রো-আমেরিকান …..
(বাধা)
শ্রী সৈয়দ আহমদ: স্যার, যদি নিউ ইয়র্ক টাইমস অস্ত্রের চালান সম্পর্কে এই তথ্য প্রকাশ না করত, মন্ত্রীর কি এটা জানার কোন উপায় ছিল?

চেয়ারম্যান: জনাব মন্ত্রী, দয়া করে বসুন।
শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: স্যার, আপনার রায় কি?
চেয়ারম্যান: দয়া করে মন্ত্রীকে বলতে দিন।
শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: স্যার, আপনি উত্তেজিত হচ্ছেন কেন? আমাদের দূতাবাসের কি করছে এটি খুবই প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন। (বাধা) যদি আমরা কোন তথ্য না পাই তাহলে বুঝতে হবে আমাদের এম্বাসেডর একজন অ্যামেরিকার তাবেদার। তিনি সেখানে জগাখিচুড়ি পাকাচ্ছেন।
(বাধা)
শ্রী জি কুলকার্নি: স্যার, মন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করা আপনার কর্তব্য।
জনাব চেয়ারম্যান: আমি কি তাকে কথা বলতে বলছি না?
শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: রাষ্ট্রদূতকে ডাকা উচিৎ।

সরদার শরণ সিং: স্যার, আমি এই উত্তেজনার কারণ বুঝতে পারছিনা। প্রশ্নটা সহজ। আপনি যদি রেকর্ড চেক করেন তাহলে দেখবেন যে আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছে যে অস্ত্র চালানের ব্যাপারে আমেরিকান কর্তৃপক্ষ আর পত্রিকার খবরের মধ্যে কোনটা সঠিক তা জানার আমার কোন সোর্স আছে কিনা। পত্রিকার বলেছে জাহাজে প্লেন ছিল আর তাদের সরকার মুখপাত্র বলছে নাই। আর আমি বলছি জাহাজ যখন মালামাল ভর্তি করে গভীর সমুদ্রে চলমান অবস্থায়া আছে সেই অবস্থায় আমার কোন স্বাধীন সোর্স নাই যা দিয়ে আমি যাচাই করতে পারি আর জানাতে পারি যে নিউ ইয়র্ক টাইমস সত্য বলেছে …

শ্রী সি ডি পান্ডে (উত্তরপ্রদেশ): পয়েন্ট অব অর্ডারের উপর।
সরদার শরণ সিংঃ …. বা অন্য প্রতিবেদনটি সঠিক।
শ্রী অর্জুন অরোরা: পয়েন্ট অব অর্ডারের উপর।
সরদার শরণ সিং: আপনি কি আমাকে শেষ করতে দেবেন? এই অন্যায্য। আমি একমত না।
জনাব চেয়ারম্যান: জনাব অরোরা, মন্ত্রীকে শেষ করতে দিন। এর পরে যদি কিছু থাকে আমি আপনারটা শুনব।

সরদার শরণ সিং: তারপর, একটি প্রশ্ন কিরা হচ্ছে আমাদের রাষ্ট্রদূতের কি করার অধিকার আছে আর কি করার নেই সেই ব্যাপারে। কিছু আন্তর্জাতিক নিয়ম কানুন আছে। আমি আমাদের কমিউনিস্ট নেতা যে বলেছেন যে আমাদের রাষ্ট্রদূত আমেরিকার তাবেদার – এই কথাটি শক্তভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।
শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: অবশ্যই।
সরদার শরণ সিং: একেবারে ভুল এবং অযৌক্তিক।
শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: আমরা জানি এটাই সত্য।
(বাধা)
সরদার শরণ সিং: আমাদের রাষ্ট্রদূতকে রক্ষা করা আমার কর্তব্য। মন্তব্য একেবারে অহেতুক এবং আমি তা গ্রহণ করছিনা।

শ্রী সি ডি পান্ডে: স্যার, পয়েন্ট অব অর্ডার।
জনাব চেয়ারম্যান: তাকে শেষ করতে দিন। আমি জনাব অর্জুন অরোরাকেও বসতে বলেছি।

শ্রী সি ডি পান্ডে: না, না।
সরদার শরণ সিং: আমি শেষ করিনি। আমি একমত না।
(বাধা)
শ্রী সি ডি পান্ডে: স্যার, পয়েন্ট অব অর্ডার।
জনাব চেয়ারম্যান: পয়েন্ট অব অর্ডার নিয়মের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
শ্রী. সি ডি পান্ডে: হ্যাঁ।
জনাব চেয়ারম্যান: কি পদ্ধতির সাথে জড়িত?
শ্রী সি ডি পান্ডে: স্যার, মন্ত্রী মহোদয় এমন মন্তব্য করেছেন যা গোয়েন্দা বিভাগের ভিত্তিকে দুর্বল হিসেবে প্রকাশ করে। তিনি বলেছেন, এসব জানার জন্য কোনো স্বাধীন সোর্স নেই।
জনাব চেয়ারম্যান: তিনি সেটা ব্যাখ্যা করেছেন।

(বাধা)
শ্রী সি ডি পান্ডে: আমরা দূতাবাসে কোটি কোটি টাকা খরচ করছি এবং তিনি বলছেন যে সরকারের জানার কোন সোর্স নেই…
জনাব চেয়ারম্যান এটা পয়েন্ট অব অর্ডার না। আমি এটা অগ্রাহ্য করছি।
সরদার শরণ সিং: দূতাবাসের কাজ সম্পর্কে আমাদের এই প্রশ্নটি শান্তভাবে বিবেচনা করতে হবে…..
শ্রী সি ডি পান্ডে: আমাদের গোপন সূত্র আছে। আমরা তাদের পেছনে অনেক টাকা ব্যয় করছি এবং মন্ত্রী বলছেন তার তথ্য জানার কোন সোর্স নাই।
জনাব চেয়ারম্যান: এতে পয়েন্ট অব অর্ডার নেই।
শ্রী এম কে মোহতা (রাজস্থান): স্যার, পয়েন্ট অব অর্ডারের উপর …………
সরদার দঃপঃ Aran সিং: সু- প্রতিষ্ঠিত নিয়মাবলী অনুসারে …
শ্রী সি ডি পান্ডে: স্যার, মন্ত্রীর একথা বলার কোন অধিকার নেই যে তার তথ্য জানার কোন উৎস নেই।
শ্রী এম কে মোহতা: পয়েন্ট অব অর্ডারের উপর।
জনাব চেয়ারম্যান: আমি পয়েন্ট অব অর্ডার প্রত্যাখ্যান করছি।
শ্রী এম কে মোহতা: স্যার, আমি এখনো আপনার সামনে পয়েন্ট অব অর্ডার পেশ করিনি।
জনাব চেয়ারম্যান: আমিও আপনাকে ডাকিনি। (বাধা) আপনারা সবাই যদি এই অপ্রয়োজনীয় পয়েন্ট অব অর্ডার নিয়ে কথা বলতে থাকেন তাহলে আগানো যাবেনা। দয়া করে বসুন, জনাব মোহতা।
শ্রী এম কে মোহতা: আমি এখনো জমা দেইনি। আপনি কীভাবে না বলেন?

জনাব চেয়ারম্যান: তাহলে আমাকে সবাইকে ডাকতে হবে। এসবে কোন পয়েন্ট অব অর্ডার নাই।

শ্রী এম কে মোহতা: আদেশের আমার পয়েন্ট অব অর্ডার হল –

জনাব চেয়ারম্যান: না, জনাব মোহতা, দয়া করে বসুন।
শ্রী এম কে মোহতা: স্যার, আমি কি পয়েন্ট অব অর্ডারের জন্য এনটাইটেলড না? এটা কি?
জনাব চেয়ারম্যান: দয়া করে বসুন।
শ্রী এম কে মোহতা: আদেশের আমার পয়েন্ট অব অর্ডার হল। মাননীয় মন্ত্রী এমন কিছু বলছেন যা তিনি করে থাকেন।

জনাব চেয়ারম্যান: না না জনাব মোহতা। এটা পয়েন্ট অব অর্ডার না। বসুন প্লিজ।
শ্রী এম কে মোহতা: আমাকে পেশ করতে দিন। হাউজ এটা জানতে আগ্রহী। আমরা জানতে চাই ভারত সরকারের কাছে কি তথ্য আছে।
জনাব চেয়ারম্যানঃ এটি পয়েন্ট অব অর্ডার নয়।

শ্রী এম কে মোহতা: নিউ ইয়র্ক টাইমস কি ছেপেছে তা জেনে আমাদের লাভ কি? হাউজ সেকেন্ড হ্যান্ড তথ্যের ব্যাপারে আগ্রহী নয়।
শ্রী অর্জুন অরোরা: অন্তত এই হাউসে জনাব মোহতা এবং আমি সমান সমান। এর বাইরে আমি এবং জনাব মোহতা আয়কর কর্তৃপক্ষের চোখে অসমান। স্যার, মন্ত্রী হাউসকে বিভ্রান্ত করছেন কারণ তিনি বলেছেন জাহাজ দূরসমুদ্রে আছে – অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর চার্চ উল্লেখ করেছেন যে, জাহাজকে অন্যত্র কল করা হয়েছে – বন্দর কর্তৃপক্ষ বলেছে জাহাজগুলোকে অন্য কোন বন্দরে নিয়ে অস্ত্র খালাস করা যেতে পারে – এমনকি কানাডার মন্ট্রিলে কল করা যেতে পারে। আর মন্ত্রী বলছেন জাহাজ গভীর সমুদ্রে -তাই কিছুই করা যাবেনা। তিনি কি হাউজকে বিভ্রান্ত করার জন্য নিযুক্ত?

সরদার শরণ সিং: যদি তারা অন্য কোনো পোর্টেও আসে তাদের দূরসমুদ্র পাড়ি দিয়েই আসতে হবে। আমি যা বলতে চেয়েছি যে সেগুলো গভীর যমুদ্রে আছে এবং কোন বৈদ্যুতিক বা অন্য কিছু তার সাথে যুক্ত করা যাবে না যাতে করে আমরা খুঁজে দেখতে পারি সেই জাহাজের বাক্সতে কি রাখা আছে।
শ্রী নিড়েন ঘোষ (পশ্চিমবঙ্গ)ঃ এই রিপোর্ট প্রকাশের সময় জাহাজ ঘাঁটে বাঁধা ছিল। আপনি কীভাবে বলেন যে সেগুলি গভীর সমুদ্রে আছে? সেগুলো এখনো পোতাশ্রয়ে আছে।

সরদার শরণ সিং: সেগুলো যদি তখন পোতাশ্রয়েও থাকে তবুও এখন সেগুলো গভীর সমুদ্রে থাকার কথা – কারণ পোতাশ্রয়ে ৩ দিনের বেশী রাখা হয়না। আমার মনে হয় এখানে পদ্ধতি আর যন্ত্রের বিষয় আছে। আমরা আসল বিষয় থেকে দুরে সরে যাচ্ছি। আমি হাউজের একজন সদস্য। এবং আমরা অ্যামেরিকার এই আইন লঙ্ঘনের বিষয়ে প্রতিবাদ করতে যাচ্ছি।

শ্রী এ জি কুলকার্নি: সেটা কি?
সরদার শরণ সিংঃ এটা এমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভেব সিদ্ধান্ত নেব। এটাও এক ধরণের একশন। কিন্তু যদি আমরা আমাদের শক্তি অযথা নষ্ট করি আর কিছু শব্দ নিয়ে পরে থাকি তাহলে বলতেই হয় যে আমরা মূল বিষয় থেকে দুরে সরে যাচ্ছি। মূল বিষয় হল সবাই এক হয়ে এই কাজের বিরোধিতা প্রকাশ করতে হবে। এটাই আসল পয়েন্ট।

শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: আপনার ভীরু নেতৃত্বে।

সরদার শরণ সিং: তারপর শেষ প্রশ্ন হল যে ভারত এই জাহাজগুলোকে আটকাবে কিনা। আমি এই ব্যাপারে কিছু বলতে চাইনা।

শ্রী এন জি গোরে: আমি শুধু একটা জিনিস জানতে চাই …
জনাব চেয়ারম্যান: কোন উত্তর দেয়া কি বাকি আছে?
শ্রী এন জি গোরে: আমার মূল পয়েন্ট মিস হয়েছে। ধরুন অ্যামেরিকাকে জাহাজ পাঠানো বন্ধ করতে বলার পরিস্থিতি আপনার হলনা – কিন্তু আপনি কি অন্তত এই অধিকার সংরক্ষণ করেন যে সেগুলোকে বাংলাদেশে পৌঁছাতে দেবেন না?

