গুরুত্বপূর্ণ রেলশহর পাবর্তীপুর মুক্ত
সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত
৬ এপ্রিল-উত্তরখন্ডের গুরুত্বপূর্ণ রেলশহর পাবর্তীপুরে আজ স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়ল। আজ ভোর না হতেই মুক্তিফৌজের পাবর্তীপুর অভিযান শুরু হয়েছি। দু হাজারের মত মুক্তিফৌজ বীরবিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়লেন পাবর্তীপুরের ওপর। অবশেষে ছিনিয়ে নিয়ে এলেন শত্রু হাত থেকে। পাবর্তীপুর আজ স্বাধীন, শক্রুমুক্ত।
পাবর্তীপুর দখলের আগে এই শহরের দুমাইল দূরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ অফিসে বসে মাঝে মাঝেই গুলির শব্দ শুনছিলাম। বেলা তিনটায় আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আনোয়ার তখন দুটি ষ্টেনগান দেখিয়ে বলেন যে, ওই দুটি তারা পাকিস্তানী সৈন্যদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছেন। আলোচনার কিছু পরেই পাবর্তীপুর থেকে জয়ের খবর আসে। মুক্তিফৌজের মেজর মনসুন আলি ছুটে এসে ওই খবর দেন। আওয়ামী লীগের আর একজন নেতা এম এ কুদ্দুসকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘পাবর্তীপুর দখল’- একথা বলছেন কেন? তিনি বললেন, এই গুরুত্বপূর্ণ জায়গাটি দখলের জন্য গত রাত্রি থেকে পাক সেনারা চেষ্টা করছিল। তারা এই শহর দখলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে।
বিকেলে দিনাজপুরে ও বগুলা থেকেও মুক্তিফৌজের জয়ের খবর আসে। ওই দুই স্থানে পাক সৈন্য-বাহিনী প্রচণ্ড বোমা বর্ষণ করে।
আরও খবরঃ রাজশাহী, ফরিদপুরের যে ক’টি জায়গা পাক সেনারা দখল করে রেখেছে মুক্তিফৌজ তাও দখলের টেষ্টা করছেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হল যে, রাজশাহী, বগুড়া, দিনাজপুর ও পাবনার অধিকাংশ অঞ্চল মুক্তিফৌজের দখলেই।
পূর্ব রণাঙ্গনের খবর
চট্রগ্রাম জলধার ক্ষতিগ্রস্তঃ আগরতলা, ৬ এপ্রিল-সীমান্তের ওপার থেকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে খবর এসেছে, তিন দিন আগে মুক্তিফৌজ চট্টগ্রাম শহরের পশ্চিমাংশে কোর্ট এলাকায় অবস্থিত ওয়াটার ওয়ার্কস এর জলাধার ও পাওয়ার হাউস ক্ষতিগ্রস্ত করে দিয়েছেন। এই এলাকায় পাক বাহিনী দিনরাত্র ঘাঁটি আগলাচ্ছিল।
চট্টগ্রাম শহরের ডাকঘর ও বিমানবন্দর এলাকা সম্পূর্ণরূপে পাক দখলদারদের হাতে। বন্দর এলাকা পরিত্যক্ত জনমানবশূণ্য।
সারা নোয়াখালী জেলা, নোয়াখালীর লগোয়া কুমিল্লার কিছু অংশ এবং চট্টগ্রাম জেলা এখন সম্পূর্ণভাবে পাক সৈন্য মুক্ত। এসব মুক্তঞ্চলে বাংলাদেশ সরকারের অধীনে অসামরিক প্রশাসন ফিরে আসছে।
আবার স্বাধীন বাংলা বেতারঃ “স্বাধীন বাংলা বেতার” কেন্দ্র আবার ফিরে এসেছে। মঙ্গলবার শর্ট ওয়েভে এর অনুষ্ঠান শুরু হয়। তবে ঘোষণাগুলি একরকমই শোনাই যায়নি। আগে এই কেন্দ্রটি ছিল চট্টগ্রামের কাছে, পরে পাক ফৌজ-এর তোপের মুখে উড়ে যায়। নতুন জীবন ফিরে পেয়ে স্বাধীন কেন্দ্রটি ঘোষণা করেছে দুএক দিনের মধ্যেই মিডিয়াম ওয়েভ-এ অনুষ্ঠান প্রচারিত হবে।
সোমবার শিলং- এর সন্ধ্যা ছয়টায় ৮১ থেকে ৮২ মিটারে (শর্ট ওয়েভ) অনুষ্ঠান শোনা যায়। প্রচারিত গানগুলির মধ্যে “আমার সোনার বাংলা” তো ছিলই, উপরন্তু দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের “ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা” গানটি শোনা যায়।
এই বেতার বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তির জন্য এবং জয়ের প্রার্থনা করতে আহবান জানিয়েছে। ধিক্কার দিয়েছে বিশ্বাসঘাতক জঙ্গী স্বৈরতন্ত্রকে-যারা দেশব্যাপী রক্তস্রোতের জন্য দায়ী। আর শেষে সাড়ে কোটি মানুষের হয়ে সমস্ত বিশ্বের শুভেচ্ছা ও সহানুভূতির জন্য আবেদন জানিয়েছে।
-আনন্দবাজার পত্রিকা, ৭ এপ্রিল, ১৯৭১