You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.06 | পূর্ব পাকিস্তানের সংকটের উপর কিছু প্রশ্ন ও পাকিস্তান সরকারের জবান | সরকারী প্রচার পুস্তিকা - সংগ্রামের নোটবুক

শিরোনামঃ ১৩৭। পূর্ব পাকিস্তানের সংকটের উপর কিছু প্রশ্ন ও পাকিস্তান সরকারের জবান
সূত্রঃ সরকারী প্রচার পুস্তিকা
তারিখঃ জুন, ১৯৭১
.
পূর্ব পাকিস্তান সংকট
প্রশ্নোত্তর
.
(পূর্ব পাকিস্তানের সাম্প্রতিক উন্নতির কারনে দেশি এবং বিদেশি বিভিন্ন সংবাদপত্রের প্রতিনিধিদের দ্বারা বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে। এই প্রশ্ন গুলোর জবাব পাকিস্তান সরকারের মুখপাত্র দ্বারা দেওয়া হয়েছে। এই প্রশ্ন এবং উত্তরের গুরুত্বপূর্ন/সারমর্ম অংশ এখানে দেওয়া হলো।)
প্রশ্ন ১ – ১৭ জানুয়ারি ১৯৭১ এর সাধারন নির্বাচনের পরের অধিবেশনেই কেন ন্যাশনাল এসেম্বলির অধিবেশন আহবান করা হয়নি? শেখ মুজিবুর রহমান প্রকাশ্যে অভিযোগ করেন পশ্চিম পাকিস্তানী পক্ষের সুবিধার্থে এবং সে অনুসারে তিনি একজন সংখ্যা গরিষ্ঠ দলের নেতা হওয়া সত্ত্বেও ৩ মার্চের তারিখ সংশোধনের বিষয়ে তার সাথে কোন আলোচনা করা হয়নি।
উত্তরঃ নির্বাচনের পূর্বে (৩রা ডিসেম্বর ১৯৭০) জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষনে প্রেসিডেন্ট সকল রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছে প্রস্তাব করেছিল যে, প্রত্যেকের সাথে একটি কার্যকরি আলোচনা হবে এবং ভবিষ্যৎ সংবিধানের মূল শর্ত গুলোর উপর ঐক্যমতে পৌছাবে। যেহেতু এই আলোচনা ভবিষ্যৎ সংবিধান প্রনয়নের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ন তাই এই জন্য যথেষ্ট সময় প্রয়োজন।এইজন্য ন্যাশনাল এসেম্বলির মিটিং ৩ই মার্চে নির্ধারন করা হয়।
প্রশ্ন২ঃ কেন ৩ই মার্চের ন্যাশনাল এসেম্বলির নির্ধারিত অধিবেশন স্থগিত করা প্রয়োজন ছিল?এটা কি সত্য যে জনাব ভূট্রো ন্যাশনাল এসেম্বলির অধিবেশন বয়কট করার হুমকি দিয়েছিল?
উত্তরঃ সংঘর্ষ থেকে রক্ষার জন্য কারন কোন সংখ্যাগরিষ্ঠ দলই পুরো পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করতে পারেনি এবং উভয় সংবিধানের বিষয়ে পরস্পর বিরোধী অবস্থান নিয়েছে। আওয়ামীলীগের সদস্যরা প্রকাশ্যে শপথ গ্রহণ করেছিল যে তারা ছয় দফা থেকে এক ইঞ্চিও নড়বে না এমতাবস্থায় পিপলস পার্টি জোড় দিয়ে বলে তারা অযথা এমনকি শুনানির সুযোগ ছাড়া কোন সিদ্ধান্ত গ্রহনে এসেম্বলিতে যাবেনা।
দৃশ্যত বাস্তব প্রেক্ষাপট থেকেই জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া অনিবার্য হয়ে উঠে। উভয় দলের পূর্ব সমঝোতা ছাড়া এবং এরই সাথে পশ্চিম পাকিস্তানের অনেক প্রতিনিধি হাউস থেকে দূরে।উদ্ভোধনী অধিবেশন যদি পূর্ব নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী ৩ই মার্চ অনুষ্ঠিত হত তাহলে অধিবেশনে বিশৃঙ্খলা তৈরি হত এবং ক্ষমতা হস্তান্তরের শান্তিপূর্ন প্রক্রিয়া নষ্ট হয়ে যেত। রাজনৈতিক নেতাদের সংবিধান বিষয়ে একটি কার্যকরি সমাধানে পৌছানোর এবং তাদের জেদকে নিয়ন্ত্রনের জন্য আরো সময়ের প্রয়োজন ছিল।
প্রশ্ন৩ঃ জাতীয় পরিষদের বাইরে কেন আপোষের প্রয়োজন ছিল যেখানে স্পষ্টভাবে সংবিধান প্রনয়নের জন্য জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহবান করা হয়েছে।
উত্তরঃ কারন সমঝোতার অভাবে অনুষ্ঠিত এসেম্বলির অধিবেশন হাউজেই ব্যর্থ হয়ে এসেম্বলি নিজেই ভেস্তে যেত।
প্রশ্নঃ পিপল’স পার্টির চেয়ারম্যান মিঃ ভুট্রো সরকারের নিকট দুটি বিকল্প নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল – ১,ন্যাশনাল এসেম্বলির অধিবেশন স্থগিত করা ২, সংবিধান প্রনয়নের জন্য ১২০ দিনের সময়সীমা শিথিল করা। কেন প্রথম বিকল্পটি গ্রহণ করা হলো দ্বিতীয়টি নই?
উত্তরঃ এই সংকটে সরকার কোন রাজনৈতিক নেতা অথবা অন্য কাউকে সন্তুষ্ট করতে চায়নি কিন্তু একটি সংবিধান প্রনয়নের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে চেয়েছে। অতিরিক্ত সময়ের মধ্যে পূর্ব বোঝাপড়া ছাড়া হাউজে বিতর্ক দীর্ঘায়িত হতো এবং সংবিধান প্রনীত হতো না।
প্রশ্ন৫ঃ আওয়ামীলীগ ছয় দফার উপর ভিত্তি করে নির্বাচনে অংশগ্রহন করে। যদি পাকিস্তানের অখন্ডতার জন্য এই দফা গুলো হুমকি হয়, তাহলে কেন A% আওয়ামীলীগের ছয় দফার ভিত্তিতে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি।
উত্তরঃ ছয়দফা মূলত দাবি হিসেবে একটি বৃহৎ আকারের রাষ্ট্রের কাঠামোর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসণ প্রদানের প্রক্রিয়া ছাড়া আর কিছুই ছিল না। তাছাড়া, গত এক বছর আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ কতৃক সর্বত্র নির্বাচনী প্রচারনায় জোড় দেওয়া ছয় দফা “ঈশ্বরের বাণী” ছিলো না,সেগুলো “আলোচনার জন্য উন্মুক্ত ছিলো” এবং বিশ্লেষকদের বক্তব্য ছিলো ছয় দফা দৃশ্যত পাকিস্তানের অস্তিত্বের জন্য “অকল্যানকর”। এইদিকে আওয়ামীলীগের অবস্থান নির্বাচনমুখী ছিলো এবং প্রকাশিত বিবৃতিতে পশ্চিম পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দের সাথে শেখ মুজিবুর রহমানের কর্মপদ্ধতি প্রণয়নের বিষয়টি প্রকাশ পায়। উভয়ে আইনী কাঠামোর মধ্যে সংবিধান এবং সরকার গঠনের বিষয়টি ব্যক্ত করে।আইনগত কাঠামোর আওয়াতাধীন আদেশের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল স্বচ্ছ এবং নিরেপেক্ষ নির্বাচনে লড়াই করতে এবং সাংবিধানিক ব্যবস্থার অধীনে পাকিস্তানের অখন্ডতা এবং ঐক্য গড়তে চায়।
প্রশ্ন৬ঃ মুজিবের ছয় দফায় অর্থনৈতিক শোষণ মুক্তির কথা বলা হয়েছে যদি তাই হয়, সরকার কিভাবে তা দূর করবে?
উত্তরঃ পূর্ব পাকিস্তান নামক এই অঞ্চল শতাব্দী ধরে কলকাতার পশ্চাৎ ভূমি ছিলো এবং বৃটিশ সাম্রাজ্যেবাদ এবং কলকাতার মারওয়ারি ব্যবসায়ী কতৃক শোষিত হয়েছে। দুই শতকের দুই দশকের মধ্যে দূর করা সম্ভব না। স্বাধীনতার পূর্বে পূর্ব পাকিস্তানে একটি পাকা পাটের গাইট প্রেস পর্যন্ত ছিলো না। এখন বিশ্বের সর্ববৃহত পাটকল রয়েছে, পাকিস্তানের প্রথম স্টিল মিল এবং দেশের সর্ববৃহত সারকারখানা এবং আরো অনেক নির্মানাধীন রয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার বিশদ পরিকল্পনা পক্রিয়াধীন রয়েছে।
প্রশ্ন৭ঃ আওয়ামীলীগের ছয় দফা যদি LFO অস্বীকার না করে থাকলে কেন ছয় দফাকে সাংবিধানিক আইনগত অধিকার হিসেবে দেখতে অস্বীকার করে। যেখানে ন্যাশনাল এসেম্বলিতে তাদের নিরুঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে।
উত্তরঃ একটি সংবিধান ঐক্যমতের ফসল। এটা কোন সাধারন বিল নই যে দেশের একটি অঞ্চলের প্রতিনিধিত্বমূলক সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দ্বারা গ্রহণ করা হবে। এক ব্যক্তির এক ভোট নীতি পরিষ্কার করে প্রেসিডেন্ট তার আস্থা এবং বিশ্বাসের অবস্থা পরিষ্কার করেছে। বিনিময়ে তিনি আশাব্যক্ত করেন, আঞ্চলিক সংখ্যা গরিষ্ঠতা আনুপাতিক হারে ব্যবহার করে রাষ্ট্রের সকল অংশের জন্য একটি গ্রহণযোগ্য সংবিধান প্রণয়ন করা হবে। আওয়ামীলীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও ইহা মানতে অস্বীকার করলো। যদিও ক্ষমতা হস্তান্তরই জাতির কাছে প্রথম অঙ্গীকার ছিলো তার পূর্বে একটি সাংবিধানিক কাঠামোর মাধ্যেমে ক্ষমতা হস্তান্তর সঠিক স্থানে ক্ষমতা হস্তান্তরের নীতি নির্ধারন করতে হবে।
প্রশ্ন৮ঃ ইহা একটা বিশ্বস্ত সূত্রের আবাস যে প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আলোচনাকালীন সময়ের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশটি আর্মি কর্তৃক দখল করার জন্য পশ্চিম পাকিস্তান থেকে জনবল এবং সরঞ্জামাদি নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেন। ইহা কতটুকু সত্য?
উত্তরঃ বিশ্বাস করা পুরোপুরি অযৌক্তিক, গত এক বছরেরও বেশি সময় স্থায়ী দেশে প্রথমবারের মতো সর্বাত্নক সাধারণ নির্বাচন চলেছে। এরই মধ্যে এক ব্যক্তি এক ভোট নীতি করা হয়েছে এবং পূর্ব পাকিস্তানে সেনাবাহিনী নিয়োগের অবস্থা এখন যেমন পূর্বেও তেমন ছিলো।