সরদার শরণ সিং: আমি ইতিমধ্যে বলেছি যে আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে বলেছি জাহাজ মাঝপথে প্রত্যাহার করতে এবং পাকিস্তানে এই সরবরাহ না পাঠাতে।

শ্রী এন জি গোরে: তারা যদি তা না করে তাহলে আপনি এটা করবেন কিনা? স্যার, আপনি প্রতিবাদ করবেন নিশ্চই…
জনাব চেয়ারম্যান: শ্রী কৃষাণ কান্ত।
শ্রী কৃষাণ কান্ত: (হরিয়ানা): স্যার এটা খুবই একটা মজার পরিস্থিতি। এখানে গতকাল সেক্রেটারী অব স্টেট এর বিশেষ সহকারী এসেছিলেন। তিনি বলেছেন দুইটি জাহাজের যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তা ভুল। এবং স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলেছে এতে কিছু আছে। এভাবেই আমেরিকান সরকার কাজ করে। আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উপর নির্ভর করতে পারিনা কারণ সিনেটর চার্চ বলছেন এক রকম আর পরে হচ্ছে অন্য রকম। সিনেটর কেনেডি বলেছেন যে সরকার সন্দেহজনকভাবে দুই রকম কথা বলছেন। (বাধা)। স্যার, নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে যে এই সরকার আমেরিকার মানুষের বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে। আমেরিকার গণমাধ্যম এবং আমেরিকান সাংবাদিকরা পেন্টাগনের সাথে নেই। যে পেন্টাগন দু রকম কথা বলছে আর কাজ করছে তাদেরকে কি ভারতের বিশ্বাস করা উচিৎ? আপনি কি তাদের স্পষ্ট করে বলেছেন? তারা পাকিস্তানকে যে অস্ত্র দিচ্ছে তা আমাদের বিরুদ্ধে ব্যাবহার করা হচ্ছে। তারা চিনের বন্ধু। এগুলো ভারতের বিরুদ্ধে ব্যাবহার করার কথা। আপনি কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছেন যে যদি কোনো অস্ত্র সহায়তা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অথবা CENTO এবং SEATO এর মাধ্যমে পাঠানো হয় তবে তা শুধু বাংলাদেশ পরিস্থিতি খারাপ করবে তা নয় বরং ভারতের বিরুদ্ধেও ব্যাবহ্রিত হবে। তাই এই অস্ত্র সহায়তা বন্ধ করা উচিৎ। অতএব এধরনের অস্ত্র সহায়তা ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং এই ব্যাপারে আমরা যে কোন পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। আমি এটাই জানাতে চাই।

আমেরিকান সরকার যা কাজ করেছে তা ইচ্ছাকৃত কারণ তারা এশিয়ায় ক্ষমতার ভারসাম্য চায় না – এবং তারা চায় না যে ভারত এগিয়ে যাক। তারা এশিয়াতে ঘাঁটি চায়। তাই তারা এসব করছে। আমি জানতে চাই ভারত সরকার এটা স্বীকার করেন কিনা যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানে যে অস্ত্র সাহায্য দিচ্ছে তা ইচ্ছাকৃতভাবে দিচ্ছে – এটা পেন্টাগনের আগ্রহে যা মোটেই গণতন্ত্র, স্বাধীনতা বা অন্য কিছুর জন্য নয়। শ্রী সদ্রুদ্দিন একই ভাষায় কথা বলেছেন। অ্যামেরিকাও একই ভাষায় কথা বলেছে। তাই, এটা পাকিস্তান, জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও সব পশ্চিমা শক্তির ষড়যন্ত্র। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমি একটি জিনিস জানতে চাই। এই অস্ত্র সহায়তা কখন বাংলাদেশ যাচ্ছে? কেন আমাদের সরকার বাংলাদেশের চারপাশে নৌ ও বিমান অবরোধ আরোপ করছেনা যাতে করে এগুলো সেখানে পৌছাতে না পারে? আমি সরকারের কাছে জানতে চাই কেন তারা এখন পর্যন্ত এটা করছেনা? মন্ত্রী বলেন, তারা এটা বিবেচনা করবেন। আমি সরকারের কাছ থেকে কি এ প্রসঙ্গে আরেকটি জিনিস জানতে পারি? ২৫ মার্চ বাংলাদেশ মাত্র দুটি ডিভিশন ছিল। এখন সেখানে পাঁচটি ডিভিশন আছে। কিভাবে তিনটি বিভাগ পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে পৌছাল?

সেখানে কি কোন বড় শক্তি আছে যারা এই সৈন্য এবং অস্ত্র বহনে পাকিস্তানকে সাহায্য করেছে? তাদের কাছে কি কোন তথ্য আছে? যদি না থাকে তাহলে আমাদের জানান সেগুলো কীভাবে গেল? আরও শিপমেন্ট যাতে না হয় তার জন্য তারা কি ব্যাবস্থা নেয়া হচ্ছে?

জনাব চেয়ারম্যান: ঠিক আছে। হ্যাঁ জনাব মন্ত্রী। (বাধা)। দয়া করে অপেক্ষা করুন। আমি সবাই অনুমতি দেব।

সরদার শরণ সিং: স্যার, প্রশ্ন ছিল পাকিস্তান কে অস্ত্র সাহায্য দেয়া নিয়ে আমাদের মনোভাব স্পষ্টভাবে এবং পরিষ্কারভাবে মার্কিন সরকারের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে কিনা। আমার উত্তর হ্যাঁ। আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি যে পাকিস্তানে কোনো ধরণের অস্ত্র সাহায্যে তাদের সামরিক শক্তি বাড়াবে এবং পাকিস্তান নিজেই বলে যে ভারত তাদের শত্রু – তাই তাদেরকে কোন সাহায্য করা মানে সরাসরি আমাদের বিরোধিতা করা। কারণ এই অস্ত্র সরাসরি আমাদের বিরুদ্ধে ব্যাবহার করা হবে। তাই আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে কোন সন্দেহের মধ্যে রাখিনি। শুধু তাই নয় স্যার, বাংলাদেশের নৃশংসতার পরিস্থিতি এখন যে অবস্থায় আছে এসবের পরে সেখানকার মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম আরও প্রলম্বিত হবে। তাই স্যার, আমরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি মার্কিন সরকারকে জানিয়েছি।

শ্রী জোয়াচিম আল্ভা (মহারাষ্ট্র): স্যার, ১৯৬৫ সালে, মার্কিনরা পাকিস্তানে কোনো অস্ত্র চালান করেনি। স্যার এটা গুরুত্তপূর্ন কথা। ১৯৬৫ সালে অ্যামেরিকা পাকিস্তানে অস্ত্র চালান বন্ধ রেখেছে।

সরদার শরণ সিং: তারপর, স্যার, সন্মানিত সদস্য যে প্রশ্ন দুটি করেছেন যে আমরা পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানে চালান বন্ধ করার জন্য নৌ ও আকাশপথ অবরোধ করব কিনা। আমি মনে করি এর সাথে অ্যামেরিকার পাকিস্তানে অস্ত্র সাহায্য পাঠানোর কোন সমপর্ক নাই। এটা একটা সাধারণ প্রশ্ন।

(বাধা)
শ্রী কৃষাণ কান্ত: স্যার, পয়েন্ট অব অর্ডার।
(বাধা)
সরদার শরণ সিং: স্যার, এটি একটি সাধারণ প্রশ্ন … (বাধা) …. স্যার, এই সাধারণ প্রশ্নের উত্তর এখন দিতে চাই না।

শ্রী কৃষাণ কান্ত: স্যার, পয়েন্ট অব অর্ডার। “নিউ ইয়র্ক টাইমস” প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি জাহাজ ৮ মে যাত্রা শুরু করে এবং গতকাল করাচিতে পৌঁছায়। ঐ জাহাজটি অস্ত্র বোঝাই ছিল এবং বাংলাদেশ যাচ্ছে। এটি খুবই প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন।

জনাব চেয়ারম্যান: তিনি আপনার প্রশ্নে যাচ্ছিলেন যা আপনি করলেন….
(বাধা)
শ্রী কৃষাণ কান্ত: হ্যাঁ, স্যার।
জনাব চেয়ারম্যান:………… এসব সেনাসদস্যকে পরিবহন ………
সর্দার শরণ সিংঃ পশ্চিম থেকে পূর্ব পাকিস্তানে
জনাব চেয়ারম্যান: পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানে নেয়া হয়েছে কি হয়নি।
(বাধা)
শ্রী কৃষাণ কান্ত: স্যার, তার আগে আমি অন্য একটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছি। গতকাল যে চালান পাকিস্তান পৌঁছেছে তা বাংলাদেশ পাঠাতে যাচ্ছে। সুতরাং, স্যার, মাননীয় মন্ত্রী প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন না। এর আগে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সৈন্য ও অস্ত্র বাংলাদেশে গেছে। কীভাবে গেল? তার কাছে কি কোন তথ্য আছে যে কোন বড় শক্তি তাদের সাহায্য করেছে?

জনাব চেয়ারম্যান: না, তা আসে না।
শ্রী কৃষাণ কান্ত: স্যার, এটি খুব প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন।
(বাধা)
জনাব চেয়ারম্যান: না।
শ্রী কৃষাণ কান্ত: স্যার, পররাষ্ট্র মন্ত্রীর জানা উচিত।
(বাধা)
জনাব চেয়ারম্যান: হ্যাঁ, জনাব মন্ত্রী।
সরদার শরণ সিং: প্রশ্ন উঠেছে বড় কোন শক্তি পাকিস্তানকে বাংলাদেশের সৈন্য ও অস্ত্র বহনে সাহায্য করছে কিনা – আমার জানা মতে এরকম কেউ তা করছেনা।
(বাধা)

শ্রী শি ডি পাণ্ডে: এমনকি চীনও না?
জনাব চেয়ারম্যান: তিনি এভাবে উত্তর দিতে পারেন না। জনাব পান্ডে, আপনি আপনার সীটে বসুন।
শ্রী এ ডি মনি: স্যার, উনি এখানে বসেই আছেন।
শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: স্যার, যদি এমন হয় যে পাকিস্তানকে অস্ত্র দিয়ে ভারতের সাথে যুদ্ধ লাগানোর কোন পরিকল্পনা অ্যামেরিকার নেই তবে আমি জানিনা তাদের পরিকল্পনা আসলে কি।
জনাব চেয়ারম্যান: দয়া করে বসুন।
শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: এখনো তিনি বলেছেন যে কোন বিশ্বশক্তি সাহায্য করছেনা।
সরদার শরণ সিং: এটা একটা আলাদা বিষয়। যে প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করা হয়েছিল (বাধা) …. যে প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল।

জনাব চেয়ারম্যান: দয়া করে বসুন, জনাব ভূপেশ গুপ্ত।
সরদার শরণ সিং: প্রশ্নটি ছিল অস্ত্র ও লোকবল পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানে আনার ব্যাপারে কোন বিশ্বশক্তি সাহায্য করছে কিনা।

আমি চীন সম্পর্কে বলতে পারব না। চীনের সব রকম সহায়তায় ও সরঞ্জাম দিচ্ছে। কিন্তু পরিবহনের ক্ষেত্রে ততোটা নয়। তবে সন্দেহ নেই যে চিন সব রকমের সরঞ্জাম দিচ্ছে…….
(বাধা)
জনাব চেয়ারম্যান: জনাব পান্ডে, আপনি মন্ত্রী না। মন্ত্রীকে উত্তর দিতে দিন। ………
(বাধা)
সরদার শরণ সিং: এটা শেষ প্রশ্নের উত্তর।

