শিরোনাম | সংবাদপত্র | তারিখ |
রাজনৈতিক হালচাল | স্বাধীন বাংলা
১ম বর্ষঃ ২০শ সংখ্যা |
২১ নভেম্বর, ১৯৭১ |
রাজনৈতিক হালচাল
(ভাষ্যকার)
বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে। ছোট ছোট মুক্তাঞ্চল গড়িয়া উঠিয়াছে বিভিন্ন এলাকায়। এছাড়া গ্রাম এলাকায় পাক হানাদার বাহিনীর তৎপরতা খুবই সীমাবদ্ধ রাজাকার ও পশ্চিম পাকিস্তান হইতে আমদানী করা পুলিশও মুক্তি বাহিনী ও গেরিলাদের অতর্কিত আক্রমনের ভায়ে থানার সদর কার্যালয় ছড়িয়া দূরে যাইতে সাহস পায় না। ফলে বাংলাদেশের অধিকৃত এলাকার বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চল কার্যত মুক্ত। সেখানে ইয়াহিয়া খান কিনবা তাহার পা-চাটা মালেকের তথাকথিত সরকার শাসন নাই বলিলেও চলে। বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিবাহিনী, স্থানীয়ভাবে সংগঠিত আওয়ামীলীগ, ন্যাপ বা কমিউনিস্ট সমর্থক গেরিলা বাহিনী এবং স্থানীয় মুক্তিসংগ্রাম কমিটি (যা বহুক্ষেত্রে উপদেষ্টা কমিটির ধরনে সর্বদলীয় গড়িয়া উঠিয়াছে) প্রভৃতির হাতেই এই সব এলাকার কর্তৃত্ব কার্যত ন্যাস্ত। এই সব মুক্তাঞ্চলে অসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থা চালু ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের প্রশ্নকে কেন্দ্র করিয়া একটি বড় ও মৌলিক প্রশ্ন সামনে চলিয়া আসিয়াছে। প্রশ্নটি হইল বাংলাদেশ সরকার অর্থনৈতিক ও সামাজিক পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে কোন নীতি, কোন পথ অনুসরন করিবে? মুক্ত এলাকার সমস্যা সমাধান আলাদাভাবে হইতে পারে না। গোটা বাংলাদেশের পুনর্গঠনের প্রশ্নের সহিত ইহা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আজিকার ছোট ছোট মুক্তাঞ্চলগুলিকে গড়িয়া তুলিতে হইবে আগামী দিনের বাংলাদেশের মডেল হিসাবে তাই মুক্তাঞ্চলের পূর্ণগঠনের প্রশ্নকে সামনে রাখিয়া আজ বাংলাদেশ সরকার ও অন্যান্য সকল সংগ্রামী শক্তিকে দেশের ভবিষ্যত সামাজিক অর্থনৈতিক রূপরেখা সম্বন্ধে চিন্তা করিতে হইবে। ইহা এখন আর নিছক তত্ত্বগত বিষয় নয়, ভবিষ্যতের জন্য ইহাকে ফেলিয়া রাখাও চলে না।
স্বাধীন বাংলাদেশের সম্পর্কে অস্পষ্টভাবে হইলেও একটা ধারণা বা ছবি সকলের মনেই আছে ইহার প্রকাশও নানাভাবেই দেখা যাইতেছে। স্বাধীনতার দাবিতে বাংলাদেশের সব মানুষ এক। পশ্চিম পাকিস্তানের কুখ্যাত বাইশটি একচেটিয়া পুজিপতি পরিবার, বড় জমিদার গোষ্ঠী ও উহাদের মুরব্বী সাম্রাজ্যবাদীরা বাংলাদেশের উপর যা এক ধরনের ঐপনিবেশিক শাসন শোষনের জোয়াল চাপাইয়া দিয়াছিল, উহা হইতে মুক্তি চায় প্রতিটি নরনারী এই একচেটিয়া শোষন বজায় রাখার উদ্দেশ্যে উহার যে নিষ্ঠুর সামরিক স্বৈরতন্ত্র কায়েম করিয়াছিল উহাকে ধ্বংস করিয়া জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রন ও গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বাংলাদেশের সকল শ্রেনীর সকল স্তরের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করিতেছে।
