শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৫৫। অস্ট্রীয় বেতারে প্রচারিত প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতকার | ভারত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় | ২৭ অক্টোবর ১৯৭১ |
অস্ট্রিয়ান রেডিওতে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাত্কার
২৭ অক্টোবর ১৯৭১
প্রশ্নঃ অস্ট্রিয়া এবং বিশ্ব সফরে আপনার প্রত্যাশা কি?
উত্তরঃ শুধু বোঝাপোড়া ও বন্ধুত্বের প্রত্যাশা।
প্রশ্নঃ ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধের দোরগোঁড়ায়। ভিজিট অসফল হলে কি করবেন?
উত্তরঃ আচ্ছা, আমি আগেই বলেছি যে আমি শুধু ইউরোপীয় পরিস্থিতি বুঝতে এসেছি। পাশাপাশি নেতাদেরকে আমি ভারত ও এশিয়ার পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারনা দিতে এসেছি। সুতরাং, সাফল্য বা ব্যর্থতার কোন প্রশ্নই ওঠে না। আমি শুধু এটুকু বলতে চাই যে আমি কোন লক্ষ্য নিয়ে আসিনি।
প্রশ্নঃ আপনার মতে কীভাবে একটি সশস্ত্র সংঘাতের পথ পরিহার করা যায়?
উত্তরঃ পূর্ববাংলার পরিস্থিতি রাজনৈতিকভাবে নিষ্পত্তি করতে হবে – যা সেখানকার মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং পূর্ববাংলার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে গ্রহণযোগ্য।
প্রশ্নঃ শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন করাতে ভারত ও পাকিস্তানের মাটিতে স্টেশন করার জন্য ইউ.এন. এর প্রস্তাব পাকিস্তান গ্রহন করলেও ভারত কেন করেনি?
উত্তরঃ প্রথমত, আমরা জাতিসংঘের হাই কমিশনারের কাছ থেকে ১০ জন পেয়েছি যারা ইতিমধ্যে ভারতে শরনার্থি ক্যাম্প ও সীমান্ত পরিদর্শন করেছেন। দ্বিতীয়ত, যদি ভারতে আসেন তাহলে তাদের কাজ কি হবে? তাদের আগে আরও শরনার্থি অনুপ্রবেশ বন্ধ করার ব্যাবস্থা নেয়া উচিৎ যা প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪২ হাজার। তাদের কাছে জানা যাচ্ছে হাজারো ভোগান্তির নির্মম ঘটনা। তাই কেউ এই বিষয়ে আগ্রহ দেখালে তার প্রথম কাজ হওয়া উচিৎ ভারতে উদ্বাস্তুর আরও অন্তঃপ্রবাহ প্রতিরোধ করা। তারপরই শুধুমাত্র পরবর্তী ধাপ বিবেচনা করতে পারেন।
প্রশ্নঃ দ্য ব্রিটিশ সানডে পত্রিকা “অবজার্ভার” আপনাকে ধারালো নখের সঙ্গে একটি ঘুঘু ডেকেছেন। পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থার অবনতি হলে আর কি ঘটবে? সেখানে কি দুর্ভিক্ষ হবে? কী হবে আর কী অবস্থা হবেনা সেটা বড় নয় – এ অবস্থা ভারতের জন্য অসহনীয় হবে।
উত্তরঃ পরিস্থিতি খুব ভয়াবহ। কারণ আমরা মনে করি যে এটি আমাদের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি। আমরা সমস্যার সমাধান হিসেবে যুদ্ধ বিশ্বাস করি না। আমরা দ্বন্দ্ব প্রতিরোধ করার জন্য যতদূর সম্ভব সবকিছু করব। কিন্তু আমাদের জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তা রক্ষা করার ক্ষেত্রে কোন ছাড় দেয়া হবেনা।
প্রশ্নঃ এর প্রায় তিন মাস আগে একটি চুক্তি হয় ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়ন-এর মধ্যে। এবং এই চুক্তিতে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আক্রমণ বা আক্রমণের হুমকি নিয়ে আলোচনা ও চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর মানে কি এই যে, ভারতের নিরপেক্ষতার ঐতিহ্যগত নীতি এখন বিলুপ্ত হয়েছে?
উত্তরঃ আমাদের অস্ট্রিয়ার মত নিরপেক্ষ নীতি ছিলনা। আমরা জোটনিরপেক্ষ, অর্থাৎ একটি নীতি অব্যাহত আছে। আমরা বিশ্বাস করি যে আমাদের বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা আমাদের আছে। আমরা আন্তর্জাতিক বিষয়ক ব্যাপারে যথার্থতা বিচার করে এবং দেশের স্বার্থ ও বিশ্ব শান্তি বিবেচনা করে এগিয়ে যাব। আমি মনে করি না সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে এই চুক্তির ফলে আমাদের স্বাধীনতার উপর কোন প্রভাব পড়বে।