শ্রী রাজ নারায়নঃ আমাকে আবার বৈধতার প্রশ্ন তুলতে হচ্ছে। আপনি এখানে রুলিং দিয়েছেন আর আমার প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার একথা মেনে নিয়েছেন যে এখন থেকে ইস্ট পাকিস্তান শব্দটি ব্যাবহার করা হবেনা শুধু বাংলাদেশ শব্দটি ব্যাবহ্রিত হবে কিন্তু মন্ত্রী মহোদয় বারবার ইস্ট পাকিস্তান ইস্ট পাকিস্তান বলছেন। একবার যখন বললেন আমি ভাবলাম অসতর্কতাবশত বলে ফেলেছেন কিন্তু আমার মনে হচ্ছে সরকার প্রথমে যে অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন তা থেকে পেছনে সরে যাচ্ছেন। আপনি দয়া করে এব্যাপারে স্পষ্ট ধারনা দিন। এই সংসদে একথা অনুমোদিত হয়ে গেছে যে ‘ইস্ট পাকিস্তান’ ও ইস্ট বাংলা শব্দ দুটি আর ব্যাবহার করা হবেনা, তদস্থলে ‘বাংলাদেশ’ বলতে হবে। এর পর ও মন্ত্রী ‘ইস্ট পাকিস্তান’ শব্দটি কেন ব্যাবহার করছেন?
সর্দার শরণ সিংঃ আমার উত্তর দেবার কিছু বাকি নেই। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এইটাই ব্যাবহার করছে।
(বাধা)
শ্রী রাজ নারায়নঃ মহোদয়, আমি একটি প্রশ্ন করেছিলাম। মন্ত্রী তার কি জবাব দিয়েছেন আমি শুনিনি। আমি জানতে চাই সরকারের সঠিক মনোভাব কি? তিনি বাংলাদেশে বিশ্বাসী না ইস্ট পাকিস্তানে? সরকার সোজা উত্তর দেবেন। এটা কৌতুক নাকি। আমি জিজ্ঞেস করলে তার কুকীর্তি ফাঁস করে দেব।
সভাপতিঃ এই স্টেটমেন্ট তিনি তো বাংলাদেশেই লিখেছেন।
শ্রী রাজ নারায়নঃ স্টেটমেন্টে যা লিখা আছে তাই বলুন, যা বলবেন তাই লিখবেন, যা লিখবেন তাই বলবেন।
সভাপতিঃ আপনি বসে পরুন।
শ্রী রাজনারায়ণ তাহলে আমি বুঝব যে আপনি মন্ত্রীকে আদেশ করছেন যা লিখে হয়েছে তাই বলতে। দেখুন, এসব শব্দের জটিলতায় অনেক পড়েছিলাম।

শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: স্যার আমার একটি সাবমিশন আছে। দয়া করে আপনি রুলিং দেন যে ‘ইস্ট পাকিস্তান’ শব্দটি যেখানেই ব্যাবহার করা হবে সেটাকে কেটে দিতে হবে অথবা সেই শব্দটি প্রসিডিং এ ব্যাবহার করা যাবেনা। একটি স্ট্যান্ডিং রুলিং থাকা উচিৎ। যখনি ‘ইস্ট পাকিস্তান’ বলা হবে সেটাকে ‘বাংলাদেশ’ হিসেবে ধরে নিতে হবে।

শ্রী রাজনারায়ণঃ সরকারের নির্লজ্জতা দেখুন, এটা নাকি ইন্টারন্যাশনাল এক্সপ্রেশনে বাংলাদেশ কি অন্তর্লীন হবে।
সভাপতিঃ আচ্ছা, হয়ে গেছে।
শ্রী রাজনারায়ণঃ আমি আপনাকে অনুরোধ করছি আপনি তাকে বলুন। আপনি সত্য বলেছেন যে স্টেটমেন্টে বাংলাদেশ লিখা রয়েছে। আমি মনে করেছিলাম মন্ত্রী অজ্ঞতাবশত বা অভ্যাসবশত তা বলছেন কিন্তু তিনি স্বীকার করলেন যে এটি ইন্টারন্যাশনাল এক্সপ্রেশন। আমার জানা নেই। রাশিয়া, অ্যামেরিকা, ব্রিটেন এই তিন শক্তির ষড়যন্ত্রে ভারত-পাকিস্তানের সৃষ্টি। আমাদের মগজে একথা পরিষ্কার আমি সর্দার শরণ সিংহ এর মত বিদেশে দাওয়াত খেয়ে বেড়াই না আমি আমার নীতি বদলাতে পারি না। তিনি বিদেশে গিয়ে কি কি করলেন প্রকাশ করব। আমার আবেদন এই যে, যেমন ভুপেশ গুপ্ত মহাশয় বলেছেন, আপনি আদেশ করুন, যেখানে যেখানে ‘ইস্ট পাকিস্তান’ ব্যাবহার করা হয়েছে তা কার্য বিবরণী হতে বাদ যাবে এবং তদস্থলে ‘বাংলাদেশ’ শব্দটি আসবে যা বিবৃতিতে লিখা আছে।

শ্রী কৃষাণ কান্ত: এটা আমার পয়েন্ট অব অর্ডার ছিল। মাননীয় মন্ত্রী তার উত্তরে বলেছেন তারা আমেরিকান সরকারকে জাহাজ যাতে পাকিস্তান পৌঁছাতে না পারে সেটা বলেছেন। ধরে নিন যে অ্যামেরিকা তাদের কথা রাখল না – তখন সরকার সেইসব অস্ত্র যাতে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানে না আসতে পারে সেই ব্যাপারে কোন ব্যাবস্থা নেবেন কিনা – এটাই ছিল আমার সহজ প্রশ্ন।

সরদার শরণ সিং: ঐ পরিস্থিতিতে আমরা কি করব সেটা আমি এখন বলতে চাইনা। এই মুহুর্তে আমি কিছুই বলতে চাইনা। আমি অলরেডি এর উত্তর দিয়েছি।

জনাব চেয়ারম্যান: আপনি কি “বাংলাদেশ” শব্দের ব্যবহার সম্পর্কে কিছু বলবেন?
সরদার শরণ সিং: আমি জানি না, স্যার, যদি আমার অনুপস্থিতিতে অন্য কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে কিনা। কিত্নু আমি যখন গত এক পক্ষকাল আগে সেশনে এসেছিলাম তখন পর্যন্ত আমি এসংক্রান্ত কিছুই জানিনা। এবং আমি রেকর্ড বেড় করে দেখে নেব যে এটা কত শক্তভাবে করা হয়েছে। এবং আমি একটা কথা সোজাসুজি বলতে চাই – তা হল যখন আমাকে অন্য দেশের সাথে কথা বলতে হয় তখন তাদের কাছে বোধগম্য হয় এমন ভাবেই আমাকে কথা বলতে হয়।
তাই আমাকে এটা দেখতে হবে। আমি ফাইনালি কিছু বলছিনা – আমাকে দেখতে হবে শেষ পর্যন্ত সভাপতি এই ব্যাপারে কি বলেছেন।

শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: আপনি সহজেই বলতে পারেন যে ২৫ মার্চের আগে সেটা পূর্ব পাকিস্তান ছিল এবং ২৫ মার্চ থেকে এটি বাংলাদেশ।
শ্রী এ জি কুলকার্নিঃ তার সংসদের ভাষাতেই এটা বলা উচিৎ। তিনি এটাকে শুধু বাংলাদেশ বলতে পারেন।

শ্রী লোকনাথ মিশ্র (উড়িষ্যা): আপনি মন্ত্রীর অবগতির জন্য পুনরায় রিপিট করতে পারেন।
মন্ত্রী
জনাব চেয়ারম্যান: ডেপুটি চেয়ারম্যান সম্ভবত নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
সরদার শরণ সিং: আমি আগেই বলেছি যে, আমি দেখে নেব কি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
শাড়ি রাজনারায়ণ: সেখানে পড়ার কি আছে?
সরদার শরণ সিং: আমি পরে নিতেই অভ্যস্ত।
শ্রী রাজনারায়ণ: আপনার স্টেটমেন্টেই “বাংলাদেশ” শব্দটি লেখা আছে।
শ্রী ভূপেশ গুপ্তঃ পড়ার কিছুই নেই। প্রধানমন্ত্রী এখন বারবার “বাংলাদেশ” শব্দটি ব্যাবহার করেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রীও তাই। এটাই আমাদের ভাষা। এর একটি রাজনৈতিক জাত্যর্থ হয়েছে। এর একটি নৈতিক সংজ্ঞা আছে।
সরদার শরণ সিং: একই শব্দ অন্যান্য বিভিন্ন প্রত্যুত্তরগুলিতে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমনটি আপনি বলেছেন। কিন্তু আমাকে পড়ে দেখতে হবে আমি যখন ছিলাম না তখন কি কি গৃহীত হয়েছে এবং তখন নিশ্চই আমি মেনে চলব।
চেয়ারম্যান: আমি আশা করি, জনাব মন্ত্রী, আপনি এখন মিস্টার মোহতার নোট নিতে পারেন।

শ্রী এম কে মোহতা: স্যার, মাননীয় মন্ত্রী বলেছেন, মার্কিন সরকার টেকনিক্যালি লুকাচ্ছেন যে ২৫ মার্চের পর নতুন কোন অনুমোদন দেয়া হয় নাই। স্যার আমিও মনে করি ভারত সরকার পালিয়ে আসা উদ্বাস্তুদের সাথে – যারা এখন পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও অন্যান্য বর্ডার এস্টেটে অবস্থান করছে – তাদের সাথে লুকোচুরি খেলছেন। এই হাউজ জানতে চায় কেন সরকার পাকিস্তানে অস্ত্র আসা প্রতিরোধের ব্যাপারে পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। এসব অস্ত্র বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষের উপর ব্যাবহার করা হবে – ভারতের জনগণের উপর ব্যাবহার করা হবে। হাউজ জানতে চায় ভারত সরকারের মনে কি আছে? দ্বিতীয়ত আমি মন্ত্রীর কাছে জানতে চাই জাহাজে এমন কোন যন্ত্র আছে কিনা যা দিয়ে পাকিস্তান সাধারণ বিমানকে যুদ্ধবিমানে রূপান্তর করতে পারে যেগুলো বাংলাদেশের মানুষের উপর ব্যাবহার হবে? এটা হতে পারে কি পারেনা? যদি বলেন হতে পারে তাহলে প্রশ্ন কেন ভারত সরকার অ্যামেরিকার বিরোধিতা করছে না? পরিশেষে আমি জানতে চাই কোন কোন দেশ বাংলাদেশের অবস্থা খারাপ হবার পড় থেকে পাকিস্তানকে অস্ত্র দিয়েছে।

সরদার শরণ সিং: প্রথম প্রশ্নের বিষয়ে বলা যায় আপনি কীভাবে সমস্যাকে মোকাবেলা করবেন সেটা আপনার মানসিকতার ব্যাপার। একটি বিষয় পরিষ্কার জেনে রাখুন যে আমরা শিপমেন্ট থামাতে বলেছি। এটাও নিশ্চিত যে এতে করে দুই দেশের মধ্যে দূরত্ববৃদ্ধি তরান্বিত হবে। এটা করুন বা ওটা করুন – এসব বলার চেয়ে এই পথই ভালো হবে। একটির স্টেপের পড়ে আরেকটি স্টেপ শুরু হয় – এটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। যা খুশী তা করাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবেনা। আগে সব দিক ভেবে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দ্বিতীয় প্রশ্নে তিনি বলেছেন যে যদি সেখানে সিভিল বিমানের যন্ত্রাংশ থাকে সেগুলোকে যুদ্ধ বিমান তৈরিতেও কাজে লাগানো যায় – হ্যা – তার কথা সঠিক। অতএব একারণেই পাকিস্তানকে যে কোন ধরণের আর্থিক সাহায্য করা প্রকারান্তরে নৃশংসতাকে প্রশ্রয় দেয়া। অ্যামেরিকার ও অন্যান্য দেশের পাকিস্তানকে দেয়া বিমানের যন্ত্রাংশ অথবা কোন আর্থিক অনুদান মিলিটারি নৃশংসতাকে আরও বাড়িয়ে দেবে।

শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: ‘পোষকতা করা’ শব্দটি কি যথার্থ হয় কিনা? কেউ একজন হত্যা করছে আর আমি তাকে অস্ত্র দিচ্ছি। এটা কি হত্যায় সাহায্য করা নাকি হত্যা করা?