কিন্তু ইহার অর্থ অবশ্য এই নয় যে, বাংলাদেশে সকল শ্রেণি ভেদাভেদ লুপ্ত হইয়া গিয়াছে কিম্বা শ্রেণী স্বার্থের বৈপরীত্য লোপ পাইয়াছে। স্বাধীন বাংলাদেশের ছবিও সকল শ্রেনীর মানুষের মনে এক রকম নয় কৃষক ভাবিতেছে স্বাধীন বাংলাদেশে সে জমি পাইবে, সামন্তবাদী শোষনের নাগপাশ হইতে পাইবে মুক্তি। শ্রমিক ভাবিতেছে সে পাইবে বাঁচার মত মজুরী, কাজের নিরাপত্তা রাজনৈতিক ও ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার। যুগ যুগ ধরিয়া সে সভ্যতার পিলসুজ হইয়া কাটাইয়াছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার মধ্য দিয়া এমন এক উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের দুয়ার খুলিয়া যাইবে যেখানে সে সভ্যতার নির্মাতা হিসাবে উহার ফল ভোগেরও অধিকারী হইবে।
এখন প্রশ্ন হইল, স্বাধীন বাংলাদেশে কোন শ্রেণীর মানুষের স্বপ্ন সফল হইবে? শোষক শ্রেণীর না শোষিত শ্রেণীর? যে শ্রমিক কৃষক-ছাত্র জনতা স্বাধীনতার জন্য বুকের রক্ত ঢালিতেছে তাহাদের শোষন মুক্তির পথ উম্মোচিত করা হইবে, না মুষ্টিমেয় ধনিকের শোষনের অধিকার কায়েম করা হইবে। বাঙালী উদীয়মান ধনিকশ্রেনীর স্বাধীনতা সংগ্রামের স্বপক্ষে-পশ্চিম পাকিস্তানের একচেটিয়া পুজির বিরুদ্ধে ইহারা অতীতেও লড়াই করিয়াছে। স্বাধীনতা সংগ্রামে ইহারা মিত্র শ্রেণীভুক্ত। তাহা সত্ত্বেও একথা মনে রাখিতে হইবে যে, ইহাদের শ্রেনী চরিত্র শোষকের। কাজেই স্বাধীন বাংলাদেশে ইহাদিগকে যদি অবাধ বিকাশের সুযোগ দেওয়া হয় শ্রেণীগুলি অর্থাৎ শ্রমিক কৃষক বুদ্ধিজিবী তথা সকল মেহনতী মানুষ শোষনের জোয়ালে আবদ্ধই থাকিয়া যাইবে। শোষকের পরিবর্তন হইলেও শোষনের অবসান ঘটিবেনা। তাছাড়া পুজিবাদী ব্যবস্থা কায়েম করা হইলে যে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ আজ ইহাহিয়া চক্রকে অস্ত্র অর্থ উপদেষ্টা দিয়া বাংলার নরমেধাযজ্ঞে সহায়তা করিতেছে, সাহায্য ঋণ ও বিশেষজ্ঞের জন্য উহাদিগকেই স্বাধীন বাংলাদেশে ডাকিয়া আনিতে হইবে। সাম্রাজ্যবাদী শোষনের শৃংখলে বাঁধা পড়িবে বাংলাদেশ। সোনার বাংলা আরও রিক্ত, আরও কঙ্কালসার হইয়া পড়িবে।
ইহার বিকল্প কি? ইহার বিকল্প রাস্তা হইল পুঁজিবাদী পথ পরিহার করা শুধু শোষক পরিবর্তন নয়, শোষনমূলক ব্যবস্থারই চির অবসানের দিকে পদক্ষেপ নেওয়া। শোষিত নিপীড়িতের রাজ কায়েম করা। ইহার অর্থ এই নয় যে, পুঁজিপতিদের গলা কাটিয়া ফেলা হউক কিম্বা যে লোক আন্ডা বেচিয়া খায় তাহার মুরগীটিকে জাতীয়করন করিয়া লওয়া হউক। বাংলাদেশের সামাজিক বিকাশের বর্তমান স্তরে বেসরকারী উদ্যোগের ইতিবাচক ভূমিকা শেষ হইয়া যায় নাই। কাজেই বেসরকারী পুঁজি বা উদ্যোগকে সম্পূর্নরূপে নাকচ করার প্রশ্ন আসে না। কিন্তু এই পুঁজিকে জনসাধারনের উপর অবাধ শোষন চালাইয়া একচেটিয়া পুঁজিতে পরিনত হইতে দেয়া চলিবে না। রাষ্ট্রায়ত্ব খাতকে জাতীয় অর্থনীতির নিয়ামক শক্তিরূপে গড়িয়া তুলিতে হবে। ব্যাংক, বীমা বৃহৎ শিল্প, পাট শিল্প ও পাট ব্যবসা, আমদানী রপ্তানী ব্যবসা প্রভৃতি জাতীয়করন করিয়া রাষ্ট্রায়ত্ত বা সরকারী খাতকে শক্তিশালী করিতে হইবে। সরকারী খাতের পরিচালনা ব্যবস্থার গণতান্ত্রিকরন, পরিচালনার ক্ষেত্রে শ্রমিকদের অংশ গ্রহনের নিশ্চয়তা বিধান এবং সরকারী খাতের দক্ষতা বৃদ্ধির ও ব্যবস্থা নিতে হইবে। জাতীয় অর্থনীতির বিকাশকে পরিচালিত করিতে হইবে অপুঁজিবাদী পথ-যাহা পরিনতি লাভ করিবে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি ও সমাজ ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠায়।
