শিরোনামঃ বিভিন্ন বাংলাদেশ দলের খবর।
সংবাদপত্রঃ বাংলাদেশ নিউজলেটার শিকাগোঃ নং, ৬।
তারিখঃ ৫ আগস্ট, ১৯৭১।
বিভিন্ন বাংলাদেশ দলের খবর
মধ্য-পশ্চিম বাংলাদেশ সমিতি।
পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের শিকার বাংলাদেশিদের জন্য এক সপ্তাহের ভেতরে মধ্য-পশ্চিম বাংলাদেশ সমিতি একটি বৃহদায়তন তহবিলের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। আমাদের ব্লুমিংটন ( ইন্ডিয়ানা ) গোষ্ঠী আমাদের জানিয়েছে যে উদ্যোগটি নির্দিষ্টভাবে বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে নেয়া। এরই মধ্যে ব্লুমিংটনের ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য, বেশ কয়েকজন ডিন এবং বিভিন্ন বিভাগের প্রায় পাঁচজন চেয়ারম্যান তহবিল সংগ্রহের জন্য আবেদন প্রচার করেছেন। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রাদেশিক সিনেটররাও এই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছেন।
বাংলাদেশে এসোসিয়েশন অব কানাডা।
বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব কানাডা টরোন্টো শাখার সভাপতি আমাদের নিম্নোলিখিত তথ্যগুলো পাঠিয়েছেনঃ
তথাকথিত ‘পাকিস্তান সহংতি কমিটি’ টরোন্টোয় ওন্টারিও কলেজ অব এডুকেশন মিলনায়তনে পিডিপি’র দেশদ্রোহী মাহমুদ আলির সভাপতিত্বে ১৮ জুলাই, ১৯৭১-এ একটি বৈঠক আহ্বান করেছে।
ইয়াহিয়া খানের রটনা কৌশল ঠেকানোর জন্য, বিএসি-কানাডা ( টিরোন্টো) মিলনায়তনের সামনে একটি শান্তিপূর্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি আয়োজন করেছে। যেহেতু শুধুমাত্র পাকিস্তানিরাই আমন্ত্রিত সেই বৈঠকে, সেহেতু আমরা সম্মিলিত ভাবে বৈঠক বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
বেপরোয়া পশ্চিম পাকিস্তানিরা এই আইনসঙ্গত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাঁধা দিয়েছে এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে সরিয়ে দিয়েছে কোনো উস্কানি ছাড়াই। চাপের মুখে আমরা প্রতিশোধ পরায়ণ হতে বাধ্য হয়েছিলাম এবং তারাও পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল। যদিও, সেই মুহুর্তে পুলিশ চলে আসে এবং তাদের মিলনায়তনের ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়।
আমরা একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি করতে চেয়েছিলাম এবং পুলিশকেও কর্মসূচির পুর্বেই তা জানিয়েছিলাম। পক্ষান্তরে ‘সংহতি কমিটি’ তাঁর দুর্বৃত্তমূলক কৌশলে সন্ত্রাস দিয়ে আমাদের দমাতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের সেই প্রয়াস সফল হয় নি, এবং প্রতিবাদ নির্ধারিত সূচি অনুসারে চলেছিল।
বৈঠকটা পুরোপুরিভাবে ব্যর্থ হয়েছে, এটা শুধু একটা হাস্যরসের প্রমাণ দেয় আর কিছুই না।
বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব সাস্কাচুয়ান