সরদার শরণ সিং: আমি একমত যে এই ইংরেজি শব্দটা অনেক ফোর্সফুল, অনেক এক্সপ্রেসিভ। এটাই একমাত্র অভিব্যক্তি। আমি আরও বলেছি যে এতে সামরিক শাসনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায় এবং তারা আরও বৃহত্তর হিংস্রতার দিকে ধাবিত হবে।

শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: সেটাই ব্যবহার করুন।
সরদার শরণ সিং: আমি ব্যবহার করেছি।
শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: আমি এখানে আরও ভালো শব্দ দিতে পারি।
শ্রী অর্জুন অরোরা: জনাব গুপ্ত ব্রিটেনে ছিলেন।
সরদার শরণ সিং: অতএব, আমরা সবসময় শব্দের ব্যাপারে তার সংশোধনী গ্রহণ করি। বাংলাদেশের উদ্ভূত পরিস্থিতির পরে জানা মতে পাকিস্তানে অস্ত্র সরবরাহ করেছে অ্যামেরিকা ও চিন। অর্থাৎ অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র এরাই পাকিস্তানকে মিলিটারি সহায়তা দিয়েছে।

শ্রী এ ডি মনি (মধ্য প্রদেশ): আমি মন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করতে চাই যেহেতু নিউ ইয়র্ক টাইমসে ভিয়েতনাম ইস্যুতে অ্যামেরিকার বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছিল – এতে করে স্টেট ডিপার্ট্মেন্টের গোপনীয়তা ফাঁস হয়েছে কিনা? মার্কিন সরকারের গ্রহণযোগ্যতা আমাদের কাছে কতটুকু থাকে? দেশজুড়ে যেহেতু সরকারের পলিসিতে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে এসময়ে সরকারের উচিৎ বিষয়টি ফর্মালি নিরাপত্তা পরিষদে পেশ করা – এতে করে অন্য দেশগুলোকে পাকিস্তানকে অস্ত্র সহায়তা দিতে নিষেধ করা যায় কিনা? আমরা রোডেশিয়ার ক্ষেত্রে এমনটি করেছিলাম – কিন্তু এখন আমাদের সীমান্তের বন্ধু রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে করছিনা। সরকার কেন নিরাপত্তা পরিষদে খোঁড়া যুক্তি উপস্থাপন করছেন? নিউ ইয়র্কে আমাদের এমব্যাসি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মন্ত্রী জানেন যে জেনারেল কাউন্সিলরের অফিসে আমাদের কিছু ডেলিগেট ছিল। আমি কি জানতে পারি বাংলাদেশ ইস্যু শুরু হবার পরে তিনি জেনারেল কাউন্সেলরের স্টাফদের শক্তিশালী করেছেন কিনা যাতে করে তারা সেখানকার মিলিটারি এটাচিকে কি ঘটছে তার উপর চোখ রাখতে বলতে পারেন? জেনারেল কাউন্সেলর ৩, ই-৬৪ তে আছেন – আপনি জানেন।

দুপুর ১২ টা
আমি জানতে পারি পাকিস্তানে অ্যামেরিকার অস্ত্র সরবরাহের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিতে সেখানে আমাদের অফিসকে শক্তিশালী করা হয়েছে কিনা? কিনা এই অফিস খুঁজে বের করতে কি দেশ থেকে অস্ত্র সরবরাহ পেতে পাকিস্তান দ্বারা তৈরি প্রচেষ্টা সংক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রে ঘটছে জোরদার করা হয়েছে? তৃতীয়ত, আমি মাননীয় মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করছি গতকালের অল ইন্ডিয়া রেডিওতে প্রচারিত ‘স্পটলাইট’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে। সেখানে বলা হয়েছে যে কিছু কিছু লোক স্টেট ডিপার্ট্মেন্টের দিকে দৃষ্টি নিবন্ধন করছেন যে তারা আঁচ করতে পেরেছিলেন যে অ্যামেরিকা এমন কাজ করতে যাচ্ছে। তাহলে কেন আমাদের সরকার কৈফিয়ত চাইবে না? আমি জানতে চাই এই অনুষ্ঠান কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবগত ছিল নাকি আই এন্ড বি মিনিস্ট্রি ব্যাবস্থা নিয়েছিল?

সরদার শরণ সিং: আমি জানি, স্যার নিউইয়র্ক টাইমস ভিয়েতনামে অ্যামেরিকার কার্যক্রম সংক্রান্ত খবর প্রকাশ করেছে যা এখন সেখানে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। এটি রীতিমত এখন অ্যামেরিকার কোর্টে পৌঁছে গেছে। দি নিউ ইয়র্ক টাইমস চমৎকার কিছু কাজ করছে – তারা অনেক অজানা জিনিস আমাদের সামনে তুলে আনছে। এখন দ্বিতীয় প্রশ্নের ব্যাপারে আমি জানতে চাই এটিকে নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপন করা হবে কিনা। এই বিষয়টি খুব সাবধানে বিবেচণা করতে হবে। আমি আপনার সাথে খোলাখুলি কথা বলছি। নিরাপত্তা পরিষদের সাথে আমাদের বোঝাপড়া সুখকর না। সেখানে কিছু উত্থাপন করার আগে আমাদের ভালোভাবে চিন্তা ও আলোচনা করতে হবে – কারণ সেখানে আমাদের পক্ষে ও বিপক্ষে অনেকেই শক্ত শক্ত কথা বলতে পারেন। তাছাড়া নিরাপত্তা পরিষদের সফলতাও এখন প্রশ্নবিদ্ধ। তৃতীয় প্রশ্নের ব্যাপারে বলছি – বলা হয়েছে যে নিউ ইয়র্কের জেনারেল কন্সুলের অফিসে মিলিটারি এটাচি রাখা যেতে পারে। আমি বলতে পারছিনা আসলে এতে কোন কাজ হবে কিনা। অল ইন্ডিয়া রেডিওর প্রচার সম্পর্কে আমার কোন ধারনা নাই। আমি এটা শুনিনি। আর এটা নিয়ে মন্তব্যও করতে পারছিনা। তবে আপনারা জানেন যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্টেটমেন্ট পরিষ্কার করেনি। আমি মন্তব্য করতে পারছিনা কারণ আমি অনুষ্ঠানটি শুনিনি। এটা হতে পারে কোন প্রেসের লোক অথবা কোন রাজনৈতিক চিন্তাবিদ অথবা অন্য কারো বক্তব্য। তিনি অবশ্যই আনঅফিসিয়াল কেউ।
এখন স্যার, নিঃসন্দেহে এই হাউজ সচেতন আছে। আমাকে কল এটেশন মোশনের উত্তর দিতে হবে।

শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: পয়েন্ট অব অর্ডারের উপর ……
সন্মানিত সদস্যগণ: না না।
শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: আগে যখন লোকসভায় এ ধরনের কাজ করতাম তখন আমরা দুইটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতাম। আমার মনে হয় আমরা এটা শেষ করা পর্যন্ত লোকসভা অপেক্ষা করুক। এটার মাঝখানে চলে গেলে হবেনা। এটা খুব ভুল ও অন্যায় হবে – কারণ সেক্ষেত্রে এই হাউজকে সেকেন্ড ক্যাটাগরিতে ফেলা হবে। তাই আমি আশা করব আমার সন্মানিত লোকসভার বন্ধুগণ কিছু মনে করবেন না। যখন মন্ত্রী সেখানে ছিলেন তখন আমরা তিনি আসা পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করতাম। আপনার ইন্সট্রাকশন অনুযায়ী তিনি এখানে আমাদের আলোচনা শেষ হলেই চলে যাবেন।

জনাব চেয়ারম্যান: ঠিক আছে জনাব মুনিস্বামি।
শ্রী এন আর মুনিস্বামি(তামিলনাড়ু): স্যার, আমরা সবাই ভেবেছিলাম যে আমাদের বিদেশমন্ত্রী বিজয়ী ভাবে ভারতে অবতরণ করেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তিনি ভারতে অবতরণ করার সময়েই নিউ ইয়র্ক টাইমসের খবরে আমরা সমানভাবে মুষড়ে পড়েছি। আমি জানতে চাই তিনি অ্যামেরিকায় অবস্থানকালেই করাচীর উদ্যেশ্যে যে সেনাসরঞ্জামপূর্ন ফ্রিগেট রওনা দিয়েছে তা জানতেন কিনা। যদি তিনি ডাইরেক্টলি বা ইন্ডাইরেক্টলি না জেনে থাকেন তাহলে সেখান থেকে আসার পর এই সংবাদ জেনে এখন তিনি ভবিষ্যতে তাদের সাথে কীভাবে বোঝাপড়া করবেন বলে ঠিক করেছেন?

দ্বিতীয় প্রশ্নটি হল পাকিস্তান অন্যান্য দেশের সঙ্গে SEATO এবং CENTO এর একজন সদস্য এবং সম্ভবত ন্যাটোরও সদস্য। তারা অর্থনৈতিক এবং সামরিক – সব ধরণের সাহায্য পাচ্ছেন। কিন্তু মনে হচ্ছে আমরা অনেক অসামর্থ্যে ভুগছি। আমার মনে হয় এখনকার পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের ননএলাইন্মেন্ট পলিসি আবার রিভাইস করা দরকার।

তৃতীয় প্রশ্ন হল, তিনি যে সব দেশ গিয়েছেন যেখানে বাংলাদেশের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান তুলে ধরতে ভালো ভাবে সফল হয়েছেন। এখন ভুট্টো সাহেব সেই সব দেশে যাওয়া শুরু করেছেন। এবং সেখানে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর করে আসা ভালো মনোভাবকে নষ্ট করে দিচ্ছেন। আমি জানতে চাই তিনি বিষয়টা তদারকি করবেন কিনা যাতে করে তিনি যে ইম্প্রেশন করে রেখে এসেছিলেন সেটা বজায় আছে কিনা তা জানা যায়।

যতদূর আমেরিকা কন্সার্ণ আছে তাতে স্টেট ডিপার্টমেন্ট গুলো পরিভাষায় পূর্ণ। এবং প্রতিরক্ষা দপ্তর নিজেদের মত মিলিটারি সরঞ্জাম সাপ্লাই দিচ্ছে আর হোয়াইট হাউজ সেটাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। এই তিনটা শাখা সমন্বিতভাবে কাজ করছেনা। আমি জানতে চাই এই তিন বিভাগের মতে কোন পার্থক্য আছে কিনা – যেখানে পেন্টাগন পাকিস্তানের পক্ষে আর হোয়াইট হাউজ সেটাকে সমর্থন দিচ্ছে। আমি জানতে চাই অ্যামেরিকা যে ভাবমুর্তি দেখিয়েছিল তা বজায় রাখবে কিনা এবং দুইটি ফ্রিগেটে করে যে সকল এয়ারক্র্যাফট আর ধ্বংসাত্মক অস্ত্র পাঠাচ্ছিলেন সেই চালান বন্ধ করবেন কিনা।

আমার শেষ ও ফাইনাল প্রশ্ন হচ্ছে আমরা যুদ্ধ যদি শুরু হয়ে যায় তাহলে তার জন্য আগে থেকে কোন প্রস্তুতি নিয়ে রাখব কিনা? আমরা এই কি আকস্মিকতার জন্য প্রস্তুত আছি?

সরদার শরণ সিং: স্যার, প্রথম প্রশ্ন সম্পর্কে আমার যোগ করার কিছুই নাই। শুধু বলব পদক্ষেপ নেয়া প্রক্রিয়াধীন আছে এবং তারা আমাদের যে আশ্বস্তিই দেন না কেন।

দ্বিতীয় প্রশ্নে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন যে আমাদের ননএলাইন্মেন্ট পুনর্বিবেচনা করা উচিত। আমি মনে করি না যে শুধুমাত্র একটি দৃষ্টি আকর্ষন বিষয়ে আলোচনা করতে যেয়ে একটি দীর্ঘ আলোচনার শুরু হোক এবং বর্তমান নীতির কার্যকারিতা সম্পর্কে গভীর আলোচনা চলুক। এটি একটি বড় ইস্যু যা এই সংক্ষিপ্ত দৃষ্টি আকর্ষন নোটিশে মোকাবিলা করা যাবে না।

তারপর তৃতীয় প্রশ্নে তিনি বলেছেন যে ভুট্টো সাহেব সফরের পরিকল্পনা করছেন। এটাকে আমি স্বাগত জানাই। আমরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি জানিয়েছি – তাদের যদি কিছু বলার থাকে তাহলে তারা তাদের দৃষ্টিভঙ্গি জানাবার অধিকার রাখে। এটাই আন্তর্জাতিক বিশ্বে সবাইকেই করতে হয়। নিজেকে সবচেয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে হয়। হতে পারে আমি যে ভাবমূর্তি দিয়ে এসেছি তা ক্ষুণ্ণ হবে। এতে আমার হাত নেই। আমাকে যদি কেউ সুযোগ দেয় আমি দীর্ঘ দাবী করব। তবে আমার সন্দেহ নেই যে বাংলাদেশে এখন যা ঘটছে তাতে আমাদের পক্ষেই সবার মনোভাব থাকবে। এর পর তিনি জানতে চেয়েছেন যে অ্যামেরিকার বিভিন্ন দপ্তর ভিন্ন ভিন্ন ভাবে কাজ করে কিনা। সেটা তাদের বিষয়। আমরা শুধু ফলাফল দেখব। আমরা ভুল জানি – সেজন্য আমাদের কাছে মনে হচ্ছে যে এক এক দপ্তর ভিন্ন ভিন্ন ভাবে কাজ করে। আর যদি আমরা আগে থেকেই কোন কিছু ধরে বসে থাকি তাহলে আমরা সন্তস্ট হতে পারব না। এটা তাদের ব্যাপার যে যখন তারা কোন বিবৃতি দেবেন তার দায় দায়িত্ব তারা নেবেন। এর পর শেষ প্রশ্নটি একটি সাধারণ প্রশ্ন যে যদি যুদ্ধ পরিস্থিতি শুরু হয় তাহলে আমরা কী ব্যাবস্থা নেব? আমার কলিগ ডিফেন্স মিনিস্টার এখানে আছেন। তিনি এই হাউজে একাধিকবার বলেছেন যে যদি আমাদের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন হয় তাহলে আমরা যুগোপযোগী পদক্ষেপের মাধ্যমেই জবাব দেব।
শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: স্যার, মাননীয় মন্ত্রী বলেন যে তিনি আমার কাছে থেকে ভাষা গ্রহণ করবেন। কিন্তু তার ভাষার অভাব নেই। এটি তার যথেষ্ট আছে। কিন্তু তিনি আর তার সরকার আমেরিকানদের ব্যাপারে রেজল্যুশন এবং সিদ্ধান্তের অভাবে ভোগেন।