অর্থনৈতিক র্পুনগঠনেও একটি প্রধান কাজ হইল, ভুমি ব্যবস্থার সংস্কার তথা কৃষির পুর্নগঠন বাংলাদেশে ভুমি সংস্কারের প্রশ্নটিকে দীর্ঘদিন যাবৎ ফেলিয়া রাখা হইয়াছে। ১৯৫০ সালে জমিদারী প্রথার উচ্ছেদ হইলেও জমিদারী উচ্ছেদ হয় নাই।
আইয়ুব খানের আমলে ভূমি ব্যবস্থার ‘সংস্কার’ করা হয় উলটা দিকে। এর আগে বাংলাদেশে মাথাপিছু জমির মালিকানার সর্বোচ্চ সীমা বা সিলিং ছিল ৩৩ একর বা ১০০ বিঘা। আইয়ুবী শাসনে তথাকথিত ‘ভূমি সংস্কার’ আইনে বাড়াইয়া ৩৭৫ বিঘায় নির্ধারিত করা হয়। অথচ বাংলাদেশে জমির উপর জনসংখ্যার অতিরিক্ত চাপের পরিপ্রেক্ষিতে সিলিং নামাইয়া ৫০ বিঘা নির্ধারিত করা ছিল খুবই জরুরী।
১৯৫০ সালের জমিদারী দখল আইন এবং সিলিং সংক্রান্ত বিধি কিংবা পরবর্তীকালের আইয়ুব আমলের তথাকথিত ‘ভুমি সংস্কার’ আইন যে কোন গরীব বা অর্থহীন কৃষক এক বিঘা জমিও পায় নাই। বাংলাদেশের শতকরা ৩৫ জন কৃষক ভূমিহীন এবং যাহাদের জমি আছে তাহাদের মধ্যেও শতকরা ৭৮ জনের জমির পরিমাণ পাঁচ এর বা ১৫ বিঘার নিচে (বাংলাদেশে অন্যুন ১৫ বিঘা পরিমাণ জমিকে ইকনমিক হোল্ডিং ধরা হয়)। কাজেই ভুমি সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা জরুরী তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
কিন্তু এই জরুরী কাজটিই হয় নাই এবং না হওয়ার ফলে কৃষিতে সৃষ্টি হইয়াছে বন্ধ্যাত্ব। অধিকাংশ জমির মালিক জমি চাষ করেন না আর যারা জমি চাষ করেন তাহারা জমির মালিক নন। ফলে কৃষির অগ্রগতির পথে এক দুরন্ত বাধা সৃষ্টি হইয়াছে। আবার কৃষি ব্যবস্থার আধুনিকীকরন তথা কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির মারফত কৃষকের হাতে পয়সা না আসার ফলে শিল্পজাত পণ্যের বাজারও রহিয়া গিয়াছে সঙ্কুচিত অবস্থায় এবং শিল্প বিকাশের সম্ভাবনা হইয়াছে খর্ব। এই অবস্থায় অর্থনৈতিক উন্নতির আশা ছিল সুদূর পরাহত।
আজ যখন বাংলাদেশের সংগ্রাম সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে তখন দেশের অর্থনৈতিক রূপরেখায় ভূমি সংস্কার তথা কৃষি পুর্ণগঠনের কর্মসূচীকে আর ফেলিয়া রাখা যায় না। ইহার স্থান হওয়া উচিত অর্থনৈতিক পুনর্গঠন কর্মসূচীর একেবারে পয়লা নম্বরে। পারিবারিক মালিকানাধীন জমির সিলিং কমাইয়া উর্ধ্বপক্ষে ১০০ বিঘা নির্ধারিত করা, উদ্বৃত্ত জমি গরীব কৃষক ও ভূমিহীন্দের মধ্যে বিনামূল্যে বিলি করা, ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির মালিকদিগকে খাজনা হইতে অব্যাহতি দেওয়া, খাজনা প্রথা ধীরে ধীরে উঠাইয়া দিয়া কৃষি আয়কর চালু করা, সমবায় কৃষি খামার গড়িয়া তোলা প্রভৃতি কৃষি পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে আশু করণীয়।
