শিরোনাম | সংবাদপত্র | তারিখ |
সম্পাদকীয় | অগ্রদূত
১ম বর্ষঃ ৯ম সংখ্যা |
২৭ অক্টোবর , ১৯৭১ |
সম্পাদকীয়
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বয়স এখন মাত্র সাত মাস পেরিয়ে আট মাসে পড়েছে। সময়ের অগ্রগতির সাথে সাথে আমাদের যুদ্ধের গতি, প্রকৃতি ও প্রসার দ্রুত পরিবর্তিত হয়ে আরও অধিক পরিমাণে সাবলীল, দৃঢ় ও বহুল বিস্তৃতি লাভ করছে। আজ সারা বাংলার জল ও স্থল সুবিস্তৃত রণপ্রশস্তির এবং প্রতিদিন প্রতি প্রান্তর থেকে আমরা পাচ্ছি আমাদের দুর্বার সাহসী, মুক্তিপাগল জোয়ানদের সাফল্য , রণনৈপুণ্য আশার আলোকে নতুন নতুন সংবাদ। প্রতিটি সংবাদ দেশবাসীর মনে স্বাধীনতার আশার আলোকে করে তুলেছে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর আর চরম বিজয়ের মুহূর্তটিকে করে চলেছে নিকট থেকে অতি নিকটতর।
যে কোন যুদ্ধে, বিশেষ করে মুক্তি যুদ্ধে রণনৈপুণ্য ও গোলাবারুদের চেয়েও অধিক প্রসারিত ভূমিকা রয়েছে দেশের জনগণের উপর নিরোপিত নীতিসমূহের উপর। কারণ বর্তমান যুগের যুদ্ধের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত জনগণের মনস্তাতবিক কাঠামোর উপর। আমাদের এ যুদ্ধ মুক্তির যুদ্ধ, জনগণের যুদ্ধ এবং জনগণের দ্বারা পরিচালিত ও এককণ্ঠে সমর্থিত এ যুদ্ধ।
পক্ষান্তরে বর্বর পাক সেনাদের এ যুদ্ধ ঔপনিবেশিকতাকে বজায় রাখার জন্য ও শোষণ ও নিপীড়নকে স্থায়ী করা রজন্য, তাদের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত তাদের পাশবিক শক্তি ও মুষ্টিমেয় দালালদের সমর্থনের উপর। এ ভিত্তি অত্যন্ত ক্ষীণ ও ক্ষণস্থায়ী।
শত্রু পক্ষের গৃহীত ব্যবস্থাবলীকে পরোক্ষভাবে আমাদের গৃহীত ব্যবস্থাবলী ও সংগ্রামের পরিপূরক বা সম্পূরক হিসাবে ধরে নেয়া যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ তাদের নিপীড়ন, দহ, হত্যা ও অবিশ্বাসের নীতিকেই উল্লেখ করা যেতে পারে। যখনই আমাদের মুক্তিবাহিনী কোথাও হানা দেয় তখনই তার প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা হিসাবে তারা নিরীহ নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের উপর অকথ্য নির্য্যাতন ( নির্যাতন) , নিপীড়ন, দহন ও হত্যাযজ্ঞের তাণ্ডবলীলার অবতারণ করে। তাদের এ নীতি ঔপনিবেশিক শক্তিসমূহের থেকেই অনুসৃত । আর বাঙ্গালী হলে তাকে সন্দেহের চোখে দেখা। তাদের এই সব নীতি নিশ্চিতভাবে আমাদের সংগ্রামের ভিত্তিকে আরও মজবুত ও সংগ্রামকে দ্রুত করে তুলেছে। কারণ তাদের অনুসৃত নীতিসমূহ আমাদের জনগণের মনে যে প্রতিক্রিয়া ও মানসিক প্রস্তুতির প্রেরণা দিচ্ছে তা আমাদের সংগ্রামে বিশেষভাবে সহায়ক বলে প্রতিপন্ন।