বিএসি- সাস্কাতুন শাখার সভাপতি অন্যান্য প্রসঙ্গের সাথে বলেছেনঃ
“এখানে সাস্কাতুনে আমরা সাধ্যানুযায়ী সব করছি। কানাডার সরকারি নেতাদের কাছে টেলিগ্রাম, চিঠি পাঠানোর কাজটাই মূলত আমরা করছি। যদ্দুর জানি, এর ফলাফলে কানাডা সরকার বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে। খুব সাম্প্রতিক একটা খবর হল, পদ্মার জন্য নির্ধারিত সব অস্ত্র সরবরাহ অনুমতির বাতিল”।
স্যান ফ্রান্সিসকো
স্যান ফ্রান্সিসকো গোষ্ঠী ২৪শে জুলাই স্ট্যানফোর্ড ফ্রস্ট মুক্তাঙ্গনে স্ট্যানফোর্ড ইন্ডিয়া সংঘের সহযোগিতায় জোয়ান বায়েজের একটি সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত সফল হয়েছে। ১২০০০ এরও বেশি মানুষ জমায়েত হয়েছিল সেই সঙ্গীতানুষ্ঠানে, সেই সাথে অসংখ্য মানুষ বাইরে অপেক্ষারত ছিল। অনুষ্ঠানের মাঝামাঝিতে মিস বায়েজ ঘোষণা করেন যে অনুষ্ঠানের আয়ের সিংহভাগ পূর্ব বাংলার শরনার্থীদের জন্য দেয়া হবে। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ গোষ্ঠী একটি আবেদনের স্বপক্ষে প্রায় ২৫০০ স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছে যা পরবর্তীতে ক্যালিফোর্নিয়ার সমস্ত সিনেটরদের এবং কংগ্রেসম্যানদের পাঠানো হয়েছে। গোষ্ঠীটি কংগ্রেসম্যানদের উদ্দেশ্যে গ্যালাগার সংশোধনের পক্ষে একটি বড় আকারের পত্র-লিখন প্রচারণা শুরু করেছে। এছাড়াও তারা সাহায্য এবং সমর্থন পাওয়ার জন্য স্যান ফ্রান্সিসকোর অনেক গীর্জা প্রধানদের সাথে বৈঠক করেছে।
লস এঞ্জেলেস
লংশোরম্যান’স সমিতির সাথে লস এঞ্জেলেস গোষ্ঠী যোগাযোগ করেছে বলে আমাদের জানায় এবং তারা তাদের কাছ থেকে এই নিশ্চয়তা পেয়েছে যে তারা কোনো সামরিক পণ্য পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে জাহাজ বোঝাই করবে না।
শ্যাম্পেইন-আরবানা
গোষ্ঠীটি বাংলাদেশের জন্য তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বিখ্যাত আন্তর্জাতিক সিনেমা নিয়ে একটি নিয়মিত সাপ্তাহিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী আয়োজন করেছে। তারা এই ২৩ জুলাইতেই সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়ক’ প্রদর্শন করে ফেলেছে। চলচ্চিত্র প্রদর্শনীটি জলখাবারের সাথে চালানো হয়েছে যেখানে তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বাঙালি খাবারগুলো বিক্রি করা হয়েছে। প্রায় ২৫০ ডলার সংগ্রহিত হয়েছিল। পরবর্তী ছবি হবে ‘ডে শ্যাল ডাউন’ যা পূর্ব বাংলায় প্রযোজিত মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে আন্তর্জাতিক খ্যাতি পাওয়া প্রথম বাংলা ছবি।
ম্যাডিসন