প্রশ্ন৯ঃ প্রেসিডেন্ট ২৬শে মার্চ তার ভাষণে বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তার আলোচনা কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে এবং তিনি(প্রেসিডেন্ট)শান্তিপূর্নভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য নৈতিকভাবে প্রস্তুত। কিছু গুরুতর জটিলতা থাকা সত্ত্বেও শেখ মুজিবুর রহমান একটি ঘোষনার মাধ্যেমে সামরিক আইন তুলে নেওয়ার প্রস্তাব করেন এবং সকল রাজনৈতিক দল তাতে সম্মতি দেয়।প্রেসিডেন্ট কতৃক অনুমোদিত নীতির সাথে এই প্রস্তাব কিভাবে সাংঘর্ষিক বলে মনে করা হয়?
উত্তরঃ প্রাথমিক পর্যায়ে কনফেডারশনে কোন আলাপ হয়নি।তাছাড়া দ্বিতীয় পর্যায়েও “সংবিধানের কনভেনশন” নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোন আলোচনা হয়নি। কিছু গুরুতর সংকট থাকা সত্ত্বেও আইনী অন্যান্য বিষয়াদি বিবেচনা করে প্রেসিডেন্ট নীতিগতভাবে শান্তিপূর্নভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরে রাজি ছিলেন কিন্তু একটি শর্তে। এই শর্তটি শেখ মুজিবুর রহমানের নিকট পরিষ্কারভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট চেয়েছিলেন তাতে সব রাজনৈতিক দলের পূর্বোনুমোদন এবং নি্রেপেক্ষ সম্মতি থাকবে। সে অনুসারে এই প্রস্তাব অন্যান্য রাজনৈতিক 1P-ders এর সঙ্গে আলোচনা করা হয়। প্রেসিডেন্টের ঘোষণার বিষয়ে তাদের যে প্রস্তাব তাতে যে কোন আইনগত বৈধতা নেই তাতে তারা সর্বসম্মত হয়। ইহা সামরিক আইনকেও কাভার করবে না জনগনের ইচ্ছার উপর ভিত্তি করেও হবে না এভাবে একটা শূন্যতা তৈরি হবে এবং বিশৃঙ্খলা ঘটবে। তারা মনে করেছিল বিদ্যমান পরিস্থিতিতে একটি ঘোষণার মাধ্যেমে ন্যাশনাল এসেম্বলির দুই অংশের বিভেদকে আরো উস্কে দিতে পারে। তারা তারপর অন্তর্বর্তী সময়ে সামরিক আইন তুলে নিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিকট হস্তান্তরে মতামত ব্যক্ত করে। ন্যাশনাল এসেম্বলি একটি কার্যকরি সাংবিধানিক বিল পাস এবং প্রেসিডেন্টের অনুমোদনের জন্য মিলিত হয়। প্রেসিডেন্ট সম্পূর্নভাবে তাদের এই ভাবনার সাথে একমত হয় এবং এই বিষয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রকৃত মনোভাব সম্পর্কে তাদের জিজ্ঞাসা করে। তিনি নেতৃবৃন্দকে তাদের পরিকল্পনা ব্যক্ত করতে বলেন যেখানে একছত্র ক্ষমতার সকল উৎস ধ্বংস হবে, যেমন ন্যাশনাল এসেম্বলির কার্যকরী অধিবেশনের মাধ্যেমে সামরিক আইন এবং অন্যান্য সংকটে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে।
তারা শেখের সাথে বসতে আগ্রহী হলো, তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করলো এবং ন্যাশনাল এসেম্বলি কতৃক সৃষ্ট ক্ষমতা হস্তান্তরে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা মেনে চলতে সম্মত হলো। শেখ মুজিবুর রহমানের ভাবনার কারনে ন্যাশনাল এসেম্বলি শুরুর সাথে সাথে দুটি ভাগে বিভক্ত হতে পারে বলে রাজনৈতিক নেতারা উদ্বিগ্ন ছিলো। তারা অনুভব করলো, এ ধরনের পরিস্থিতি সম্পূর্ন পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষায় হুমকি হবে। শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রেসিডেন্টের সাথে আলোচনার সময়ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান শেখকে তাদের এই মতামত ব্যক্ত করেন। ২৩শে মার্চ সন্ধ্যায় রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রেসিডেন্টক্বে জানান যে শেখ মুজিব তার পরিকল্পনা পরিবর্তনে আগ্রহী নই। সকলে জানান তিনি চেয়েছেন রাষ্ট্রপতি সামরিক শাসন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতা তার নিকট হস্তান্তর করবে।
প্রশ্ন১০ঃ ইহা কি সত্য প্রেসিডেন্ট এবং শেখ মুজিবুর রহমান নিম্নোক্ত চারটি পয়েন্টে সম্মতিতে পৌছায়-
১, প্রেসিডেন্টের ঘোষণার মাধ্যেমে সামরিক আইন প্রত্যাহার এবং বেসামরিক সরকারের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর।
২, প্রদেশ গুলোতে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর।
৩, রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপতিই থাকবেন এবং কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রন নিবেন।
৪, হাউসের যুগ্ন অধিবেশনে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের সদস্যরা চূড়ান্ত সংবিধানের জন্য পৃথকভাবে প্রস্তুতি নিবে।
উত্তরঃ ক্ষমতা হস্তান্তর এবং তার গ্রহণের মূল বিষয় সেখানে উল্লেখ আছে, আলোচনা অনুযায়ী সরকারের পক্ষে রাষ্ট্রপতি এই বিষয়ে তার সিদ্ধান্ত ব্যক্ত করেছেন। সেখানে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্তে পৌছার প্রশ্নই আসেনা। যখন তিনি নির্বাচনের নির্দেশ দেন তখন তার ক্ষমতা হস্তান্তরের দায়বদ্ধতা জন্মে। ভবিষতে কি প্রয়োজন এই জন্য কিছু পরিকল্পনা কেন্দ্র এবং প্রদেশ উভয়ের মধ্যে ছিলো। সেখানে সামরিক আইনের অথবা ন্যাশনাল এসেম্বলির অঙ্গীকারের বিষয়ে একটি ঘোষণার কোন গুরুত্ব নেই। আপনাকে অন্তর্বর্তী ক্ষমতা সামরিক আইন অথবা সাংবিধানিক প্রক্রিয়া এই দুয়ের একটিতে রূপান্তরিত করতে হবে।
প্রশ্ন১১ঃ এটা কি সত্য প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান মি.জেড.এ. ভূট্রোকে ন্যাশনাল এসেম্বলির পৃথক অধিবেশনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন? পরবর্তীতে জানা যায় ছয় দফার আলোকে সংবিধান প্রনীত হলে কেন্দ্র ও পূর্ব পাকিস্তানের সম্পর্কের উপর প্রভাব পড়বে। পশ্চিমে গুরুতর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। এই কারনে পশ্চিমের MNAS যৌথভাবে ছয় দফার আলোকে সংবিধান প্রণয়ন এবং ঐক্য রক্ষার্থে নতুন পন্থায় আগ্রহী হয়।
উত্তরঃ প্রেসিডেন্ট এমন কোন প্রস্তাব করেনি।
প্রশ্ন১২ঃ এটা কি সত্য ক্ষমতা বন্টনে সম্মত হয়ে তারা যৌথভাবে একবার সমঝোতায় পৌঁছেছিল। ছয় দফার উপর ভিত্তি করে তারা যেমনটি চেয়েছিল যতটুকু সম্ভব ন্যাশনাল এসেম্বলি কর্তৃক চূড়ান্ত সংবিধান প্রণয়নের কাছাকাছি পৌঁছেছিল।
উত্তরঃ দল গুলোর পারষ্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে ক্ষমতা বন্টনের যে কোন কাজই প্রেসিডেন্টের নিকট স্বীকৃত ছিলো, দলগুলো যা করতে চেয়েছে LFO ও তাই করেছে।
প্রশ্ন১৩ঃ এটা বলা কি উচিত হবে “ প্রেসিডেন্ট অথবা তার দলের চূড়ান্ত অবস্থান কি সে সম্পর্কে কোন ধারনা ছিলো না”।
উত্তরঃ রাষ্ট্রের অখন্ডতা বিলোপ হতে পারবে না অথবা করবে না এটাই প্রেসিডেন্টের চূড়ান্ত অবস্থান ছিলো।
প্রশ্ন১৪ঃ এটা বলা কি উচিত হবে প্রেসিডেন্ট এবং তার দল প্রেসিডেন্সিয়াল ঘোষণা ১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইনের অনুযায়ী ক্ষমতা হস্তান্তরে আগ্রহী ছিলো?
উত্তরঃ প্রেসিডেন্ট ন্যাশনাল এসেম্বলির আইন অনুযায়ী ক্ষমতা হস্তান্তরে আগ্রহী ছিল। ১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইন ঘোষণা ছিলো না একটি পার্লামেন্টের আইন ছিলো।
প্রশ্ন১৫ঃ ইহা বলা উচিত যে ক্ষমতা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে “ অন্যের জন্য নিজের অতিরিক্ত” আইনী পক্রিয়া সম্পর্কে মি.ভূট্রোর মধ্যেও পর্যায়ক্রমে প্রশ্ন জেগেছিলো যেগুলো সম্বন্ধে শুরু থেকেই শেখ মুজিবের বিরোধ ছিলো।
উত্তরঃ একটি আইনী পক্রিয়া সবসময় প্রয়োজন ছিলো।
প্রশ্ন১৬ঃ ইহা অভিযোগ করা হয় যে যখন অন্তর্বর্তী সংবিধান খসড়া প্রনয়নের পরিকল্পনা যখন চূড়ান্ত হয় এবং এই বিষয়ে আর কোন বাধাই ছিলো না তখন আলোচনা ইচ্ছাপূর্বক ভেঙ্গে দেওয়া হয়। ইহা কি সঠিক?যদি না হয়, প্রকৃত ঘটনা কি?
উত্তরঃ চূড়ান্ত পর্যায়ে আওয়ামী নেতাদের এক গুয়েমি ছাড়া আর কোন বাধা ছিলো না, অন্যান্য দলের নেতারা প্রেসিডেন্টকে জানান যে,আলোচনা প্রত্যাখ্যান করেছে, সমাঝোতায় কথা না বলার জন্য তারা অনমনীয় ভঙ্গি অবলম্বন করেছিল।
.
.
প্রশ্ন ১৭: আওয়ামী লীগারদের ভাষ্যমতে ক্ষমতার হাতবদলের জন্য জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের দরকার এমন কোন কিছু তাদের আগে থেকে জানানো হয় নি। এটা কি বাস্তবসম্মত অবস্থান? দাবী করা হয়ছে যে এরূপ কোনো তথ্য আওয়ামী লীগের কাছে পৌঁছানো হয় নি এবং “এত ছোটখাট আইনী ব্যাপারে তারা আলোচনা ভেঙে দেবে না”।
উত্তরঃ তারা এ বিষয়ে সম্পূর্ণ অবগত ছিল কিন্তু নিজেদের দেয়া শর্ত পূরণ না হলে তারা জাতীয় পরিষদে যেতে রাজি ছিল না। কিন্তু তাদের দাবীদাওয়া মেনে নিলে সেখানে একটি শূন্যতার সৃষ্টি হত যা রাষ্ট্রপতি অথবা অন্যান্য দলের নেতৃবৃন্দ, কারো কাছেই গ্রহণযোগ্য ছিল না।

