মুক্তিবাহিনীর সাফল্য অব্যাহত
(রণবিশেষজ্ঞ) বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণ জোরদার হয়ে উঠেছে। প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে টিকতে পেরে বর্বর পাকিস্তানী সৈন্য ক্রমাগত পিছু হটে চলেছে। বাংলার ব্যাঘ্র সন্তানেরা ছলে বলে কলে কৌশলে সমস্ত রণাঙ্গনে শত্রু নিপাত করে চলেছে। বনে বাদাড়ে পাহাড়ে, জঙ্গলে, ধানের ক্ষেতে দামতাত পুকুরে ওঁত পেতে থাকা গেরিলাদের ভয়ে পাক হানাদার বাহিনীর চলাচল এক রকম অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে সর্বক্ষণ তাদের ছাউনিতে আটক থাকতে হচ্ছে। দেশ থেকে অনেকদূরে অথচ পলায়ন করার কোনাে রাস্তা পাক সৈন্যের নেই। ইতিমধ্যেই তাদের মনােবল ভেঙ্গে পড়েছে। লড়াই করার মতাে মনের জোর তারা দ্রুত হারিয়ে ফেলছে। অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের মনােবল উত্তরােত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা দেশের অভ্যন্তরে আক্রমণ তীব্র করে তুলেছেন। জনগণের সঙ্গে মুক্তি বাহিনীর সমন্বয় সাধন প্রক্রিয়া খুব দ্রুত হতে চলেছে। বেশ কিছুদিন আগে থেকেই জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামীদের সাহায্য এবং সহযােগীতা করার জন্য এগিয়ে আসছেন। পাক সরকারের। এজেন্ট এবং দালালরা পালিয়েও বাঁচতে পারছে না। জনগন এই চিহ্নিত গণশত্রুদের দলে দলে নিপাত করছে। যে সকল রাজাকার এতােকাল বাংলার গ্রামাঞ্চলে লুঠতরাজ খুন জখম করে বেড়াচ্ছিলাে সামরিক সরকারের পঞ্চপুটে তারাও আর নিরাপদ থাকতে পারছে না। ফলে যারা ভীতি এবং প্রলােভনের মুখে রাজাকার দলে নাম লিখিয়েছিলাে এখন দলে দলে মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন।
মুক্তিবাহিনীর সমস্ত সংবাদ সংগ্রহ করে প্রকাশ করা আমাদের সংবাদ পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠেনি। এই রিপাের্ট লেখা পর্যন্ত যে সকল বিজয়ের সংবাদ আমাদের কাছে এসেছে, তা হলাে গত ২৫শে অক্টোবর তারিখে মুক্তি বাহিনীর তরুনেরা রংপুর জেলার ভুরংগামারীতে পাক সৈন্যের উপর আক্রমণ চালিয়ে ৭০ জন নিহত এবং ২০ জন আহত করেছে। গত ২৩শে অক্টোবর তারিখে মুক্তিবাহিনী। রংপুর জেলার জগদলঘাটে শক্রর টহলবাহিনীর উপর ঝাপিয়ে পড়ে ৯ জন শত্রুসৈন্য নিহত এবং ৮ জনকে আহত করেছে। একই দিনে স্বাধীনতা সংগ্রামীরা দিনাজপুর জেলার ভেনগুরিয়াবে আক্রমণ চালিয়ে ৬ জন শত্রুসৈন্য নিহত এবং ৪ জনকে আহত করেছে। তাছাড়া স্বাধীনতা সেনানীরা যশাের খুলনা কুষ্টিয়া রণাঙ্গনে শত্রুদের কর্নি থেকে হটিয়ে নিয়ে যায় এবং একজন পাক সেনাকে হত্যা করে। ২১শে অক্টোবর তারিখে মুক্তিবাহিনী দিনাজপুর জেলায়। রায়গঞ্জে আক্রমণ চালিয়ে ২২ জন পাকিস্তানী সেনা নিধন করে । ২৩শে অক্টোবর তারিখে বীর গেরিলারা ময়মনসিংহের বারহাট্টার অভিযান চালিয়ে চারজন পাকিস্তানী সৈন্যকে হত্যা করেছে। ২১শে অক্টোবর তারিখে সিনেটের কালীন স্বাধীনতা সংগ্রামীরা শত্রুসৈন্য বােঝাই ১৫ খানা লঞ্চ এবং ২১ খানা নৌকা ডুবিয়ে দিয়েছে। ২১শে অক্টোবর তারিখে বিলম্বে প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ রংপুর জেলার জয়মনির হাটের নিকট শত্রুসৈন্য স্বাধীনতা সংগ্রামীদের উপর হামলা চালায়। কিন্তু বীর স্বাধীনতা সংগ্রামী তাদের হটিয়ে নিয়ে যায়। এই প্রচণ্ড সম্মুখ যুদ্ধে ১ জন অফিসার সহ ৪০ জন শত্রুসৈন্য হতাহত হয়। একই দিনে মুক্তিবাহিনী রংপুর জেলার ভূরুংগামারীতে পাক বাহিনীর উপর আক্রমণ চালিয়ে ১০ জন শক্রসেনা খতম করে এবং ১ খানি জীব গাড়ী সম্পূর্ণরূপে জ্বালিয়ে দেয়। ২২শে অক্টোবর তারিখে মুক্তিবাহিনী। মিয়াবাজারে হানা দিয়ে ১ জন অফিসারসহ ১০ জন শত্রু সৈন্য নিপাত করে। বর্বর পাক সৈন্যরা ক্রোধে আত্মহারা হয়ে গ্রামবাসীদের উপর নির্যাতন চালায় এবং তাদের ঘরবাড়ী জ্বালিয়ে দেয়।
দাবানল এ ১ : ৪ g
৩১ অক্টোবর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