শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৭৮। দিল্লীর আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশের মুক্তির জন্য সশস্ত্র বিশবাহিনি গঠনের আহবান | দৈনিক যুগান্তর | ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ |
দিল্লী সম্মেলনে বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক ব্রিগেড গঠনের প্রস্তাব
(বিশেষ সংবাদদাতা)
নয়াদিল্লী, ১৮ সেপ্টেম্বর – আজ এখানে বাংলাদেশ সম্পর্কে তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধন দিনে মুক্তিবাহিনীর হাতে হাত মিলিয়ে জঙ্গিশাহির বিরুদ্ধে লড়াই এর জন্য একটি আন্তর্জাতিক ব্রিগেড গড়ে তোলার প্রস্তাব করা হয়। সর্বোদয় নেতা শ্রী জয় প্রকাশ নারায়ণ ও নেপালের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রী বি পি কৈরালা এ প্রস্তাব করেন।
শ্রী কৈরালা বলেন, প্রস্তাব দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আসবে না। ফরাসি সাহিত্যিক আদ্রে মারলোর অভিমত সমর্পন করে তিনি বলেন যে, এই সময় বাংলাদেশের জনগণ সবচেয়েয় জরুরী যা দরকার তা হচ্ছে কার্যকর সাহায্য। শ্রী মারলো সম্প্রতি এক চিঠিতে বাংলাদেশে সামরিক কমান্ডের ভার নিতে চেয়েছেন। শ্রী কৈরালা বলেন যে, বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে ব্যার্থ হলে বিশ্বের এই অংশের সমস্ত মানুষের মুক্তি সংগ্রাম ব্যার্থ হবে।
এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সমবেত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের বিশিষ্ট নাগরিকরা বাংলাদেশের ব্যাপক নরহত্যার তীব্র নিন্দা করেন এবং সেখানকার মানুষের আত্ম নিয়ন্ত্রণ অধিকার সমর্থন করেন। তারা সকলেই এক বাকয়ে স্বীকার করেন যে, আধুনিক ইতিহাসে এই হত্যাকাণ্ডের কোন তুলনা নেই।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচিত অন্যান্য সদস্যদের অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার দাবী জানানো হয়।
সম্মেলনে গৃহীত এক সর্বসম্মত প্রস্তাবে মুজিবের গোপন বিচারের নিন্দা করা হয় এবং এর থেকে বিরত রাখতে পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য বিশ্বের রাষ্ট্রগোষ্ঠীর কাছে আবেদন জানানো হয়। প্রতিনিধিরা সবাই দাঁড়িয়ে উঠে প্রস্তাবের প্রতি তাদের সমর্থন জানান।
বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানিবিক মূল্য রক্ষায় যারা জীবন বিসর্জন দিয়েছেন, তাদের স্মৃতির উদ্যেশ্যে দুমিনিট নীরবতা পালন করে সম্মেলনের সূচনা করা হয়।
২৪ টি দেশের প্রতিনিধিরা উদ্বোধনি অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন সর্বোদয় নেতা শ্রী জয় প্রকাশ নারায়ণ।
স্পেনের গৃহযুদ্ধের সময় যেমন করা হয়েছিল, বাংলাদেশের মুক্তির জন্য সেরকম একটা সশস্ত্র আন্তর্জাতিক ব্রিগেড গড়ে তোলার প্রশ্ন ভেবে দেখতে সর্বোদয় নেতা জয় প্রকাশ জি আহবান জানান।
তিনি মনে করেন, প্রতিটি পাকিস্তানী সৈন্য বাংলাদেশ থেকে সরে না গেলে এবং বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিণত না হওয়া পর্যন্ত শরনার্থি দেশে ফিরে যাবেনা।
এই পরিপ্রেক্ষিতে শ্রী নারায়ণ বিপুল হর্ষধনীর মধ্যে বলেন, ফরাসী বুদ্ধিজীবী আদ্রে মারলো বাঙ্গালী গেরিলাদের সাহায্যে এগিয়ে আসার যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তাঁকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাতে হবে। আদ্রে মারল শুধু একজন বিশিষ্ট লেখকই নন – তিনি স্পেনের যুদ্ধে একজন গেরিলা নেতা এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্রান্সে বিরোধী নেতা ছিলেন।
সামরিক শাসনের অবসানের জন্য পশ্চিম পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান সোচ্চার দাবীর উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মর্মান্তিক ঘটনার জন্য যিনি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের চেয়ে কোন মতেই কম দামী নন, সেই ভুট্টোও আজ ঐ দাবী জোর গলায় তুলেছেন। তিনি আরও বলেন, বালুচিস্তান, উত্তর পশ্চিম সীমান্ত ও সিন্ধুর মোট ছোট ছোট প্রদেশও এখন ব্যাপক অসন্তোষ।
তিনি বলেন, পূর্ব বাংলা নিছক একটি উপনিবেশে পরিণত হয়েছে। নানা কারণে পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক ও অসামরিক অফিসারের একটা ক্ষুদ্র অংশ সেখানকার রাজনৈতিক ও অর্থণৈতিক ক্ষমতা সব সময় ভোগ করে আসছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও শেখ মুজিবুর এবং তার দল কখনো পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে আসার কথা ভাবেনি। বরং মুজিব বলেছেন, সংখ্যাগরিষ্ঠরা কখনোই সংখ্যালঘুদের কাছ থেকে বেরিয়ে আসেনি।
পাকিস্তানের ঘটনাবলির পটভূমিকা বিবৃতি করে শ্রী নারায়ণ বলেন, পাকিস্তান ভেঙ্গে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের নেতারা দায়ী নন – দায়ী পাকিস্তানী জঙ্গিশাহি।