You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.10 | বাংলাদেশের সংগ্রামী জনগনের সহিত আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের দৃঢ় সংহতি জ্ঞাপন | মুক্তিযুদ্ধ - সংগ্রামের নোটবুক

শিরোনামঃ বাংলাদেশের সংগ্রামী জনগনের সহিত আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের দৃঢ় সংহতি জ্ঞাপন।

সংবাদপত্রঃ “মুক্তিযুদ্ধ”, ১ম বর্ষ, ১৪শ সংখ্যা।

তারিখঃ ১০ অক্টোবর ১৯৭১

[বাংলাদেশের সংগ্রামী জনগনের সহিত আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের দৃঢ় সংহতি জ্ঞাপন।]

বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের প্রতি আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের দৃঢ় সমর্থন ও সংহতি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির নবম কংগ্রেসের মধ্যে দিয়া পরিষ্কাররূপে ফুটিয়া উঠিয়াছে। কংগ্রেসে গৃহীতব্য সি পি আই জাতীয় কাউন্সিলের রাজনৈতিক রিপোর্ট ও খসড়া প্রস্তাবে বাংলাদেশের সংগ্রামের প্রতি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সর্বাত্নক সমর্থন পুনরায় ঘোষনা করা হয়। ইহা ছাড়া কংগ্রেসে যোগদানকারী সোভিয়েতে ইউনিয়ন, গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স, বুলগেরিয়া, গনতান্ত্রিক জার্মানী, হাঙ্গেরী প্রভৃতি বহু দেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিদল তাহাদের ভাষনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি ও সংগ্রামী জনগনের সহিত সংহতি জ্ঞাপন করেন। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিদলকে যেরূপ বীরোচিত সম্মান দেয়া হয় উহার মধ্যে দিয়া বাংলাদেশের সংগ্রামের উচ্চ মূল্যায়নের আন্তরিক অভিব্যাক্তিই প্রকাশ পাইয়াছে।

ভারতের কেরালা রাজ্যের ঘাটে নগরে (কোচিন) গত ৩রা অক্টোবর ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির এই গুরুত্বপূর্ণ কংগ্রেস শুরু হয়। ১০ ই অক্টোবর কংগ্রেস সমাপ্ত হইবে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড আব্দুস সালামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল এই কংগ্রেসে যোগ দিয়াছেন। ইহা ছাড়াও আরও বিশটি বিদেশী ভ্রাতৃসুলভ পার্টির প্রতিনিধিবর্গ এই কংগ্রেসে অংশগ্রহণ করিতেছেন।

কমরেড সালাম
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিদলের নেতা কমরেড আব্দুস সালাম কংগ্রেসের প্রতিনিধি, দর্শক ও অতিথিদের তুমুল হর্ষধ্বনির মধ্যে বাংলাদেশের মু আন্দোলনের পটভূমি ও প্রগতিশীল চিত্র ব্যাখ্যা করেন। তিনি এই সংগ্রামকে জাতীয় আত্ননিয়ন্ত্রনাধিকার আদায়ের ন্যায্য লড়াই বলিয়া অভিহিত করেন এবং আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট ও শ্রমিক আন্দোলন এবং পৃথিবীর সকল প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক শক্তিকে ইহার সমর্থনে দৃঢ়ভাবে দাড়াইবার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান।

কমরেড সালাম বাংলাদেশের শ্রমিক কৃষক মেহনতি মানুষের আন্দোলনে কমিউনিস্ট পার্টির অগ্রণী ভূমিকার কথা উল্লেখ করিয়া বলেন, সাম্প্রদায়িকতা, স্বৈরাচারী শাসন ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও জাতীয় অধিকারের সংগ্রামে কমিউনিস্ট পার্টি সর্বদা সর্ব-অবস্থায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করিয়াছে। বর্তমান স্বাধীনতার লাড়াইয়েও কমিউনিস্ট পার্টি অন্যান্য সংগ্রামী শক্তির সহিত কাঁধে কাধ মিলাইয়া অস্ত্র হাতে লড়াই করিতেছে।

কমরেড সালাম বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির একটি অভিনন্দন বানী ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির হাতে সমর্পণ করেন। অভিনন্দন বানীতে বাংলাদেশের পার্শ্বে সর্বশক্তি লইয়া দাড়াইবার জন্য ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি, সকল গণতান্ত্রিক শক্তি ও ভারতের জনগনের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।