স্যার, যখন মাননীয় মন্ত্রী তার সাম্প্রতিক সফর শেষে পালাম বিমানবন্দরে পৌঁছান তখন তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। তারা তাকে নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার খবরটা দৃষ্টিগোচরে আনেন। তিনি বলেন – ‘আমি রিপোর্টের সত্যতা সম্পর্কে বলতে পারছিনা। আমাকে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে পাকিস্তানে কোন অস্ত্র দেয়া হবেনা। ’

আমি জানি না টাইমস অব ইন্ডিয়া সঠিকভাবে এটি উদ্ধৃত করেছে কিনা। কিন্তু তিনি মনে হয় ঘোরের মধ্যে আছেন। এত কিছু হবার পরেও হয়ত অ্যামেরিকা তাদের কথা রাখবে। আমি অবাক হই কত সহজে তিনি এইসব বিবৃতি দেন। এমনকি ভারতের সময়ে? ……….
সরদার শরণ সিং: আপনি বিবৃতির অবশিষ্ট অংশ পড়ে দেখবেন।
শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: আমি পড়ব – সেখানে মাত্র দুটি বাক্য আছে।
”আমাকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে ইউ এস আর্মস পাকিস্তানে দেয়া হবেনা। ’
আপনি ‘নিশ্চিত’ শব্দটি ব্যাবহার করেছেন। অন্যটি হল –
”আমি রিপোর্টের শুদ্ধতা সম্পর্কে সন্দিহান। ‘

আপনার কেন মনে হয় যে এমন একটা বিষয় নিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমস সুদ্ধ খবর লিখবে না। এর আগেও অনেকবার তাদের রিপোর্ট সত্য প্রমাণিত হয়েছে। আমি জানতে চাই। আপনি যা ইচ্ছা বলতে পারেন।

এখন, তিনি কি জানেন যে ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় মার্কিনরা পাকিস্তানে অস্ত্র বিক্রয় ও সরবরাহের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন এবং এখনো সেটা বলবত আছে? আমরা খুঁজে পেয়েছি, ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউন অনুযায়ী, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র রবার্ট McCloskey বলেছেন যে ১৯৬৬-৬৭ সাল থেকে পাকিস্তানে সামরিক আইটেম বিক্রি হয় বার্ষিক দশ মিলিয়ন ডলার। এখন নিউ ইয়র্ক টাইমস প্রকাশ করেছে যে ১৯৬৭ থেকে ৩০ এপ্রিল ১৯৭০ এর মধ্যে পাকিস্তানে সামরিক সরঞ্জাম প্রবাহ হয় প্রায় ৪২ মিলিয়ন ডলার। এই সমস্ত ঘটনা আপনার জানা। আপনার রাষ্ট্রদূতেরও জানার কথা। সে কি করছে? আমি জানতে চাই। এ প্রসঙ্গে সিদ্ধান্ত সরকার কি নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে? সরকার কি মনে করেনা যে অ্যামেরিকা অপরাধমূলক পৃষ্ঠপোষকতা করছে? এর ফলে ইয়াহিয়া খান বাংলাদেশে যে গণহত্যা চালাচ্ছেন – সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালীকে নির্যাতন করছেন – তাদের স্বপ্নকে রক্তের সমুদ্রে ভাসিয়ে দিচ্ছেন – তাকেই পৃষ্ঠপোষকতা করা হল। যদি এটা অঙ্গীকার লঙ্ঘন হয় তাহলে আমি মনে করি এটা সমস্ত বিশ্বকে জানানো উচিৎ। অন্যান্য দেশের সাথে কথা বলুন। জানান যে জাতিসঙ্ঘ চার্টার অনুযায়ী অ্যামেরিকা দোষী। জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক নিয়মাবলী অনুসারেও অ্যামেরিকা অঙ্গীকার লঙ্ঘনকারী। এটা হল এক নম্বর। তিনি কি স্বীকার করেন যে এই অস্ত্র সরবরাহ প্রকৃতপক্ষে ভারতের বিপক্ষে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হওয়া; পাকিস্তানকে যুদ্ধের জন্য উস্কানি দেয়া। অ্যামেরিকা থেকে অস্ত্র আসার ফলে সীমান্তে উত্তেজনা বাড়ছে, পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যরা আরও বেশী পরিমাণে জড়ো হচ্ছে, অর্থাৎ পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। যেহেতু আমাদের জাতীয় স্বার্থ জড়িত তাই পশ্চিম পাকিস্তানে অ্যামেরিকার অস্ত্র সরবরাহ শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষের জন্য হুমকি নয় বরং আমাদের বিরুদ্ধেও মিলিটারি একশন ও মিলিটারি আক্রমণ প্রস্তুতির আভাস দেয়। যদি তাই হয় আমাদের অবশ্যই বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষন করা উচিৎ। শুধু রাজনৈতিক একশন নয় অন্যান্য প্রস্তুতিও নেয়া দরকার। স্যার, এমন কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায় নাই। তিনি বলবেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী তার পাশে বসে আছেন।

জনাব চেয়ারম্যান: দয়া করে আপনার প্রশ্ন করুন।

শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: তার উত্তর হবে যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী তার পাশে বসে আছেন – তিনিই উত্তর দেবেন। যে মুহুর্তে আমেরিকা ইয়াহিয়া শাসককে অস্ত্র দিয়ে সমৃদ্ধ করছে, বাংলাদেশ ছাড়াও আমাদের দেশের বিরুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানের সেনারা অবস্থান নিয়েছে, সে অবস্থায় আপনি কি পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন? আমি মনে করি আমাদের উত্তর হওয়া উচিৎ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়া, মিলিটারি সহায়তা সহ বাংলাদেশকে খোলাখুলিভাবে সহায়তা দেয়া, পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য দরকারি সব রকমের অস্ত্র সরবরাহ করা এবং সমুদ্রপথে ঐ জাহাজগুলিকে ঠেকানো। বাংলাদেশে অবশ্যই তা করতে হবে। তারা অস্ত্র কোথা থেকে পাবে? এটা সিরিয়াসলি ভাবতে হবে। এই অবস্থায় আর কিছুই করার নেই। আমাদেরও ব্যাবস্থা নিতে হবে। এবং আমাদেরও আরও একশন নিতে হবে। আমাদের হাউজে ঘোষণা দিতে হবে যে অ্যামেরিকার একশন আমাদের বিরুদ্ধে, আমাদের নিরাপত্তা, স্বাধীনতা, জনগণের বিরুদ্ধে। তাদের সবই আমাদের স্বার্থের প্রতিকূলে। আমেরিকান ব্যবসায়িক স্বার্থের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। অ্যামেরিকার তেল সঙ্ক্রান্ত বিষয় জাতীয়করণ করুন। তাদের কিছু সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করুন। তাহলেই তারা আপনার ভাষা পড়তে পারবে। এখন সর্দার শরণ সিং যেভাবে কথা বলছেন সেভাবে নয়। আপনার রাষ্ট্রদূত জনাব এল কে ঝা কে প্রত্যাহার ……….
জনাব চেয়ারম্যান: যথেষ্ট হয়েছে।

শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: আমেরিকায় ভারতীয় দূতাবাস তার কর্তব্য পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা টাকা এই দূতাবাসের জন্য প্রচুর অর্থ খরচ করছি। কর্মকর্তাদের স্ত্রীরা সেখানে কালোবাজারির এবং এরকম আরও অনেক কিছুর সাথে যুক্ত। জনাব এল কে ঝা আমেরিকানদের জন্য তার সহানুভূতির জন্য পরিচিত। আমি অতীতের সরকারের কিছু কেবিনেট মন্ত্রীর থেকে জেনেছি তিনি কীভাবে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ে বা ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক এ কাজ করেছেন। এইরকম একজন ব্যক্তি এই কাজের জন্য মাত্রাতিরিক্তভাবে বেমানান। এসব একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের জবাব, যিনি সত্যিই জাতিয় স্বার্থ নিয়ে চিন্তিত এবং যার আলাদা ব্যাকগ্রাউন্ড আছে। আমি তাই জানতে চাই সরকার কী সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। আমি মনে করি সংসদীয় কমিশনে ভালো কিছু মানুষ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ঢোকা প্রয়োজন। তিনি এখনো সেখানে আমেরিকান প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারেননি। যখনি আমেরিকার প্রশ্ন আসে তারা এই ধরনের ভাষা ব্যবহার করেন। তাদের সঠিক ভাষায় কথা বলা উচিত। অতএব, আমি পরিস্থিতির বাস্তবতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমেরিকানদের প্রতি আমাদের নীতিতে পরিবর্তনের দাবি করছি।

সরদার শরণ সিং: স্যার, এটার উত্তর দেয়া খুব কঠিন, কারণ তেমন কোন প্রশ্ন করা হয়নি। তিনি খুব শক্তিশালী পদ্ধতিতে তার নিজস্ব অবস্থান তুলে ধরেছেন যে কীভাবে আমাদের মোকাবেলা করা উচিত এবং সম্ভবত একটি কাউন্টার-স্পিচ এই হাউজে না দেয়াই ভালো। তবে আমি তিনি যেসব পয়েন্ট তুলেছেন সেগুলোর উপর সংক্ষেপে কিছু মন্তব্য করতে চাই।

প্রথমে তিনি যে পয়েন্ট উত্থাপন করেছেন তা হল তিনি পালামে প্রেস রিপোর্টে আমার বক্তব্য তুলে এনেছেন। আগমনের সময় আমাকে ঐ রিপোর্ট দেখানো হয়েছিল যা নিউ ইয়র্ক টাইমসে ছাপিয়েছে। এবং আমি স্পষ্টভাবে বলেছি আমাকে চেক করতে হবে যে রিপোর্টটি সঠিক কিনা। তারপর আমাকে যে আশ্বস্ত করা হয়েছে তা আমি জানিয়েছি। তাই ঐ সমসয়ে আমার অবস্থান স্পষ্ট করেছি। আমি আশা করেছিলাম যে জনাব ভূপেশ গুপ্ত সেই অংশটুকু পরবেন। অন্য দ্যা স্পটে আমাকে এটা দেখানো হয়। তার অপর ভিত্তি করে আমি বলতে পারিনা যে এসব সঠিক তথ্য। তাছাড়া এটা আমাকে দেয়া আশ্বাসের পরিপন্থী। আমি এখানে আমার আচরণের কোন ভুল দেখিনা।

পরবর্তীতে তিনি উল্লেখ করেছেন পাকিস্তানে আমারিকার অস্ত্র চালানের পরিণতি কি হবে সেই ব্যাপারে। আমি তার সাথে একমত যে এতে করে পাকিস্তানের সামরিক শক্তি আরও বাড়বে – তা সে যেখান থেকেই সহায়তা শুক না কেন। এবং তা সরাসরি বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায় – যার ফলেই আমাদের এত এত দেশ সফর করতে হচ্ছে………

শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: না, না, এটা একটা আন্তর্জাতিক অপরাধ।
সরদার শরণ সিং: আমি শেষ করিনি।
শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: আপনি ‘ব্যবহার’ শব্দের পরিবর্তে ‘একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ও গণহত্যার পৃষ্ঠপোষকতা’ শব্দ ব্যাবহার করুন।
জনাব চেয়ারম্যান: দয়া করে বসুন। আপনি তাকে কি ভাষা ব্যাবহার করতে হবে সেই দিক নির্দেশনা দিতে পারেন না।

