শিরোনামঃ বাংলাদেশ আন্দোলনের খবর
সংবাদপত্রঃ বাংলাদেশ নিউজলেটার শিকাগোঃ নং ৩
তারিখঃ ১০ই জুন, ১৯৭১
নিক্সনের প্রতি বিজ্ঞজনের আহবান
বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্টি,ভাষা, জীবনধারা, অর্থনীতি ও ইতিহাস বিষয়ে আমেরিকান ও কানাডিয়ান বিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৯ ও ৩০শে মে একটি সম্মেলনের আয়োজন করেন । সম্মেলনের দুইটি অধিবেশনকে প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলোচনার জন্য উৎসর্গ করা হয় । প্রেসিডেন্ট নিক্সন, মন্ত্রীবর্গ , হাউজ এবং সিনেট সদস্যদের উদ্দেশ্যে প্রেরিত এক বিবৃতিতে বিজ্ঞজনেরা পাকিস্তান সরকারকে আমেরিকান সামরিক ও অর্থনৈতিক সাহায্য না পাঠাতে সুপারিশ করেন । বিবৃতিটি নিচে উল্লেখ করা হলঃ
পাকিস্তান সরকার যে বিশাল বাঙ্গালি জনগোষ্ঠীর ও তাদের সমাজব্যবস্থার উপর হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে বাংলা বিশেষজ্ঞ হিসেবে এ ব্যাপারে গভীর উদ্ধেগ প্রকাশ করছি । ২৫ শে মার্চ ১৯৭১ থেকে পূর্ববাংলায় ঘটতে থাকা ঘটনার প্রমাণাদি বিশ্লেষণ করে বুঝা যায়, পাকিস্তান সরকারের এই নীতি শুধুমাত্রই বাঙালি সমাজ ও সংস্কৃতি মুছে ফেলার চেষ্টা। আমরা এই অভিযোগগুলো সম্পর্কে সতর্ক আছি এবং মোটেও একে হালকাভাবে নিচ্ছি না, বাংলার বাইরে থাকা বাংলার সমাজ সংস্কৃতির ছাত্রহিসেবে আমি অনুভব করি যাদের জীবন ও কর্ম নিয়ে আমরা পড়ছি এবং পূর্ববঙ্গে আমাদের সতীর্থদের প্রতি আমাদের বিশেষ দায়িত্ব আছে। যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনী এমনসব মানুষকে হত্যা করছে যাদের কাছে আমরা ঋণী তখন যে দেশ পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে ব্যাপকভাবে অস্ত্রে সজ্জিত করেছে তার নাগরিক হিসেবে আমরা চুপ থাকতে পারি না । অতএব আমরা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে পূর্ববঙ্গে হত্যাযজ্ঞ থামাতে যা উদ্যোগ প্রয়োজন তা গ্রহণ করতে আহবান করছি । আমাদের বিশ্বাস পাকিস্তান সরকার কর্তৃক পূর্ববঙ্গ এ সামরিক শক্তি প্রয়োগ নিষিদ্ধ/স্তগিত না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের উচিৎ পাকিস্তানের প্রতি সবধরনের সহযোগিতা প্রদান থেকে বিরত থাকা।
অধিকন্তু,আমরা অনুরোধ করব আপনাদের যথাসম্ভব সকল সাহায্য সহযোগিতা সুবিশাল ও ক্রমবর্ধমান বাঙালিদের জন্য বরাদ্দ করুন যারা পাকিস্তান সামরিক বাহিনী দ্বারা জোরপূর্বক তাদের বাসভূমি থেকে বিতাড়িত হয়েছে।
এধরণের একটি বক্তব্য বিভিন্ন প্রথিতযশা ব্যক্তিত্বের কাছ থেকে স্বীকৃত হয়েছে,যারা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নন।তারা এই বক্তব্যে সংশ্লিষ্ট বিষয়টির ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জোর দাবী জানিয়েছেন।
সাংগঠনিক খবর
