সিলেট এবং কুমিল্লার উপর চাপ বজায় রাখছে পাকবাহিনী
ভেস্তে গেল রাজশাহী দখলের প্রচেষ্টা
আগরতলা, ১৫ই এপ্রিল- প্রথম তিন সপ্তাহের যুদ্ধের ফলাফল একত্রিত করলে মুক্তিবাহিনীর প্রাপ্তি প্রচুর বলে পরিলক্ষিত হলেও পাকবাহিনী এখনও পর্যন্ত দেশের পশ্চিম ও পুরবাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলিতে মুক্তিবাহিনী উৎখাতের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে কিছুটা হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।
পূর্বদিকে পশ্চিম পাকিস্তানীরা সিলেট, চাঁদপুর এবং কুমিল্লার উপর চাপ বজায় রাখছে এবং মনে হচ্ছে তারা ঢাকা এবং চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী যোগাযোগ পুনস্থাপন করতে চাচ্ছে।
সীমান্তের ওপার থেকে আসা সংবাদমাধ্যম জানায়, মুক্তিবাহিনী আজ সারাদিনই রাজশাহীর দিকে পাকবাহিনীর এগিয়ে আসা ঠেকাতে ব্যাপক যুদ্ধাভিযান চালিয়েছে এবং এখনও শহরের বহির্ভাগে তারা পাহারা বজায় রেখেছে।
তিতাস নদীর উজনেশ্বর ব্রিজের উপর সঙ্ঘটিত এক যুদ্ধে মুক্তিবাহিনী পাকবাহিনীকে হারিয়ে দিয়েছে এবং তাদের পালাতে বাধ্য করেছে। পাকবাহিনী নদী পার হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কব্জা করার সংকল্প করেছিল, যা বর্তমানে মুক্তিবাহিনীর দখলে আছে।
আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় ময়মনসিংহ শহরের উপর চলা পাকিস্তানী বিমান হামলা বন্ধ আছে।
পূর্বের মতই পাকবাহিনী সিলেট শহরের উত্তরাংশে তাদের শক্তিবৃদ্ধি করছে এবং মুক্তিবাহিনী সুরমা নদীর দক্ষিন ভাগ হতে নিজেদের অবস্থান সরিয়ে নিয়েছে।
কুমারদহের কাটাখালি নদীর উপর অবস্থিত ব্রিজটি উড়িয়ে দিয়েছে মুক্তিবাহিনী এবং এর মাধ্যমে বগুড়ায় তাদের দখল অক্ষত রাখছে।
সীমান্তবর্তী শহর কসবায় পাকিস্তানী আর্মি অন্তর্বর্তী জলপথ ব্যবহার করে মুক্তিবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করছে এবং তারা শহরে ভারি মর্টার শেল চার্জ করেছে।
কুষ্টিয়াতে এখনও মুক্তিবাহিনীই দখলে আছে। যদিও আজ রংপুর থেকে দিনাজপুরের অবরুদ্ধ পাকবাহিনী অবমুক্ত করতে পাঠানো একটি সশস্ত্র দল আজ শহরটিতে পৌছায় এবং মুক্তিবাহিনীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়।
চুয়াডাঙ্গা থেকে পাওয়া এক খবরে জানা যায়, হারডিংস ব্রিজের কাছে ঈশ্বরদীতে আজ প্রবল যুদ্ধ সঙ্ঘটিত হয়েছে।
কুমিল্লা সেক্টরের গঙ্গাসাগর এলাকাতেও আজ চরম যুদ্ধ চলেছে। পাকিস্তানী আর্মি এই অঞ্চলে আক্রমনের সময় ভারী আর্টিলারি বন্দুক ব্যবহার করে, যার শব্দ আগরতলা থেকেও পাওয়া যাচ্ছিল। আগরতলা থেকে পাওয়া খবরে জানা যায়, পাক আর্মি কুমিল্লা সেক্টরের আখাউড়া নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে জংশন দখল করতে বদ্ধপরিকর।
-হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড, ১৬ই এপ্রিল, ১৯৭১।
–