সরদার শরণ সিং: সেখানে যা কইছ ঘটছে তার জন্য উপযুক্ত এক্সপ্রেশন হিসেবে আমি ‘গণহত্যা’ শব্দটি একাধিক স্থানে ব্যবহার করেছি। এবং তার চেয়েও শক্তিশালী শব্দ ব্যাবহার করেছি কখনো কখনো। কিন্তু শুধু শব্দ নয় – আমার মনে হয় এই মহুর্তে দেশের ও দেশের বাইরের সবাই জানেন বাংলাদেশের পরিস্থিতি। কীভাবে নিরীহ মানুষের উপর অবর্ণনীয় দুর্দশার সৃষ্টি করেছেন সামরিক শাসকরা। তাদের জন্য আমাদের যথেষ্ট সহানুভূতি আছে।

শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: স্যার, আপনি খেয়াল করে থাকবেন তিনি এখন পর্যন্ত ‘গণহত্যা’ শব্দটি ব্যাবহার করেননি।

সরদার শরণ সিংঃ এখন আমি আমার নিজের ভাষা পছন্দ করি। আমি জনাব ভূপেশ গুপ্ত আমাকে যা বলতে বলবেন সেটাই আবার বলার জন্য প্রস্তুত নই। আমি তা গ্রহণ করব না। আমি আমার নিজের ভাষা ব্যবহার করব। এটা ত্রুটিপূর্ণ হতে পারে, অথবা হতে পারে আপনি এটা পছন্দ করছেন না। কিন্তু আমি ভাষা ব্যবহার সম্পর্কে নির্দেশনা দেয়া পছন্দ করছিনা।
শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: আমি একটা সত্য বলার চেষ্টা করছি। আমি জানতে চাই পণী এটাকে পৃষ্ঠপোষকতা হিসাবে না কি অন্য কিছু হিসেবে বিবেচনা …. (বাধা)…. কেন না? আমেরিকান ডলার আপনার গলার মধ্যে আটকে গেছে।

সরদার শরণ সিং: একথা ঠিক যে যে কোন ধরণের সহায়তা সামরিক শাসনকে শক্তিশালী করবে এবং তাদের হিংস্রতা ও নির্মমতা আরও বাড়িয়ে দেবে। এই অভিব্যক্তিগুলো পৃষ্ঠপোষকতা শব্দের চেয়ে অনেক বেশী শক্তিশালী। আমি জানিনা কেন তিনি আমাকে আটকে রাখতে চাইছেন …. (বাধা)…. তিনি বলতে পারেন না যে তার পছন্দের শব্দই সবচেয়ে উপযুক্ত। আমি আমার নিজের ভাষা ব্যবহার করব।
শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: আপনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সরদার শরণ সিং: আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আমার দায়িত্ব জানি এবং, আমি নির্দেশনা দেয়া রিফিউজ করছি।
শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: ভারতের উপর প্রভাব কি?
সরদার শরণ সিং: ভারত উপর প্রভাব সম্পর্কে বলতে হয়, আমরা বাংলাদেশ পরিস্থিতির সাথে সম্পর্কিত নয় সেগুলোও পর্যবেক্ষন করছি। কিন্তু এটি একটি বাস্তব সমস্যা, একটি পৃথক বিষয়। আর আমরা কখনো সন্দেহ জিইয়ে রাখছি না যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোন কোন সরকার পাকিস্তানে অস্ত্র সরবরাহ করছে। এসব সরাসরি তাদেরকে ভারতের বিপক্ষে সাহায্য করছে। পাকিস্তান বলছে না অন্য কোন দেশের সাথে তাদের সম্পর্ক শত্রুভাবাপন্ন আছে। আমি পাকিস্তান নিজে যে শব্দ ব্যাবহার করেছে সেটাই করলাম।
তাই নিশ্চিতভাবেই এই অবস্থান অত্যান্ত স্পষ্ট যে আমরা অস্ত্র যে দেশ থেকেই আসুক তার ব্যাপারে আমরা সজাগ। এরপর তিনি তার নিজস্ব মত দিয়েছেন যে এই পরিস্থিতিতে সরকারের মনোভাব কেমন থাকা উচিত। এবং তিনি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবার সুপারিশ করেছেন। আরও বড় বিষয় আছে যা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী সম্পূর্ণরূপে এই হাউজকে অবগত রেখেছেন। এবং আমার এই হাউজকে নতুন করে দেবার মত কোন তথ্য নেই। তারপর অন্যান্য পরামর্শে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তেল স্বার্থ বা অন্যান্য স্বার্থ জাতীয়করণ সম্পর্কে বলেছেন। এসব অর্থনৈতিক বিষয়। এগুলোর নির্ভর করে আমরা জাতীয়করণ সম্পর্কে কি মনোভাব পোষণ করব তার উপর। তার উপর নির্ভর করে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব। কিন্তু এগুলোর সাথে বর্তমান সমস্যা গুলিয়ে ফেললে হবেনা। আমি দুঃখিত আমি খুব দৃঢ়ভাবে আমাদের রাষ্ট্রদূত ঝা সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তার বিরোধিতা করছি। আমি নিজে দুবার অ্যামেরিকা সফর করেছি যখন তিনি রাষ্ট্রদূত ছিলেন। এবং আমি দেখেছি তিনি ভালো কাজ করছেন এবং ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি সঠিক ও কার্যকর পদ্ধতিতে তুলে ধরছেন। এবং আমি সম্মানিত সদস্যকে অনুরোধ করব এই ধরনের সমালোচনা না করতে এবং এতে করে যেভাবে আমাদের অবস্থান বাস্তবায়ন করছি সেই প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে। একজন রাষ্ট্রদূতকে সমালোচনা করা খুবই সোজা……………
শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: আপনি কি তার বদলি হিসাবে অন্য কাউকে খুঁজে পাচ্ছেন না?
সরদার শরণ সিং: … এবং এই বিশেষ ক্ষেত্রে, যার উপর ভিত্তি করে এসব বলা হচ্ছে তা সত্য নয়। তিনি অনেক বছর আগের কথা বলেছেন আর জনাব ঝা মাত্র এক বছর আছে সেখানে গিয়েছেন। তার আগে তিনি ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন। সেই সময়ে অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক উভয় দিক থেকে তিনি ভাল কাজ করেছেন এবং আমি দৃঢ়ভাবে আমাদের বিশিষ্ট রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে দেয়া সম্পূর্ণরূপে ভিত্তিহীন মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি……
শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: তিনি একজন তাবেদার, একজন কুখ্যাত সাম্রাজ্যবাদী তাবেদার।
সরদার শরণ সিং: সে যদি আমাকে ঐ ভাষা ব্যাবহার করতে বলেন তা করতে আমি দ্বিধাবোধ করব। আমি বলব যে, যদি তাঁবেদারির কথাই আসে তবে আমরা জানিনা আসলে তার শেষ কোথায়।

শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: স্যার, তাকে বলতে বলুন তাবেদার কে। তার সেটা বলার সাহস আছে কিনা। আমি বললাম। আমি বললাম জনাব এল কে ঝা ব্রিটেন ও আমেরিকার তাবেদার। এবং আপনি তাকে আমেরিকায় আমাদের রাষ্ট্রদূত করেছেন।
শ্রী পিতম্বর দাস (উত্তরপ্রদেশ): এটা সবচেয়ে নির্দয় ব্যাপার।
সরদার শরণ সিং: শেষ প্রশ্নে তিনি বলেছেন যে একটি পররাষ্ট্র বিষয়ক সংসদীয় কমিশন করা উচিত। আমার মনে হয় না সংসদীয় কমিশন প্রশাসনিক ব্যাপারে কিছু করতে পারবে কিনা। তাছাড়া এগুলো বাস্তবায়ন করবার জন্য তাদেরকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের উপর নির্ভর করতে হবে যারা জাতীয় সংসদে সেগুলো উপস্থাপন করবেন।
শ্রী লাল কে আদভানি (দিল্লি):মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার যতদূর করছে, তার সব হয়ত ব্যাখ্যার সুযোগ নেই, জনাব ভূপেশ গুপ্ত এটাকে পৃষ্ঠপোষকতা বলতে পারেন এবং ঐ শব্দটির ওপর জোর দেবার জন্য পীড়াপীড়ি করে পারেন, কিন্তু অনেক অনেক শব্দ আছে যা এখানে ব্যাবহ্রিত হতে পারে। এই সময়ে পাকিস্তানকে জাহাজভর্তি অস্ত্র দিয়ে নিক্সন সরকার ইয়াহিয়া খানের সাথে বাংলাদেশে গণহত্যার সহযোগী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। বিষয়টি বিশ্বের কাছে অত্যন্ত নিন্দার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু আমি সত্যিই বিস্মিত হয়েছি ওয়াশিংটনে আমাদের নিজেদের মিশনের ব্যর্থতা সম্পর্কে জেনে। বিশেষ করে একটি জাহাজ ৮ মে বন্দর ছেড়েছে অথচ আমরা ২৩ জুন পর্যন্ত তার কিছুই জানিনা। তাও আবার নিউ ইয়র্ক টাইমস তা প্রকাশ করার জন্য আমরা জেনেছি। আমার রাষ্ট্রদূত এল কে ঝাঁ কিছুই আর বলার নেই। আমি তার সম্পর্কে জানিনা এবং মন্ত্রী তার সম্পর্কে যা বলেছেন তাও জানিনা – হতে পারে তিনি তার সামর্থ্য ও ক্ষমতা সম্পর্কে যা বলেছেন তা পুরোপুরি সঠিক। কিন্তু আমি মনে করি বিদেশে মিশনের প্রাথমিক কাজ হচ্ছে আমাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সকল তথ্য সংগ্রহ করা।
এই বিশেষ ব্যাপারটিতে তথ্যটা খুব গুরুত্তপূর্ন ছিল যা নিউ ইয়র্ক টাইমস ডক রেজিস্টার থেকে নিশ্চিত হতে পারে। ের জন্য কোনো গোয়েন্দা সূত্র লাগেনা। ডক রেজিস্টার বের করে দেখা যাবে যে ৮ মে গোলাবারুদ ও অস্ত্র ভর্তি একটি জাহাজ বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। আমরা এই সম্পর্কে অজ্ঞ ছিলাম। এমনকি যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াশিংটন বা নিউ ইয়র্ক পরিদর্শন করেছেন তখনো আমরা তা জানতাম না। এটা তার জানার কথা ছিল। যদি এটা জানা থাকত তাহলে আমি নিশ্চিত সফরের সমগ্র আলোচনা এবং সংলাপ অস্ত্রের এই জাহাজ কেন্দ্রিক হত এবং সম্ভবত আমরা আমাদের অবস্থান আরও জোরালোভাবে উত্থাপন করতে পারতাম এবং সম্ভবত দ্বিতীয় জাহাজটি নিউ ইয়র্ক ছাড়ত না। এই গভীর এবং অন্ধকারময় ব্যর্থতার জন্য আমি মন্ত্রীর কাছে একটি ব্যাখ্যা চাই। আমরা কি আমাদের রাষ্ট্রদূতের কাছে এর ব্যাখ্যা চেয়েছি? এখানে আমাদের রাষ্ট্রদূতের সম্পর্কে এত সার্টিফিকেট দেবার কছু নেই। এটা একটা গুরুতর ব্যর্থতা।

আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন হল এই: সন্মানিত মন্ত্রী বলেছেন, তিনি মার্কিন কর্তৃপক্ষেকে উভয় জাহাজ থামাতে এবং ফিরিয়ে আনতে বলেছেন। আমি এখানে মনে করিয়ে দিতে চাই যে ১৯৬৫ সালে ৬ টা জাহাজ আসার পথে থামিয়ে দেয়া হয়েছিল। সেগুলো আসলে ভারতে আসছিল। কিন্তু সেগুলোকে আমাদের তীর থেকে মাত্র ১৫ মাইল দুরে থামিয়ে দেয়া হয়। আমার কাছে হিন্দুস্তান টাইমসের ক্লিপিং আছে যেখানে উদ্ধৃতিতে আছে শ্রী এল এন মিশ্র এই তথ্য দিয়েছিলেন। আমি সনাম্নিত মন্ত্রীর কাছে জানতে চাই এই তথ্য সঠিক কিনা যে ছয়টি অস্ত্রবাহী জাহাজ যেগুলো ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় ভারতে আসছিল সেগুলো মার্কিন কর্তৃপক্ষ দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল। সে সময়ে মার্কিন সরকার বলেছিল যে তারা উপমহাদেশের টেনশন বাড়াতে চান না – তাই তারা ভারত ও পাকিস্তান উভয়কে সহায়তার বন্ধ করে দিয়েছেন। এই অজুহাতে তারা যে অস্ত্রভর্তি ছয়টি জাহাজ ভারত আসার জন্য আমাদের তীর থেকে মাত্র ১৫ মাইল দুরে অবস্থান করছিল সেগুলোকে ফেরত নিয়ে যায়। আমি জানতে চাই এই ঘটনাটি মার্কিন কর্তৃপক্ষকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে কিনা।

সর্বশেষে, সমগ্র হাউজ আবদার করেছে যে বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই দুটি জাহাজকে আটকানো উচিত। যখন শ্রী মোহতা এই সাজেশন দিয়েছেন তখন সন্মানিত মন্ত্রী বলেছেন যে এই সিদ্ধান্ত সরাসরি নেয়া যাবে না এবং তারা এটা বিবেচনা করবেন। আমার মনে হয় যেদিন থেকে বাংলাদেশে এই গণহত্যা শুরু হয়েছে তখন থেকেই ‘আমরা বিবেচনা করব’ টাইপের উত্তর বেশী শোনা যাচ্ছে। আমি একমত যে যব সিদ্ধান্তের কিছু ধারাবাহিকতা আছে। যখন আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে, আমরা জানি তার কিছু ধারাবাহিকতা আছে। কিন্তু আমরা মনে করি যে, এই সরকার ‘বিবেচনা’র অজুহাতে শুধুমাত্র আলস্য প্রকাশ করছেন এবং কিছুই করছেন না। এই নির্দিষ্ট বিষয়ে সরকারের অবস্থান কী? আমরা কি অস্ত্রের এই চালানের ব্যাপারে কিছুই করতে যাচ্ছি না? যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার সেগুলো ফিরিয়ে নেয় তবে তো খুব ভালো। অন্যথায়, আমরা কি অসহায়? আমরা কি কিছুই করতে পারি না? আমরা কি শুধু শান্ত থাকব এবং বসে থাকব? এটাই কি সরকারের অবস্থান?

