You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.19 | মুক্তিফৌজের চুয়াডাঙ্গা দখল, আখাউড়ায় পাল্টা আক্রমণ | যুগান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

মুক্তিফৌজের চুয়াডাঙ্গা দখল, আখাউড়ায় পাল্টা আক্রমণ

 

আগরতলা, ৮ই এপ্রিল (ইউএনআই)-মুক্তিফৌজ আজ অপরাহ্নে পাকসৈন্যদের দ্বারা অধিকৃত রেল জংশনের ওপর প্রচণ্ড রকেমর পাল্টা আক্রমন শুরু করেছে। মুজিবেন সৈন্যরা জংশনে ওপর অবিশ্রান্ত মর্টারের গোলাবর্ষণ করেছে।

কৃষ্ণনগর থেকে পাওয়া এক খবরে প্রকাশ, মুক্তিফৌজ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে চুয়াডাঙ্গা খন্ডের ওপরও আজও প্রচণ্ড পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছে। গত রাত্রে পাকবাহিনী মুক্তিফৌজের আক্রমণের মুখে পিছু হটতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা ছেড়ে যেত বাধ্য হয়। ইউএনআই-র খবর, বাংলাদেশের মুক্তিফৌজ তীব্র সংর্ঘষের পর কুষ্টিয়া জেলার সদর শহর চুয়াডাঙ্গা আবার দখল করে নিয়েছে। আজ রাত্রে সীমান্তের ওপার থেকে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে তাঁরা এটা জানিয়েছেন। মুক্তিফৌজ চুয়াডাঙ্গা শহরের প্রান্তে মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ মাথাভাঙ্গা সেতুটিও দখল করেছে।

কৃষ্ণনগর থেকে পিটিআই’র খবরে বলা হয়েছে যে, পাকিস্তানী সৈন্যরা মেহেরপুর দখলের জন্য অভিযান শুরু করেছে এবং পরবর্তী সৈন্যরা মেহেরপুর থেকে চার মাইল দূরে আমজুফিতে পৌছেছে। আমজুফি থেকে ভারত সীমান্ত সাত মাইল দুরে। আমজুফি থেকে তারা মেহেরপুরের ওপর গোলাবর্ষন করছে।

এর আগের এক খবরে বলা হয়েছিল যে, পাকিস্তানীরা কাল আখাউড়া রেল জংশন দখল করার পর আজ সকাল দশটার সময় হাওরী নদী পার হয়ে শহরে পৌঁছায়। শহরে ঢুকেই তারা ঘরবাড়ী এবং বাজারে আগুন লাগাতে থাকে। ভারত সীমান্ত থেকে আগুনের শিখা দেখা যেতে থাকে। ভারতীয় সীমান্ত এখান থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে।

আগরতলা থেকে খবর পাওয়া গেছে যে, পাকিস্তানীরা একন আখাউড়া ও ব্রাহ্মনবাড়িয়ার মধ্যে রেলপথ মেরামত করতে শুরু করেছে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের বন্দুক দেখিয়ে কাজ করতে বাধ্য করছে। পাকিস্তানী আক্রমণের পূর্ব পর্যন্ত মুজিবের অনুবর্তীরা আখাউড়া পর্যন্ত ট্রেন চালু রেখেছিলেন। কাল রাত্রে পাকিস্তানীরা আখাউড়া ষ্টেশনে ঢোকার আগে ষ্টেশনের সমস্ত কর্মচারীরা আগরতলায় চলে গেছে।

বরকল জলাধার ধ্বংস করার চেষ্টাঃ শিলং থেকে নীলকমল দত্ত জানাচ্ছেন যে, মুক্তিফৌজের তৎপরতা রোধে পাকিস্তানী ক্রমাগত নোয়াখালী জেলার ফেনী ও চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর বরকল জলাধারের ওপর বিমান আক্রমণ চালাচ্ছে। চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলের কাপতাইর ওপরও তারা বিমান থেকে রকেট ও মেশিনগানের গুলিবর্ষণ করেন। এখানে কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র অবস্থিত। বিদ্যুত কেন্দ্র দখলের জন্য কাপ্তাই ও কুমিরা অঞ্চলের ওপর তারা ছত্রীসৈন্যও নামিয়েছে।

