শিরোনাম | সংবাদপত্র | তারিখ |
ঐক্যবদ্ধভাবে চূড়ান্ত আঘাত হানিয়া শত্রুকে পর্যুদস্ত কর | স্বাধীন বাংলা
১ম বর্যঃ ১৯শ সংখ্যা |
১৪ নভেম্বর, ১৯৭১ |
ঐক্যবদ্ধভাবে চূড়ান্ত আঘাত হানিয়া শত্রুকে পর্যুদস্ত কর
যে-স্বাধীনতার বেদীমূলে অগনিত দেশবাসী অকাতরে আত্মবলি দিয়াছেন
উহার প্রতি বেইমানী বরদাশত করা হইবে না।
(নিজস্ব বার্তা পরিবেশক)
বাংলাদেশ সরকারের সর্বদলীয় উপদেষ্টা পরিষদ ঐক্যবদ্ধভাবে চরম আঘাত হানিয়া পাক জঙ্গীশাহীর ধ্বংসকে ত্বরান্বিত করার জন্য সমগ্র জনগণ ও সকল মুক্তি সংগ্রামীর প্রতি আহ্বান জানাইয়াছেন। উপদেষ্টা পরিষদ বাংলাদেশের পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য আপোষহীন লড়াইয়ের সঙ্কল্প পুনরায় ঘোষনা করেন এবং যে স্বাধীনতার জন্য অগনিত দেশবাসী অকাতরে আত্মদান করিয়াছেন উহার সহিত কোন অবস্থাতেই বেঈমানী হইবে না বলিয়া ওয়াদা করেন।
উপদেষ্টা পরিষদ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি সহায়তার জন্য ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ভুমিকায় প্রশংসা করেন।
গত ৬-৭ নভেম্বর মুজিব নগরে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় উপরোক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহন ও অভিমত প্রকাশ করা হয়। এই সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমেদ এবং অংশ গ্রহন করেন বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির শ্রী মনি সিং, আওয়ামী লীগের জনাব আবদুস সামাদ আজাদ ও শ্রী ফণী ভূষণ মজুমদার, ন্যাশনাল আওয়ামী লীগ পার্টির অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ ও কংগ্রেস নেতা শ্রী মনোরঞ্জন ধর। ইহা ছাড়া মন্ত্রিসভার সদস্যবর্গও সভায় যোগদান করেন।
বৈঠকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এবং মুক্তি সংগ্রামের অগ্রগতি পর্যালোচনা করিয়া সর্বসম্মতিক্রমে নিম্নলিখিত প্রস্তাবসমূহ গ্রহণ করা হয়ঃ
(১) কমিটি মনে করে যে, ইহাহিয়ার যুদ্ধবৎ প্রস্তুতি ভারত-পাকিস্থান যুদ্ধ বাধানোর প্রকাশ্যে পায়তারা বাংলাদেশ স্বাধীনতার প্রশ্নও দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধের বাহিনীর বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধের ক্রমবর্তমান সাফল্য হইতে বিশ্বের দৃষ্টি অন্যত্র সরানোরই একটি কুমতলব। কমিটি শত্রুর স্পষ্টতঃ দৃশ্যমান দূর্বলতাসমূহের পূর্ণ সুযোগ গ্রহণ এবং শত্রুর পতন দ্রুততর করার উদ্দেশ্য তাহার উপর ঐক্যবদ্ধ ও চরম আঘাত হানার জন্য সকল শ্রেনীর সম্প্রদায়ের মানুষ এবং সকল স্তরের মুক্তি সেনানীদের প্রতি আহ্বান জানাইতেছে।
(২) কমিটি সভ্যতার সকল নিয়ম কানুন ভঙ্গ করিয়া শেখ মুজিবর রহমাঙ্কে আব্যাহতভাবে আটক রাখার বিরুদ্ধে নিন্দা প্রকাশ করিতেছে এবং বাস্তবকে স্বীকার করিয়া লইয়া অবিলম্বে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তিদানের জন্য পাকিস্তান সরকারের প্রতি আহ্বান জানাইতেছে।
(৩) কমিটি জালিয়াতিমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে ইয়াহিয়ার প্রস্তাবিত বে-সামরিক শাসনে প্রত্যাবর্তনকে শঠতা বলিয়া মনে করে। ইহা শুধু তাহাদেরকেই মুগ্ধ করিবে যাহারা ইহাকে বিশ্বাস করার ভাব বা বিশ্বাস করিতে ইচ্ছুক।
(৪) কমিটি ভারতের জনগণ ও সরকারকে বাংলাদেশের প্রশ্নে তাহাদের ঐক্যবদ্ধ সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা জানাইতেছে এবং বাংলাদেশ প্রশ্নে সোভিয়েত ইউনিয়নের নীতির প্রশংসা করিতেছে।
(৫) কমিটি সাড়ে ৭ কোটি মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার ন্যাষ্যতার প্রতিনিধিত্বকারী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য বিশ্বের সরকারসমুহের প্রতি আবেদন জানাইতেছে।
(৬) কমিটি লক্ষ করিতেছে যে, কতিপয় দেশ বাংলাদেশের ব্যাপারে সহানুভূতিশীল হইলেও তাহাদের মনোভাব প্রকাশ্যে দ্বিধাগ্রস্ত। কমিটি ন্যায়, গণতন্ত্র ও মুক্তির পক্ষে তাহাদেরকে আরও সোচ্চার হইহা আগাইয়া আসার আহ্বান জানাইতেছে।
(৭) যে সব দেশের সরকার ইয়াহিয়া খানকে অস্ত্রশস্ত্র ও অন্যান্য উপকরন দিয়া বাংলাদেশে গণহত্যার সাহায্য করিতেছে, কমিটি সে সব দেশের জনগণের প্রতি আবেদন জানাইতেছে, তাহারা যেন বাংলাদেশের ব্যাপারে তাহাদের সরকারের এই নিষ্ঠুর হস্তক্ষেপ বন্ধ করেন।
(৮) কমিটি পূর্ণ স্বাধীনতার লক্ষ্যকে দ্রুত বাস্তবায়িত করার সঙ্কল্প পুনরায় ব্যক্ত করিতেছে এবং স্বাধীনতার কমে সমাধানের নিমিত্ত প্রদত্ত সকল বক্তব্য ও ফর্মূলা প্রত্যাখান করিতেছে।
(৯) স্বাধীনতার জন্য যাহারা জীবন দিয়াছেন, তাহাদের ত্যাগ স্মরণ করার সঙ্গে সঙ্গে কমিটি ঐসব নিহত বীরদের সহিত সংহতি ঘোষনা করিতেছে এবং শপথ গ্রহণ করিতেছে যে, যে কারনে তাহারা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করিয়াছেন, উহার সহিত কখনও বিশ্বাস ভঙ্গ করা হইবে না।
শেষ দুইটি প্রস্তাবে কমিটি নয়াদিল্লীস্থ পাকিস্তানী হাইকমিশনে আটক জনাব হোসেন আলী ও তাহার স্ত্রী-কন্যাদের মুক্তি দাবী করে উরিষ্যার প্রলয়ঙ্কারী ঘুর্নিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থদের প্রতি গভীর সহানুভূতি জ্ঞাপন করে।