শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৯৪। শরণার্থীদের ভেতরে বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতা চলছে বলে আসামের মন্ত্রীর বিবৃতি | দৈনিক ‘হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড’ | ২০ জুন, ১৯৭১ |
উদ্বাস্তুদের মাঝে বাংলাদেশবিরোধী অপশক্তি বিদ্যমান – ত্রিপাঠী
(শিলং অফিস থেকে প্রাপ্ত)
১৮ই জুন – কিছু অপশক্তি সীমান্তে উদ্বাস্তু প্রবেশের হার যেসব স্থানে বেশি, সেখানে তাদের মধ্যে বাংলাদেশ বিরোধীতা সৃষ্টির অপচেষ্টা দূরথেকে চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের অপচেষ্টা ফাঁস হয়ে যায় যখন মিছিলথেকে তারা ইয়াহিয়া জিন্দাবাদ স্লোগান দেয়া শুরু করে, জানান আসামের অর্থমন্ত্রী ত্রিপাঠি।
তিনি জানান যে সরকার এদের বিরুদ্ধে শুধু সতর্ক দৃষ্টি রাখলেও জরুরি অবস্থা জারি না থাকায় কোন পদক্ষেপ এখনো নেয়নি।
প্রতিবেশী কিছু রাজ্য উদ্বাস্তুদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে চাইলে কেন্দ্রীয় সরকার তাতে রাজি হয়, যা উদ্বাস্তুদের সাথে অসদাকরণের উদ্দেশে নয় বরং তাদের অবস্থার উন্নতি ঘটানোর জন্যে করা হয়। জনাব ত্রিপাঠি বলেন, এই সমস্যার যথাযথ সমাধান তাদের ছত্রভঙ্গ করার মধ্যে নয়, বরং তাদের দেশে ফিরে যাবার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করার মধ্যে নিয়ত।
ভারত বিদেশী পরাশক্তিদের কাছে পূর্বপাকিস্তানে যাতে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা যায় যেখানে উদ্বাস্তুরা ফেরত যেতে পারে, তা সৃষ্টিচেষ্টার জন্য সম্মত করতে দূত পাঠিয়েছে। অন্যথায় সংঘাত এড়ানো যাবে না। ১ কোটি উদ্বাস্তুর চাপ সামলানো সমস্যা নয়, সমস্যা হলো বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা স্থাপন করা।
এর আগের যুদ্ধে ইংল্যান্ড ও আমেরিকা গণতন্ত্র স্থাপনের জন্যে যুদ্ধ করেছে। কিন্তু এখন যখন পুর্ববঙ্গে গণতন্ত্র ক্রূশবিদ্ধ, তখন তারা নিস্চুপ।
পাকিস্তান ও বাংলাদেশের ৯৯% জনগণ বাংলাদেশের স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে ভোট দিয়েছে, কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক জান্তা তা হিটলারীয় উপায়ে এবং অমানুষিক অত্যাচারের মধ্যে ধ্বংস করে দিতে চায়। ইংল্যান্ড এবং আমেরিকা, যারা গণতন্ত্রের জন্যে এর আগে যুদ্ধ করেছে, তাদের কি শুধু তাকিয়ে দেখা উচিৎ? এর অর্থ কি এই যে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার শুরু তাদের উন্নত রাষ্ট্রের জন্যে, যেমন যখন জার্মানি আর ইংল্যান্ডের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল, কিন্তু তাদের জন্যে নয় যখন একই দেশের দুই অংশের মধ্যে যুদ্ধ লাগে?
দুই দেশের মধ্যে সংঘাত বন্ধ করার চেষ্টা করা যায় কি না তার জন্যে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণই বিষয়।
পাকিস্তানি আর্মির জন্যে ১০ লক্ষ উদ্বাস্তু ভারতের দিকে ঠেলে দেয়ায় ভারত আজ এই সংঘাতে জড়িত। এই সংঘাত এখন শুধু পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়। পাকিস্তানের ভেতরে যা হচ্ছে তার কারণে ভারতও আজ এর মধ্যে জড়িত।
এখন শুধু এক প্রশ্নেরই জবাব চাই, যে বিদেশে ভারতের দূতরা কি কোন সন্তোষজনক জবাব বয়ে নিয়ে পারবেন?