প্রশ্ন ১৮: শেখ মুজিবুর রহমান খোলাখুলিভাবেই তিনি বিচ্ছিন্নতা চান এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। “সংখ্যাগুরু অংশ কিভাবে বিচ্ছিন্নতা চাইতে পারে?” তিনি প্রশ্ন করেছেন। পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীত্ব গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপতি নিজে তাকে আহবান করেছেন। তাহলে হঠাৎ করে কিভাবে তাকে একজন বিচ্ছিন্নতাবাদী ও বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে?
উত্তরঃ সংখ্যাগুরু অংশ বিচ্ছিন্নতা চাইতে পারে না, আরো সঠিকভাবে বলতে গেলে চায় না। কিন্তু কোনো বিশেষ গোষ্ঠী তা চাইতে পারে এবং তারা তা চেয়েছেও। অখণ্ড পাকিস্তানের অভ্যন্তরেই স্বায়ত্বশাসন লাভের অঙ্গীকারের উপর ভিত্তি করে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন। এ ঘটনারই যুক্তিসঙ্গত অনুসিদ্ধান্ত হিসেবে তিনি পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রপতি হিসেবে বর্ণিত হচ্ছিলেন। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান সমগ্র পাকিস্তানের জন্য কোনো ভূমিকা পালন করতে এমনকি পশ্চিম পাকিস্তান পরিদর্শন করতেও তার অপারগতার কথা জানান। মধ্যবর্তী সময়ে কেন্দ্রে একটি সরকার গঠনের সিদ্ধান্তও তিনি নাকচ করে দেন। বরঞ্চ তিনি এই উপদেশ দেন যে উপদেষ্টাদের সাহায্য নিয়ে রাষ্ট্রপতির নিজেরই কেন্দ্রীয় সরকার চালানো উচিৎ। কিন্তু তিনি বিদেশী শক্তির মুখাপেক্ষী হয়ে থাকাটা অধিকতর ভাল মনে করেন। এর ফল স্বরূপই তিনি পাকিস্তানের ১ নম্বর গণশত্রু হিসেবে ঘোষিত হন। যারা এরূপ কোনো প্রতিবেশীর কাছ থেকে সামরিক সাহায্য চায়, নিজ দেশের সামরিক বাহিনীর মাঝে বিদ্রোহের প্ররোচণা দেয় এবং একটি সমান্তরাল সরকার প্রতিষ্ঠা করে, তাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী ছাড়া আর কিছু বলা যায় না।
(২৪ মার্চ তার প্রধান প্রতিনিধি তাজউদ্দীন এই বলে সতর্ক করে দেন যে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ঘোষণা আসতে দেরি হলে অবস্থা আরো খারাপের দিকে মোড় নেবে। শেখ মুজিবুর রহমান ২৭ তারিখে ধর্মঘট আহ্বান করেন। নিজেদের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে তিনি জনগণের প্রতি আহ্বান জানান এবং বলেন যে এবারই শেষ বার।)

