প্রধান সেনাপতির পূর্ব রণাঙ্গন সফর
গত সপ্তাহে বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি কর্ণেল এম, এ, জি, ওসমানী পূর্ব রণাঙ্গনের অগ্রবর্তী অঞ্চল বিভিন্ন হাসপাতাল ও মুক্তিসেনাদের শিবির পরিদর্শন করেন। তিনি রণাঙ্গনের মুক্তিযােদ্ধাদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন স্থানে ভাষণ দেন। | মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি মুক্তিসেনাদের কঠোর মনােবল অমিত সাহস, দুর্জয় আরবিশ্বাস। এবং আত্মােৎসর্গের বিপুল প্রেরণা দেখে গর্ববােধ করেন। তিনি তাদেরকে আরও তৎপর হতে এবং ত্যাগ স্বীকারের জন্য আহ্বান জানান। তিনি ভাষণদানকালে মুক্তিযোদ্ধাদের অসম সাহসিকতা ও দেশাত্মবােধের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সমগ্র জাতি তাদের এই দুঃসাহসী অভিযানের জন্য গর্বিত বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন যে, আপনারা এই মুক্তিসংগ্রামের ভেতর দিয়ে। একটি নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করে চলেছেন। প্রধান সেনাপতি তাদেরকে একথা স্মরণ করিয়ে দেন, বাঙ্গালীরা নাকি যােদ্ধাজাত নয়, এই ভ্রান্ত ধারণা আপনারা একদম পাল্টে দিয়েছেন। তিনি তার ভাষণে আরও বলেন যে, ছয় মাসের যুদ্ধে মুক্তিযােদ্ধারা যে সাহসকিতা দেখিয়েছেন তাতে করে আমাদের জনসাধারণের আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে গেছে। মুক্তিযােদ্ধাদের অপূর্ব গেরিলা রণকৌশলের প্রশংসা। করে তিনি একথা বলেন, ‘আপনারা একটি জাতি হিসেবে বেঁচে থাকার প্রশ্নেই আজ এ লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন। কঠোর আত্মপ্রত্যয় ও সাহসিকতা নিয়ে প্রচণ্ড দুর্যোগের মুখে দাঁড়িয়ে আপনারা রণক্ষেত্রে এক নজীরবিহীন সাফল্য অর্জন করেছেন। এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন যে, আপনারা যদি শৃঙ্খলার সঙ্গে এভাবে লড়ে যান তাহলে সারা পৃথিবীতে একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ ‘সৈন্যবাহিনী হিসেবে নিজেদেরকে চিহ্নিত করতে পারবেন।
কর্ণেল ওসমানী অগ্রবর্তী হাসপাতালগুলাে পরিদর্শনকালে রােগীদের শয্যাপাশে গিয়ে প্রাণ খােলা কথাবার্তা বলেন। তিনি কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সদেরকে হাসপাতালের কর্মতৎপরতা ও রােগীদের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তিনি তাদেরকে স্বাধীনতার কাজে তাদের নিস্বার্থ সেবাও ত্যাগ স্বীকারের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি তাদের স্মরণ করিয়ে দেন যে, সমগ্র জাতিই আজ স্বাধীনতার সংগ্রামে লিপ্ত। প্রত্যেককেই এই সংগ্রামে সাধ্যমত দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে। তিনি তাদের মনােবল ও সাহসকিতার প্রশংসা করেন। প্রত্যেক মানুষের এমনি সাহসকিতা ও আত্মােৎসর্গ মুক্তিযুদ্ধের জন্য একান্ত অপরিহার্য। | এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে অগ্রবর্তী হাসপাতালগুলাের চিকিৎসক ও নার্সগণ সকলেই বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্র-ছাত্রী । তিনি তাদের উদ্দেশ্যে বলেন যে যুদ্ধশেষে তাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে গিয়ে ভবিষ্যত সম্ভাবনা গড়ে তুলতে হবে। তাদের সেবা ও আত্মােৎসর্গ গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে দেশ বাসী চিরদিন স্মরণ করবেন এবং আগামী বংশধরগণও বিপুল সম্মান ও গভীর শ্রদ্ধাবােধের সঙ্গে তাদের এই মহান আত্মদানকে নিঃস্বার্থকতা ও স্বাদেশিকতার উজ্জ্বল উদাহরণ। হিসেবে অনুসরণ করবেন।
জয়বাংলা (১) এ ১: ২৩
৫ অক্টোবর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