শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৯২। রাজ্যসভায় বিতর্ককালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যবর্তী ভাষণ | ভারত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় | ২৭ মার্চ, ১৯৭১ |
২৭ মার্চ এর উপরে রাজ্য সভায় বিতর্কে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পারমানবিক শক্তি বিষয়ক মন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী, এবং তথ্যমন্ত্রী (শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী):
ডেপুটি চেয়ারম্যান সাহেব, পাকিস্তানে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আমরা মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করছি। আমি পূর্ব বাংলার নির্বাচনের কথা বলছি, আশা করেছিলাম যা তাদেরকে একটি সম্ভাবনাময়, একতাবদ্ধ এবং শক্তিশালী জাতি হিসেবে সামনের দিকে নিয়ে যাবে। কিন্তু আমার কলিগ সরদার সাহেব যা বললেন, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের বদলে তারা একটি অন্ধকারাছন্ন, বেদনাদায়ক পথের দিকে এগুচ্ছে, যেখানে আছে অনেক দুঃখ কষ্ট, সত্যি কথা বলতে গোটা জনগোষ্ঠির জন্য দুঃখ কষ্ট একটি লঘু শব্দ। আমি নিশ্চিত, রাজ্যসভার সম্মানিত সদস্যগন এটা অনুধাবন করবেন, আমাদের হৃদয় যতই দুঃখ ভারাক্রান্ত হোক না কেন, পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের দুঃখ কষ্টের কথা আমরা যতই অনুধাবন করি না কেন, রাজ্যসভার সম্মানিত সদস্যগন যে ভাষায় সেটা বলছে, সেটা আমরা সরকারি ভাবে বলতে পারি না। সত্যি কথা বলতে, এর কারন হলো, আমরা বর্তমান সময়ের ঐতিহাসিক গুরুত্ব নিয়ে সচেতন, আবার এটাও মাথায় রাখা জরুরি, এই মুহূর্তে একটা ভুল শব্দ, ভুল পদক্ষেপ এর মাসুল আমাদের অনেক চড়া দিতে হতে পারে, যা আমাদের আমাদের লক্ষ্য অর্জন কে সদূরপরাহত করে ফেলতে পারে।
রাজ্যসভা অবগত যে আমাদের আন্তর্জাতিক নিয়মনীতির মধ্যে থেকেই কাজ করে যেতে হবে। এটা দেখে ভালো লাগছে যে সব দল গুরুত্বপূর্ণ কিছু পয়েন্ট তুলে ধরেছে। যেমন ধরা যাক, স্বতন্ত্র পার্টি শ্রী মুজিবর রহমান এর সামাজতন্ত্রপন্থী কার্য্ক্রম এর প্রশংসা করেছে। জনসঙ্ঘ তাঁর ধর্মনিরপেক্ষ নীতিকে সমর্থন দিয়েছে এবং বলেছে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ আমাদের ভাই। আমি আশা রাখব, তারা সেই একটি সমর্থন এবং সহানুভূতি আমাদের দেশের জনগনের জন্য ও রাখবে। আমি আগেই বলেছি, পূর্ব পাকিস্তানে কি ঘটছে, সে বিষয়ে আমরা সম্পূর্ণ অবগত। এর অর্থ, সেখানকার জনগনের উপর যা ঘটছে, তাদের দুঃখ দুর্দশা এবং আমাদের দেশের জন্য তা কি বিপদের কারন হতে পারে, সে বিষয়ে ও আমরা অবগত। তাই বিভিন্ন কারনে এই বিষয়ে আমরা আগ্রহী, প্রথমত, আমাদের একজন রাজ্য সভার সদস্য যা বললেন, শ্রী মুজিবুর রহমান যেই মূল্যবোধগুলো ধারণ করেন যেমন, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা আমরা সেই একই মূল্যবোধের জন্য লড়াই করি, সেই একই মূল্যবোধ ধারণ করি। এর সাথে সেখানকার জনগণ যেভাবে মুজিবর রহমানের পিছনে এই মূল্যবোধগুলো নিয়ে দাঁড়িয়েছে, তার স্বাতন্ত্রতা আমাদের মুগ্ধ্য করেছে এবং তা নিয়ে আমরা সচেতন। সেখানে যা ঘটছে, তা নিয়ে আমরা গভীরভাবে ব্যথিত এবং রাগান্বিত কিন্তু আমি রাজ্যসভার সদস্যদের কাছে আবেদন করতে চাই, এই মুহূর্তে সরকারের এর চেয়ে বেশি কিছু করার নেই এবং এটা যদি সাধারণ জনগনের বিতর্কের বিষয় হয়ে যায়, তা কোনভাবেই ভাল হবে না। আমার মনে হয় না, রাজ্যসভার সম্মানিত সদস্যগন এই মুহূর্তে সব প্রশ্নের উত্তর আশা করছেন। আমার মনে হয়, এই আলোচনার মূল উদ্দেশ্য হলো আমরা যাতে এই বিষয়ে তাদের মনোভাব এবং পরামর্শ জানতে এবং শুনতে পারি। সম্মানিত সদস্যবৃন্দ অবশ্যই অবগত আছেন, আমি বিরোধী দলের নেতাদের সাথে সকালে এই বিষয়ে আলোচনা করেছি এবং তা চালিয়ে যাব। পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাবল আমরা যতটা গভীরভাবে সম্ভব পর্যবেক্ষন করছি এবং একই সাথে আমরা বিরোধী দলের নেতা এবং রাজ্যসভার সম্মানিত সদস্যদের সাথে এই বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি এবং এই বিষয়ে তাদের মনোভাব বুঝার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমার স্বীকার করতে কোন অসুবিধা নেই, সব সময় আমরা যা চাই, সে অনুসারে হয়তো আমরা কাজ করতে পারি না নানা প্রতিকূলতা এবং পরিস্থিতির চাপে কিন্তু এই মুহর্তে সম্ভবপর সবকিছুই আমরা তাদের জন্য করব এবং তাদের পরামর্শ দিব।
শ্রী মহাবীর ত্যাগী: প্রধানমন্ত্রী আমাদের নিশ্চিত করতে পারেন যে, আমাদের ভারতের আকাশসীমা পাকিস্তান ব্যবহার করতে পারবে না?
শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী: আমি রাজ্যসভাকে এবং মাননীয় সদস্যকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, আমাদের আকাশসীমা পাকিস্তানের জন্য খুলে দেবার কোন ইচ্ছা আমাদের নেই।