প্রশ্ন ১৯: কেন তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃপক্ষকে তুচ্ছ করে হানিকারক কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেলেও তার বিরুদ্ধে কোনো তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি? কোনো প্রকার চ্যালেঞ্জ ছাড়াই প্রদেশটিতে তার রাজত্ব প্রতিষ্ঠা কি আইনসঙ্গত কর্তৃপক্ষের উপর থেকে মানুষের বিশ্বাস টলিয়ে দেয় নি?
উত্তরঃ সরকার চাইলে শেখ মুজিবুর রহমান ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারত। কিন্তু ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিকল্পনা যেন বাধাগ্রস্ত না হয় সেজন্য উদ্ভূত পরিস্থিতির মোকাবেলায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছিল। এ কারণেই সরকার একের পর এক বেআইনি কার্যকলাপ সহ্য করে যাচ্ছিল আর একই সাথে একটি যুক্তিসঙ্গত সমাধানে পৌঁছার আশায় সম্ভাব্য সকল রাস্তা বিবেচনা করছিল।

প্রশ্ন ২০: সরকার যদি ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে এতটাই আগ্রহী থেকে থাকে যে এর জন্য তারা কর্তৃত্বের অমান্যতাও মেনে নেয়, তবে সরকার এবং আওয়ামী লীগের মাঝে চূড়ান্ত ভাঙ্গনের কারণটা কী ছিল?
উত্তরঃ নিজের ছয় দফা ছাড়াও শেখ মুজিবুর রহমান আরো চার দফা দাবী পেশ করেন, যাতে তাৎক্ষণিক ভাবে সামরিক আইন তুলে নেয়া এবং সর্বোচ্চ দ্রুততায় রাষ্ট্রপতির ঘোষণার মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবী অন্তর্ভূক্ত ছিল। জাতীয় পরিষদের মাধ্যমেই শুধুমাত্র ক্ষমতা হস্তান্তর সম্ভব, তার এই আগের অবস্থান থেকে সরে এসে তিনি ঘোষণা দেন যে ক্ষমতা হস্তান্তর না হওয়া পর্যন্ত তিনি জাতীয় পরিষদে যাবেনই না, যদিও সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার এবং এক ব্যক্তি-এক ভোট পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় পরিষদে তার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল।
বোধগম্যভাবেই অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো জোর দেয় যে ক্ষমতার হস্তান্তর হবে জাতীয় পরিষদের মাধ্যমে, যারা মিলিত হয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধানকে ছাড়পত্র দেবে যা তখন সম্মতির জন্যে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। তাদের মতে প্রস্তাবিত ঘোষণার কোনো আইনগত ভিত্তি থাকবে না; এটি না হবে সামরিক আইনের সমর্থন না হবে এতে জনমতের প্রতিফলন। বরং এতে এক শূন্যতার সৃষ্টি হবে যার সাথে সাথে আসবে বিশৃঙ্খলা।
রাষ্ট্রপতি আবারো ঢাকা উড়ে যান এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতির সুরক্ষা ও ক্ষমতা হস্তান্তরে অগ্রগতি অর্জনের লক্ষ্যে একটি সমঝোতায় পৌঁছার আশায় ১০ দিন ধরে আলোচনা চালানো হয়। আলোচনা চলাকালে শেখ মুজিবুর রহমান তার আগেকার স্বায়ত্তশাসনের দাবীকে কনফেডারেশনের দাবীতে উন্নীত করেন। এর অর্থ ছিল প্রস্তাবিত ঘোষণার মাধ্যমে সামরিক আইন রহিতকরণ ও ক্ষমতা হস্তান্তরের পর পাকিস্তানের পাঁচটি প্রদেশ ভাগ হয়ে যাবে এবং জাতীয় সার্বভৌমত্ব কার্যত বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
শেখ মুজিবুর রহমান আরো দাবী করেন যে জাতীয় পরিষদকে প্রথম থেকেই দুটি কমিটিতে ভাগ হয়ে বসতে হবেঃ একটি হবে পূর্ব পাকিস্তানের সদস্যদের জন্য, অপরটি হবে পশ্চিম পাকিস্তানের সদস্যদের। পরবর্তীতে তিনি তার দাবীকে দুটো সাংবিধানিক সম্মেলন ও ভিন্ন ভিন্ন সংবিধান প্রণয়নের দাবীতে উন্নীত করেন।

প্রশ্ন ২১: “বিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষের অনুপস্থিতি সত্ত্বেও পুলিশের সহায়তায় আওয়ামী লীগের স্বেচ্ছাসেবকেরা আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির এমন মান ধরে রাখতে সক্ষম হয় যা অন্যান্য সময়ের চাইতে তুলনামূলকভাবে ভাল ছিল” – এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য?
উত্তরঃ হ্যাঁ; খুন, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ বাদ দিলে বাকি সবকিছু ভালই ছিল।

প্রশ্ন ২২: “এটা এখন পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে যে সঙ্কটজনক পরিস্থিতির উদ্ভবের আগেই এরূপ পরিস্থিতি মোকাবেলার লক্ষ্যে পরিকল্পনা প্রস্তুত করে রাখা হয়েছিল। মার্চের এক তারিখের কিছু আগে সীমান্ত রক্ষায় রংপুরে প্রেরিত ট্যাঙ্কগুলোকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়” – এটা কী সত্য?
উত্তরঃ না। সম্ভবত পাকিস্তান সরকারের চাইতে আওয়ামী লীগের পরিকল্পনার বিস্তৃতি বেশি কৃতিত্বের দাবীদার।

প্রশ্ন ২৩: সাংবিধানিক সমস্যার সমাধান বা রাজনৈতিক দাবীদাওয়া পূরণে বলপ্রয়োগের আশ্রয় নেয়া কেন?
উত্তরঃ পূর্ব পাকিস্তানে সরকারকে বলপ্রয়োগের আশ্রয় নিতে হয়েছে কারণ সে পর্যায়ে এসে আওয়ামী লীগের অভিপ্রায় সম্বন্ধে সন্দেহের কোনো অবকাশ ছিল না। আওয়ামী লীগের মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ নেতৃত্ব অনুধাবন করতে পারে যে রাষ্ট্রপতি বা অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর কেউই পাকিস্তানের সাংবিধানিক সর্বনাশ ঘটানোতে রাজি হবেন না। নিজেদের রাজনৈতিক কর্মীদের অজ্ঞ রেখে তাদের অনুমতির তোয়াক্কা না করেই এসকল চরমপন্থীরা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গোপনে প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আগরতলা মামলার মাধ্যমে প্রথমবার জনসম্মুখে আসা এই ষড়যন্ত্র এ পর্যায়ে এসে তার সর্বোচ্চ বেগে পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। “সংগ্রাম পরিষদ” এর আবরণে প্রতি জেলায় স্বেচ্ছাসেবকেরা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছিল। ভারত থেকে অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদের চালান চোরাই পদ্ধতিতে এনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলসহ প্রদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জমা করে রাখা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের এই চালটি কতটা সুপরিকল্পিত ও সুসংগঠিত ছিল তার প্রমাণ পাওয়া যায় ২৫ ও ২৬ মার্চের মাঝের রাতে জগন্নাথ হল থেকে মর্টারের গোলাবর্ষণ এবং সে রাতেই ৩ ঘণ্টার মাঝে ঢাকার সর্বত্র অসংখ্য ব্যারিকেডের উদ্ভব ঘটার মাঝে।
প্ররোচনার মাধ্যমে নিজেদের কাঙ্ক্ষিত ফললাভে ব্যর্থ হয়ে আওয়ামী লীগ তা নাৎসিদের পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে করায়ত্ব করতে চেয়েছিল। সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয় এবং অসংখ্য অরাজকতার ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী অংশের দ্বারা সংগঠিত হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রূপ ধীরে ধীরে আমাদের সামনে ফুটে উঠছে।
সকল প্রমাণাদি এটাই নির্দেশ করে যে ২৬ মার্চের শুরুর সময়টুকুকে এক সশস্ত্র আন্দোলনের ‘জিরো আওয়ার’ হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছিল। সে সময়েই আনুষ্ঠানিকভাবে “স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ” এর যাত্রা শুরু হত। ঢাকা এবং চট্টগ্রাম দখল করে আকাশ ও জলপথের মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে কোনরূপ সরবরাহ বা সহযোগিতা পোঁছাবার পথ রুদ্ধ করে দেয়ার পরিকল্পনা ছিল। এ অংশে সেনাবাহিনী বলতে তখন ছিল ১৬টি ব্যাটালিয়ানের একটি ডিভিশন, যার মধ্যে ১২টি ছিল পশ্চিম পাকিস্তানী। তারা অঞ্চলটির অভ্যন্তরের বিভিন্ন সেনানিবাসে ও ভারতের সাথের সীমান্তে অপ্রতুল সংখ্যায় নিয়োজিত ছিল। তাদের বিরুদ্ধে ছিল ভারতীয় অনুপ্রবেশকারী, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস, ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও অন্যান্য সহযোগী বাহিনী থেকে বেরিয়ে যাওয়া সদস্যরা যারা মর্টার, রিকয়েললেস রাইফেল, ভারী ও হালকা মেশিনগান এবং, যথেষ্ট প্রমাণাদির ভিত্তিতেই বলা যায়, ভারতীয় সীমান্তের ওপার থেকে আসা অকুণ্ঠ সরবরাহের মাধ্যমে সজ্জিত ছিল। বিচ্ছিন্নতার সপক্ষে আওয়ামী লীগের প্রস্তাব বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করেছিল। শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের সকল পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়ায় রাষ্ট্রপতি সশস্ত্র বাহিনীকে “তাদের কর্তব্য পালন এবং সরকারের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে” আহ্বান জানান।

