শিরোনামঃ জনমত
সংবাপত্রঃ জাগ্রত বাংলা, ১ম বর্ষঃ ৮ম সংখ্যা
তারিখঃ ১১ ই ডিসেম্বর, ১৯৭১
জনমত
অগ্রদূত
সংগ্রামের শেষ মুহূর্ত উপস্থিত। সুদীর্ঘ সংগ্রামের পর নিশ্চিত সাফল্য আজ আমরা অর্জন করতে চলেছি। এ চূড়ান্ত সময়ের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক। এ সময়ে সংগ্রামকে আমাদের এমনভাবে চালিয়ে যেতে হবে যাতে এতটুকু ত্রুটি না হয়। সামান্যতম ভুলের জন্যেও ভবিষ্যতের কাছে আমাদের জবাবদিহি করতে হবে।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন বলেছেন, শত্রুর উপর চূড়ান্ত আঘাত হানুন, পরবর্তী বংশধরেরা যেন না বলতে পারে উপযুক্ত সুযোগ ও আহ্বান পেয়েও তার সদ্ব্যবহার হয় নি।
আজ বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতের দুঃসাহসী সেনারা আমাদের মুক্তিসংগ্রামকে তরান্বিত করার জন্যে বর্বর হানাদারদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছেন। মৈত্রী ভাবাপন্ন এ উদ্যোগ সংগ্রামের এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দিয়েছে। এটা আমাদের পরম সুযোগ। এ সুযোগ মিত্রবাহিনীর কাঁধে কাধ মিলিয়ে অগ্রসর হলে শিগগির আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌছে যাব। এখন কাজ হবেঃ শত্রুর সরবরাহ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত করে দিয়ে তার উপর সর্বশেষ আঘাত হানা।
অপরাধীদের শাস্তি ও বিচারের ভার বাংলাদেশ সরকার নিয়েছেন তাই ভেজালমুক্ত হয়ে একমুখো চলার এ সুযোগ হেলায় হারানো উচিত নয়।
মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি দেশবাসীদের পক্ষ থেকে আমাদের আবেদন, আপনারা শত্রুর উপর চূড়ান্ত আঘাত হানুন। পদ্মফুল তুলতে গেলে যেমন কাঁটার আঘাতটি খেতে হয় তেমনি স্বাধীনতা অর্জন করতে বহু কষ্ট ও আত্নত্যাগ করতে হয়; এটাকে কেউ হাতে তুলে দেয় না। যারাই এ শেষ মুহূর্তের মহান মুক্তি সংগ্রামে অংশগ্রহণ করতে চায় তাদেরকে সহাস্য বদনে সে সুযোগ দিবেন; কেননা আমাদের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেশবাসীকে এক নির্দেশে বলেছেন, সংগ্রামের এ শেষ মুহূর্তে আপনারা মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর কাঁধে কাধ মিলিয়ে শরীক হউন। গৌরব আপনাদের জন্যে অপেক্ষা করছে – জয় বাংলা।