সরদার শরণ সিং: প্রথম প্রশ্ন ছিল আমাদের অক্ষমতা নিয়ে যে শুরুতে যে জাহাজ লোড করা হচ্ছিল পাকিস্তান পাঠানোর জন্য সেটা কেন আমরা আগে জানলাম না। এটা আমি আগেই বলেছি এবং নতুন করে কিছু বলার নেই। ………

শ্রী লাল কে আদভানি: আপনি বলেন নাই …….
(বাধা)
সরদার শরণ সিং: আমি ইতিমধ্যে উত্তর দিয়েছি। আপনি জানেন আমি কি জবাব দিয়েছি ………
(বাধা)
শ্রী লাল কে আদভানিঃ এটি কোন উত্তর না।
সরদার শরণ সিং: আমি যা বলেছি তার বাইরে আমার কিছু যোগ করার নেই। আপনি অন্যরা যা বলছে তাই পুনরাবৃত্তি করছেন…………
(বাধা)
শ্রী লাল কে আদভানি: আমি বলেছি বিদেশে আমাদের মিশনসমূহের প্রাথমিক ফাংশন এটাই।
সরদার শরণ সিং: আমি জানি না। প্রাথমিক ফাংশন, সেকেন্ডারি ফাংশন এবং আরো গুরুত্বপূর্ণ ফাংশন সম্পর্কে আমরা একটি পৃথক আলোচনা করতে পারি।
শ্রী লাল কে আদভানি: আমার পয়েন্ট হল ….

সরদার শরণ সিং: আপনি যদি রাষ্ট্রদূতগণ এবং মিশনের দায়িত্বরতদের সম্পর্কে খুব স্পষ্ট বিবৃতি চান, তবে আমি বলব আন্তর্জাতিক কনভেনশন দ্বারা যাকে গুপ্তচরবৃত্তি বলা হয় তা তাদের কাজ নয়…….
(বাধা)
শ্রী লাল কে আদভানিঃ এটি গুপ্তচরবৃত্তি না।
ডঃ. ভাই মহাবীর (দিল্লি): প্রধানমন্ত্রী আবার বিবৃতি রিসিপ্টিং করছেন। (বাধা) ….. তিনি এমন একটি বিবৃতি দিচ্ছেন যা আমাদের রাষ্ট্রদূতদের আরও ব্যর্থতায় পর্যবসিত করবে।
(বাধা)
সরদার শরণ সিং: সতর্কতা এবং বুদ্ধিমত্তা ভিন্ন জিনিস। সতর্কতা ও বুদ্ধিমত্তার প্রক্রিয়া প্রশ্নে কখনো আলোচনা করা হয় নাই। আমি জানি না কেন আপনারা এটা পুনরাবৃত্তি করছেন, কেন এটার উপর বারবার চাপ দিচ্ছেন।

শ্রী লাল কে আদভানি: স্যার, এটা একটি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন।
ডঃ. ভাই মহাবীর: স্যার, এটা একটি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন ……. (বিঘ্ন) ……. এ কি ব্যাপার স্যার, তার উত্তর দেওয়া বাঞ্ছনীয়।
সরদার শরণ সিংঃ দ্বিতীয় প্রশ্ন সম্পর্কে, স্যার, সন্মানিত সদস্য বলেছেন, এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার পাকিস্তানে সরঞ্জাম বিতরণ বন্ধ করেছে।
(বাধা)
শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: না, না, এটা হল ভারত।
জনাব চেয়ারম্যান: একেবারে ঠিক। এটি শুধুমাত্র একটি জাহাজ।
সর্দার শরণ সিং: এটি থামানো হয় যখন তা দূরসমুদ্রে ছিল। অতএব, এমনকি যদি তারা এখন সিদ্ধান্ত নেন, তারা তা বন্ধ করতে পারেন এবং এতে কোন সন্দেহ নেই যেএর জন্য কোনো আগের নজির উদ্ধৃত করতে হবে। এটা সরকারের সচেতনতার একটি প্রশ্ন। যদি তারা তাদের সিদ্ধান্ত নেন যার জন্য আমরা তাদের চাপ দিচ্ছি ….. (বাধা) এটা একটা সারগর্ভ জিনিস এবং এর জন্য আগের কোন সরবরাহ করা বা সরবরাহ বন্ধ করার সম্পর্ক নাই। আমাদের তাদের প্রিসিডেন্ট না করে স্বাভাবিকভাবে মোকাবেলা করতে হবে।

শ্রী লাল কে আদ্ভানিঃ আমি প্রশ্ন করেছিলাম, তাদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়ে থাকলে তার রেফারেন্স (উদাহরণ) দেয়া হয়েছে কিনা। হতে পারে তিনি তা দেননি। তাহলে বলে দিন আমরা দেইনি, পরে দিয়ে দেব।
জনাব চেয়ারম্যান: হ্যাঁ, যদি কিছু উত্তর দেয়া বাকি থাকে আমি দেখব।
সরদার শরণ সিং: স্যার, তিনি আবার জাহাজ আটকানোর ব্যাপারে বলছেন। আমি বলতে চাই যে এটি কোন সাধারণ ব্যাপার নয় যেভাবে আমরা সরকারকে চাপ দিয়ে করিয়ে ফেলব। আমরা চাপ দিয়ে কাজ করানোর কৌশলে যাচ্ছিনা। এই সিদ্ধান্তগুলি আমরা যা কিছু করি যেভাবে করি সেগুলো সব বিবেচনায় নিয়ে করতে হবে। আরেকটি প্রশ্ন করেছেন কেন সরকার আপনাদের সাজেশন গ্রহণ করছেনা – এই প্রসঙ্গে বলব আমাদের সব দিক বিবেচনায় নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে – আমরা এভাবেই সব কিছু করতে চাই – কারণ সব দায় দায়িত্ব আমাদের উপর – আশা করি আপনারা এটাকে ভালোভাবে দেখবেন।

শ্রী পিতম্বর দাশঃ স্যার ………
জনাব চেয়ারম্যান: হ্যাঁ আপনি কি চান? …….
শ্রী পিতম্বর দাসঃ স্যার, প্রশ্ন সাম্যতা নিয়ে ছিলোনা – প্রশ্ন ছিল জাহাজ থামানো নিয়ে। এর কারণই একে সাম্যতা দেয় যে কখন এটা থামানো হবে। এতে করে টেনশন বাড়বে এই অজুহাতে আগের বারে থামানো হয়েছিল। একই কারণ দেখিয়ে আপনি জাহাজ থামাতে বলতে পারেন। আমরা শুধু সাম্যতা দেখানোর জন্য থামাতে চাচ্ছিনা – আমাদের থামাতে বলার কারণ আছে।
জনাব চেয়ারম্যান: পিতম্বর দাস, বেশ স্পষ্ট বলেছেন।
সরদার শরণ সিং: আমি বলেছি, স্যার, স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছি যে এর ফলে নিরপরাধ মানুষের বিরুদ্ধে সামরিক শাসনের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং নৃশংসতার চালিয়ে যেতে সামরিক শাসকরা সক্ষম হবেন এবং এছাড়াও আমাদের দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়বে এবং ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তান শক্তিশালী হবে।
জনাব চেয়ারম্যানঃ হ্যা, জনাব রাজনারায়ণ।

শ্রী রাজ নারায়নঃ মহোদয়, আমি আপনার কাছে প্রথমেই অনুরোধ জানাচ্ছি মন্ত্রী মহাশয়কে এ কথা বলে দিতে তিনি যেন না বলেন যে আমি জবাব দিয়েছি।

সভাপতিঃ আপনি প্রাসঙ্গিক কথা বলুন এবং অল্প বলুন।
শ্রী রাজনারায়ণ জাহাজ ভরে যে সামরিক সরঞ্জাম আসছে সে ব্যাপারে সরকার কি অ্যামেরিকার সরকারকে বলেছে তোমরা এটি থামিয়ে দাও, কখনোই পাঠাবে না। আরও স্পষ্টভাবে সরকার এ কথা বলেছেন কিনা যে এই সরঞ্জাম পাঠানো হলে বাংলাদেশে ব্যাবহ্রিত হবে এজন্য সমর সরঞ্জাম পাঠাবে না, থামিয়ে দাও। প্রথম প্রশ্ন।
শ্রী মহাবীর ত্যাগী (উত্তর প্রদেশ)ঃ পাকিস্তান নারাজ হয়ে যাবে ভাই।
শ্রী রাজনারায়ণঃ দ্বিতীয় কথা। মন্ত্রী মহোদয় যখন বিদেশে ভ্রমণে গিয়েছিলেন তখন তিনি কি ‘সিভিল এগ্রেসন’ শব্দটি ব্যাবহার করেছিলেন? মাননীয় মন্ত্রী কি ‘সিভিল এগ্রেসন’ শব্দ ব্যাবহার করেছিলেন আর যেহেতু এটা মিলিটারি এগ্রেসন নয়, সিভিল এগ্রেশন, তাই অ্যামেরিকা সরকারের কৌতূহল হল যে, যখন মিলিটারি এগ্রেশন এটি নয় এবং সিভিল এগ্রেশন তখন আমরা কিছু সামরিক সরঞ্জাম পাঠিয়ে দেই। এত বিতর্কের পরও কি মন্ত্রী মহোদয় একথা বিশ্বাস করবেন যে আমাদের বিদেশী দূতাবাসের কর্তব্য হচ্ছে স্বদেশের স্বার্থ রক্ষা করা এবং দেশের কল্যানার্থে দেশের স্বার্থে আঘাত আসে এমন ঘটনাবলি সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রদান করা। মাননীয় মন্ত্রী বলেছেন, সাধারণ অর্থে যা বুঝায় তা আমরা করি না। এ কথা কে বলে যে তারা স্পাই এর কাজ করবে এটা কেউ বলেনি স্পাই এর কাজ করা আর সঠিক তথ্য ও তদন্ত করে সরকারকে অবহিত করা এ দুইয়ের মধ্যে অনেক পার্থক্য।

সরদার শরণ সিং: স্যার, এই প্রশ্নের উত্তর হল ‘হ্যাঁ’।
দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর হল – আমি বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে ‘বেসামরিক আগ্রাসন’ শব্দ ব্যবহার করিনি। তবে আমি কিছু অভিব্যক্তি দিয়েছি যে ভারতীয় টেরিটরির মধ্যে উদ্বাস্তুদের বৃহৎ অন্তঃপ্রবাহ আমাদের বিরুদ্ধে আগ্রাসন। কারণ এই বৃহৎ সংখ্যার প্রবেশের ফলে আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ঝুঁকির সম্মুখীন। কিছু অভিব্যক্তি আমি ব্যবহার করেছি। আমি সন্মানিত সদস্যকে বলতে চাই যে পাকিস্তানে অ্যামেরিকার অস্ত্র পাঠানোর ব্যাপারে কিছু ছিল না।

