শিরোনামঃ পাকিস্তান নামে কোন দেশ থাকবে না
সংবাদপত্রঃ দেশ বাংলা (১ম বর্ষঃ ৬ষ্ঠ-৭ম সংখ্যা)
তারিখঃ ৯ নভেম্বর, ১৯৭১
ভারত-বাংলা উপমহাদেশে নতুন যুগের সূচনা পাকিস্তান নামে দেশে থাকবে না )দেশবাংলা বিশেষ নিবন্ধ)
জাতিসংঘের মাঋকন দালালরা যে কণ সিদান্তই নিক না কেন অথবা ইয়াংকি সাম্রাজ্যবাদ এবং চোইনিক সুবিধাবাদ শেষ রক্ষার যত চেষ্টাই করুক না কেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সূর্যের উদয়কে রোধ করার সময় পার হয়ে গেছে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে ভারতএ আক্রমণকারী অয়াখ্যা দিয়ে বাংলাদেশ থেকে সৈন্য প্রত্যাহার ও যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হয়েছে। কিন্তু বাংলার ও ভারতের মানুষ সাম্রাজ্যবাদাদের এই শেষ ভরসাস্থলটির উপর আস্থা হারিয়েছে অনেক আগেই। বর্তমান সংকটকে কেন্দ্র করে যদি ভারত জাতিসংঘ ত্যাগ করে তাহলে ভারতের মানুষ বিন্দুমাত্র অখুশী হবে না। চীন এতকাল জাতিসংঘে ছিল না। ইন্দোনেশিয়াও কিছুকাল আগে জাতিসংঘ ত্যাগ করেছে, তাতে দু’শের অস্তিতে বিপন্ন হয়নি। ভারতেরও হবে না। বাংলাদেশেরও না।
তা’ছাড়া এই জাতিসংঘের তথাকথিত পুরোহিতরাই জাতিস্ংঘের সিদ্ধান্ত বিরুদ্ধাচরণের পথ প্রদর্শক।
দক্ষিণ আফ্রিকায়, রোডেশিয়ায় জাতিসংঘের সুস্পষ্ট নির্দেশ কি মানা হয়েছে? রোডেশীয়ায় ৫০ লক্ষ আফ্রিকানের উপর ২ লক্ষ শ্বেতাংগের শাসন ও শোষণের পক্ষে মদত দিচ্ছে বৃটেন ও তার সহযোগীরা জাতিসংঘের বিধিনিষেধ অমান্য করেই। আর আজ যদি সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালীর উপর গুটি কতক পেশাদার সৈন্যের নৃশংস অত্যাচার বন্ধ করার জন্য ভারত এগিয়ে গিয়ে থাকে, জাতিসংঘের তথাকথিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই, তাহলে বা দোষটা কোথায়?
বাংলাদেশের ভেতরে মুক্তিবাহিনী এবং ভারতীয় বাহিনী এখন সর্বময় ক্ররতৃত্বে। ঢাকার সর্বশেষ পকেটটিও শিত্রুমুক্ত হবে দু’ একদিনেই। তখন আর বাংলাদেশের উপর পাকিস্তানের কোন দখলই থাকবে না। নূরল আমীনের মত বাঙ্গালী কুইসলিংকে প্রধানমন্ত্রী হিসাব দাঁড় করানো সত্বেও।
শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ থেকে হাত গুটাবার পর পশ্চিম পাকিস্তানকে ঘিরে “পাকিস্তান” নামটি টিকিয়ে রাখাও ক্রমেই দু;সাধ্য হয়ে পড়বে। পাঠান ও বেলুচিস্তানীরা বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে কেবল সেজন্যই নয়, নিছক নির্বুদ্ধিতা এবং গোয়ার্তৃমীর দরুন কায়েমী স্বার্থের দুধের হাঁড়িটি ভেঙ্গে ফেলার জন্য এখন পশ্চিমাদের মারাত্নক কলহ বেধে গেছে। বাদতে বাধ্য। পশ্চিম পাকিস্তানের প্রদেশগুলিকে একত্রে রাখার প্রাধনত যোগসূত্র ছিল বাংলাদেশের উপর শোষণের সুযোগ। উপনিবেশের ফায়দা লুটবার জন্য সিন্ধু-পাঞ্জাবের ভূস্বামী এবং ধনকুবেররা নিজেদের মধ্যে আপোষ রক্ষা করে নিয়েছিল। এখন তাদের আপোষ হবে ইসের ভিত্তিতে? তা’ছাড়া লন্ঠিত সম্পদের ছিটে-ফোঁটা বিলিয়ে এবং বাহ্যিক উন্নয়নে শানশওকত দেখিয়ে এতকাল সেখানকার সাধারণ মানুষকেও বশে রাখা সম্ভব হয়েছে। বিরাট এক সেনাবাহিনী পোষা হয়েছে যাতে করে প্রায় প্রতিটি পরিবার থেকেই কেউ না কেউ সৈনিক হয়েছে। এখন আর তা সম্ভব হবে না। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকুরি-বাকুরী সর্বক্ষেত্রেই ছাঁটাই এর পালা শুরু হবে। বাংলাদেশের বিরাট বাজার হারিয়ে ইতিমধ্যেই শত শত কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আরো যাবে।
“দেশবাংলার” প্রথম সখ্যায় আমরা পাখতুনিস্তানের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রস্তুতির কথা বলেছিলাম এবং এই শীতের পরেই সেখানে অভ্যূথানের সম্ভাবনার আভাস দিয়েছিলাম। অতি সম্প্রতি বেলুচিস্তানের ও সীমান্ত প্রদেশের ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিকে বেআইনি ঘোষণা করা থেকে প্রমানণিত হয়েছে ঘটনাপ্রবাহ সঠিক খাতেই প্রনাহিত হচ্ছে।
সাম্প্রদায়িক ভেদ-বৈষম্যে এই উপমহাদেশের যে রাজনৈতিক ইংসা-প্রতিহিংসার উদ্ভব ঘটেছিল বাস্তবের কঠোর আঘাতে তা ধীরে ধীরে দূরভীত হতে চলেছে। বাংলাদেশের অভ্যূদওয়ের পাশাপাশি পশ্চিমে পাখতুনিস্তান।সিন্ধু, এমনকি পাঞ্জাবেও কালক্রমে ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তার ভিত্তিতে একাধিক “নেশন ষ্টেট” গড়ে উঠবেই। এই উপমহাদেশের শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য তা’হবে যুগান্তকারী ঘটনা। এখন থেকেই সেই লক্ষ্য সামনে রেখেই বাংলাদেশ ও ভারতকে এগুতে হবে।