শুধু অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের তাগিদে নয়, স্বাধীনতার লড়াইয়ে কৃষকদিগকে অধিকতর সংখ্যায় উদ্বুদ্ধ করার জন্যো মুক্তি সংগ্রামের একটি প্রধান রণধ্বনি হওয়া উচিতঃ কৃষকের হাতে জমি দাও। বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা হইতেও আমরা এই শিক্ষাই পাইতে পারি। কৃষকের হাতে জমি দেওয়ার ভিত্তিতে মুক্তাঞ্চল গুলিতে ভূমি সংস্কারের কাজে এখনই হাত দেওয়া উচিত। মুক্তাঞ্চলে এই দৃষ্টান্ত স্থাপন করিতে পারিলে অধিকৃত এলাকার কৃষকগণও মুক্তি সংগ্রামে অনুপ্রানিত হইবেন।
সাম্রাজ্যবাদী শোষনের অবসান ঘটান রাজনৈতিক পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে আর একটি জরুরী কাজ। সোনার বাংলা যে শ্মশান, তার পিছনে করাচী-লাহোরের একচেটিয়া পুঁজিপতিদের সাথে সাথে সাম্রাজ্যবাদী বিশেষতঃ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী শোষনের অবসান কম নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঋণের সুদ বাবদই প্রতি বৎসর ৭০-৮০ কোটি টাকা পাকিস্থান হইতে লুটিয়া নিত, উহার সিংহভাগ যাইত পূর্ব বাংলা হইতে। অতীতে দেশবাসীর দৃষ্টি এদিকে যথেষ্ট পরিমাণে সজাগ ছিল না। পূর্ব বাংলারূপী চৌবাচ্চাতে দুইটি ছিদ্র ছিল একটি করাচী-লাহোরের একচেটিয়া পুঁজির শোষনের আর অন্যটি সাম্রাজ্যবাদী তথা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী শোষনের। বাংলাদেশের সম্পদ পাঁচার বন্ধ করিতে হইলে এই দুইটি ফূটোই বন্ধ করা দরকার। এ ব্যাপারে সরকারের কর্মসূচী হওয়া উচিতঃ (১) অতীতে পাকিস্তানকে দেওয়া ঋণের সমুদয় দায়িত্ব অস্বীকার করা; (২) বাংলাদেশে সাম্রাজ্যবাদী পুঁজি বিনা ক্ষতি পূরণের জাতীয়করণ করা (চা-শিল্প ব্যাংক, বীমা ও রপ্তানী বাণিজ্যে সাম্রাজ্যবাদী পুঁজি রহিয়াছে); এবং (৩) ভবিষ্যতে সাম্রাজ্যবাদী পুঁজির অনুপ্রবেশের পথ বন্ধ করা।
কোন কোন মহল মনে করেন এবং অনেক সময় প্রকাশ্যে বলিয়াও থাকেন, আগে তো দেশ স্বাধীন হউক, তারপর কর্মসূচীর কথা ভাবিয়া দেখা যাইবে। আবার কোন কোন মহল মনে করেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আসুক, তা হইলেই সব সমস্যার সমাধান হইয়া যাইবে। কিন্তু এগুলি হইল শোষকশ্রেণীর যুক্তি। ১৯৪৬ সালে বলা হইয়াছিল, পাকিস্তান হাসিল হইলেই সব শোষনের অবসান হইবে। কারণ সব মুসলমান ভাই ভাই। আবার কেহ কেহ বলিতেন, মুসলমানদের মধ্যে জমিদার বা বড় পুঁজিপতি বিশেষ কেন নাই, কাজেই পাকিস্তান কায়েম হইলে উহা ‘গরীবের পাকিস্তান’। এইসব ‘যুক্তি’ যে ধোঁকাবাজি ছাড়া কিছু নয়, তা আজ আর কাহাকেও বলিয়া বুঝাইতে হয় না। কাজেই ‘সব বাঙালী ভাই ভাই’ শ্লোগানও কোন কাজের কথা নয়। স্বাধীনতার দাবিতে সকল বাঙালী এক হইলেও বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে স্বার্থের দ্বন্দ্ব রহিয়াই গিয়াছে। কাজেই বাংলাদেশে যাহাতে প্রকৃতই শ্রমিক কৃষক বুদ্ধিজীবি তথা মেহনতি জনতার ন্যায্য স্বার্থ রক্ষা পায় উহার নিশ্চয়তা সংবলিত একটি সামাজিক অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের কর্মসূচী অবিলম্বে ঘোষনা করা দরকার। এবং এই কর্মসূচীর রূপরেখার ভিত্তিতেই আদর্শ হিসাবে গড়িয়া তুলিতে হইবে মুক্তাঞ্চলগুলিকে। শুধু সামাজিক ন্যায়নীতির খাতিরেই নয়, শ্রমিক কৃষক জনতাকে অধিকতর অনুপ্রানিত করিয়া বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে আরও দুর্বার করিয়া তোলার জন্য ইহা অত্যাবশক।