লাকসাম অঞ্চলে মেজর জিয়ার অধীন মুক্তিফৌজের একদল পাক-সৈন্যর ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়।

সারা সেতুর কাছে কাছে প্রচণ্ড লড়াইঃ ভেড়ামারা থেকে আগত পুনঃগঠিত মুক্তিফৌজের আরেকটি দল পাক-বাহিনীর সরবরাহ ব্যবস্থা বিকল করে দিয়েছে। এই পাকবাহিনী পাবনা থেকে পাকসি-কুষ্টিয়া সড়কের দু’ধারে আক্রমণ চালাতে চালাতে কুষ্টিয়ার দিকে এগিয়ে আসছিল।

হার্ডিঞ্জ সেতুর কাছে প্রচণ্ড লড়াই চলছে। মুক্তিফৌজ কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গায় অবস্থিত পাক-বাহিনীকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে এবং গড়াই নদীর পূর্ব ধার থেকে ফরিদপুরের দিকে অগ্রসরমান শক্রসৈন্যদের গতিও প্রতিহত করেছে। সংবাদে আরও জানা গেছে যে, হাজার হাজার যুবক বাংলাদেশ সরকারের পুনর্গঠিত সেনাবাহিনীতে যোগদান করেছেন।

পাবনা-কুষ্টিয়া সংযোগ পথ বিচ্ছিন্নঃ গৌহাটি থেকে পাওয়া পিটিআই’র খবরে প্রকাশ, আজ মুক্তিফৌজ এক ত্বরিত আক্রমণে পাবনা ও কুষ্টিয়ার মধ্যবর্তী পাকফৌজের সংযোগ রক্ষার ও সরবরাহের পথ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। সীমান্তের ওপার থেকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে এখানে এই সংবাদ পৌঁছে। মুক্তিফৌজের এই সাফল্যের বিস্তারিত সংবাদ এখনও পাওয়া যায়নি।

ইতিমধ্যেই কুষ্টিয়া থেকে আগত শরণার্থীদের মুখে সেখানে পাকফৌজের নিষ্ঠুর অত্যাচার নানা কাহিনী শোনা যাচ্ছে। তারা কুষ্টিয়া শহরের নিকটবর্তী গ্রামগুলির তিন হাজারেরও বেশী ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। পাকফৌজ পৌঁছানোর আগেই গ্রামবাসীরা গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছিল। ফরিদপুর অঞ্চলে মুক্তিফৌজের প্রচণ্ড বাধার ফলে পাকফৌজের অগ্রগতি সম্ভব হয়নি।

দিনাজপুর অঞ্চলে মুক্তিফৌজের নিয়ন্ত্রণাধীন হিলি থেকে পাঁচশ কিলোমিটার দূরে ফুলবাড়ীতে এক গ্যারিসন পাকফৌজ দেখা গেছে।

ভারত সীমান্ত থেকে সাত মাইল দূরে লড়াইঃ আজ রাত্রে ভারতের সীমান্তবর্তী শহর কৃষ্ণনগরে খবর পৌছায় যে, ষাটটি সামরিক গাড়ীতে চেপে পাকফৌজ মেহেরপুর প্রবেশ করে এবং প্রবেশকালে দু’দিকে বেপরোয়াভাবে অসামরিক ব্যক্তিদের হত্যা করে ও গ্রামগুলিতে আগুন জ্বালায়।

এখন মুক্তিফৌজ ও পাকফৌজের মধ্যে লড়াই চলছে ভারত সীমান্ত থেকে মাত্র সাত মাইল দূরে এবং কৃষ্ণনগর-করিমপুর সড়ক থেকে গোলাগুলির আওয়ার শোনা যাচ্ছে।

-যুগান্তর, ১৯এপ্রিল, ১৯৭১