বাংলাদেশের লিবারেশন কমিটি উইস্কন্সিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাডিসন ক্যাম্পাসে ছাত্র সঙ্ঘে একটি স্থায়ী টেবিল স্থাপন করেছে ম্যাডিসনে বাংলা সাহিত বিতরণের জন্য। এই মার্কিনিদের নিয়ে গঠিত টেবিলটি শেষ এক মাসে বাংলাদেশ লিবারেশন কমটির দেয়া সাহিত্য বিতরণ করেছে এবং বাটনগুলো বিক্রি করেছে। তারা ম্যাডিসনের বহুলপ্রচারিত সংবাদপত্র ক্যাপিটাল টাইমসে একটি প্রবন্ধ ছাপিয়েছে যাকে ঐ সংবাদপত্রে বিশেষ স্থান দেয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে তারা ১৫০০ স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছে এই মর্মে যে পাকিস্তানে সকল সামরিক এবং আর্থনীতিক সাহায্য বন্ধ করে রাখা হবে যতক্ষণ না তারা সামরিক বাহিনী বাংলাদেশ থেকে না সরাচ্ছে। এই আবেদন উইসকনসিনের সকল কংগ্রেসম্যানের কাছে পাঠানো হয়েছে।
ফিলাডেলফিয়া
পূর্ব বাংলার বন্ধুরা যেকোনো পাকিস্তানি নৌযানের ব্যাপারে সহিংস থাকছে। যখনি কোনো পাকিস্তানি নৌযান সমরাস্ত্র বা গোলাবারুদ বোঝাইয়ের উদ্দেশ্যে বাল্টিমোর পোতাশ্রয়ে দেখা যাচ্ছে তখনি এই গোষ্ঠীটি ভাংচুর এবং প্রতিহত করছে। তারা এরই মাঝে লংশোরম্যান’স এর কাছ থেকে এই নিশ্চয়তা পেয়েও গেছে যে তাদের কোনো কর্মী এই সমরাস্ত্র বা গোলাবারুদ বোঝাইয়ে জড়িত হবে না। এই গোষ্ঠীটি তাদের কাজের উদ্দেশ্য এবং কারণ জানানোর জন্য আশেপাশের এলাকায় ইতিমধ্যে হাজারেরও বেশি লিফলেট বিলি করেছে।
******
একজন পাঠকের চিঠি।
নিচের চিঠিটি আমাদের একজন পাঠকের কাছ থেকে পাওয়া। যদিও আমাদের মতো পত্রিকা গুলোর কারও নিজস্ব লেখা ছাপানোর সুযোগ খুব কম থাকে, তবুও আমরা ভেবে দেখেছি এটা ছাপানো গুরুত্বপূর্ণঃ
জনাব,
আমি নিশ্চিত যে আমরা অনেকেই এরই মাঝে পাকিস্তান ফোরামের জুন-জুলাইয়ের ঘটনাক্রম সম্পর্কে পড়েছি। এই পুর্বাপর ঘটনাগুলো, বিশেষত এপ্রিল-মে ঘটনাক্রমগুলো, থেকে একজন দেখতে পারে যে পাকিস্তান ফোরাম এবং এর ব্যবস্থাপনা মুলত বাঙালি এবং বাংলাদেশিদের সাহায্য করছে তাদের স্বাধীনতার জন্য। তাই, আমি মনে করি সব বাংলাদেশী বাঙ্গালিদের শুধুমাত্র এটা পড়া নয়, এর সাথে সাথে পাকিস্তান ফোরামের ব্যবস্থাপনাকে সাহায্য করা উচিৎ যাতে অবাঙ্গালি পাকিস্তানিরা এটা পড়তে পারে।
সুতরাং, আমি অনুরোধ করছি সমস্ত স্থানীয় গোষ্ঠীদের এই মর্মে একটি বিজ্ঞপ্তি দেয়া হোক যে তারা তাদের সমস্ত সদস্যদের আবেদন করুক এবং ‘বাংলাদেশ নিউজলেটার’ এর সকল পাঠকদেরও আবেদন করুক যেন তারা এক বছরের চাঁদা হিসেবে পাকিস্তান ফোরামকে ১০০০ মার্কিন ডলার করে পাঠায়। যদিও চাঁদা হার ৭০০ মার্কিন ডলার তথাপি এই অতিরিক্ত $ ৩ ফোরামকে অবাঙ্গালি পাকিস্তানিদের, যারা বাংলাদেশে বিশ্বাসী নয়, এক কপি পত্রিকা পাঠাতে সাহায্য করবে। ফোরামটির এই বাংলাদেশকে সমর্থনের কারণে প্রচুর অনুরাগী রয়েছে।
পাকিস্তান ফোরামের ঠিকানাঃ মিঃ ফয়েজ আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক, অয়াকিস্তান ফোরাম, ১৯০০ দক্ষিণ চার্লস স্ট্রিট, ২২-ডি, গ্রীনভিলা, এন,সি, ২৭৮৩৪।