প্রশ্ন ২৪: এটা বলা কি সঠিক হবে যে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে সরকার একটি সুষ্ঠ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রদত্ত রায়কে নস্যাৎ করতে চাইছে?
উত্তরঃ পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ অখণ্ড পাকিস্তানের কাঠামোর ভেতরে থেকে স্বায়ত্ত্বশাসন লাভের পক্ষে ভোট দিয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের দেয়া সকল গণবিবৃতিতেই অখণ্ড পাকিস্তানের অঙ্গীকার রয়েছে। সরকার সামরিক ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয় যখন উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করা যায় যে আওয়ামী লীগের চরমপন্থীরা প্রাদেশিক স্বায়ত্ত্বশাসনের পক্ষে জনগণের রায়কে উপেক্ষা করে একপাক্ষিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে বদ্ধপরিকর। জনগণ কখনোই দেশ বিভাগের পক্ষে ভোট দেয় নি।

প্রশ্ন ২৫: এটা বললে কি ঠিক হবে যে বলপ্রয়োগের ফলে অখণ্ড পাকিস্তানের ধারণাটির মেরামত অযোগ্য রূপে ক্ষতি সাধিত হয়েছে? পূর্ব পাকিস্তানে চলমান সামরিক অভিযান কি সামরিক যন্ত্র নিয়ন্ত্রণকারী সংখ্যালঘুদের (পশ্চিম পাকিস্তানে বসবাসকারী) কর্তৃক সংখ্যাগুরুদের (পূর্ব পাকিস্তানের অভিবাসী) বিরুদ্ধে চালিত দখল অভিযান নয়?
উত্তরঃ না, তা ভুল। একই ভাবে এমন ধারণাও অসত্য যে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের অধিকাংশই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন দিচ্ছিল। কারণ তা হলে কোনো সেনাবাহিনীই পরিস্থিতিকে এত দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে পারত না। এটা শুধু এ জন্যেই সম্ভবপর হয়েছিল কারণ সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষে পূর্ব পাকিস্তানের অধিকাংশ জনগণের সমর্থন বিদ্যমান ছিল।
.
.
জনগন নয়, শত্রুদের বিরুদ্ধেই আর্মি আক্রমনে গেছে, যেখানে আছে ভিতর এবং বাইরের বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং ভারতীয় অণুপ্রবেশকারী। পূর্ব পাকিস্তান যেমন পাকিস্তানের অন্য যেকোন অঞ্চলের মতোই একটা অংশ, এর প্রতিটা ইঞ্চি রক্ষা করা তাই জাতীয় আর্মির কর্তব্য।
পূর্ব পাকিস্তানের দেশপ্রেমিক জনগণ যাদের ভয় দেখিয়ে নাজি স্টাইলে দুর্বৃত্তপনা করে নিজেদের জাহির করছে আওয়ামী লীগ। তাদের সক্রিয় সহযোগিতায় সেনাবাহিনী অণুপ্রবেশ এবং রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ড কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।

“মার্চের ২ এবং ৩ তারিখে নিরস্ত্র জনগনের উপর ঠান্ডা মাথায় গুলিবর্ষণের ফলে ইতিমধ্যে হাজার হাজার হতাহত হয়েছে।” এটা কি সত্যি?
উত্তরঃ না, সৈন্যরা সাধারণ জনগনের উপর গুলিবর্ষণ করেনি, শুধুমাত্র লুট, অগ্নিসংযোগ এবং হত্যার সাথে জড়িত ডাকাত শ্রেনীর লোককেই গুলি করেছে।

প্রশ্নঃ ২৭. অভিযোগে বলা হয়েছে লে. জেনারেল টিক্কা খান কর্তৃক ইস্যুকৃত সামরিক আইন প্রচারিকায় ২৬ মার্চ সকালে বলা হয়, প্রচুর নারী পুরুষ এবং শিশু নৃশংসতার শিকার হয়েছে। আসলে কী ঘটেছে?
উত্তরঃ আর্মি ঐদিন ভোর রাত তিনটায় শুধুমাত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী, কর্তব্য ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া ষড়যন্ত্রকারীদের উপর অবরোধ করেছিলো। ষড়যন্ত্রকারী, যারা সশস্ত্র প্রতিবাদ করেছিলো তারা নারী বা শিশু নয়, কিন্তু ইপিআর এবং ইবিআর থেকে সশস্ত্র এবং সুসজ্জিত হয়ে কাজ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া সৈনিক। তারাই হতাহত হয়েছে কিন্তু সংখ্যাটা ব্যাপকভাবে অতিরঞ্জিত।

প্রশ্নঃ ২৮. আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, “পাকিস্তান সেনাদের উদ্দেশ্য ছিলো গণহত্যা এবং বাঙালী সৈনিকরা ধ্বংস হওয়া অথবা বেরিয়ে না আসা পর্যন্ত ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া। পাকিস্তান সরকার আশা করেছিলো এই সময়ের মধ্যে রাজনৈতিক নেতা, বুদ্ধিজীবী এবং প্রশাসনকে পঙ্গু করে দিয়ে আমাদের শিল্পকারখানাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেউলিয়া করা, এবং সবশেষে আমাদের শহরগুলো এবং ভূখন্ডকেই নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া। ইতিমধ্যেই দখলদার আর্মি একাজে অনেকদূর এগিয়ে গেছে।” সঠিক অবস্হাটা কি?
উত্তরঃ দূর থেকে কেউ একজন ৭০ মিলিয়ন লোককে নিশ্চিহ্ন করতে চেষ্টা করছে, এখন পর্যন্ত যতো প্রমাণ পাওয়া গেছে যদি গণহত্যার চেষ্টা হয়ে থাকে তবে তা আওয়ামী লীগের বিক্ষুব্ধ সেনারাই করেছে, যারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্হাকেও ধ্বংস করতে চায়।

প্রশ্নঃ ২৯. চট্টগ্রাম বন্দরে ভেড়া MV Swat থেকে হঠাত্ করেই অস্ত্রশস্ত্র খালাস না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, এই সিদ্ধান্তের পূর্বে বিগ্রেডিয়ার মজুমদার নামের একজন বাঙালী অফিসার কে তার দ্বায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং একজন পশ্চিম পাকিস্তানীকে তার স্হলাভিষিক্ত করা হয়েছে। কোন মন্তব্য?
উত্তরঃ জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস না করার হঠাত্ সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন করার কিছু নেই। প্রত্যেক সৈনিকেরই নিয়মিত ভাবে অস্ত্র গোলাবারুদসহ অন্যান্য সরঞ্জাম দরকার যাতে সে তার সীমান্ত কে রক্ষা করতে সক্ষম হয়। আমাদেরও ঠিক তাই।