প্রথম জাহাজটা আমি সেখানে যাবার অনেক আগেই ছেড়েছে। এব্যাপারে কারো মনে কোন দ্বিধা থাকার কথা না। এবং আমি মনে করি মাননীয় মন্ত্রী কথাকে টেনে লম্বা করছেন এবং সেটাকে এখানে লাগানোর চেষ্টা করছেন। একটি বিষয় আমি মানি যে আমাদের দূতাবাসকে আমাদের নিরাপত্তা ও স্বার্থ রক্ষার জন্য সব উপায়ে কাজ করতে হবে এবং তারা তা করে যাচ্ছে। আমাদের সব সময় বেনারস এর মত বিষয়গুলো নিয়ে ভাবলে চল্বেনা। আমাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানকে ছোট করায় কোন ক্রেডিট নাই।

শ্রী রাজনারায়নঃ মহোদয়, আমার প্রশ্নের জবাব পাইনি। আমি বলেছিলাম, মে মাসের যেসব অস্ত্র সেখান থেকে এসেছিল সে সম্পর্কে ভারত সরকার তাদেরকে জিজ্ঞেস করেছিলেন কিনা যে এসব অস্ত্র কি জন্য পাঠানো হল? মে মাসে অস্ত্র পাঠানো, এখন জুন মাস চলছে, আমি মন্ত্রী মহাশয়ের নিকট হতে একটা সুস্পষ্ট উত্তর চাই যে মে মাসে অস্ত্র পাঠানো হয়েছিল কিনা।
সভাপতিঃ এখন আপনি বসুন।
সর্দার সরণ সিংঃ আমি বলেছি যে আমরা এটা জানতে পেরেছি নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার রিপোর্ট থেকে। আমি বলেছি আমরা এটাকে গুরুতরভাবে দেখছি।
শ্রী রাজনারায়নঃ মহোদয়, আমার প্রশ্নের উত্তর এখনো আসেনি।
সভাপতিঃ তার মনে ছিলোনা।
শ্রী রাজনারায়নঃ মে মাসে অস্ত্র এলো এটাও জানা ছিলোনা। এখন আপনারা উপলব্ধি করুন এই সরকার কীভাবে আমাদের দেশ রক্ষা করতে সক্ষম হবে। …
শ্রী গোদে মুরাহারি(উত্তর প্রদেশ)ঃ এখানে কিছু সন্দেহ আছে। জনাব রাজনারায়ণ মে মাসের শিপমেন্টের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করছেন – এটা মন্ত্রী নিউ ইয়র্ক যাবার অনেক আগের ঘটনা।
রাজ নারায়নঃ মহোদয়, আমি আরও জানতে চাই, বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে কেন বিলম্ব করা হচ্ছে? এই সরকার এযাবৎ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেননি। মে মাসে যেখান থেকে অস্ত্র এলো, তার পর থেকে জনতার দাবী, সরকার বাংলাদেশকে সত্বর স্বীকৃতি প্রদান করুক। এই সরকার বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়ে ফেললে অ্যামেরিকা, ব্রিটেন ও রাশিয়া পাকিস্তানকে অস্ত্র দিতে সাহসী হত না।
সভাপতিঃ এখন আপনার মত জানা হয়ে গেছে। এর জবাব তিনি প্রথমেই দিয়ে দিয়েছেন।
শ্রী রাজনারায়নঃ স্বীকৃতির প্রশ্নে।
সভাপতিঃ মন্ত্রী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে বলেছেন আমার আর বলার কিছুই নাই। সরকারের … সকলের জানা।
শ্রী রাজনারায়নঃ প্রধানমন্ত্রী তো পাঁচদিন পূর্বে বলেছিলেন।

শ্রী নিরেন ঘোষ: স্যার, আমি জানতে চাই ঠিক কি ধরণের আশ্বাস জনাব শরণ সিং কে U.S.A সরকার দিয়েছে? কারণ তাকে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে U.S.A থেকে পাকিস্তানে কোন অস্ত্র চালান পাঠানো হবেনা। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, পাকিস্তানে মার্কিন সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির ওপর কোন নিষেধাজ্ঞা স্থাপন হয়েছে অথবা লাইসেন্স দেয়া বন্ধ আছে এমন কথা তারা কাউকে বলেননি। তাহলে সঠিক অবস্থান আসলে কি? আমি জানতে চাই।

এল কে ঝা কি তাকে অবহিত করেননি যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সাথে কিন্তু পেন্ডিং লাইসেন্স প্রক্রিয়াধীন ছিল – যার ফলে স্বাভাবিক শিপমেন্ট চলবে – যতক্ষণ পর্যন্ত না অস্ত্র চালানের উপর কোন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তাই আমি জানতে চাই সঠিক অবস্থান কি? যদি এল কে ঝা মন্ত্রীকে এটা জানাতে দরকারি মনে না করেন তাহলে আমি মনে করি তার কাছে ভারতের নিরাপত্তা সুরক্ষিত নয়। তাই তার উচিৎ এই পয়েন্টটি পরিষ্কার করা।

আরেকটি জিনিস হল ভারত সরকারের মতে, পাকিস্তানে এই অস্ত্র চালানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কি উদ্দেশ্য থাকতে পারে? এটি কি এমন যে ভারত ও পশ্চিম পাকিস্তানকে এমন অবস্থায় রাখা যাতে করে উভয়ে বাংলাদেশ ইস্যু দির্ঘায়িত হয়? এতে করে উভয় দেশ নষ্ট হবে এবং তারা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে এই উভয় দেশের উপর তাদের ক্ষমতা স্থাপন করতে পারবে? ঠিক উদ্দেশ্য কী? এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে এতে বাংলাদেশ পরিস্থিতি আরও ঘনীভূত হবে। কিন্তু তার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কী? এই ব্যাপারে সরকারের মূল্যায়ন কী? এটাই আমি জানতে চাই।

তৃতীয়ত, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, ভারত বাংলাদেশের উপর কোনো কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করবে না যতক্ষণ সেখানে নৃশংসতার বন্ধ করা হয়। আমি এটা জানতে চাই অ্যামেরিকা সফরকালে মার্কিন সরকার তাকে কোন আশ্বাস দেন বা না দেন, তারা কি অন্যান্য ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশ ইস্যুতে কোন কনফারেন্সের প্রস্তাব দিয়েছেন? এবং এর পর তিনি খুব খুশী মনে ফিরে আসেন এবং তাকে মিথ্যা আশ্বস্তি দেয়া হয় যে পাকিস্তানে কোন অস্ত্র চালান যাবেনা – যদিও কোন নিষেধাজ্ঞা নেই – এসবই কি চলছে? এবং প্রধানমন্ত্রী ভেবেছিলেন যে কার্ড এখন তার টেবিলে যখন তিনি বললেন যে তিনি কোন কনফারেন্সে যাবেন না যদিনা গণহত্যা বন্ধ হয় – হয়ত ভারত অ্যামেরিকার খেলার ছকে পড়ে গেছে। আমাদের এই অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছে – আমাদের এবং পশ্চিম পাকিস্তানের। আমি বলব পশ্চিম পাকিস্তান – কারণ আমি বাংলাদেশকে স্বীকার করি- সরকার করুক বা না করুক। আমি বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকার করি যা আওয়ামীলীগ নেতা তাজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে। সরকার স্বীকার করুন বা না করুন সেটা ভিন্ন বিষয়। এই অবস্থায় আমি জানতে চাই তিনি তার অবস্থান স্পষ্ট করবেন কিনা যে এই সম্মেলনে কি যায় আসে আর তাকে কি বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে বা তারা ঠিক কি বলেছে।

জনাব চেয়ারম্যান: জনাব ঘোষ, এটা বেশ স্পষ্ট ……. (বাধা)….. আপনার প্রশ্নটি খুবই স্পষ্ট।
শ্রী নিরেন ঘোষ: এবং সর্বশেষে আমি জানতে চাই অ্যামেরিকার এই অবন্ধুসুলভ এবং প্রতিকূল আচরণে হতাশা প্রকাশের বাইরে তিনি আর কোন পদক্ষেপ নেবেন কিনা। সরকার কোন শক্তিশালী ব্যাবস্থা নেবেন কিনা যাতে করে অ্যামেরিকা এই আচরণের জবাব পায়। যদি এটাকে আপনি অনাত্মীয়সুলভ আচরণ বলে থাকেন তাহলে পররাষ্ট্র নীতিতে কাজ করতে হবে। তাই আমি জানতে চাই এই সকল বিষয় পর্যালোচনা করে সরকার তার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবেন কিনা …

জনাব চেয়ারম্যান: ঠিক আছে, জনাব ঘোষ. এখন আপনি পুনরাবৃত্তি করছেন। দিয়া করে বসুন।

সরদার শরণ সিং: মার্কিন মুখপাত্র বিবৃতি দেবার আগে দেখাবার চেষ্টা করছেন যে এই শিপমেন্ট আগে থেকেই অনুমোদিত ছিল যার জন্য অনুমোদিত লাইসেন্স আছে। কিন্তু আমাদেরকে সব সময় আশ্বস্ত করা হয়েছে যে এরকম আর কোন সাপ্লাই দেয়া হবেনা। একারণেই আমরা আমাদের যে আশ্বাস দেয়া হয়েছে তা বাস্তবায়নের উপর জোর দিচ্ছি – তাই আমরা লাইসেন্স ইস্যু এর উপর জোর দিচ্ছিনা – কারণ আমাদের মূল লক্ষ্য শিপমেন্ট থামানো। আমি মনে করি এ পর্যন্ত আমাদের এম্বাসেডরের কোন ভুল হয়নি। দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর দেয়া আমার জন্য সহজ নয়। কারণ তিনি জিজ্ঞেস করেছেন পাকিস্তানে অস্ত্র সরবরাহে অ্যামেরিকার উদ্যেশ্য কি? তাদের রাজনৈতিক উদ্যেশ্য যাই হোক না কেন আমরা বরাবরই বলে এসেছি অ্যামেরিকা বা চিন থেকে পাকিস্তানকে শক্তিশালী করার জন্য যা কিছু পাঠানো হোক না কেন আমরা তার বিরুদ্ধে। আমরা এইসকল সরকারকে এগুলো বন্ধ করতে বলেছি। ইনফ্যাক্ট এই বিশেষ ক্ষেত্রে অ্যামেরিকা নিজেই বলেছিল যে তারা পাকিস্তানে অস্ত্র চালান বন্ধের প্রস্তাব দিতে যাচ্ছেন। এবং আমি বলতে পারছিনা এর রাজনৈতিক উদ্যেশ্য কি। সম্ভবত আরও কিছু দেশ সম্পর্কে এটা ভাবতে পারি। তৃতীয়ত তিনি জানতে চেয়েছেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অ আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সাথে কোন কনফারেন্সের প্রস্তাব তারা দিয়েছে কিনা। না এরকম কোন আলোচনা উঠেনি।

শ্রী নিরেন ঘোষ: প্রধানমন্ত্রী কিছু সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে ভারত বাংলাদেশের ওপর কোনো কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করবে না। এই অংশগ্রহণকারী কারা তিনি তা বলেননি। এজন্যই আমি জিজ্ঞাসা করলাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার কোন আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিল কিনা। হোক তা আপনার দিক থেকে বা তাদের।

সরদার শরণ সিং: জবাব নেতিবাচক। চতুর্থ প্রশ্ন সম্পর্কে বলতে চাই, আমাদের বর্তমান মনোভাব হচ্ছে এই সরবরাহ বন্ধ করতে হবে। এবং কোন আর কোন সরবরাহ যাতে না হয় তাও নিশ্চিত করতে হবে। এবং আমাদের এটা দীর্ঘায়ীত করা যাবেনা। এবং পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়গুলো একসাথে দেখতে হবে কারণ এগুলোর কিছু লক্ষ্য আছে এবং আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে অস্ত্রের চালান বন্ধ করার জন্য সব রকমের পদক্ষেপ নেয়া। সন্মানিত সদস্যের যদি চিনে কোন প্রভাব থাকে আমি তাকে অনুরোধ করব তিনি যেন চীনা সরকারকে সরবরাহ বন্ধ করতে বলেন।

শ্রী নিরেন ঘোষ: সেখানে আপনার লোক আছে আর এখানেও তাদের লোক আছে। আমাদের সাথে চিনের কোন যোগাযোগ নাই। এখন মন্ত্রীর মার্কিন সরকারের প্রতি অধস্তন মনোভাবের কারণে তা বাংলাদেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার শামিল হল …….
জনাব চেয়ারম্যান: আমি আর কোন প্রশ্নের অনুমতি দিচ্ছি না।