শিরোনাম | সংবাদ পত্র | তারিখ |
জাতিসংঘের সাহায্য সামগ্রী নিয়ে ছিনিমিনি খেলা | বাংলার বাণী
মুজিবনগরঃ তৃতীয় সংখ্যা |
১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ |
জাতিসংঘের সাহায্য সামগ্রী নিয়ে ছিনিমিনি খেলা
(বিশেষ প্রতিনিধি)
বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকায় পশ্চিম পাকিস্তানী হানাদার সেনাবাহিনী জাতিসংঘের সাহায্য কেন্দ্রের গাড়ীগুলি যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করিতেছে।
লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ, নারী নির্যাতন এবং গণহত্যায় লিপ্ত পাকফৌজের পক্ষে সামরিক বাহিনীর গাড়ীর পরিবর্তে জাতিসংঘের গাড়ী ব্যবহার অধিকতর সুবিধাজনক।
বিশ্বস্ত সুত্রে জানা গিয়াছে, নভেম্বর মাসে বাংলাদেশে যে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিবার্তার ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারায় ঐসময় ত্রানকার্জে সুবিধার জন্য এইসব গাড়ী বাংলাদেশে আনা হইয়াছিল। জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক জরুরী শিল্প- কল্যাণ তহবিল পরেও সাহায্য কার্যের জন্য কিছু গাড়ী প্রেরণ করিয়াছে।এইসব গাড়ী ছাড়াও তখন নরওয়ে এবং অন্যান্য স্কান্ডিনেভিয়ান দেশ বহু যন্ত্রচালিত ও রাবারের নৌকা ত্রান কার্যের জন্য দান করিয়াছিল।দখলদার পাকিস্তানী জঙ্গীশাহী দুস্থ মানুষের সাহায্যের জন্য প্রদত্ত সেইসমস্ত জলযানসমূহও সামরিক কার্যে ব্যবহার করিতেছে।
সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধারা খুলনায় একটি পাকিস্তানী গানবোট দখল করিয়াছেন। তাঁহারা দেখিয়াছেন, এই গানবোটে জাতিসংঘের প্রদত্ত জলযানসমূহেরই একটি। পাকিস্তানী সৈন্যরা এইগুলির কিঞ্চিত সংস্কার করিয়া সামরিক কাজে ব্যবহার উপযোগী করিয়া লইয়াছে।
পাকিস্তানী সৈন্যরা যে শুধু জাতিসংঘের গাড়ীই ব্যবহার করিতেছে তাহা নহে। তাহারা বাত্যাবিধ্বস্ত মানুষের জন্য প্রদত্ত কাপড়-চোপড়, খাদ্-ঔষধপত্র নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করিয়াছে।
সর্বশেষ খবরে জানা গিয়াছে, ইউরোপের তিনটি দেশ জাতিসংঘের ত্রাণসামগ্রীর এইরূপ অপব্যবহার সম্পর্কে জাতিসংঘের সেক্রেটারী জেনারেলের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করিয়া চলিতেছে।দেশত্রয় মনে করে – অবিলম্ভে পাকিস্তানকে জাতিসংঘের সকল প্রকার সাহায্য প্রদান বন্ধ করা উচিত।
এদিকে বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘকে জানাইয়া দিয়াছে যে, পাকিস্তান জঙ্গীচক্র ইউনিসেফ (Unicef)প্রদত্ত গাড়ীগুলি সামরিক কাজে ব্যবহার করিতেছে।
লন্ডনস্থ বাংলাদেশ মিশন বাংলাদেশ সরকারে পক্ষ হইতে জাতিসংঘের কাছে এই অভিযোগ পেশ করিয়াছে।
—————————