শিরোনামঃ বিশ্বজনমত
সংবাদপত্রঃ বাংলাদেশ ভলিউম ১ নং ৫
তারিখঃ ২৮ জুলাই, ১৯৭১
ওয়ার্ল্ড প্রেস
বিশ্বের সর্বত্র প্রেস রিপোর্টগুলোতে ইয়াহিয়ার শাসনামলের বিরুদ্ধে নিন্দা চলতে থাকে এবং সেখানে মুক্তি বাহিনীর উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আলোকপাত করা হয়।
ইউ এআর
রোজ আল ইউসেফ
১৪ জুলাই, ১৯৭১
নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে আল-আহরাম সম্পাদক হেইকেল এটিকে সমকালীন ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড হিসেবে আখ্যায়িত করে ইউ এ আর এর কাছে জোরালো ভাবে প্রকাশ করেন। আরেকটি কায়রো জার্নাল “রোজ আল ইউসেফ” এই বলে সতর্ক করেছে যে পূর্ব বাংলার গৃহযুদ্ধের করুণ পরিণতি ও ভারতে ষাট লক্ষের বেশি উদ্বাস্তুর অনুপ্রবেশ উপমহাদেশকে বৈশ্বিক দ্বন্দের নতুন কেন্দ্রে পরিণত করতে পারে।
এটি বলেছিলো ধর্মই ছিলো পশ্চিম পাকিস্তানি পাঞ্জাবী আর পূর্ব বাংলার বাঙ্গালিদের মধ্যে একমাত্র যোগসূত্র।
ইউ কে
ডেইলি টেলিগ্রাফ
জুলাই ১৯, ১৯৭১।
গত কয়েক সপ্তাহে ঢাকার পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে, এর বড় কারণ মূলত বাংলাদেশের শহুরে গেরিলা গ্রুপের কাঠামোগত উন্নয়ন ও উন্নত প্রশিক্ষণ।
লণ্ডন
সানডে টাইমস
১১ জুলাই, ১৯৭১
মারি সেইলির একটি প্রবন্ধ একটু ভিন্ন আঙ্গিকে তথাকথিত রাজাকারদের কার্যকলাপ এবং সংগঠনের উপর আলোকপাত করেছে যাদের উপর পাকিস্তানি সেনারা আজ নির্ভর করছে।
এসব লোক (রাজাকার) আসলে, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধি যারা বিগত নির্বাচনে নাস্তানাবুদ হয়েছিলো আর যাদের রয়েছে অপরাধমূলক অতীত ও যারা ধর্মান্ধ মুসলিম
আমি একটি সেতু অতিক্রম করেছিলাম যা মুক্তিফৌজ উড়িয়ে দিয়েছে, “মুক্তি বাহিনী” । স্থানীয়রা, আমার মনে হয়েছে কিছুটা উল্লসিত হয়ে, জানালো যে ২৫ রাজাকার যারা সেতু পাহারা দিচ্ছিলো তারা গুলির শব্দ শুনেই পালিয়েছে। জনাব সেইলি রাজাকারদের প্রশাসনকে মূলত ঠগ, বেতনভুক্ত সন্ধানদাতা আর ধর্মান্ধদের সঙ্ঘ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন যাদের কোনই জবাবদিহিতা ছিলো না অথবা আপাতদৃষ্টিতে যেটুকু আইন অবশিষ্ট ছিলো বাংলাদেশে।
দি টাইমস, লন্ডন
১২ জুলাই, ১৯৭১।
সামরিক শক্তি প্রয়োগের সুপারিশ করতে একটি গ্রহণযোগ্য প্রচারণার প্রচেষ্টা পাকিস্তানি সরকার থেকে নেয়া হয়েছে যেটাতে বলা হয়েছে এই শক্তি প্রয়োগ শুধু বিহারিদের গণহত্যার প্রতিরোধ করার প্রয়োজনে ই করা হয়নি সেইসাথে যে অবাঙালি হত্যাকাণ্ড সেনা মোতায়েনের আগে থেকেই বড়সড় মাত্রায় ঘটে আসছে সেটা প্রতিরোধেও করা হয়েছে।