প্রশ্নঃ ৩০. পাঞ্জাবী অধ্যুষিত আর্মিকে বলা হয়েছে নিরস্ত্র বেসামরিক জনগনকে হত্যা বন্ধ করতে, বিশেষ করে বুদ্ধিজীবীদের যাদের ভিতর আছে অধ্যাপক, শিক্ষক, ছাত্র, আইনজীবী ইত্যাদি। কারণ ইতিমধ্যেই ব্যাপক সংখ্যক বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়েছে।
এই ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ সম্পর্কে বিভিন্ন দেশ জাতিসংঘের দৃষ্টি আকর্ষণ করছিলো।এটা কি করে পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যের ভ্রাতৃত্বের কিংবা সরকারের গণতান্ত্রিক আচরণের নিদর্শন হয়?
উত্তরঃ এটা নিরস্ত্র জনগনের উপর কোন বাছবিচারহীন বা ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ছিলোনা। পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস এবং ইস্ট বেংগল রেজিমেন্ট থেকে পালিয়ে যাওয়া সৈনিকরা ছিলো সম্পূর্ণ প্রশিক্ষিত, রাইফেল, মেশিনগান এবং মর্টার দিয়ে সুসজ্জিত। তারা বিদ্রোহ করেছিলো এবং প্রয়োজনীয় বলপ্রয়োগ করেই তা দমন করা হয়েছে। এবং বুদ্ধিজীবীরা যে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ নিয়ে চিন্তিত, তাদের অনেকেই কেবলমাত্র ঢাকা থেকে টেলিভিশনে আবির্ভূত হয়েছে, অন্যরা বিদেশে ইন্ডিয়ার টাকায় ভালোসময় কাটাচ্ছিলো। তারপরও অন্যরা এটাকে অতিরঞ্জিত করে বিবৃতি প্রদান করে যাচ্ছে।

প্রশ্নঃ ৩১. এটা কি ঠিক যে ১৯৭১ এর ২৫ মার্চের আগে এক ডিভিশনের বেশি সৈন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সহ পূর্ব পাকিস্তানে এনে জড়ো করা হয়েছিলো?
উত্তরঃ আমাদের সীমান্তে বিএসএফ এর সাথে বাড়তি একলাখ ভারতীয় সৈন্য মোতায়েন হয়েছে। দেশের নিরাপত্তার জন্যেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

প্রশ্নঃ ৩২. অভিযোগ আছে, বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত একটি এসএসজি কমান্ডো গ্রুপ পূর্ব পাকিস্তানের কেন্দ্রবিন্দুতে পাঠানো হয়েছে অন্তর্ঘাত মূলক কর্মকান্ড এবং গুপ্তহত্যার জন্য এবং ধারনা করা হয়, দুদিন পূর্বে ঢাকা এবং সাইদপুরে আক্রমনের জন্য এরাই দায়ী। এরা এটা করেছে যাতে স্হানীয় এবং আগতদের মাঝে সংঘর্ষ বাধে যাতে সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করার সুযোগ পায়। এটা সত্য থেকে কতোটা দূরে?
উত্তরঃ একটি সার্বভৌম দেশের সেনাবাহিনীর নিজ দেশে আইন এড়ানোর কৌশলের কোন প্রয়োজন নেই।

প্রশ্নঃ ৩৩. এটা বিবেচনায় নেওয়া যায় যে, পূর্ব পাকিস্তানীরা সেনাবাহিনীতে আরও বেশি করে যোগ দেবে। যদি তাই হয় অথবা আগের চেয়েও বেশি সংখ্যায় যোগ দেয়, তাহলে কেমন হবে?
উত্তরঃ সকল নাগরিকের ই দেশরক্ষার কাজে অংশগ্রহনের অধিকার আছে। পূর্ব পাকিস্তানীরাও এ কাজে পূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

প্রশ্নঃ ৩৪. অন্যভাবে দেখলে যোগাযোগ ব্যবস্হার দুরাবস্হা এবং প্রকট সরবরাহ সমস্যা নিয়ে সেনাবাহিনী কতোদিন ধরে একটি বেসামরিক তখা গেরিলা যুদ্ধে কার্যকরভাবে তাদের কার্যক্রম টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হবে?
উত্তরঃ এখানে কোন বেসামরিক যুদ্ধ হচ্ছেনা। কিছু সৈন্য বিপথগামী হয়ে বিদ্রোহ করেছিলো, তাদের দমন করা হয়েছে। গেরিলা যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় জনপ্রিয়তা তাদের নেই। আসলে জনগন তাদের বিশ্বাসের সাথে প্রতারণা করা লোকেদের উপর ক্ষেপে আছে।

প্রশ্নঃ ৩৫. বেসামরিক, সামরিক, কূটনৈতিক এবং পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিবিদদের দলত্যাগ কতো বড়ো সমস্যা?
উত্তরঃ ইপিআর, ইবিআর এবং আনসারের মতো সহযোগী বাহিনীর বড়ো অংশ দলত্যাগ করলেও বেসামরিক এবং কূটনীতিকদের মাঝে অল্পসংখ্যক ই তা করেছে।