উহাতে বলা হয় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি সর্বহারার আন্তর্জাতিকতাবাদের প্রতি অনুগত্যের উজ্জ্বল ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করিয়াছে। (অভিনন্দন বানীর পূর্ণ বিবরণ আগামী সংখ্যায় প্রকাশিত হইবে)

কমরেড সালাম তাহার ভাষণের উপসংহারে বলেন, আমরা জানি বাংলাদেশের সংগ্রাম কঠিন ও কঠোর। বাংলাদেশের জনগন এই কঠোর সংগ্রামের মধ্য দিয়াই জাতীয় আত্ননিয়ন্ত্রনের অধিকার ও স্বাধীনতা কায়েম করিবেন। বিজয় আমাদের অনিবার্য।

সোভিয়েত প্রতিনিধি
সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিদলের নেতা কমরেড দীন মোহাম্মদ কুনায়েত বাংলাদেশের নিপীড়িত জনগনের প্রতি সহানুভূতি জ্ঞাপন করিয়া বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথমাবধি ইয়াহিয়ার সামরিক সরকারের নির্যাতন ও দমননীতির বিরুদ্ধে দৃঢ়তার সহিত প্রতিবাদ জানাইয়াছে এবং পূর্ব বাংলার জনগনের ইচ্ছা ও অলঙ্ঘনীয় অধিকারের ভিত্তিতে সমস্যাটির রাজনৈতিক সমাধান দাবি করিয়াছে।

ফরাসি পার্টির সমর্থন
ফ্রান্সের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি দলের নেতা কমরেড গাই বেসসি তুমুল হর্ষধ্বনির মধ্যে ঘোষণা করেন যে, বাংলাদেশের ‘জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের’ বিজয় সম্পর্কে তাহাদের পার্টির বিন্দুমাত্র সন্দেহ নাই। তিনি বলেন, ফ্রান্সের কমিউনিস্ট পার্টি পুরাপুরিভাবে বাংলাদেশের সংগ্রামের পক্ষে। ফরাসী পার্টি ফ্রান্সের এক – চতুর্থাংশ ভোটদাতাদের আস্থাভাজন বিধায় তাহাদের পার্টির মাধ্যমে ফ্রান্সের অন্ততঃ এক – চতুর্থাংশ জনসংখ্যা বাংলাদেশের সংগ্রামের সমর্থনে ঐক্যবদ্ধ। তিনি দৃঢ়তার সহিত ঘোষণা করেন যেন, জনগনের আত্ননিয়ন্ত্রনের অধিকারের স্বীকৃতির ভিত্তিতেই এই সমস্যার সমাধান করিতে হইবে।

হাঙ্গেরী
হাঙ্গেরী প্রতিনিধিদলের নেতা কমরেড আন্দ্রে গাইনেস ইসলামাবাদের জঙ্গী শাসকদের বর্বর নির্যাতনের নিন্দা করিয়া বলেন যে, কেবল মাত্র জাতীয় গণতান্ত্রিক বিধি ও মানবিক অধিকার মানিয়া নেওয়ার মধ্য দিয়া বাংলাদেশের সমস্যার সমাধান সম্ভব।

গণতান্ত্রিক জার্মানী
গণতান্ত্রিক জার্মানীর প্রতিনিধি দলের নেতা কমরেড অ্যালবার্ট নর্ডস বাংলাদেশের জনগনের “গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক অধিকার” প্রতিষ্টা ও শেখ মুজিবের মুক্তি দাবি করেন।

ভ্রাতৃত্বমূলক সংহতি
পশ্চিম জার্মানীর কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি দলের নেতা কমরেড কুর্ট অর্লরেকন বাংলাদেশের সংগ্রামী জনগনের সহিত “ভ্রাতৃত্বমূলক সংহতি” জ্ঞাপন করেন।

ন্যায্য সংগ্রাম
ব্রিটিশ কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি দলের নেতা কমরেড উইলিয়াম ওয়েনরাইট বাংলাদেশের আন্দোলনকে ‘ন্যায় সংগ্রাম’ বলিয়া অভিহিত করেন।

এই রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত দেশের ভ্রাতৃপ্রতিম পার্টিগুলির প্রতিনিধিদলের বক্তব্য জানা যায় নাই।