You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.01 | মুক্ত বাংলা পত্রিকার সম্পাদকীয়: পাকিস্তানি সেনা নারী নির্যাতন ও আলেম সমাজ | মুক্ত বাংলা - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ
সম্পাদকীয়: পাকিস্তানি সেনা নারী নির্যাতন ও আলেম সমাজ মুক্তবাংলা

১ম বর্ষঃ ৭ম সংখ্যা

১ নভেম্বর, ১৯৭১

সম্পাদকীয়
পাকিস্তানি সেনা
নারী নির্যাতন ও আলেম সমাজ

বাংলাদেশটি পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে জুড়ে দেয়া হয়েছিল একমাত্র ধর্মীয় প্রবণতাকে গুরুত্ব দিয়েই। নইলে দ্বিতীয় কোন যুক্তি ছিল না যদিও বাঙ্গালী মুসলমান সমাজ হানাফী মতালম্বী এবং পাকিস্তান কাদিয়ানি, শিয়া, হানাফী, শাফেয়ী ও মালিকীদের আবাসভূমি।
ইসলাম ধর্মের কট্টর শত্রুও স্বীকার করেছেন যে, নারীজাতিকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়েছে ইসলাম ধর্ম। সাধারণ গৃহকোণ থেকে সিংহাসন পর্যন্ত নারীর মর্যাদা স্বীকৃত। মহাপুরুষ হযরত মুহম্মদ (সঃ) এর বাণী সন্তানের বেহেস্ত জননীর পদতলে। ইসলাম ধর্মের বুনিয়াদ মহাগ্রন্থ কুরআন মাজিদে পুরুষ জাতির প্রতি কড়া নির্দেশ রয়েছে নারী জাতিকে যথোপযুক্ত সম্মান দেওয়ার জন্য। নিজের বিবাহিতা স্ত্রী ব্যতীত অন্য নারী নিষিদ্ধ করা হয়েছে পুরুষের জন্য। পৈতৃক সম্পত্তিতে পুত্রসন্তানের মতো কন্যাসন্তানেরও ওয়ারিসী স্বত্ব স্বীকৃত। একদা দিল্লীর সিংহাসনে সম্রাজ্ঞী সুলতানা রাজিয়া ও দক্ষিণাত্যের বিজাপুরে বীরাঙ্গনা চাঁদ সুলতানা তারই ফলশ্রুতি। হাল জমানায় অবশ্য সভ্য জগতের সর্বত্রই নারী জাতির সমঅধিকার স্বীকৃত।
কিন্তু বাংলাদেশ ধ্বংস করার জন্য প্রেরিত স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া খানের সৈন্যবাহিনী ইসলাম ধর্মের অবশ্য পালনীয় নির্দেশকে অগ্রাহ্য করে বিভিন্ন শিবিরে অন্যূন ২০ হাজার নারী আটক করে রেখেছে নিজেদের পাশবিক বাসনা চরিতার্থ করার উদ্দ্যেশ্যে। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, চাকুরীজীবী মহিলা, কুলবধূ কেউই ওদের হিংস্র থাবা থেকে রেহাই পাননি।
ইসলাম ধর্মের অনুশাসন বেপরোয়াভাবে অগ্রাহ্যকারী মুসলমান ধর্মীয় পরিভাষায় ‘কাফের’। এবং নারীজাতির সতীত্বের প্রতি সম্মান দেখানো ইসলাম ধর্মের একটি কড়া অনুশাসন। সুতরাং বাংলাদেশে আগত ইয়াহিয়া খানের সৈন্যবাহিনী মুসলমান নয়, কাফের।
এই কাফেরদের বিরুদ্ধে কিন্তু আমাদের আলেম সমাজ আজ পর্যন্ত একটা টুঁ-শব্দও উচ্চারণ করেননি। সম্প্রতি যে ভাগ্যহীন মেয়েগণ খান সেনাদের শিবির থেকে পরিত্যাক্তা হয়েছেন ওরা মৈথুনকার্যে অনুপযুক্ত, রোগে ভুগে জীর্ণশীর্ণ এবং গর্ভবতী। এবং সেই হেতু পরিত্যাক্তা। ইহার পরিপ্রেক্ষিতে আলেম সমাজের প্রতি আমাদের জিজ্ঞাসাঃ ঐ ভাগ্যহীনরা যদি আপনাদেরই স্ত্রী, কন্যা, পুত্রবধূ হতেন তাহলে আপনারা কি করতেন?
অবশ্য আমরা জানি আপনারা বসে নাই। ইয়াহিয়া খানের ঔপনিবেশিক শাসনকে বাংলাদেশে কায়েম রাখার জন্য দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন আপনাদের অনেকে। বর্তমান জগতের অন্যতম অশ্চর্য বস্তু বাংলাদেশের উপ-নির্বাচনী প্রহসনকে বাস্তবে পরিণত করার অপচেষ্টায় আপনারা গলদ্ঘর্ম। কিন্তু আমরা ভুলিনি মুয়াবিয়ার পুত্র ইয়াজিদ ইসলাম ধর্মের শ্রেষ্ঠ অবদান গনতন্ত্রকে ধ্বংস করেছিল আপনাদেরই পূর্বসূরীদের সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত করেছিলো উমাইয়া রাজবংশ। ওদের সমর্থনে আপনাদের পূর্বসূরী আলেমগণ আবিষ্কার করেছিলেনঃ ‘আসসুলতানু জিল্লুল্লাহ’ (শাসক আল্লাহর ছায়া)-এর মতন একটা স্তোকবাক্য ইসলামের নামে। এবং এখন আপনারা প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছেন ‘আগা রাজবংশ’। এখনও ভাবছেন আমরা বিশ্বাস করি ‘আসসুলতানু জিল্লুল্লাহ’?
সতর্ক হউন! ঐ পশ্চিম কাফেরদের সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। যে ধর্মের গ্রন্থি আমাদেরকে জুড়ে দিয়েছিল ওদের সঙ্গে, ওদের আচরিত ধর্ম থেকে আমাদের সেই ধর্মের রূপ ভিন্ন, আলাদা। কাজেই বিবেকের চাবুকের তীব্র আঘাতে আপনারা সোচ্চার হয়ে উঠুন ওদের বিরুদ্ধে। ওরা আপনাদের ২০ হাজার নিষ্পাপ মেয়ের ধর্ম নষ্ট করেছে, জীবন নষ্ট করেছে এবং ওদের গর্ভে রেখেছে অপসৃষ্টি।