প্রশ্নঃ ৩৬. সামরিক বাহিনী কি পাকিস্তানের দুই অংশের বিভক্ত হওয়া ঠেকাতে পারবে?
.
.
প্রশ্ন ৩৬: সামরিক শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে কি দুই শাখার বিভক্তি বা বিচ্ছেদ প্রতিহত করা সম্ভব ?
উত্তরঃ দুর্বৃত্ত এবং হানাদার বাহিনী সামরিক শক্তি প্রয়োগে বিতাড়িত হলে সাধারণ জনতার দলগুলো নিজে থেকেই আবার কার্যক্রম শুরু করবে, যেটা ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে।
প্রশ্ন ৩৭:আওয়ামী লীগের জাতীয়তাবাদী এবং ডানপন্থী শুক্তিগুলোকে নির্মূলনের মাধ্যমে সরকার কি বামপন্থী, বিশেষত নকশালপন্থীদের জন্য ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়নি?
উত্তরঃ আমরা শুধুমাত্র অপসৃতদল এবং বিশ্বাসঘাতকদের নির্মূল করেছি, অন্যরা এখনও দেশপ্রেমিক সাধারণ জনগণের সাথে রয়েছে।
প্রশ্ন ৩৮: পুর্ব-পশ্চিম মতভেদ, যার মূল এখনও গভীরে প্রোথিত এবং সাম্প্রতিক ঘটনাস্রোতে আরও তীব্র- দীর্ঘমেয়াদিভাবে মিলিত হতে পারে কি?
উত্তর: যে আদর্শগত মিল তাদেরকে একত্রিত করেছিল, তা এখনও যথেষ্ট শক্তিশালী।
প্রশ্ন ৩৯: যেমন দাবী করা হচ্ছে তেমন সুষ্ঠুভাবেই যদি সবকিছু চলছিল, তবে পুর্ব পাকিস্তান থেকে বিদেশী প্রতিনিধিদের বহিষ্কার করার দরকার হল কেন?
উত্তর: তাদের নিরাপত্তার জন্য, ৪৮ ঘণ্টার জন্য পরিস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।
প্রশ্ন ৪০: আপনার কি ধারনা, পুর্ব পাকিস্তানের বর্তমান সংকট, নিকট অথবা দূর ভবিষ্যতে বৃহত্তর বাংলা গঠনের পথে চালিত করতে পারে কি?
উত্তর: পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ ইতিমধ্যে দুইবার এবিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে; প্রথমবার ১৯০৫ সালে, যখন তারা বাঙালি হিন্দু জমিদারদের অত্যাচার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য লর্ড কার্জনকে বঙ্গভঙ্গে বাধ্য করে, এবং চূড়ান্তভাবে ১৯৪৭ সালে, যখন তারা তাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ থেকে আলাদা হয়ে পাকিস্তানের অংশ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
প্রশ্ন ৪১: এই ধারনা ক্রমেই মজবুত হচ্ছে যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ামাত্র ভবিষ্যতের জন্য রাষ্ট্রপতির নির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে। এই ধারনা কি সত্যি?
উত্তর: নিঃসন্দেহে, আমরা যেখানে থেমেছিলাম সেখান থেকেই গণতন্ত্র পুনর্বহালের প্রক্রিয়া শুরু করব।
প্রশ্ন ৪২: ভবিষ্যৎ সংবিধান প্রণয়নের প্রক্রিয়া কি হবে? রাষ্ট্রপতি কোন অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধান জারি করবেন কি?
উত্তর: রাষ্ট্রপতির জনগণের কাছে যত দ্রুত সম্ভব ক্ষমতা হস্তান্তরের বদ্ধ পরিকর মানসিকতার ধারাবাহিকতায় সরকার প্রবল উদ্যমে সাংবিধানিক সংকট নিরসনের সকল উপায় খতিয়ে দেখছে।
প্রশ্ন ৪৩: পূর্ব পাকিস্তানের চলমান রাজনৈতিক অচলবস্থায় পশ্চিম পাকিস্তানে জনপ্রিয় সরকার সংকটাপন্ন হবে কি?
উত্তর: সমগ্র পরিস্থিতি নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছে।
প্রশ্ন ৪৪: আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে ভিন্ন উপায় খুঁজে পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আঞ্চলিক ফেডারেশনই একমাত্র বিকল্প। প্রকৃতপক্ষে এটা কি?
উত্তর: এটার মানে যাই হোক, কারো উপর কিছু চাপিয়ে দেয়ার মনোবৃত্তি নেই, জনগণ নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেবে।
প্রশ্ন ৪৫: অঞ্চলগুলোর স্বায়ত্তশাসন বাস্তবায়নের জন্য, অর্থাৎ ফেডারেল কাঠামো গঠনে কোন পদক্ষেপ নেয়া হবে কিনা? যদি না হয়, তবে স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশগুলোর মূলনীতি এবং ব্যাপ্তি কি হবে- একটি কনফেডারেট কাঠামো?
উত্তর: এবিষয়টি LFO তে পরিষ্কার নির্দেশনা রয়েছে। আমরা একটি ফেডারেল সংসদীয় পদ্ধতির জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যেখানে শক্তিশালী পাকিস্তানের অস্তিত্ব বজায় রেখে ফেডারেশনগুলো সর্বোচ্চ স্বায়ত্তশাসন ভোগ করবে।
প্রশ্ন ৪৬: রাষ্ট্রের আদর্শগত প্রকৃতির কথা ভেবে পূর্ব পাকিস্তানে ভিন্ন নির্বাচন পদ্ধতি বিবেচনা করা হবে কি?
উত্তর: জনগণ নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেবে তারা কোন পদ্ধতি গ্রহণ করবে।
প্রশ্ন ৪৭: আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ায় পাকিস্তান পিপলস পার্টি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই দেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হচ্ছে। তারা কি সমাজতান্ত্রিক ব্লকের দিকে ঝুঁকবে?
উত্তর: দুইটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দলের উত্থান দেশের উন্নয়নের জন্য সবাই স্বাগত জানিয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে দুইটি দলের কোনটিই সমগ্র পাকিস্তানের দল হয়ে উঠতে পারেনি- যেটা সকল সমস্যার মূল কারণ। আমরা পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি অগ্রাহ্য করে কিছুই ঘটেনি মনোভাব নিয়ে আগাতে পারিনা। যতক্ষণ পর্যন্ত বৈদেশিক সম্পর্কের উপর প্রভাব বিবেচ্য, পাকিস্তান একটি স্বাধীন বৈদেশিক নীতি অবলম্বন করছে এবং কেউই এর থেকে সরে আসার কোন কারণ দেখছেনা, যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন।
প্রশ্ন ৪৮: সরকার কি পুর্ব পাকিস্তানসহ প্রদেশগুলোতে রাজনীতি ফেরাতে চায়? যদি চায়, তবে কবে নাগাদ?
উত্তরঃ হ্যাঁ। আমাদের লক্ষ্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জনগণের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করা।
প্রশ্ন ৪৯: সরকার কি সব রাজনৈতিক দলকে আবার আইনগত বৈধতা দেয়ার প্রস্তাবনা রাখবে নাকি শুধু আওয়ামী লীগ বাদে বাকি সব দলকে বৈধতা দেবে?
উত্তরঃ আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোন দলকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়নি।
প্রশ্ন ৫০: ভবিষ্যতের জন্য কোন ধরনের সংবিধানে কথা ভাবা হচ্ছে?
উত্তরঃ যে ধরনের সংবিধানের জন্য LFO এর বিধিতে রাষ্ট্রপতি দায়বদ্ধ- শক্তিশালী পাকিস্তানের অস্তিত্বের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সর্বোচ্চ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করে এমন।
প্রশ্ন ৫১: এরকম সম্ভাবনা আছে কি, সংশোধনী সাপেক্ষে পুর্ব পাকিস্তানের জন্য ৬ দফা মেনে নেয়া হবে?
উত্তরঃ কোন রাজনৈতিক দলের প্রস্তাব গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করা সরকারের কাজ নয়। জাতীয় আইন পরিষদের সদস্যদের বৈঠকে প্রচুর ‘দেয়া-নেয়ার’ মাধ্যমে স্বায়ত্তশাসন এবং অখণ্ডতার একটি সুষ্ঠু সমাবেশ ঘটিয়ে সমাধান করা হবে।
.
.
সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট কে জবাবে তিনি বললেন যত দ্রূত সম্ভব পূর্ব পাকিস্তানের উপযুক্ত প্রতিনিধিদের সাথে সংলাপ শুরু করার উদ্যোগ নিতে হবে। এটি কি সরকারী নীতিতে কোনো রকম পরিবর্তন ছিল? এটা কি ইঙ্গিত করে যে সরকার নতুন নিরবাচন চায়. এতে করে আসলে প্রকাশ পায় বর্তমান সরকার নবনিযুক্ত প্রতিনিধিদের চায় না ।
রাষ্ট্রপতির সাথে সংলাপ চালালে অবস্থার কোনো অবস্থার সন্তোষজনক পরিবর্তন আসতে পারে কি?
এই ব্যাপারে আসলে কোনো মতভেদ ছিলনা। রাষ্ট্রপতি খমতা অন্যার হাতে দিতে চাচ্ছিলেন না এবং এ ব্যাপ্রে তিনি পূরব পাকিস্তানের অনেক নেতাদের সাথে আলোচনা করেন। নেতাদের তাদের খমতা থেকে রদবদলের কোনো ইচ্ছাই ছিলনা, শুধু মাত্র তাদের ছাড়া যারা কোনো অপরাধ কর্মে জড়িত ছিল। এমনিতেও পূর্ব পাকিস্তানে নানা বিষয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছিল।
মানুষ আওয়ামীলীগ এর অভাবনীয় বিজয় দেখে অবাক হয়েছিল , রাষ্ট্রপতি কে তাই যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে পূর্ব পাকিস্তানের নেতাদের সাথে আলোচনা করে নিতে হচ্ছিল।

৫৩–পশ্চিম পাকিস্তানে কিভাবে জনগনের মনোনীত সরকার কে ক্ষমতায় আনা যায় তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল, যেহেতু এর আগে আসা সব সরকার ই ছিল বে আইনী
অনেক সংখ্যক মুসলিম পার্টির কেন্দ্রিয় নেতা নিজেদের আওয়ামীলীগ থেকে পুরাপুরি বিচ্ছিন্ন করে নিয়েছিল।

৫৪- সরকার কি আবার নতুন ভাবে নির্বাচন চায়? চাইলে কবে?
না, নতুন নির্বাচন এর কোনো প্রয়োজন আর নেই।

৫৫- আওয়ামীলীগ কে নিষিদ্ধ করা হলে, পূর্ব পাকিস্তানে কি একটা বিশাল শূন্যতা তৈরিহবেনা? সেই শূন্যতা কিভাবে পূরন করা যায়?নতুন নেত্রিত্ত কি কোনো পরিবর্তন আনবে?
সব শূন্যস্থান ই পূরন হয়, এটিও সেভাবেই হয়ে যাবে।

৫৬- সরকার একইসাথে বড় দুইটি দুর্যোগ কিভাবে মোকাবেলা করবে? একটি হল রাজনৈতিক অস্থিরতা আরেকটি হল অর্থনৈতিক মন্দা?
এটি একটি ভরসার কথা যে দুই দিকের মানুষ ই খুব সাধারন। ধর্মভীরু পাকিস্তানীরা যেভাবে ১৯৪৭ সালে ভারত কে হটিয়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়েছিল, পূনরায় তাই হবে।
নির্বাচনে জয়লাভ করার জন্য আওয়ামীলীগ এর এটা নিশ্চিত করা দরকার ছিল যে স্বৈরতন্ত্র সরানোর জন্য ৬ দফা কতটা উপযোগী পদক্ষেপ । একটি শক্তিশালী পাকিস্তান গড়ে তুলতে যে একতার দরকারছিল তা ছিল অনুপস্থিত, বরং নানা রকম মতাদর্শ ছিল। সেখানে নানা ভাবে নানা বিষয়ে সমঝোতার চেষ্টা করা হচ্ছিল। সেই সমঝোতায় আসতে প্রেসিডেন্ট কিছুদিনের জন্য সংসদ অধিবেশন পিছিয়ে দেন। আওয়ামীলীগ নেতা রা তার বিরোধিতা করে। পূর্ব পাকিস্তানের জনগন এর কোনো বিরোধিতা করেনাই, বরং তারা ভারতের দাসত্ব থেকে সবে মাত্র বের হয়ে আসার শান্তিতে ছিল।
পশ্চিম পাকিস্তানের লোকজন পূর্ব পাকিস্তানের এই রাজনৈতিক অস্থরতা নিয়ে খুব শঙ্কিত ছিল।
এই দুইটি বিষয় তাদের মানসিকতায় বিশাল পরিবর্তন আনে যা হয়ত ভবিষ্যতে নতুন কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সাহায্য করবে। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার রদবদেল্র সিদ্ধান্তেও তার প্রভাব পরবে।
পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়েও বেশি চিন্তিত হবার কিছু নেই কারন প্রতিটি উন্নয়নশীল দেশ ই এই ধরনের ঝামেলায় পরে ও তার মোকাবেলা করে। আমরা নিশিচত যে খুব দ্রুতই আমরা এর থেকে বের হয়ে এসে শক্তিশালী অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তুলতে পারব।আইন শৃঙ্খলা ব্যাবস্থাও তার আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে।

