শিরোনামঃ জোট নিরপেক্ষ ও শান্তিপুর্ন সহ অবস্থান
সংবাদপত্রঃ বাংলাদেশ ভলিউম ১: নং ২৪
তারিখঃ ৮ ডিসেম্বর, ১৯৭১
জোট নিরপেক্ষতা এবং শান্তিপুর্ণ সহাবস্থান
প্রেসিডেন্টের মৌলিক পররাষ্ট্রনিতি ঘোষণা
সৈয়দ নজরুল ইসলাম, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি বিশ্বের প্রতিটি দেশের কাছে আবেদন করেছিল যেন তারা বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে এবং শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক চিহ্নিত করে, যেখানে রাষ্ট্রের স্বাধীনতার আদর্শ সংরক্ষণ করা হয়।
গতকাল রেডিও বাংলাদেশে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া সৈয়দ নজরুল ইসলামের ঘোষণায় তিনি বলেন, [স্বাধীন বাংলাদেশ আজ একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য। আমি বিশ্বের সকল দেশকে আহবান করবো যেন তারা আমাদের, এবং ৭৫ কোটি মানুষের মুক্তির সংগ্রামকে অবিলম্বে স্বীকৃতি প্রদান করে।]
ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি আরও বলেছেন, “আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম এখানেই শেষ হওয়া উচিৎ নয়। বরং অর্থনৈতিক কাঠামো, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক জীবনের পুনর্গঠিত করার এবং বাংলাকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার ধারাবাহিক প্রক্রিয়া এখান থেকেই শুরু হওয়া উচিৎ।”
স্বাধীনতার জন্য যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “স্বাধীনতা সংগ্রামের এই ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে আমরা সকল শহীদদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি যারা তাদের নিজের জীবন বাজি রেখে দেশের জন্য লড়াই করেছেন।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা এই বিশেষ মুহূর্তে আমাদের প্রাণপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করছি যার উপস্থিতি ছাড়া আমাদের স্বাধীনতা অনেকটাই ম্লান হয়ে যায়।”
অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি তার সরকারের নীতির সম্পর্কে বলেন, “জোট নিরপেক্ষ্যতা এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মতবাদ হবে।“
সাম্রাজ্যবাদ এবং উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার সকল গণতান্ত্রিক সংগ্রামকে সমর্থন করবে। তিনি আরও যোগ করেন, বিশ্বের শান্তিকামী দেশগুলোর সাথে বন্ধুত্বপুর্ন সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।
সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ ইস্যুতে বিশ্বকে জাগানোর জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেয়ার সঙ্গতিপূর্ণ সিদ্ধান্তের জন্য মিসেস গান্ধীকে ধন্যবাদ জানান।
মুক্তিবাহিনী এবং ভারতীয় মিত্র বাহিনীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে জনাব ইসলাম বলেন, “ দিন বেশিদূরে নয় যখন বাংলাদেশের পতাকা ঢাকায় উত্তোলন করা হবে এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ হবে।“
বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ঘোষণা করেন যে, ভারত সরকারের আশ্রয়ে থাকা বাংলাদেশী শরণার্থীদের সমগ্র দায়িত্ব তার সরকার বহন করবে। তিনি শরণার্থীদের দ্রুত নিজেদের বাড়িতে নিরাপদে ফেরার ব্যাপারে আশ্বস্থ করেন। তিনি বলেন, এটা আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য প্রতিটি শরণার্থীকে পুনর্বাসিত করা, যারা আর্মি অ্যাটাকের সময় জোর পূর্বক নিজের দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল।