শিরোনাম | সংবাদ পত্র | তারিখ |
সম্পাদকীয়
সাম্প্রদায়িকতা জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের পরিপন্থী |
বাংলাদেশ
১ম বর্ষঃ ৬ষ্ঠ সংখ্যা |
০৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ |
সম্পাদকীয়
সাম্প্রদায়িকতা জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের পরিপন্থী
বর্তমানে বাংলাদেশের যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলছে তা কোন শোষক শ্রেনী বা সম্প্রদায়ের জন্য নয়। এ যুদ্ধ সাড়ে সাতকোটি নির্যাতিত, শোষিত ও বঞ্চিত মানুষের মুক্তিযুদ্ধ। পান্জাবী শোষকগোষ্ঠী দ্বারা পরিচালিত একচেটিয়া পুঁজিতান্ত্রিক ও আমলাতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক নিষ্পেশন থেকে এ যুদ্ধের জন্ম। এ যুদ্ধ বাংলার জনগণের যুদ্ধ অর্থ্যাৎ জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ। তাই এ যুদ্ধ কোন বিশেষ সম্প্রদায়ের উপর প্রভাব বিস্তার করবে না বা করতে পারে না। কিন্তু দখলদার বাহিনীর সর্দার ইহাহিয়া যুদ্ধের শুরু থেকে ঘৃন্য এক রাজনৈতিক চক্রান্তের মাধ্যমে এ যুদ্ধকে একটি সম্প্রদায়ের উপর চাপিয়ে বাংলার নিরিহ জনগণকে হত্যা করে চলেছে এবং সেই জন্য সাম্প্রদায়ীকতায় বিশ্বাসী এবং সাম্প্রদায়ীক শিক্ষা প্রচারণা দ্বারা প্রতারিত কিছুসংখ্যক মানুষ ইহাহিয়ার চক্রান্তের শিকার হয়ে এখনো সম্প্রদায়ের বিষ ছড়াচ্ছে। আমরা জানি সাম্প্রদায়ীকতায় এ জাতীয় মানুষের কোন লাভ হয়না। তবুও তারা গোপনে গোপনে এরূপ জঘন্য কাজ করে চলছে। যেমন আফিমের নেশায় মানুষের চিন্তাশক্তি থেকে শুরু করে সকল প্রকার শক্তিই স্তিমিত হয়ে আসে। তেম সাম্প্রদায়ীকতাবাদীরা কুশিক্ষা আর অসৎ প্রচারনার বশবর্তী হয়ে তাদের সত্যদর্শনের ক্ষমতা লুপ্ত হয়।যাক যা বলতে যাচ্ছিলাম, এ যুদ্ধে যখন সাম্প্রদায়ীকতার স্থান নেই তখন কোন একক সম্প্রদায় এরূপ মহান যুদ্ধের ঝুঁকি নিতে পারেনা। এ যুদ্ধের ঝুঁকি আমাদের সকলের অর্থাৎ সমগ্র বাংলার জনগণের। তাই যারা হানাদারদের এই চক্রান্ত বুঝতে পারেননি, বাস্তব অবস্থা দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করবেন এবং জনবিরোধী সাম্প্রদায়ীকতাবাদ পরিহার করবেন। কারন গত ২৪ বছর ধরে সাম্প্রদায়ীকতার দ্বারা বাংলার জনগণের কোন উপকার হয়নি। সাম্প্রদায়ীকতার দ্বারা কারা উপকৃত হয়েছে সে প্রশ্ন এখন থাক। আসল কথা হলো এই মুক্তিযুদ্ধে যে সমস্ত ব্যক্তি বা পরিবারকে হানাদার বাহিনী পথে বসিয়েছে সেই সমস্ত ব্যক্তি বা পরিবারের দুঃখ কষ্ট আমাদের সমানভাবে ভাগ করে নিতে হবে। একটা সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচার চলবে আর অন্য সম্প্রদায় পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে কৃত্রিম সমবেদনা জানাবে সেটা এই জাতীয় যুদ্ধের পরিপন্থী এবং বাংলার জনগণের তা কাম্য নয়।
————–