এটি খুবই ঠুনকো ব্যাখ্যা। এই খবর বিশ্বাসযোগ্য ছিলনা, যেহেতু যদি ঐ মাত্রার হত্যাকাণ্ড হয়েও থাকতো, তাহলে তা ঐসময় পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানরত বিদেশি সাংবাদিকদের চোখে ও কানে অবশ্যই আসতো ২৫ মার্চ তাদের বহিষ্কারের আগ পর্যন্ত।
ইউ কে:
দি নিউ স্টেটসম্যান
১৬ জুলাই, ১৯৭১।
জনাব রেজিনাল্ড প্রেন্টিস, এম পি ব্রিটিশ সংসদীয় প্রতিনিধি দলের সদস্য যা সম্প্রতি বাংলাদেশ ও ভারত ভ্রমণ করে, লিখেছেন, “আগরতলায় স্থানীয় হাসপাতালে রোগীদের মধ্যে ১৫০ বুলেট বা বেয়নেটের ক্ষতয় আহতরা রয়েছে, এদের সবাই সম্প্রতি আহত-এর মধ্যে ৮০ জনই ছিলো শিশু।
ইউ এ আরঃ
আল আহরাম
৯ জুলাই, ১৯৭১
একটি নতুন আরব স্ট্র্যাটেজির দিকে
এডিটর হেইকেল দ্বারা লিখিত
আমরা কিভাবে এই চুপ থাকাকে কীভাবে সমর্থন করতে পারি যখন সমসাময়িক ইতিহাসে পূর্ব পাকিস্তানের এক মিলিয়নের এক-চতুর্থাংশ মানুষকে সবচেয়ে দুঃখজনক ভাবে হত্যা করা হয়। এটা কীভাবে বলা যেতে পারে যে আমাদের নীরবতা ছিল পাকিস্তানের সৌজন্যে যখন এশিয়ার সব ইউ এ আর এর মান এবং প্রভাব ছিল মূলনীতির বিষয়?
আমরা যদি বলি এশীয় নীতি নিয়ে আমাদের কোন উদ্বেগ ছিল না, তাহলে এশিয়ারও বলার অধিকার আছে আরব নীতিও মোটেই তাদের ব্যাপারে উদ্বেগী ছিল না।
আমেরিকা:
নিউ ইয়র্ক টাইমস
১২ জুলাই, ১৯৭১
কলামিস্ট অ্যান্থনি লুইসের আর্টিকেল থেকে
হিটলারের পর শুধু জার্মান নয় অনেকেই বলেছিল তাদের কোন ভাবেই হত্যার বীভৎসতা সম্পর্কে ধারণা ছিল না। তারা শুধু জানত খুব খারাপ কিছু ঘটছে আর ছয় লক্ষ ইহুদি তখন ছিল গ্যাস চেম্বারে। ঠিক এখনি এমনি একটা মানবিক বিপর্যয় রাজনৈতিক কারনে ঘটছে। এইবার কি ঘটছে যাদেরকে জানানো হচ্ছে তারা এ ব্যাপারে বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছে এরকম অজুহাত থাকতে পারে না এবং এখনও কিছু দায়িত্তে থাকা লোক ব্যাপারটিকে দেখেও দেখছে না।
দুর্যোগটা ঘটছিল পূর্ব পাকিস্তানে। যেহেতু পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যরা গত বসন্তে পূর্ব রাজনৈতিক আন্দোলন দমন করার জন্য পূর্ব পাকিস্তানে এসেছিল, ছয় কোটি মানুষ ভারতে পালিয়েছিল তখন। দশ, সম্ভবত হাজার হাজার শত শত মানুষ হত্যা করা হয়েছিল। আর দুর্বল পাকিস্তান অপপ্রচার ছড়াচ্ছিল তারা শুধুমাত্র ‘দুষ্কৃতকারীদের’ সঙ্গে ডিল করছে কিন্তু তাতেও তাদের সৈন্যরা যে রাজনীতির নামে নির্বিচারে হত্যা এবং সন্ত্রাস সৃষ্টি করছিল সে গোপন থাকেনি।
হংকং:
হংকং স্ট্যান্ডার্ড
৪ জুলাই, ১৯৭১
ইয়াহিয়া খানের সেনাবাহিনী বীভৎস মানব হত্যার বর্বরোচিত রক্তাত্ত উল্লাসে নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছে। এবং স্পষ্টতই জেনারেল টিক্কা খানের প্রতিশোধপরায়ণ সেনাবাহিনী বাংলাদেশে নির্বিচারে পাইকারী ও নৃশংস গণহত্যার পর ক্লান্ত হয়েছে এবং এটা মনে হয় বিনা উস্কানিতে বিক্ষিপ্ত হত্যাকাণ্ডের রেকর্ড খর্ব করেছে।