শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
প্রবাসে বাংলাদেশ আন্দোলনে তৎপর বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে পাকিস্তানের সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে হাজির হবার নির্দেশ। | আবু সাঈদ চৌধুরী | ২১শে সেপ্টেম্বর,১৯৭১ |
প্রতি
জনাব বিচরক আবু সাঈদ চৌধুরী ,
১১ গোরিং স্ট্রীট
লন্ডন বি ৩ ( ইউ কে )
যখন তথ্যের ভিত্তিতে ( সংযোজনী ‘এ’ সংযুক্ত ) পাকিস্তান রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১২৮ নং ধারার অধীনে আপনার বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক রিপোর্ট প্রদান করার জন্য পাকিস্তান সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে রেফারেন্স দ্বারা নির্দেশ দিয়েছেন ।
এবং যখন সচিব, আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয়, পাকিস্তান সরকার, ইসলামাবাদ সেই সূত্রে আপনার বিরুদ্ধে নিন্মোক্ত অভিযোগ দাখিল করে বলেছেন যে,
১। ২৭ শে মার্চ থেকে ১৬ই এপ্রিল ১৯৭১ তারিখ পর্যন্ত পাকিস্তানের বাইরে ছুটিতে রয়েছেন, আপনি কোন অজুহাত ব্যতীতই আপনার দপ্তরের দায়িত্ব পুনরায় শুরু করার জন্য পাকিস্তানে ফিরতে ব্যর্থ হয়েছেন, যদিও এটা আপনার অবস্থান অনুযায়ী যোগদান কর্তব্য ছিল:
২। উপরে বর্ণিত মোতাবেক প্রবাসে থাকার সময় আপনি সক্রিয়ভাবে পাকিস্তান সরকারের প্রতি ঘৃণা ছড়ানোর মত কর্মকাণ্ডে জড়িত এবং পাকিস্তান সার্বভৌমত্বের একটি অংশ বিলুপ্ত করে পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশকে “ বাংলাদেশ” নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করার জন্য প্ররোচনা চালাচ্ছেন, এটাও অপরাধ ধারা ১২১- এ – ১২৩- এ এবং ১২৪ এর অধীনে পাকিস্তান দণ্ড বিধির আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ; এবং
৩। একটি রাষ্ট্র বিরোধী ও রাজনৈতিক অনেক কাজে অংশগ্রহন করার মাধ্যমে আপনি পাকিস্তান সংবিধান রক্ষা এবং অক্ষুন্ন রাখার আমাদের শপথ এবং সেই সাথে বিচারকদের আচরণ বিধি অনুচ্ছেদ ১২৮ লংঘন করেছেন যার অধীনে বিচারকদের যে কোন রাজনৈতিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ।
এবং যখন তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন প্রদানের রেফারেন্সটি উপরে উল্লেখিত অভিযোগ সহকারে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে বিশেষ রেফারেন্স নাম্বার ১৯৭১এর ৫ হিসেবে রেজিস্ট্রিকৃত হয়েছে।
এবং যখন কাউন্সিলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে কেন আপনার বিরুদ্ধে আইনের অধীনে কারন দর্শানোর জন্য কার্যকলাপ চালানো যাবে না তা জানতে;
অতএব আপনাকে এখন সকাল ৯.৩০ মিনিটে ১৯৭১ এর অক্টোবরের ১৫তম দিনে পাকিস্তান কাউন্সিল এম লাহোরে হয় ব্যক্তিগত ভাবে বা নিজেকে রক্ষার জন্য যথাযথ ভাবে আপনার পক্ষে একজন আইনজীবী হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে অন্যথায় আপনার বিরুধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সেপ্টেম্বর ,১৯৭১ এর ২১তম তারিখ নির্দেশিত।
(আব্দুর রহিম)
রেজিস্টার
সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল
পাকিস্তান
সংযোজনী “ এ ’’
পাকিস্তানের সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল সমীপে
( এডভাইসরি জুরিসডিকশন )
বিশেষ রেফারেন্স নং ১৯৭১ এর ৫
পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি … কতৃপক্ষ
বনাম
বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী,
ঢাকা উচ্চ আদালতের বিচারক, … উত্তরদাতা
দায়েরকারী
ইফতিখারুদ্দিন আহমদ
অ্যাডভোকেট – অন – রেকর্ড
সুপ্রিম কোর্ট , পাকিস্তান
লাহোর ।
সংযোজনী ‘ এ ’
পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের কৃতক প্রণীত একটি প্রস্তাব মোতাবেক, রাষ্ট্রপতি পূর্ব পাকিস্তানের উচ্চ আদালতের জাজ বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্যকে জাতিসংঘ মানবাধিকারের কমিশনের ২৭তম অধিবেশনে জন্য পাকিস্তানের প্রতিনিধি হিসাবে মনোয়ন করতে সন্তুষ্ট হয়েছিলেন, যা জেনেভা, সুইজারল্যান্ড এ ২২শে ফেব্রুয়ারী থেকে ২৬শে মার্চ ,১৯৭১ এ অনুষ্ঠিত হয়।
২। তার অনুরোধে , পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ২৭শে মার্চ থেকে ১৬ই এপ্রিল ১৯৭১ পর্যন্ত জাজের বহির্পাকিস্তান ছুটি মঞ্জুর করেন, যা দীর্ঘ মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে, কিন্তু কোন অজুহাত ছাড়াই পুনরায় কাজে যোগদানের জন্য ফেরত আসেননি যদিও তিনি তা করার কথা।
৩। কমিশনের কাজ শেষে বিচারক লন্ডনে চলে যান, দৃশ্যত তার ছেলেকে দেখার জন্য যে সেখানকার ছাত্র। ১৮ই এপ্রিল, ১৯৭১ এ প্রকাশিত লন্ডনের সান ডে টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনের মোতাবেক সেই সংবাদপত্রের একজন প্রতিনিধিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিচারক তার বিবৃতিতে তিনি পাকিস্তানী সেনাদের বর্বর নৃশংসতা যা পূর্ব পাকিস্তানে ২৫শে মার্চ ১৯৭১ এ বিশাল আকারের আঘাত করা হয়েছিল তার চিত্র তুলে ধরেন। তিনি আরও অভিযোগ করেন যে দেশে কোন আইন নেই সেখানের উচ্চ আদালতে তার পক্ষে ফিরে যাওয়া অসম্ভব । এই বিবৃতিটি পূর্বোক্ত সান ডে টেলিগ্রামে প্রকাশিত।
৪। ১৩ই জুন, ১৯৭১ তারিখে বিচারক লন্ডনের টেলিভিশনে আরেকটি সাক্ষাতকার দিয়েছেন যেখানে তিনি “জাতীয়” এবং “ বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক প্রতিনিধি” হিসাবে নিজেকে উপস্থাপন করেন, যা তার বক্তব্য অনুযায়ী যেখানে মুজিব নগর প্রতিষ্ঠিত এবং যেখানে তিনি আশা করছেন যা অদুর ভবিষ্যতে স্বীকৃতি পাবে। সাক্ষাৎ কারের এক পর্যায়ে বিচারক পাকিস্তান সরকার কে “ হত্যাকারীদের সরকার “ হিসাবে আরোপ করেন এবং “মোহাম্মাদ আলি জিন্নাহর পাকিস্তান সরকার মারা গেছে” বলে লন্ডন টাইমসে বিবৃতি দেন। অন্য একটি প্রশ্নের উত্তরে , তিনি আশা করেন ইন্ডিয়া পাকিস্তান কে আক্রমন করবে কারন “ইয়াহিয়া খানের সামরিক জান্তা” এর কারনে পূর্ব পাকিস্তানের এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে ।
৫। বিচারক “ রয়েল কমনওয়েলথ সোসাইটি “ লন্ডনের সদর দপ্তরের আর একটি সাক্ষাতকার দেন যা অবশ্যই ৮ম জুন, ১৯৭১ এর সাক্ষাতকার এর অনুরুপ, এই প্রতিলিপিটি “ কমনয়েলথ সোসাইটি জার্নাল’’ এ অগাস্ট ,১৯৭১ এ আবির্ভূত হয়েছিল।
৬। ৩ জুন, জজ ডি –ভেরা হোটেল, হাইড পার গেইট, লন্ডনের ডাবলিও একটি হোটেলের সভায় বক্তৃতা করেন, যেখানে অতিথি-বক্তা জয় প্রকাশ নারায়ণকে তার সপক্ষে “ বাংলাদেশ” কে সমর্থন দেওয়ার ধন্যবাদ প্রকাশ করেন।
৭। বিচারক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন এবং ১২ই জুন, ১৯৭১ নিও ইয়র্কে বাংলাদেশ এর অনুকুলে বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেন ।
৮। ৩০শে জুলাই,১৯৭১ দৈনিক জং রাওয়ালপিন্ডি বিষয়ে প্রকাশিত একটি আলোকচিত্র অনুসারে বিচারক আরও একটি ডাকটিকেট ছাপানো ও প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেন যেখানে গন প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে অভিপ্রায় দেয়া হয়।
৯। বিচারকের কিছু কর্ম এবং বিবৃতির ভিত্তিতে রাষ্ট্রের ফৌজদারি আইনের অধীনে মারাত্মক অপরাধের অভিযোগ গঠন করা যায় এবং সরকার উপযুক্ত সময়ে তার বিরুদ্ধে সক্রিয়ও ব্যবস্থা গ্রহনের অধিকার রাখে।