শিরোনাম | সংবাদপত্র | তারিখ |
সম্পাদকীয় | অগ্রদূত
১ম বর্ষঃ ৮ম সংখ্যা |
২০ অক্টোবর , ১৯৭১ |
[অগ্রদূতঃ স্বাধীন বাংলার মুক্ত অঞ্চলের সাপ্তাহিক মুখপত্র। সম্পাদকঃ আজিজুল হক। ব্যবস্থাপকঃ সাদাকাত হোসেন এম এন এ ও নুরুল ইসলাম এম পি এ। প্রধান পৃষ্ঠপোষকঃ জে রহমান মুক্তিফৌজ অধিনায়ক। প্রকাশকঃ মোহাম্মদ আলী। রওমারী, রংপুর হতে সাইক্লোষ্টাইলে প্রকাশিত।]
সম্পাদকীয়
বৃহস্পতিবার, ১৪ই অক্টোবর মতে বাংলা ২৭ শে আশ্বিন দুপুর ১২ ঘটিকায় গায়েবী বাণী থেকে প্রচারিত হল বাংলার ভাগ্যাকাশের ( এখানে ভাগ্যকাশের) দুষ্টগ্রহ জাতির অভিশপ্ত- কুখ্যাত ডিকেডী শাসনের নায়ক ও জল্লাদ ইয়াহিয়ার পথিকৃৎ আয়ুবের পদলেহী কুকুর আঃ মোনেম খাঁ আহত ও ঢাকা হাসপাতালে শায়িত হয়। সন্ধ্যায় স্বাধীন বাংলা রেডিও থেকে প্রচারিত হলো কোন দুইজন দুঃসাহসী বঙ্গবীরের দুর্বার অভিযানের শিকার বাংলার ভূতপূর্ব কুখ্যাত সুবাদার আঃ মোনেম খাঁ আহত ও মৃত এবং তার প্রতিধবনি শোনা গেলে সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বেতার কেন্দ্রগুলি থেকে। গত প্রায় সাত মাস থেকে বাংলার জল স্থল মাঠ ঘাট পথ প্রান্তর থেকে আরম্ভ করে বাংলার জীর্ণ কুটিরের অভ্যন্তরে পর্যন্ত হত ও আহতের লীলা ক্ষেত্র পূতে গন্ধে ও আর্তনাদে এ শ্যামল বঙ্গভূমির আকাশ বাতাস বিষাক্ত ও ভারাক্রান্ত। এর পরশ খেলে ইথারের অনন্ত তরঙ্গমালার প্রত্যেকটির সঙ্গে। বাংলার বুকে সময়ের প্রবাহে হত আর আহত যেন আজ একটি অমানবিক প্রাকৃতিক নিয়মের নির্ঘটন বলে প্রতীয়মান। এই অগণন হত ও আহতের মধ্যে ব্যক্তিবিশেষের উপর মন্তব্য ও আলোচনা অতি বিরল ও অনাকর্ষণীয়। কিন্তু তবুও সেদিন মোনেমীদের যে আলোচনা শোনা গেলে শুধু এদেশের মানুষের কণ্ঠ থেকে নয়, দেশ-বিদেশের নানা বেতার যন্ত্রের মধ্য থেকে তা যেমনি কলঙ্কয় ও লজ্জাকর, তেমনি দৃষ্টান্তমূলক ও এদেশের বর্তমান এবং ভবিষ্যত মীরজাফরদের এক করুণ পরিণতির হুঁশিয়ারী সংকেত। গত ২৩ বৎসরে বাংলার সুবাদারী মসনদে পাক শাসকচক্র অনেককে বসিয়েছিল কিন্তু এ মসনদে কেউ স্থায়ী হতে পারেনি- এ যেন ছিল তাদের রঙ্গমঞ্চের আসন কিন্তু সুবাদারদের মধ্যে সবচেয়ে যে সুযোগ্য বলে বিবেচিত সে হয়েছিল সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী। কারণ প্রভুদের তুষ্ট করার জন্য স্বজাতির সর্বনাশের পথকে সে সুপ্রশস্ত ও সুগম করতে এক সময় এ দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাশীল ও প্রতাপশালী ছিল সেও কালের স্রোতে তাল না পেয়ে ছিটকে পড়েছিল পার্শবে। তবুও কি সে শেষ পর্যন্ত পারল নিজেকে ধরে রাখতে ? না- ইতিহাসের গতি রোধ করবে কে ?