You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.05.13 | গান্ধী শান্তি ফাউন্ডেশনের সভায় বাংলাদেশ প্রশ্নে জয় প্রকাশ নারায়ণের ভাষন | দ্যা টাইমস অব ইন্ডিয়া - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সূত্র তারিখ
১৩৩। গান্ধী শান্তি ফাউন্ডেশনের সভায় বাংলাদেশ প্রশ্নে জয় প্রকাশ নারায়ণের ভাষন দ্যা টাইমস অব ইন্ডিয়া ১৩ মে ১৯৭১

শরণার্থী পুনর্বাসন একটি গুরতর সমস্যাঃ জয় প্রকাশ
( স্টাফ রিপোর্টার )

নয়াদিল্লী, ১৪ই মে, সর্বদয়া নেতা জনাব জয়প্রকাশ নারায়ন আজকে বলেছেন আরো ১০ মিলিয়ন শরণার্থী সীমান্ত পার হয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে পারে যেখানে ইতিমধ্যে ২৫ মিলিয়ন শরণার্থী এসে আশ্রয় নিয়েছে।

গান্ধী শান্তি ফাউন্ডেশনে বক্তৃতা দেবার সময় জনাব নারায়ণ বলেন, যেসব শরণার্থী পূর্ব পাকিস্তানের নৃশংসতা থেকে পশ্চিম বাংলায় পালিয়ে এসেছে তাদের পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনা করা একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। শীঘ্রই বর্ষা শুরু হবে এবং তখন ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে।

তিনি আরো বলেন, এটি দুঃখের বিষয় যে যখন ১.৫ মিলিয়ন ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন কার্যক্রম চলাকালে সারা বিশ্বের নজর সেদিকে ছিলো কিন্তু এটি দুর্ভাগ্য যে পূর্ব বাংলার দুর্ভাগা মানুষের খোজ নেয়ার জন্য কাউকে দেখা গেলো না। এই শরণার্থীদের বেশীরভাগই মুসলিম কিন্তু আরব দেশগুলো এমনকি মুসলিম নেতারাও তাদের দুর্দশার সময় নীরবতা পালন করেছে।

সর্বদয়া নেতা আরো বলেন, তিনি রবিবারে যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত রাশিয়া, জাপান ও দক্ষিন – পূর্ব এশিয়ান দেশগুতে যেয়ে বাংলাদেশের গৃহহীনদের জন্য জনমত সংগঠিত করার জন্য একটি সফর শুরু করবেন। তিনি একজন বিশ্ব নাগরিক হিসেবে দেশগুতে যাচ্ছেন এই আশার সাথে যে সেখানে এই নির্মম বর্বর ঘটনার শিকার মানুষের জন্য কিছু করার মতো সোচ্চার লোকজন থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তাকে বলেছেন, তিনি গেলে অবশ্যই তা ভালো কিছু হবে। জনাব নারায়ণ বলেছেন, তার সফরের পৃষ্ঠপোষকতা করবে গান্ধী সেবা সংঘ, গান্ধী স্মৃতি সংঘ এবং আমেরিকার একজন শান্তিবাদী মানুষ। তিনি এই ব্যাপার নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের নেতাদের সাথেও বৈঠক করেছেন।

মাও এর চাল ( নেতা মাও সে তুং )

জনাব নারায়ণ বলেন, ২৫ মার্চ থেকে বাংলাদেশের ঘটনাপ্রবাহ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, মাও সে তুং জেনারেল ইয়াহইয়া খানকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে সমর্থন করেছেন। তিনি ব্যাপকভাবে পাকিস্তানের কার্যক্রম কে সমর্থন করেছেন কারন তিনি ভাবেন দক্ষিন পূর্ব এশিয়াতে ভারতের প্রভাব রয়েছে এবং যদি বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে তাহলে পাকিস্তান ভেঙ্গে যাবে ও ভারত এ অঞ্চলে একটি প্রভাবশালী দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।

কিন্তু পিকিং পাকিস্তানের উপর থেকে তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করবে যখন চীনাপন্থি সরকার বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসবে। এক্ষেত্রে চায়না বাংলাদেশ আন্দোলনকে সমর্থন করবে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করে। পুরো অঞ্চলটি তখন আরেকটি সাউথ ভিয়েতনামে পরিনত হবে।

শুধুমাত্র চীনই নয় অন্যান্য দেশগুলোও চায়না ভারত দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় তার ন্যায়সঙ্গত ভূমিকা পালন করুক। জনাব নারায়ণ বলেন, অতীতে উভয় সুপার পাওয়ারই পাকিস্তানকে অস্ত্র সহায়তা করেছিলো ভারতকে শুধুমাত্র ছোট বা বড় যুদ্ধে জড়ানোর জন্য।

সর্বদয়া নেতা আরো বলেন, পশ্চিম পাকিস্তানের দ্বারা যে পরিসর ও মাত্রায় নৃশংসতা চালানো হচ্ছে তা বিশ্বাস করাও কঠিন। পূর্ব বাংলা থেকে ঘুরে আসার পর এক সংবাদ সংস্থার সাংবাদিক ধারনা করেছেন সেখানে প্রায় অর্ধ মিলিয়ন লোককে হত্যা করা হয়েছে। এটি অসম্ভব কিছুনা যে পশ্চিম পাকিস্তানের জনগন যদি অনুধাবন পারতো তাদের সৈন্যরা পূর্ব বাংলায় কি করছে পশ্চিম অংশেও আরেকটি বিদ্রোহের সূচনা হতো।

পাকিস্তানের ঘটনাবলি সম্পূর্ণরূপে পাকিস্তানের ঐক্য কে চুরমার করেছিল। আর এসবের জন্য দায়ী হলো দুই কালপ্রিট জেনারেল ইয়ায়ইয়া ও ভুট্টো। তিনি বলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে পাকিস্তানে বিভেদ দেখতে চাইনি, কিন্তু যা ঘটেছে তা সম্পর্ক মেরামতের অযোগ্য”।

বাংলাদেশ সরকারের স্বীকৃতি-সমর্থনে প্রশ্ন উত্তর পর্বের পর জনাব নারায়ণ বলেন, আমি এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মতামতের সাথে একতম নই। বাংলাদেশকে স্বীকৃতির জন্য ১০ মিলিয়ন স্বাক্ষর সংগ্রহ করে সরকারের কাছে আবেদনের জন্য নাশিকে একটি সর্বদয়া সম্মেলন আয়োজনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানের সভাপতি জনাব সি ডি দেশমুখ বলেন, বাংলাদেশের ঘটনা থেকে এটা স্পষ্ট ছিল যে, আধুনিক বিশ্ব নৈতিক বিবেচনা দ্বারা প্রভাবিত হয় না। তারা বেশিরভাগই জাতীয় স্বার্থ দ্বারা পরিচালিত হয়। কিন্তু তাদের জনগনের জনমতে পরিবর্তন আনলেই তাদের নীতি পরিবর্তন হতে পারে। যেমন ইউরোপীয় এবং অন্যান্য দেশ থেকে জনাব নারায়ণের প্রস্তাবিত সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ।