You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.15 | পশ্চিম পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিরতার ঢেউঃ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের তীব্রতা বৃদ্ধি | বাংলাদেশ - সংগ্রামের নোটবুক

শিরোনামঃ পশ্চিম পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিরতার ঢেউঃ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের তীব্রতা বৃদ্ধি
সংবাদপত্রঃ বাংলাদেশ, ১ম বর্ষঃ ১৬শ সংখ্যা।
তারিখঃ ১৫ অক্টোবর, ১৯৭১

পশ্চিম পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিরতার ঢেউঃ
বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে তীব্রতা বৃদ্ধি

ঢাকা, ১৩ অক্টোবর- বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাম্প্রতিক বক্তব্যে সব স্পষ্ট হয়ে পড়েছে।

বর্তমানে ঘটনার চাপে জঙ্গী সরকারের বহু তাবেদার স্বীকার করেছেন যে অসন্তোষ ক্রমশ ছড়িয়ে পড়েছে। মাত্র কয়েকদিন পুর্বে পশ্চিম পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি নবাব নসরুল্লাহ খান মন্তব্য করেছেন যে, জাতীয় বিরোধীদের প্রভাবে বুদ্ধিজীবি মহল, ছাত্র মহল ও অনান্য শ্রেণীর মধ্যে চাপা সহানুভূতির লক্ষণ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। পশ্চিম পাকিস্তান এটাই দুঃখজনক বাস্তব অবস্থা। এমন কি পাঞ্জাবের এক শক্তিশালী মহল চাইছেন উদ্ভট একলা চলার নীতি অনুসরন করতে। উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ এবং সিন্ধুতে জাতীয় বিরোধী শক্তি দ্বিজাতি নীতির বিরুদ্ধে জনমত উত্তেজিত করছে এবং আলাপ আলোচনা আরম্ভ করছেন পাকতুনিস্থান জয় সিন্ধু এবং স্বাধীন বালুচিস্থান বলে।

পাকিস্তানী সংবাদপত্র নবাবজাদা নসরুল্লা খানের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশ করেছে যে, শেখ মুজিবর রহমানের প্রতি এই ধরণের সহানুভূতি ও সমর্থনই পূর্ব বাংলা অসন্তোষ বজায় রাখতে সাহায্য করছে। আর এক বাঙালী দালাল মউলোভী ফরিদ আহমদ আর এক ধাপ এগিয়ে গেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, পশ্চিম পাকিস্তানের এক শক্তিশালী মহল পূর্ব বাংলায় আওয়ামী লীগের বিদ্রহকে সাহায্য করছে। পাকিস্তানি জঙ্গী সরকার মউলোভী ফরিদ আহমদকে পাকিস্তান কাউন্সিল ফর পিস এন্ড ওয়েলফেয়ারের সভাপতি পদে নিযুক্ত করেছে। জঙ্গি সরকার সমর্থক লাহোরের ইমরোজ এবং করাচীর জং পত্রিকা ফরিদ আহমদের বক্তন্য উল্লেখ করে লিখেছে যে, পূর্ব পাকিস্তানে যে রকম ঘটেছে তাঁর পুনরাবৃত্তি হবার সমূহ সম্ভবনা আছে পশ্চিম পাকিস্তানে। পূর্ব বাংলার এমন সব গুরুত্বপূর্ণ দলিলপত্র আছে যার দ্বারা প্রমাণ করা যায় যে পশ্চিম পাকিস্তানের এক শক্তিশালী মহল আওয়ামী লীগকে আর্থিক, নৈতিক ও মালপত্র দিয়ে সাহায্য করছে। তিনি আরও বলেছেন যে, সরকার ঐ মহলের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি এই আশংকায় যে ব্যবস্থা নিলেই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে যাবে।

বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা সম্বন্ধে বলতে গিয়ে মৌলভী ফরিদ আহমদ মন্তব্য করেছেন যে, অবস্থা কোন মতেই স্বাভাবিক নয়। আওয়ামী লীগ প্রভাবাম্বিত পাক বিরোধী শক্তিদের আক্রমণ বেশ বেড়ে গেছে। সৈন্যবাহিনীর বীরত্ব সূচক কাজকর্ম হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তান সমর্থকদের জীবন ও স্পম্পত্তি প্রতি পদে বিপদের সম্মুখীন। মৌলভী ফরিদ আহমদ আরও বলেছেন যে শত শত পাকিস্তানী প্রাণ হারিয়েছেন আওয়ামী লীগ গেরিলাদের হাতে।

ফরিদ আহমদ ভাষণ দু’কারণে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত বেশ স্পষ্ট বুঝতে পারা যায় যে পশ্চিম পাকিস্তানের বাংলাদেশের প্রতি সহানুভূতি সম্পন্ন। এর ফলে জঙ্গী গোষ্ঠীর মিথ্যা অপবাদ যে ভারতবর্ষ থেকে সাহায্য পেয়ে একজন দুর্বৃত্ত বাংলাদেশে গোলযোগ চালাচ্ছে, সম্পুর্ন মিথ্যা প্রমাণিত হল, দ্বিতীয়ত, ফরিদ আহমদ স্পষ্ট স্বীকার করেছেন যে, প্রতিরোধ আন্দোলনে বাংলাদেশ ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে এবং শত শত পাক জঙ্গীশাহী তাবেদার বিনষ্ট করতে সমর্থ হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা।