শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৯৬। আমার কোন বিকল্প ছিল না | নিউজউইক ম্যাগাজিন | ৮ নভেম্বর, ১৯৭১ |
পূর্ব পাকিস্তানের গেরিলা দ্রোহ এবং ইন্ডিয়া – পাকিস্তানের অন্যতম যুদ্ধ দ্বারপ্রান্তের মধ্যেও তার দেশ সংকটের মধ্যেও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান গত সপ্তাহে নিউজুইকের প্রবীণ সম্পাদক আমুদ ডে বোর্চগ্রেভ ের কাছে একটি সাক্ষাতকার দিয়েছেন।তাদের কথোপকথনে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান তার দেশ এবং ইন্ডিয়া যে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সম্মুখীন হচ্ছেন সেখানে তার অবস্থান ইয়া বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেন।ইয়াহিয়ার মন্তব্যের উদ্বৃত্তাংশ নিম্মোক্ত
যুদ্ধ অনিবার্য না আপনাকে আমার এমন বলার কোনো কারণ নেই কারণ এটিইসত্য। ইতিমধ্যে ভারত আমাদের সাথে যুদ্ধ করেছে এবং কোনো সাধারণ বোঝাপোড়া না থাকার কারণে শুধুমাত্র আমরা ফিরে আঘাত করিনি।ক্রমবর্ধমান প্ররোচণার পরেও আমরা সর্ব্বোচ্চ সংযম রাখার চেষ্টা করছি।পূর্ব পাকিস্তানের সমস্ত সীমানা ব্যাপি ২৪ ঘন্টায় ভারত ১৪০ থেকে ৩০০০ কামান গোলা এবং মর্টার শেল ছুড়ে মারে …(পূর্ব পাকিস্তানী গেরিলারা ) সেতু,বৈদ্যুতিক তোরণ,এমনকি খাবারবাহী জাহাজ ও ধ্বংস করেছে।ভারত ২৩টি গেরিলা প্রশিক্ষণ শিবির স্থাপন করেছে,সাধারণ জনগণকে তাদের সীমান্ত এলাকা থেকে সরিয়ে নিয়েছে,তাদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী প্রতিদিন আমাদের হুমকি দিচ্ছে ভারত যদি লুন্ঠিত অঞ্চল বাড়ানোর লক্ষ্যে অগ্রসর হয় এবং একটি পুতুল বাঙ্গলাদেশ সরকার স্থাপন করে, যুদ্ধ তাহলে হবেই।
কিভাবে( আমাদের )সামরিক বাহিনী যুদ্ধ করবে এবং তাদের থেকে পাঁক গুণ বড় সামরিক বাহিনীর (ভারতের )বিরুদ্ধে জয় লাভ করবে ।তাদেরকে এই নির্দেশ দেওয়া আমার জন্য একটি সামরিক পাগলামি হবে।কিন্তু যদি আমরা আক্রমণের শিকার হই তাহলে আমরা অবশ্যই যুদ্ধ করবো ।(ভারতের) এমন যুদ্ধাস্ত্র আছে যা অনেক ক্ষেত্রেই স্বয়নভর ।যদি তারা প্রতিদিন ৩০০০ শেল নিক্ষেপ করতে পারে তার অর্থ এই যে তাদের হাতে প্রচুর গুলি মজুদ আছে।এই বিলাসীতা আমাদের সামরিক বাহিনী বহন করতে পারবে না।
চায়না পাকিস্তানের উপর আক্রমণ সহ্য করবে না ।আমরা প্রয়োজনানুসারে অস্ত্র এবং গুলি সংগ্রহ করবো (প্র্যত্যেকের সহায়তায় )সংক্ষিপ্ত মধ্যবর্তিতায়।কিছু জিনিশ আমরা বিনামূল্যে আনবো এবং কিছুর জন্য মূল্য পরিশোধ করবো।কিন্তু চীনদের শর্তাবলী খুব সহজ ঃ ২৫ বছরের সুদ মুক্ত ঋণ।গত বছর পেকিং এ থাকাবস্থায় আমি ২০০ মিলিওন মূল্যের অর্থনীতি এবং ৫ বছরের সুদবিহীন পরিকল্পনার মধ্যস্ততা করেছিলাম।
বাঙালীদের কখোনোই কেউ সঠিকভাবে মূল্যায়ন করেনি।আমরাও ভুল করেছি এবং এই “ আমরা “ দ্বারা পূর্ব পাকিস্তানীদের বুঝাচ্ছি যারা স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান্মন্ত্রী ছিলেন।
পূর্ব পাকিস্তানের অবনতি ঘটছিলো এবং আমরা কখনোই তাদের উন্নয়নে যথেষ্ট মনোযোগ দেইনি।
আমরা এখন হারানো সময় পুনুরদ্ধারের চেষ্টা করছি।২০ ডিসেম্বর নতুন সংবিধান জারি করা হবে।তারা আমাদের থেকে হাজার মেইল দূরে অবস্থান করছে তাই এইটাই স্বাভাবিক যে তারা তাদের সর্ব্বোচ্চ স্বাধীনতা উপভওগ করবে এবং তাদের নিজেদের দায়িত্ব নিজেরাই সামলাবে।অর্থ্যাত প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং কর ছাড়া বাকি সব।
অনেকেই হয়তো আমার কথা বিশ্বাস করবে না ,কিন্তু আমার ধারণা, যদি সে ফিরে যায়, তাহলে সে তার নিজের লোকদের দ্বারাই খুন হতে পারে যারা তাকে সমস্ত দূর্ভোগের জন্য দায়ী মনে করে।কিছু ক্ষেত্রে এই প্রশ্ন বাহুল্য। দুই বছর সে আমার সাথে অভ্যন্তরীণ স্বাধীনতার বিষয়ে আলাপ করেছেন এবং তার কথার খেলাপ করেছেন।তিনিসংগঠিত হলেন এবং দেশের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ পরিচালনা করলেন…বিদ্রোহ দমন করা ছাড়া বিকল্প ছিল না কোনো।অন্য যে কোনো সরকার একই কাজ করতো…কিভাবে আমি সেই ব্যক্তিকে ফিরে আসতে বলি এবং তার সাথে মধ্যস্ততা করি।দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করা এবং সামরিক বাহিনীর আনুগত্য ধ্বংস করার জন্য সে অভিযুক্ত।এ কে ব্রোহী দ্বারা সে সুরক্ষিত যে কিনা দেশের সর্বোত্তম এবং সর্বাধিক শ্রদ্ধেয় আইনজীবী,সামরিক আদালতে কোনো ধরণের ছলা কৌশল হবে ভেবে থাকলে ব্রোহী মামলাটি হ্রহণ করতেন না ।মুজিবকে আমি প্রথমেই মেরে ফেলিনি এবং পরে চেষ্টা করেছিলাম যেহেতু সরকারি কর্মকর্তা অনেকেই এর পক্ষপাতী ছিলেন।
আমরা যা করেছি তা হচ্ছে চুক্তি সাপেক্ষে তাকে অই অঞ্চলের রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব দিয়েছি। আকস্মিক আমি তাকে মুক্তি দিতে পারি না।এটি একটি বিশাল দায়িত্ব।কিন্তু যদি জনগণ তার মুক্তি চায়, আমি করবো।
সবচাইতে খারাপ পরাজয় হবে ভারতের নিজের।পূর্ব বাংলা এবং আসাম শীঘ্রই এক হবে এবং তা হবে ভারত জোটের ভাঙনের শুরু।সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করি, এই মহিলা (ইন্দিরা গান্ধী )যেন তা অনুধাবন করে।
এখানে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।