শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১২৪। সকল দেশের প্রতি ভারত- বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটির আহবান | প্রচারপত্র | ২ মে ১৯৭১ |
ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটি
একটি নতুন দেশের উদ্ভবকে সকল দেশের স্বাগত জানানো উচিত।
আগে আমাদের এই সংগঠনের নাম ছিল ইন্দো-পাক ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটি। শেখ মুজিবের নেতৃত্বে স্বাধীন এবং সার্বভৌম দেশ হিসাবে বাংলাদেশের উত্থানের পর আমরা আমাদের সংগঠনের নাম পরিবর্তন করেছি। আমাদের সংগঠনের মূল লক্ষ্য ছিল দুই দেশের সংস্কৃতিকে আরো উন্নত করা।
২৫শে মার্চ ‘কাল রাত্রি’ তে পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যরা যেভাবে রক্তের নেশায় উন্মত্ত হয়ে পড়েছিল, তারও প্রায় ২৪ বছর আগে থেকেই পাঞ্জাবি এবং সিন্ধি ব্যবসায়িক পরিবারগুলো দ্বারা নিপীড়িত এবং শোষিত হয়ে আসছিল। আর এখন দেশটি তাদের ইতিহাসের অন্যতম খারাপ সময় পার করছে।
শেখ মুজিব একজন ঐতিহাসিক নেতা। গত নির্বাচনেই তিনি প্রমান করেছেন তার নজিরবিহীন জনপ্রিয়তা। তার দল আওয়ামীলীগ রাজ্যসভা এবং কেন্দ্রীয় সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতা আওয়ামীলীগের হাতে হস্তান্তর না করে ক্ষমতার লোভে অন্ধ ইয়াহিয়া পূর্ব বাংলায় গণহত্যা চালানোর নির্দেশ দেয়। সারা পূর্ব পাকিস্তান ‘বাংলাদেশ’ এ রুপ নিয়েছে। যে সকল অত্যাধুনিক অস্ত্র তাদের হাতে রয়েছে, এর সবই বিদেশ থেকে সংগৃহীত। ফ্যাসিবাদী একনায়ক ইয়াহিয়া খানের উপদেষ্টা ছিল ‘কসাই’ জুলফিকার আলী ভুট্টো। মহিলা, শিশু, বৃদ্ধ, গ্রামের মানুষ, দিনমজুর এবং কৃষকসহ প্রায় ১০ লক্ষ বাংলাদেশিকে হত্যা করা হয়েছে। এই নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের প্রধান লক্ষ্য ছিল হিন্দু সম্প্রদায়। প্রভাষক, আইনজীবী, চিকিৎসক, বযবসায়ি, লেখক এবং সকল বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু মুক্তিবাহিনী এই যুদ্ধে জিততে বদ্ধপরিকর। সমগ্র দেশ আজ প্রতিবাদী। যদিও লাঠি, বর্শা এবং আরো ছোট ছোট আদিম অস্ত্রগুলো যুদ্ধে অনেকটাই পরাভূত। পশিম পাকিস্তানি সৈন্যদের মূলনীতি হচ্ছে তারা গনতন্ত্র এবং স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করছে।
আমাদের সংগঠন থেকে আমরা নিন্ম লিখিত দাবিগুলো উপস্থাপন করছিঃ
১. সভ্য দেশগুলোর দ্রুত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করা দরকার। সভ্যতা, স্বাধীনতা এবং গনতন্ত্রে বিশ্বাসী দেশগুলোর উচিত সামনে এগিয়ে আসা।
২. আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কে দ্রুত বাংলাদেশে প্রেরণ করা দরকার। ইসলামাবাদের অস্বীকৃতি এর গুরুত্ব বুঝাতে সাহায্য করে। ইউ.এন.ও এর নিরবতা অবশ্যই কাম্য না।
৩. দ্রুত বাংলাদেশে গণহত্যা বন্ধ করতে হবে এবং সময়ক্ষেপণ ছাড়াই পশ্চিম পাকিস্তানকে যুদ্ধ বিরতি দিতে হবে।
৪. আমাদের সংগঠন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুগোস্লাভিয়া সরকারকে তাদের সাহসী বিবৃতির জন্য ধন্যবাদ জানায় এবং অনুরোধ করছে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য। আমরা একটি জাতির উপর পাকিস্তানের নিপীড়ন ও শোষনের প্রতি পিকিং এর সমর্থনের নিন্দা জানাচ্ছি।
৫. পশ্চিমা দেশগুলো যারা গনতন্ত্রের চর্চা করে, তাদের উচিত দ্রুত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়া এবং পরিকল্পিতভাবে সাধারন মানুষ হত্যা বন্ধ করা। আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, জাপান, জার্মানি এবং ফ্রান্স এর বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে এই গণহত্যা বন্ধ করার।
৬. আফ্রো-এশিয়ান দেশগুলো, যারা নিরপেক্ষ, তাদের উচিত উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়া। যুগোস্লাভ এবং ইউনাইটেড আরব রিপাবলিক, যারা সবসময় নিপীড়িত আফ্রো-এশিয়ার দেশগুলোর মানুষের পাশে দাঁড়ায়, তাদের অবিলম্বে একটি কনফারেন্সে মিলিত হতে হবে।
৭. এই নতুন দেশটির পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজন চিকিৎসার সরঞ্জাম এবং অন্যান্য সহযোগিতা। একটি প্রশ্ন থেকেই যায়, যদি এইরকম ভাবে হত্যাযজ্ঞ চলতেই থাকে, তাহলে ইউ.এন.ও এর কি দরকার?
৮. পশতুন নেতা বাদশা খানের এগিয়ে আসা উচিত। এক কোটি সীমান্তবর্তী মানুষ এবং বেলুচিস্তান পাঠানরা এই ভয়ংকর পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করতে পারে না।
৯. মুক্তিবাহিনী এই দ্বি-জাতিতত্ত্বকে ভুল প্রমাণ করেছে। এর থেকেই প্রতিয়মান হয় যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর রয়েছে নিজস্ব স্বকিয়তা। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে পৃথিবীর সভ্য দেশগুলোর উচিত নিজেদের সম্পৃক্ত করা। তাদের উচিত ‘বাংলাদেশ’ কে স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসাবে মেনে নেয়া।
১০. বর্বর পাকিস্তানকে ইউ.এন.ও থেকে বহিষ্কার করা উচিত।
ধীরেন ভৌমিক
সম্পাদক
ভারত – বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটি