You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.01 | বাংলাদেশ পত্রিকার সম্পাদকীয়ঃ মার্কিনীদেরকে প্রতারণা | বাংলাদেশ - সংগ্রামের নোটবুক

সংবাদপত্রঃ বাংলাদেশ ভলিউম ১ নং ৫
তারিখঃ ১ অক্টোবর, ১৯৭১
সম্পাদকীয়ঃ মার্কিনীদেরকে প্রতারণা

মঞ্চ প্রস্তুত করাই ছিলো, ছোঁড়া হলো পাশার ছক্কাও। ২৫ মার্চ ইয়াহিয়া ঢাকায় মুজিবুর রহমানের সাথে সংলাপ হঠাৎ স্থগিত করলেন। সূর্যাস্তের সময় ঢাকা থেকে গোপন ফ্লাইটে পশ্চিম পাকিস্তানে তার আশ্রয়স্থলে ফিরে যাবার আগে, ইয়াহিয়া জেনারেল টিক্কা খানকে নির্দেশ দিলেন বাঙ্গালিদেরকে নিজেদের পছন্দে নেতা নির্বাচন করার অপরাধের উপযুক্ত শাস্তি দেয়ার জন্য। বাঙ্গালিরা এমন নেতাদের নির্বাচন করেছিল, বাঙ্গালিদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে এবং পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণের অবসান ঘটাতে যাঁরা ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এতো অল্প সময়ে, আমেরিকান মেশিন গান, ট্যাঙ্ক, বাজুকা, কামানে সজ্জিত পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যরা পৃথিবীর অন্য যে কোন জায়গার তুলনায় অনেক বেশি নিরস্ত্র বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছে। হত্যাযজ্ঞ চলছে এখনও।

জেনারেল ইয়াহিয়ার হিসেবে ভুল ছিলো। তিনি ভেবেছিলেন, দমন-পীড়নের ক্ষমতাই সর্বোচ্চ ক্ষমতা। এখন বাঙালি প্রতিরোধ তাকে কোণঠাসা করে ফেলেছে। নিজেদের টিকিয়ে রাখার জন্যে পশ্চিম পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সাহায্য এবং বাংলাদেশ লুট করে পাওয়া সম্পদের ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে যারা আর্থিক এবং সামরিক সহায়তাপ্রদান করেছিল তাদের জন্য, বহির্বিশ্বে নিজেদের ভাবমূর্তি টিকিয়ে রাখতে গিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানকে বিশেষ যত্নসহকারে আমেরিকানদের বোঝাতে হচ্ছে যে, আমেরিকার সাহায্য মানবকল্যাণে ব্যবহার করা হবে।

জেনারেল ইয়াহিয়া তার দমন-পীড়নের নিয়ম চালু রাখতে গিয়ে আমেরিকানদের চোখে ধূলা দেয়ার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। একজন বেসামরিক গভর্নর, কয়েকজন মন্ত্রী নিয়োগ করেছেন তিনি, যারা কখনো জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন নি। এঁদের সকল ক্ষমতার অধিকারী সামরিক শাসকের “নিরাপত্তায় থেকে” দায়িত্ব পালন করার কথা, যাঁরা টিক্কা খানের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড হিসেবে বাংলাদেশে বর্বরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। জেনারেল ইয়াহিয়া এমনকি এও দাবি করছেন যে শরণার্থীরা ফিরে আসছে। যদিও দাবি করা হয়েছে ১,০৫,০০০ শরণার্থী ফিরে এসেছে, কিছু নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক বলে আসছেন যে, বাংলাদেশ থেকে শরণার্থীর পালিয়ে যাওয়া এখনো অব্যাহত রয়েছে, এবং এ সংখ্যা নব্বই লক্ষে পৌঁছেছে।

ইয়াহিয়া, স্বৈরশাসকের ঐতিহ্য বজায় রেখে, দেশের জন্য সংবিধানও প্রণয়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক সংসদীয় আসনে উপনির্বাচন আয়োজন করতে চান, যদিও তাঁর অভিসন্ধি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। সকল নির্বাচকমণ্ডলীর ওপর তাঁর কর্তৃত্ব ভবিষ্যতে কোন নির্বাচনের সম্ভাবনাকে ক্ষীণ করে তুলেছে। তিনি জাতীয় সংসদকে সংবিধান নিয়ে মতামত দেয়ার অধিকার দিয়েছেন, কিন্তু যে কোন সংশোধনীকে ভেটো দেয়ার সর্বোচ্চ এখতিয়ার তাঁর থাকবে।

ইয়াহিয়ার নীতি খুব বেশি অসঙ্গতিপূর্ণ, সেগুলোর ওপর একেবারেই আস্থা রাখা যায় না। পাকিস্তানে সব রকম অর্থনৈতিক এবং সামরিক সাহায্য স্থগিত করার ব্যাপারে হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ এরই মধ্যে বিল অনুমোদন করেছে। একইরকম একটি আইন, স্যাক্সবি এবং চার্চ সংশোধনী, ৩৫ জন সিনেটরের যৌথ প্রযোজনায় সিনেটে উত্থাপন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে কোন সন্দেহই নেই যে আমেরিকানরা এবং তাদের প্রতিনিধিরা গণতন্ত্র ও সংবিধানকে জবাই করতে বদ্ধপরিকর কোন স্বৈরশাসকের সামরিক অভিযানে অর্থসাহায্য দেবে না।