আমেরিকা ও কানাডার বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন দলের কাজ পরিচালনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণে বাংলাদেশ ডিফেন্স লীগের একটি সভা ৬ইই জুন শিকাগোতে অনুষ্ঠিত হয়। ইলিনইস, ইন্ডিয়ানা, মিশিগান,ওহিও ও ওয়াশিংটন এর প্রতিনিধিগণ সভায় উপস্থিত ছিলেন। দক্ষিণ-পশ্চিমের নয়টি অঙ্গরাজ্যে সক্রিয় বাংলাদেশী দলগুলো ইতিমধ্যেই একটি জোনাল ইউনিট গঠন করেছে, এবং সভায় অংশ নিতে তাদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি পাঠিয়েছে। বিডিএল এর আইনি পরামর্শক সংগঠনের আইনী কাঠামো ব্যাখ্যা করেন এবং সদস্যদের জ্ঞাতার্থে বিভিন্ন বিধি নিয়েও আলোচনা করেন। বিডিএলের কোষাধ্যক্ষ অনুদান সংগ্রহের কার্যকরী পদ্ধতি ও তা কেন্দ্রীয় তহবিলে সঞ্চালনের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেন। অন্যান্য সাংগঠনিক ব্যাপার নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয় বিশেষ করে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার মাধ্যমে সর্বোচ্চ দক্ষতা ও ধারাবাহিকতা অর্জনের জন্য কাজ করতে প্রতিটি ইউনিট ঐক্যমতে পৌঁছেছে।
প্রতিটি দল থেকে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে একটি বোর্ড ওব ডিরেক্টরস গঠন করা হয়েছে যাদের দিক নির্দেশনায় সহযোগিতা কার্যক্রম পরিচালিত হবে। যেসব দল থেকে প্রতিনিধি নেয়া হয়নি তাদের অন্তর্ভুক্ত করে এর পরিধি আরো বর্ধিতকরা হবে।
নিউইয়র্কে পাকিস্তান দূতাবাসের সাবেক সহকারী রাষ্ট্রদূত জনাব মাহমুদ আলি যিনি পাকিস্তান সরকারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য জানিয়েছেন , তিনিও সভায় উপস্থিত ছিলেন এবং প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছেন। সভায় নিউইয়র্কে বাংলাদেশ বাংলাদেশ মিশনের বাজেট অনুমোদিত হয় এবং এই অর্থ বিডিএল তহবিল থেকে বরাদ্দ করা হয়।
সভায় জরুরী ভিত্তিতে ওয়াশিংটনডিসিতে একটি মিশন স্থাপনের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়।
সভায় বিডিএলের সকল সদস্যের জন্য একটি নীতিমালা অনুমোদন পায়, যাতে প্রত্যেক সদস্য তার মূল বেতনের শতকরা দশভাগ বিডিএলে জমা করবেন যতদিন না বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হয়। বাংলাদেশ সরকারের জরুরী ভিত্তিতে এই মুহুর্তে বিশাল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা প্রয়োজন। সকল সদস্য ও সমব্যাথীগন সর্বোচ্চ সম্ভাব্য অংকের অনুদান দেয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছেন।
পরবর্তীতে বাংলাদেশ রিসার্চ সেন্টার নামে বিডিএলের সহায়ক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় । এই গবেষণা কেন্দ্রের কাজ হবে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যের উন্নতি ও পাকিস্তান সরকার ও এর দূতাবাসগুলোর মিথ্যা ও বিদ্ধেষপূর্ণ প্রপাগান্ডার জবাবে প্রতিবেদন ,সাময়িকী , পুস্তিকা ও পত্রিকা প্রকাশ করা । বাংলাদেশ রিসার্চ সেন্টার প্রকাশনা ও বিতরণের জন্য তথ্য আহবান করছে । আপনার পরামর্শ আমাদেরকে পাঠান ।
বিডিএল এর সভাপতি পশ্চিম উপকূল পরিদর্শন করবেন এবং অন্যদলগুলোর সাথে সমন্বয়ের উদ্দেশ্যে সেখানকার বাংলাদেশী দলের সাথে মতবিনিময় করবেন ।
বাংলাদেশ ইমারজেন্সি ওয়েলফেয়ার আপিল নামে একটি দেশব্যাপী অনুদানসংগ্রহ অভিযানের প্রস্তুতি চলছে । এই অভিযানের সহায়তার জন্য একটি পুস্তিকাও বানানোর কাজ চলছে ।