৫৭- পাকিস্তান কিভাবে তার এই অর্থনৈতিক দূরদশা থেকে বের হয়ে আসবে? তারা কি কোনো আন্তর্জাতিক সাহায্য নিবে নাকি নিজেদের লোক বলই তাদের জন্য যথেষ্ট?
-নিজেদের লোকবল এর মাধমেই তারা এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করবে, কিন্তু আন্ত্রজাতিক কোনো মাধ্যমের সাহায্য আসলেও তা সাদরে গ্রহন করা হবে।

৫৮- ইন্ডিয়ার প্রধানমন্ত্রী জানান পূর্ব পাকিস্তান যদি তাদের বিশাল সংখ্যক রেফুজি কে ঈন্ডিয়া পাঠানো বন্ধ না করে বা সরিয়ে না নেন, তবে তিনি নিজেই তা প্রতিহত করবেন। কারন এতে ইন্ডিয়ায় অরথনইতিক দুর্দশা দেখা দিচ্ছে। এখন পাকিস্তান কি মানবতার খাতিরে ও ইন্ডিয়ার সাথে তাদের বিরোধ থামাতে এই রেফুজি দের ফেরত আনবে?
ইন্ডিয়া আগেও দেখেছে আমরা তদের কোনো হুমকি তে দমে যাইনি, সব সময় তা প্রতিহত করেছি। সুতরাং আমরা তাদের হুমকিতে দমে গিয়ে আময়াদের দুর্দশা গ্রস্ত গৃহহীন রেফুজিদের ফেরত আনছিনা।
.
.
দ্ব্যর্থহীন শর্তাবলী: “পাকিস্তানের আইন মান্যকারী নাগরিকদের স্ব স্ব বাড়িতে ফিরে আসার প্রতিসংহার অনুমতির কোন প্রশ্ন নেই। ” এ লক্ষ্যে সকল প্রধান জায়গায় অভ্যর্থনা কেন্দ্রসমূহ স্থাপন করা হয়। পাকিস্তান তার নাগরিকদের পুনরায় স্বাগত জানাতে পারতো কিন্তু যেকোন পঞ্চম কলাম অথবা পশ্চিমবঙ্গের নিজস্ব কিন্তু বিরাট জনতা ঘরহীন, চাকরীবিহীন, আশ্রয়হীন মানুষের উপর থেকে নিশ্চিতভাবেই কোন ভারত ছাড়পত্রের অনুমতি দেওয়ার কোন চূড়ান্ততা নেই।
প্রশ্ন ৫৯: এটা কথিত যে পাকিস্তান সেনাবাহিনী পরিকল্পনা করে পূর্ব পাকিস্তানে ভিন্নমতাবলম্বী উপাদানসমূহকে পরাস্ত করতে ঠাণ্ডা রক্তপূর্ণ নীতিতে অনাহার কে যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। পাকিস্তানের এই ধরণের কার্যভারে বৈদেশিক উপশম সহায়তা ঝণ গ্রহণে অস্বীকার অথবা অনিচ্ছা নেই? উত্তর: অভিযোগটি সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা। ভিন্নমতাবলম্বী উপাদানসমূহ ইতিমধ্যেই পরাজিত হয়েছে এবং কাছাকাছি কোথাও কোন অনাহার নেই। বিপরীতে খাদ্যশস্যের বিরাট ভাণ্ডার সহজলভ্য এবং যাতায়াতের পথ ভাঙন যা ভারতীয় অনুপ্রবেশকারী এবং তাদের সহযোগীদের কারণে হয়েছিল, প্রদেশের সব অংশে খাদ্যশস্য বহনে পদক্ষেপসমূহ চালু হয়েছে। যেখানে বৈদেশিক উপশম সহায়তা গ্রহণে অস্বীকার বা অনিচ্ছা নেই। পাকিস্তান জাতিসংঘ মহাসচিবকে সঠিকভাবে বলেছে যা সে চায়, অর্থ্যাৎ, তিন অথবা চার মাস পরে আরো খাদ্যশস্য এবং আরো উপকূলবাহী পোত এবং তুষারস্তুপ তাদেরকে বিতরণ করতে। বিবরণ ইতিমধ্যেই কাজ করেছে এবং রিলিফ তার পথে।
প্রশ্ন ৬০: আমেরিকা সরকারের উপর শক্তিশালী চাপ রয়েছে শক্তিশালী উপাদানসমূহ হতে পাকিস্তানের প্রতি সব ধরণের সামরিক আরো যেমন আর্থিক সাহায্য থামাতে। যদি এটা ঘটে, পাকিস্তান সরকারকে বাঁধা দেওয়ার জন্য কি এটা সম্ভব হবে? উত্তর: নির্ধারিত মানুষের ইচ্ছা যে কোন কিছুকে বাঁধা দিতে পারে।
প্রশ্ন ৬১: বৈদেশিক উপশম সহায়তার প্রতি বৈদেশিক তত্ত্বাবধান পাকিস্তানের লক্ষ্যবস্তু। এক্ষেত্রে দুইটা প্রশ্ন: কেন একজন সুইস অথবা একজন সুইড অথবা একজন আমেরিকান তার কঠিনভাবে অর্জন করা টাকা কাজে লাগাবে যদি না সে নিশ্চিত হয় যে এটা সঠিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে সেই উদ্দেশ্যের জন্য যার জন্য সে এটা দিয়েছিল। এবং ২য় কেন পাকিস্তান এসব আইনগত পরিভাষায় কৌশলে পরিহার করছে না যখন ৭০ মিলিয়ন মানুষ জীবন সঙ্কট এবং মৃত্যুর সম্মুখ?
উত্তর: রিলিফ সরবরাহের সঠিক বন্টন নিশ্চিত করতে কিছু দাতাদের নীচতা যা অর্ন্তদৃষ্টিসম্পন্ন। পাকিস্তানের সত্যিই কোন আপত্তি নেই জাতিসংঘের কিছু ব্যক্তির উপর যারা নিজেরাই সন্তোষজনক যে সাহায্য সঠিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু দেশটি প্রচুর বিদেশি পর্যবেক্ষককে তার পথের মধ্যে পেয়ে অথবা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে জড়িত পেয়ে তার সমগ্র কাঁধের উপর নিতে পারে না।
প্রশ্ন ৬২: শেখ মুজিবুর রহমান এর জেরা করা কি চালু থাকছে এবং যদি হয় সুতরাং সামরিক শাসন অথবা সাধারণ অপরাধী আইনের অধীনে?
উত্তর: দেশ এখনো সামরিক শাসনের অধীন।
প্রশ্ন ৬৩: মুজিবের সহযোগীদের ঠিকঠিকানা এবং পরিণতি কি? উত্তর: তাদের বেশিরভাগই কলকাতাতে ভাল সময় কাটাচ্ছে।
অনুরূপ অপরাধের অপরাধী, পৃথিবীর অন্যত্র মানুষের তুলনায় খারাপ না এবং তাদের উত্তম ব্যবস্থা করা হবে।
প্রশ্ন ৬৪: মুজিবের পূর্ব পাকিস্তানি সহযোগীদের আদালতের বিচারের সম্ভাবনা কি?
উত্তরঃ কোন জাদুকরী অনুসন্ধান হতে যাচ্ছে না, এখানে অথবা ওখানে দেশের আইনের অধীনে জনসাধারণ তাদের কার্যকলাপের ফলাফলের মুখোমুখি হবে।
প্রডিউসড বাই
চলচ্চিত্র এবং প্রকাশন বিভাগ
পাকিস্তান সরকার
জুন, ১৯৭১।