শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৮৮। চট্টগ্রামে শান্তি কমিটির প্রতি জেঃ নিয়াজি | দৈনিক পাকিস্তান | ১৭ সেপ্টেম্বর |
চট্টগ্রামে শান্তি কমিটির প্রতি জেঃ নিয়াজি
বিপথগামীদের জাতীয়
পুনর্গঠনে শরীক
হতে উদ্বুদ্ধ করুন
এপিপির খবরে প্রকাশ, ইষ্টার্ন কমান্ডের কমান্ডার ও ‘খ’ অঞ্চলের সামরিক আইন প্রশাসন লেঃ জেনারেল এ, এ, কে নিয়াজী গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম শান্তি কমিটির সদস্যদের প্রতি বিপথগামী দেশত্যাগীদের মন থেকে ভ্রান্ত ধারণা অপসারণ ও দেশে ফিরে এসে জাতীয় পুনর্গঠনের কাজে আত্মনিয়োগের জন্য তাদের বোঝানোর আহবান জানিয়েছেন।
সামরিক আইন প্রশাসক বলেন যে, বিপথগামী ব্যক্তিরা তাদের ঘরবাড়ী ও পরিবার-পরিজন ছেড়ে এক শোচনীয় অবস্থার মধ্যে বাস করছে। তিনি বলেন যে, বাস্তবিকপক্ষে তারা হচ্ছে আমাদের জাতীয় সম্পদ তবে সত্য উপলব্ধি করে দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে পুনরায় তাদের জীবন যাত্রা শুরু করতে হবে।
পক্ষান্তরে তারা তাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা অব্যাহত রাখলে সাধারণ মানুষের দুর্ভগ সৃষ্টি ছাড়া আর কিছুই লাভ করবে না।
জেনারেল নিয়াজী বলেন যে, বিচ্ছিন্নতাবাদী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে খতম করতে হবে। তবে এই প্রক্রিয়ায় শান্তিপ্রিয় নাগরিকদের কষ্ট ভোগ করা উচিৎ নয়। জেনারেল নিয়াজী শান্তিপ্রিয় নাগরিকদের উদ্দেশ্যে বলেন যে, তাদেরও রাষ্ট্রের প্রতি কর্তব্য রয়েছে এবং রাষ্ট্রবিরোধী ব্যক্তিদের নির্মূলের ব্যপারের প্রশাসন ব্যবস্থাকে সাহায্য করা উচিত।
রাষ্ট্র ও এর নিরাপত্তা সম্পর্কে জেনারেল নিয়াজী বলেন যেন, পাকিস্তান হচ্ছে ইসলামের দুর্গ এবং যারা পাকিস্তানকে ধ্বংসের তৎপরতায় লিপ্ত, তারা কার্যতঃ ইসলামের শত্রু। তিনি বলেন যে, পাকিস্তান হচ্ছে সমগ্র জাহানের আশা-আকাঙ্খার প্রতীক। তাই এই রাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য ইসলামী নীতিসমূহের অনুসরণ অবশ্য কর্তব্য।
ইসলামে জাগতিক সুখ শান্তি ও আখেরাতে মুক্তির বিধান রয়েছে। ইতিহাস থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, যতদিন আমরা ইসলামী নীতিসমূহ মেনে চলেছি ততদিন আমরা সমুন্নত ছিলাম। কিন্তু যখনই আমরা ইসলামকে অবহেলা করেছি তখনি আমরা এক পরাধীন জাতিতে পরিণত হয়েছি। তিনি বলেন যে, ইসলামী জীবনধারা পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে মুসলিম জাতি আবার তার গৌরবময় শিখরে আরোহণ করতে পারে।
এর আগে জেনারেল নিয়াজী, চট্টগ্রামে ট্রেনিং গ্রহণরত রাজাকারদের পরিদর্শন করেন। তিনি তাদের মনোবল ও উৎসাহের প্রশংসা করেন। পরে জেনারেল নিয়াজী রাঙ্গামাটি সফর করেন। সেখানে তিনি শান্তি কমিটির সদস্যসহ এক বিরাট জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। জনসাধারণ প্রচণ্ড রোদ উপেক্ষা করে জেনারেলকে অভ্যর্থনা জানাতে আসেন। এদের মধ্যে চাকমা প্রধান ও নির্বাচিত এম এন এ, রাজা ত্রিদিব রায়ও উপস্থিত ছিলেন।
জেনারেল নিয়াজী রাঙ্গামাটি এলাকা থেকে দুষ্কৃতিকারীদের সফলভাবে উৎখাত ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জনসাধারণের প্রতি অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানে যে সৈন্য আছে, তাদের পক্ষে প্রতিরোধ ও নাশকতামূলক তৎপরতার সকল উৎসকে নির্মূল করতে দীর্ঘদিন লাগবে না কিন্তু নির্মমভাবে কোন নির্মূল অভিযান পরিচালিত হলে বহু মূল্যবান জীবন নষ্ট এবং বহু নারী বিধবা ও শিশু এতিম হয়। তারা আমাদেরও মা-বোন ও সন্তান এবং তাদের জন্যে আমাদের সবরকম শ্রদ্ধা রয়েছে।
তিনি শান্তি কমিটির সদস্যদের প্রতি বিপথগামী ব্যক্তিদের দেশে ফিরে এসে দেশপ্রেমি নাগরিক হিসেবে সম্মানজনক জীবন শুরু করার জন্য তাদেরকে বোঝানোর আহবান জানান। চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম সফরকালে জেনারেল নিয়াজী সৈন্যদের সাথেও মিলিত হন। স্থানীয় কমান্ডার এলাকার সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন যে, আইন ও শৃঙ্খলা রক্ষা ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো প্রহরার ব্যাপারে রাজাকার ও ই,পি,আর খুবই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে বলে সেনাবাহিনীর উপর চাপ অনেকখানি হ্রাস পেয়েছে এবং তারা এখন প্রধানতঃ সীমান্ত রক্ষার ব্যাপারেই নিয়োজিত আছে। জেনারেল নিয়াজী বিকেলে ঢাকা ফিরে আসেন। সফরকালে জিওসিও তার সাথে ছিলেন।