You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.11 | জাগ্রত বাংলা পত্রিকার সম্পাদকীয়: যুদ্ধ ও শান্তি | জাগ্রত বাংলা - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ
সম্পাদকীয়

যুদ্ধ ও শান্তি

জাগ্রত বাংলা

১ম বর্ষঃ ৮ম সংখ্যা

১১ ডিসেম্বর, ১৯৭১

 

সম্পাদকীয়
যুদ্ধ ও শান্তি

আপাতদৃষ্টে বিশ্বের প্রায় সকল রাষ্টকেই অত্যন্ত শান্তিকামী বলিয়া প্রতীয়মান হইতেছে। জাতিসংঘের সাধারন পরিষদে অনতিবিলম্বে যুদ্ধরত ভারত ও পাকিস্তানকে নিজ নিজ সৈন্য প্রত্যাহার এবং অস্ত্রসংবরণের প্রস্তাবটিতে সমর্থন জানানো হইয়াছে। যুদ্ধবিরোধী প্রস্তাব নিঃসন্দেহে সমর্থনযোগ্য, আমরাও যুদ্ধের বিরোধিতা করি। আমরা জানি, যুদ্ধ মানুষের প্রগতি ও কল্যাণের পথে অন্তরায়। কিন্তু যুদ্ধেরও রকমফের রহিয়াছে; সমস্ত যুদ্ধ এক সারিতে পড়ে না। কোন জাতির উপর যুদ্ধ চাপাইয়া দেওয়াকে আমরা অন্যায় বলি। অন্যায়কে সুদৃঢ়ভাবে মোকাবিলা করিতে গিয়া যে সংগ্রামের অবতীর্ণ হওয়া প্রয়োজন, তাহকে বলি ন্যায়যুদ্ধ। বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদী চক্রের মোড়ল, ঐশ্বর্য্যশালী আমেরিকা যুদ্ধ চাপাইয়া দিয়েছে দরিদ্র ভিয়েতনামীদের ওপর। তাই ভিয়েতনামের মুক্তির লড়াই একটি ন্যায় যুদ্ধ। পৃথিবীর সত্যিকার শান্তিকামী মানুষেরা ভিয়েতনামবাসীদের পক্ষে সংবেদিত।
তেমনি বঞ্চিত, নির্যাতিত বাঙ্গালীদের ওপরও যুদ্ধ চাপাইয়া দেওয়া হইয়াছিল। সেইদিন ধর্ষিতা বোন ও নিহত ভাইয়ের রক্ত ছুঁইয়া দেশকে মুক্ত করার শপথ নিয়াছিল যুগযুগের তন্দ্রাচ্ছন্ন নিরীহ বাঙ্গালী। বিশ্বের নেতৃবৃন্দের কানে এইসব সংবাদ পৌছায় নাই বলিলে ভুল হইবে; যে কোন দেশের সাধারণ মানুষের কাছেও বেতার ও সংবাদপত্রের বদৌলতে বিপুলা ধরনী অতি ক্ষুদ্র একটি গালফ বই কিছুই নহে। তবুও সকলে হঠাৎ আজ যুদ্ধের নামে এত উদ্বিগ্ন কেন?
পাকিস্তানের জঙ্গীচক্র প্রায় এককোটি বাঙ্গালীকে শরণার্থীরূপে ভারতে পাঠাইয়া দিয়া ঐ দেশের অর্থনীতির উপর বিপুল চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে একটি যুদ্ধেরই সুত্রপাত করে। উপরন্তু কিছুদিন যাবত ভারত সীমান্তে গোলাগুলি করিয়া বিশ্ববাসীকে সে এই বলিয়া ধোঁকাও দিতে চাহিয়াছিল যে, তাহার যুদ্ধ ভারতেরই সহিত, বাংলাদেশের সহিত নহে। অবশেষে সে পুরোদমেই ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামিয়া গেল। উহারই পরিপ্রেক্ষিতে ভারতকে নিজ স্বার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং গণতন্ত্রকামী বাংলাদেশের সাহার্য্যার্থে যুদ্ধে নামিতে হইয়াছে। এতদিন যাবত মিসেস গান্ধী যে সংযম দেখাইয়াছেন তাহা ইতহাসে দৃষ্টান্তবিহীন।
এইদিকে আমেরিকা তাহার তাবেদার রাষ্ট্র গোয়ারগবিন্দ পাকিস্তানকে চরম পতনের হাত হইতে বাঁচাবার জন্য নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়াছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন তাহা ভেটো প্রয়োগে বাতিল করিয়া দেয়। পরে বিষয়টি আমেরিকারই ইঙ্গিতে সাধারণ পরিষদে স্থান পায়। মার্কিন অর্থনৈতিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল রাষ্ট্রগুলি ইহাতে সমর্থন জানাইয়াছে। অবশ্য প্রস্তাবটি একান্তই পালনীয় নহে; এবং ভারত জাতিসংঘের চোখ রাঙ্গানীকে ভয় পায় না। অতএব পাকিস্তানের ধ্বংস অনিবার্য।
তথাকথিত সমাজতান্ত্রিক গণচীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ-এন-নাই পাকিস্তানের বিজয় কামনা করিয়াছেন। আমরাও ভুলিয়া যাই নাই সাম্রাজ্যলিপ্সু চীন ১৯৬২ সালে আক্রমন করিয়াছিল ভারতকে। এবং মাত্র কিছুকাল আগেও মানবতার অকৃত্রিম বন্ধু বৃহৎশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নের সীমান্তে বাধাইয়াছিল সংঘর্ষ।
পরিশেষে আমরা পৃথিবীর শান্তিবাদী রাষ্ট্র ও ব্যক্তিবর্গকে আহবান জানাই, তাঁহারা যেন নিরপেক্ষতার ভান করিয়া অন্যায়ের পক্ষ অবলম্বন করা হইতে বিরত থাকেন।