শিরোনামঃ অবিলম্বে সংগ্রামের সকল স্তরে ঐক্য চাই
সংবাদপত্রঃ নতুন বাংলা
তারিখঃ ২১ আগষ্ট, ১৯৭১
শত্রু চরম খেলায় মাতিয়াছে অবিলম্বে সংগ্রামের সকল স্তরে ঐক্য চাই (নিজস্ব ভাষ্যকার)
২০শে অক্টোবর। ৬ মাসেরও অধিককাল অতিবাহিত হইল। সংগ্রামের সকল স্তরে এখনও ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হইল না। মুক্তি সংগ্রামে ঐক্যের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করার বিশেষ প্রয়োজন পড়ে না। বিশেষতঃ বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম আজকের এই মুহূর্তে যে পর্যায়ে আসিয়া উপনীত হইয়াছে, সেখানে সংগ্রামের সকল স্তরে ঐক্য ও সংহতি স্থাপন একেবারে অপরিহার্য হইয়া উঠিয়াছে।
মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী খুঁটির জোরে পাকিস্তান বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামকে ভারতের কাজ বলিয়া প্রমাণের চক্রান্ত হিসাবে ভারতের বিরুদ্ধে বাঁধানোর সকল আয়জন প্রায় সম্পন্ন করিয়া ফেলিয়াছে। আমরা পূর্বেই বলিয়াছি মুক্তি সংগ্রামকে তীব্রতর করার মধ্য দিয়া এবং শত্রুকে চরম আঘাত হানিয়াই এই চক্রান্তের জবাব দিতে হইবে। অন্যথায় এই চক্রান্ত সফল হইলে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের ক্ষেত্রে সাময়িকভাবে হইলেও বিঘ্ন হইবে।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী লীগ এই ঐক্য ও সংহতির জন্য বারবার প্রচেষ্টা চালাইয়া আসিতেছে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির এই প্রচেষ্টা চালাইয়া আসিতেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমেদও মুক্তিফৌজের সদ্য ট্রেইনিংপ্রাপ্ত জোয়ানদের এক সমাবেশে ভাষণ দানকালে এই ঐক্যের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করিয়াছেন।
আজ (বুধবার) ২০শে অক্টোবর আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হইতেছে, সময়ের দিক হইতে এই বৈঠক খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল আশা করেন যে, ইতিপূর্বে উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের ব্যাপারে যে প্রজ্ঞা প্রদর্শন করা হইয়াছে, আওয়ামী লীগের এই বৈঠকে সংগ্রামের স্তরে ঐক্য স্থাপনের ব্যাপারে ততোধিক প্রজ্ঞা প্রদর্শিত হইবে।
আমাদের মনে রাখিতে হইবে যে, মুক্তিযুদ্ধে নিয়োজিত সংগ্রামী রাজনৈতিক দল ও শক্তিসমূহের সার্বিক ওইক্যই আমাদের শক্তি। অনৈক্যের ফলে শত্রুরই লাভ হইতে পারে। তাহা ছাড়া দেশমাতৃকার প্রশ্নে ভেদ বুদ্ধি সংকীর্ণতার কোন অবকাশ থাকিতে পারে না আর যদি থাকে তাহা হইলে তা শত্রুকেই সাহায্য করে শত্রু এখন চরম খেলায় মাতিয়া উঠিয়াছে। আসা করা হইতেছে, সংগ্রামী শক্তিসমূহের সুদৃঢ় সঙ্ঘতি স্থাপনের করিয়া শত্রুর খেলাকে বানচাল করা হইবে এবং বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করা হইবে।